Author : Ayjaz Wani

Published on Aug 22, 2023 Updated 0 Hours ago

ভারতের সভাপতিত্ব এসসিও-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি পেতে এবং সকল এসসিও সদস্য রাষ্ট্রের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে

ভারতের সভাপতিত্বে এসসিও

বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতা এবং এক ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার পটভূমিতে ২০২৩ সালের ৪ জুলাই নয়াদিল্লি সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) রাষ্ট্রপ্রধানদের কাউন্সিলের ২৩তম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে। উজবেকিস্তানের সমরখন্দের মতো ঐতিহাসিক শহরে চক্রাকার ভাবে সভাপতিত্বের দায়িত্ব শেষে তা নয়াদিল্লির হাতে আসার পরে ভারত নিরলস ভাবে এসসিও-র আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ও আন্তঃসহযোগিতার কর্মসূচি অনুসরণ করেছে। এটি ১৩৪টি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যার মধ্যে রয়েছে ১৪টি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এবং সেগুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের সশক্তিকরণ এবং এই বৈচিত্র্যময় ও প্রায়শই বিরোধপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের প্রচার চালানো। একটি গঠনমূলক কর্মসূচি-সহ ন্যায্যতা এবং কূটনীতির প্রতি এসসিও-র দৃঢ় প্রতিশ্রুতি বর্তমান বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থায় ভারতের ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীকতাকে তুলে ধরেছে। এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের সময় কঠোর মূল্যায়ন ও বিবেচনার পরে ইসলামিক স্টেট অফ ইরানকে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি ভারত কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রের কাছে এসসিও সভাপতিত্বের দায়িত্ব হস্তান্তর করে।

উজবেকিস্তানের সমরখন্দের মতো ঐতিহাসিক শহরে চক্রাকার ভাবে সভাপতিত্বের দায়িত্ব শেষে তা নয়াদিল্লির হাতে আসার পরে ভারত নিরলস ভাবে এসসিও-র আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ও আন্তঃসহযোগিতার কর্মসূচি অনুসরণ করেছে।

একটি ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক শক্তি হিসাবে বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে নিজের ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থগুলিকে অনুসরণ করার উদ্দেশ্যে ভারতের জন্য এসসিও-সহ বিভিন্ন বহুপাক্ষিক মঞ্চের অংশ হয়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসসিও নয়াদিল্লিকে মধ্য এশীয় এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা, গতি প্রদান এবং প্রদর্শনের সুযোগ দেয়। ২০১৭ সালে ভারত এই বহুপাক্ষিক সংস্থায় গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য যোগ করতে দিতে এসসিও-এর পূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠে। অন্যথায় গোষ্ঠীটি এত দিন পর্যন্ত শুধু কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্ব এবং স্বৈরাচারী দেশগুলি দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল। ২০২৩ সালের সভাপতিত্বের সময় ভারত স্টার্ট আপ ও উদ্ভাবন, চিরাচরিত ওষুধ, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, যুব ক্ষমতায়ন এবং এসসিও সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অভিন্ন বৌদ্ধ ঐতিহ্য-সহ উন্নয়নের নতুন ক্ষেত্রগুলিকে উন্নীত করার জন্য একটি দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে। এই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ভারত স্পেশ্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ অন স্টার্ট আপ অ্যান্ড ইনোভেশন এবং এক্সপার্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্র্যাডিশনাল মেডিসিনের মতো দু’টি নতুন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেছে, যা উল্লেখযোগ্য ভাবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক রূপান্তরে অবদান রাখার জন্য নয়াদিল্লির দায়বদ্ধতাকেই দর্শায়।

এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মূল ভাবনা ছিল ‘সিকিওর’ (SECURE), যেখানে S-এর  অর্থ নাগরিকদের নিরাপত্তা; E-এর অর্থ সকলের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন; C-এর অর্থ আঞ্চলিক সংযোগ; U-এর অর্থ জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করা; R-এর অর্থ সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা; এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য E ব্যবহার করা হয়েছে। এই অঞ্চলটিকে ‘নিরাপদ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ’ করে তোলার জন্য ২০১৮ সালে কিংডাও শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম এই ভাবনার কথা তুলে ধরেন। এ বারের শীর্ষ সম্মেলনটি সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের গুরুত্বকে তুলে ধরে এবং অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে তার শতাব্দী প্রাচীন সভ্যতা, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত ও গভীরতর করে তোলার জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। এসসিও সভাপতিত্বের সময় নয়াদিল্লি প্রাচীন শহর কাশীকে (বারাণসী) প্রথম এসসিও পর্যটন ও সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করে শহরটির সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও প্রদর্শন করে।

এসসিও নয়াদিল্লিকে মধ্য এশীয় এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে তার ভূ-কৌশলগত ও ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করা, গতি প্রদান এবং প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।

ভারত তার উত্তর সীমান্তকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ থেকে সুরক্ষা জোগাতে এসসিও-কে একটি মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ইসলামাবাদ ১৯৮৯ সাল থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার পাশাপাশি আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলটি সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে এবং মধ্য এশিয়া ও ইউরেশিয়ার মৌলবাদীদের সমর্থন করছে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার কাজটি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও ভারত দৃঢ় ভাবে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছে। ২০১৮ সালে ইউএন কম্প্রিহেনসিভ কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম (সিসিআইটি) থেকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনের ভিত্তিতে ভারত তার এসসিও সভাপতিত্বের সময় সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতে সফল হয়েছে। কার্যকরী আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সহযোগিতা এবং পদক্ষেপের নিরিখে একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া হিসেবে এসসিও-র আঞ্চলিক সন্ত্রাস বিরোধী পরিকাঠামো বা রিজিওনাল অ্যান্টি-টেররিজম স্ট্রাকচারের (আরএটিএস বা র‍্যাটস) পক্ষে ভারত সুদৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের প্রচেষ্টায় নির্বিঘ্ন যোগাযোগ এবং সমন্বয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য এসসিও-র মধ্যে ব্যবহৃত প্রাথমিক ভাষাগুলির মধ্যে অন্যতম হিসাবে ইংরেজিকে গ্রহণ করার বিষয়টিকে ভারত দৃঢ় ভাবে সমর্থন করে। এর পাশাপাশি ‘একটি আফগান-নেতৃত্বাধীন, আফগান-মালিকানাধীন এবং আফগান-নিয়ন্ত্রিত’ শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ভারতের দাবি সকল এসসিও মধ্য এশিয়ার সদস্য দেশ এবং রাশিয়ার সমর্থন পেয়েছে। ভারত ও মধ্য এশীয় প্রজাতন্ত্রগুলির মধ্যে সন্ত্রাস দমন, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তিগুলি এসসিও-র মাধ্যমে নয়াদিল্লির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিকেই তুলে ধরেছে।

পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের মাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগ শৃঙ্খলগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে তার সাংস্কৃতিক, কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ অনুসরণ করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টাকে নিরলস ভাবে ব্যাহত করার চেষ্টা চালিয়েছে। চিন তার উচ্চাভিলাষী ও প্রায়শই শোষণমূলক বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর মাধ্যমে এসসিও অঞ্চলে নিজের সংকীর্ণ স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েছে। চিনা বিআরআই প্রকল্পগুলি ঋণ সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে এবং এসসিও দেশগুলির সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে লঙ্ঘন করেছে। ক্রমবর্ধমান ঋণ সঙ্কট এসসিও অঞ্চলে, প্রধানত মধ্য এশিয়ায় চিন বিরোধী বিক্ষোভের তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। চিন-পাকিস্তান অক্ষকে টক্কর দেওয়ার জন্য নয়াদিল্লি চাবাহার বন্দর এবং ৭২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোর বা ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরে (আইএনএসটিসি) বিনিয়োগ করেছে। নয়াদিল্লির নেতৃত্বে এই সংযোগমূলক উদ্যোগগুলি পরামর্শমূলক, স্বচ্ছ, অর্থনৈতিক এবং নির্ভরযোগ্য। এর অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে বেশির ভাগ এসসিও দেশ দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ভাবে ভারতের নেতৃত্বাধীন সংযোগ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে যোগদানের বিকল্পের অন্বেষণ চালাচ্ছে৷ ২০২০ সালে নয়াদিল্লি পরিকাঠামোমূলক প্রকল্পগুলির উন্নতির জন্য মধ্য এশিয়ার  দেশগুলিকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান করেছে এবং তাজিকিস্তানের দুশানবে-চতুর্থ হাইওয়ে নির্মাণ করার মাধ্যমে ইউরেশিয়ায় তার ভূ-কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক স্বার্থকে সশক্ত করেছে।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হওয়া সত্ত্বেও ভারত দৃঢ় ভাবে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার পক্ষে আওয়াজ তুলেছে।

একটি ক্ষয়িষ্ণু আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সময় নয়াদিল্লি এসসিও-র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছিল। এই দ্বন্দ্ব গোষ্ঠীটির মধ্যে চিনের আধিপত্যবাদী এবং যুদ্ধবাজ আচরণের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মস্কোর ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে এসসিও-কে তার ভূ-কৌশলগত, ভূ-অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক সুবিধার প্রেক্ষিতে ব্লক হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে চিনের আধিপত্যবাদী স্বার্থকে সফল ভাবে খর্ব করার জন্য নয়াদিল্লি তার ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে কাজে লাগিয়েছে। ভারতের বর্ধিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ইউরেশিয়ায় এসসিও-কে একটি উন্নয়নকেন্দ্রিক সংস্থায় রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে তার অবস্থানকে সুসংহত করতে সাহায্য করেছে। পশ্চিম-বিরোধী জোট হওয়ার পরিবর্তে ভারত এই অঞ্চলের সম্মিলিত সমৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুসরণ করে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার তাত্পর্যের উপর জোর দিয়েছে।

ভারত তার কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বুদ্ধিবৃত্তিগত সম্পদকে শক্তিশালীতর করেছে এবং সংযোগ, সন্ত্রাসবাদ ও আফগানিস্তান সংক্রান্ত একটি প্রগতিশীল কর্মসূচিকে সমর্থন জুগিয়েছে। বেশ কিছু পশ্চিমী বিশ্লেষক এসসিও-কে চিন-সৃষ্ট এবং চিনা-আধিপত্যকারী গোষ্ঠী হিসাবে অভিহিত করা সত্ত্বেও ভারতের সভাপতিত্ব এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে সাহায্য করেছে। এর পাশাপাশি এসসিও সদস্য দেশগুলির জন্য ভারত নিজেকে একটি গঠনমূলক, নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত অংশীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে একটি অমূল্য মঞ্চ হয়ে উঠেছে। যাই হোক, একটি প্রাক-অধিকৃত রাশিয়া, আধিপত্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য চিনের নিরলস সাধনা, তার ভূখণ্ডের মাধ্যমে সংযোগের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের নাছোড় প্রত্যাখ্যান এবং চিন-পাকিস্তানের সুবিধাবাদী বন্ধুত্ব এসসিও-র আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করেই রাখবে।


আয়জাজ ওয়ানি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.