Expert Speak India Matters
Published on Mar 26, 2022 Updated 6 Days ago

সর্বাপেক্ষা কম সংখ্যক কৃষক থাকা সত্ত্বেও কৃষি বিক্ষোভ কেন শুধু মাত্র পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং এন ইউ জি পি-তেই সীমাবদ্ধ ছিল?

কৃষি বিক্ষোভের প্রহেলিকা

Source Image: Amal K.S. — Hindustan Times via Getty

কৃষি বিক্ষোভের প্রহেলিকা

২০২০-২১ সালের রাজনৈতিক প্রতর্কের কেন্দ্রে থাকা প্রধান দু’টি সমস্যা ছিল অতিমারি এবং সংস্কারমুখী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষি বিক্ষোভ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা কৃষি বিক্ষোভ ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে জনপ্রিয় কেন্দ্রীয় সরকারকে কৃষি আইনগুলি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে। এই কৃষি বিক্ষোভের মূল কেন্দ্র ছিল পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত নর্দার্ন আপার গঙ্গা প্লেইনস-এর (এন ইউ জি পি) জেলাগুলিতে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল যে, দেশের এই রাজ্য বা অঞ্চলগুলিতে কৃষকের সংখ্যা সর্বনিম্ন! দেশের এই তিনটি অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অনুপাত বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন এবং তা জাতীয় গড়ের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম।

দেশের এই তিনটি অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অনুপাত বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বনিম্ন এবং তা জাতীয় গড়ের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম।

২০১৮-১৯ সালের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের সর্বশেষ সাপ্তাহিক পরিস্থিতির উপরে ইউনিট লেভেল ডেটা বা একক স্তরীয় পরিসংখ্যান ব্যবহার করে প্রতিবেদনের লেখক দেখেছেন যে, কৃষিক্ষেত্রে শ্রমশক্তির অংশের পরিমাণ পঞ্জাবে ২৪%, হরিয়ানায় ২৭% এবং উত্তরপ্রদেশের নর্দার্ন আপার গঙ্গা প্লেইনসে ২৯%। অথচ জাতীয় স্তরে কৃষিক্ষেত্রে শ্রমশক্তির পরিমাণ ৪৪ শতাংশ। বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, যুব শ্রমশক্তির (৩০ বছরের কমবয়সিদের) নিরিখে পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং এন ইউ জি পি-তে কৃষিক্ষেত্রে যুব শ্রমশক্তির পরিমাণ ২০ শতাংশেরও কম, যা বড় রাজ্যগুলির মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন এবং এই পরিমাণ কৃষিক্ষেত্রে জাতীয় শ্রমশক্তির পরিমাণ অর্থাৎ ৩১ শতাংশেরও কম।

এই অঞ্চলগুলিতে কৃষি বিক্ষোভের উত্থানের নেপথ্যে থাকা কারণগুলির মধ্যে স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থানের অভাবকে একটি প্রধান কারণ রূপে বিবেচনা করা হচ্ছে। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, হরিয়ানা এবং এন ইউ জি পি-তে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ১২.২% এবং ১১%, যা জাতীয় বেকারত্বের হার অর্থাৎ ৮.৮ শতাংশের তুলনায় অনেকটাই বেশি। যদিও পঞ্জাবে বেকারত্বের হার ৯%, যা জাতীয় পরিসংখ্যানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হল এই যে, ভারতের একাধিক বড় রাজ্যে বেকারত্বের হার পঞ্জাবের চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশি হলেও সেখানে কৃষি বিলের প্রতিবাদে কোনও বিক্ষোভ সমাবেশ দেখা যায়নি। অন্যান্য বড় রাজ্যে বেকারত্বের হার, যেমন ওড়িশা (১১.৯%), কেরল (১১.৮%), বিহার (১০.৭%), তেলেঙ্গানা (১০.৪%), তামিলনাড়ু (৯.৯%), অন্ধ্রপ্রদেশ (৯.৪%), মহারাষ্ট্র (৯.২%) এবং রাজস্থান (৯.১%), পঞ্জাবের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত দুর্দশার তুলনায় আরও শোচনীয় অবস্থাকেই তুলে ধরে।

বিক্ষোভের আর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যুব সম্প্রদায়ের বেকারত্ব। যদিও হরিয়ানা, পঞ্জাব এবং এন ইউ জি পি-র সঙ্গে অন্যান্য বড় রাজ্যের তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই যে, উক্ত রাজ্যগুলিতে যুব সম্প্রদায়ের বেকারত্বের হার কেরল, বিহার, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, সামগ্রিক বেকারত্ব পরিস্থিতি অথবা যুব সম্প্রদায়ের কর্মহীনতা… কোনওটিই পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং এন ইউ জি পি রাজ্যগুলির (গত বছরের কৃষক বিক্ষোভের সময়) মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠার নেপথ্যে বিশিষ্ট কারণ ছিল না।

ফলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সংসদে প্রস্তাবিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তাত্ত্বিক ভাবে পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং এন ইউ জি পি-র দীর্ঘমেয়াদি বিক্ষোভের কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসার ঘটনা একটি প্রহেলিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিক্ষোভগুলি দেশের সেই সব অংশ থেকে যৎসামান্য সমর্থন পেয়েছে বা পায়নি বললেও চলে, যেখানে কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত জনসংখ্যার পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন থেকে যায়: ভারতে এই বিক্ষোভগুলির চালিকাশক্তি তা হলে কারা ছিলেন?

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.