Author : Shivam Shekhawat

Expert Speak Young Voices
Published on Mar 26, 2022 Updated 6 Days ago

দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আফগানিস্তানের ক্রমবর্ধমান সংকট পাকিস্তানকে কঠিন জায়গায় ঠেলে দিয়েছে।

পাকিস্তানের বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি

Image Source: Flickr user bm1632

পাকিস্তানের বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি

ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান (এসবিপি) অর্থ মন্ত্রকের আফগানিস্তানের জন্য একটি ত্রাণ তহবিল চালু করার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি। এই ঘটনার তাৎপর্য বোঝা যাবে তার সময়কাল দেখলে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এসবিপি সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর এটিই প্রথম ঘটনা যখন ব্যাঙ্ক সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করল। তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও বিলটি পাস করা হয়েছিল। দেশের অর্থনীতির শোচনীয় অবস্থা, এবং টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে এর ফলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। সরকারকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলার সময় ব্যাঙ্ক ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) থেকে নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে, এবং এই ভাবে এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় পাকিস্তানকে ধরে রাখার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসে।

এফএটিএফ-এর সাম্প্রতিক অধিবেশনে দেশটিকে ‘কালো তালিকা’-তে নামিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, আন্তর্জাতিক মান অনুসারে সংস্কার করা এবং নতুন তালিবানের নেতিবাচক বহিঃপ্রভাব রোধ করা নেতৃত্বের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইমরান খান সরকার এই ভাবে একটি অনভিপ্রেত জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে। তালিবানের পুনরুত্থানের ফলে যে ফলাফলের আশা রাষ্ট্রটি করছিল তা হয়নি, বরং দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি হামলার হার বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এফএটিএফ-এর সাম্প্রতিক অধিবেশনে দেশটিকে ‘কালো তালিকা’-তে নামিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ফলে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, আন্তর্জাতিক মান অনুসারে সংস্কার করা এবং নতুন তালিবানের নেতিবাচক বহিঃপ্রভাব রোধ করা নেতৃত্বের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান এখন কতটা বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে, এবং এর বিস্তৃত তাৎপর্য কী তা বোঝার জন্য ঐতিহাসিক ভাবে এবং বর্তমানে এই ধরনের গোষ্ঠীকে সে কী ভাবে সমর্থন দিয়েছে, কোন ধরনের গতিশীলতা এর কাজকর্মে বাধা দিয়েছে, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, তার অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার উপর তার নির্ভরশীলতার বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

কৌশলগত গভীরতার সন্ধান

আফগানিস্তানে পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড সব সময়েই এই অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে তার ভয় থেকে উদ্ভূত। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে তালিবানকে সহায়তা ও উৎসাহ দিতে ইন্টার-সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স (আইএসআই) সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটিকে তার শক্তি বাড়ানোর জন্য চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুবিধা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা তথ্য, অস্ত্রশস্ত্র এবং তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। এই অঞ্চলে পাকিস্তানের কাজকর্ম এবং তালিবানের প্রতি সমর্থন কমানোর অনীহা একেবারে শুরু থেকেই চলছে। ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের গৃহযুদ্ধ এবং দেশকে বিভক্ত করতে ভারতের সহায়তা পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের মানসিকতায় দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের বীজ বুনেছিল। এক সর্বশক্তিমান ইসলামি পরিচয় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী অশান্ত বালোচ অঞ্চল ও খাইবার পাখতুনখোয়াতে বিদ্রোহের ফলে পুরো রাষ্ট্রটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পাকিস্তানের সমর্থনও এই ভরসার উপর দাঁড়িয়ে ছিল যে তালিবান তাদের পশতুন ঐতিহ্যের চেয়ে ইসলামি পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দেবে, এবং মার্কিন মদতপুষ্ট সরকারের চেয়ে ডুরান্ড লাইন বিরোধের নিষ্পত্তিতে বেশি আগ্রহী হবে, যার ফলে ইসলামাবাদের হাতে আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণের কিছু হাতিয়ার এসে যাবে।

২০২১ সালের আগস্টে তালিবানের প্রত্যাবর্তনের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ‘দাসত্বের শৃঙ্খল’‌ ভাঙ্গার জন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটিকে অভিনন্দিত করেন, এবং সে দেশের ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা হল বলে ঘোষণা করেন। যদিও পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মধ্যে সতর্ক আশাবাদের অনুভূতি ছিল, তবু তালিবান যে দ্রুততার সঙ্গে ক্ষমতা অর্জন করেছিল সে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগও ছিল। পরবর্তী সময়ে তৈরি হওয়া মানবিক সংকটের ফলে এই অঞ্চলে অত্যন্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগেকার প্রায় ১৪ লক্ষ আফগান শরণার্থীর অতিরিক্ত আরও প্রায় ৩ লক্ষ আফগান তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর পাকিস্তানে পালিয়ে এসেছেন। এই গোষ্ঠীর বিজয় ইসলামাবাদে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদের হুমকি এবং আক্রমণ প্রতিরোধে রাষ্ট্রের অক্ষমতার মতো বিষয়গুলিকে জটিলতর করেছে। এখন সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে উঠেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), যাদের সঙ্গে আফগান তালিবান এবং এই অঞ্চলের অন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তানে আনুমানিক ৩,০০০-৫,০০০ টিটিপি জঙ্গি রয়েছে৷ ডুরান্ড লাইনে বেড়া দেওয়া নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা সহ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ এবং অন্যান্য কিছু বিষয় পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। আফগানিস্তানের জনসাধারণের ধারণাও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, এবং অনেক আফগান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটির ফিরে আসার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছেন।

এখন সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে উঠেছে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), যাদের সঙ্গে আফগান তালিবান এবং এই অঞ্চলের অন্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তানে আনুমানিক ৩,০০০-৫,০০০ টিটিপি জঙ্গি রয়েছে৷

এসব সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার নতুন জমানাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ওকালতি করছে, এবং বিশ্ব সম্প্রদায়কে তালিবান নেতাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য এবং কোনও কড়া শর্ত ব্যতিরেকে সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। যদিও তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে পাকিস্তানের ভেতরে কিছু সমর্থন রয়েছে, তবুও দেশটি কোনও একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দার পাত্র হতে চাইছে না। প্রধানমন্ত্রীর মতে, স্বীকৃতির বিষয়টি সমস্ত দেশের একটি ‘‌সম্মিলিত প্রয়াস’‌ হতে হবে, কারণ ‘‌‘‌.. আমরা যখন আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে চাইছি, সেই সময় আন্তর্জাতিক চাপ আমাদের (পাকিস্তান) পক্ষে অসহনীয় হয়ে যাবে ৷ ’‌’‌ পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দুর্বলতা স্বীকার করে খান জানিয়েছেন যে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা তাঁদের দেশে শান্তির সঙ্গে সরাসরি সমানুপাতিক, তাই নিষেধাজ্ঞাগুলি অপসারণের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে।

সঙ্কটে মানুষ

যখন মার্কিন বাহিনী কাবুল ত্যাগ করল এবং তালিবানরা দেশের লাগাম হাতে নিল, সেই সময়েই মার্কিন বাহিনী এবং তালিবানের মধ্যে যুদ্ধের কারণে আফগানিস্তানের জনগণ অসংখ্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছিল। কারজাই সরকারের সময় দেশের জিডিপি–র ৪৫ শতাংশ এবং সরকারের ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ নির্ভরশীল ছিল বৈদেশিক সহায়তা অনুদানের উপর। তালিবানের ক্ষমতা দখলের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আফগানিস্তানের জনগণ নিরবচ্ছিন্ন কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন। তালিবানের হাতে যাতে টাকা চলে না–যায় সেই উদ্দেশ্যে তহবিল ফ্রিজ করার ঘটনা আফগান জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করেছে।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দুর্বলতা স্বীকার করে খান জানিয়েছেন যে আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা তাঁদের দেশে শান্তির সঙ্গে সরাসরি সমানুপাতিক, তাই নিষেধাজ্ঞাগুলি অপসারণের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে।

জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্টনি গুতেরেস ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার চেয়ে কোনও একটি দেশের জন্য ‘‌এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় আবেদন’‌ জানিয়েছিলেন আফগানিস্তানে হিউম্যানেটারিয়ান রেসপন্স প্ল্যান–এর স্বার্থে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমী দেশগুলি আন্তর্জাতিক সংস্থা বা বিভিন্ন এনজিও–র মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি সাহায্য পাঠানোর উপায় খতিয়ে দেখছে, এখনও সাহায্য বিতরণ নিয়ে নানা রকমের উদ্বেগ রয়েছে। আফগান টাকা ছেপে দিয়ে বা ক্রেডিট লাইন প্রসারিত করার মাধ্যমে, অথবা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ডা আফগানিস্তান ব্যাঙ্ক (ডিএবি)–কে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সে দেশের ব্যাঙ্কিং সঙ্কট কাটানোর উপায় নিয়ে ইসলামাবাদে নীতিনির্ধারকেরা আলোচনা করেছেন৷ তবে নিষেধাজ্ঞার ভয়ে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্কগুলো সরাসরি ডিএবি–র সঙ্গে লেনদেন করতে নারাজ। কাবুলে পাঠানো সহায়তার সমন্বয়ের জন্য তালিবান তাদের কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি যৌথ সংস্থা গঠনের প্রস্তাবও করেছিল, কিন্তু এই প্রস্তাবটিকেও ওই গোষ্ঠীর টাকাপয়সা আত্মসাৎ করার ছল হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সন্দেহের চোখে দেখেছে।

আফগানিস্তান ত্রাণ তহবিল

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রক ৮ ডিসেম্বর আফগানিস্তানের জনগণের মানবিক চাহিদা মেটাতে ‘অবিলম্বে কার্যকর’‌ হবে এমন একটি তহবিলের কথা ঘোষণা করে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় দাতাদের অনুদানের পাশাপাশি বিদেশ থেকে পাঠানো সাহায্যের জন্য উন্মুক্ত এই তহবিল সংক্রান্ত আদেশটি এসবিপি–তে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এসবিপি এই প্রথম সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। ব্যাঙ্ক সরকারকে এফএটিএফ-কে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পটভূমিতে তার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে বলে। এফএটিএফ হল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা ২০১৮ সালে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাস-অর্থায়ন রোধ মান লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করেছিল। ব্যাঙ্কের মতে মানসম্পন্ন যে কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এড়িয়ে যাওয়া বা ব্যাঙ্কিং চ্যানেলগুলির মাধ্যমে উল্লিখিত তহবিল বিতরণ আর্থিক নজরদারি সংস্থাটির তরফ থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনার সম্ভাবনা তৈরি করবে। ব্যাঙ্ক পরামর্শ দিয়েছে যে এর পরিবর্তে ত্রাণ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করা বা জিনিসপত্রের মাধ্যমে দেওয়া উচিত। এই প্রত্যাখ্যানের পর অর্থ মন্ত্রক বিষয়টি পর্যালোচনার ভার দিয়েছে আইন, অর্থনীতি বিষয়ক ও বিদেশ সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলির উপর।

ব্যাঙ্কের মতে মানসম্পন্ন যে কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এড়িয়ে যাওয়া বা ব্যাঙ্কিং চ্যানেলগুলির মাধ্যমে উল্লিখিত তহবিল বিতরণ আর্থিক নজরদারি সংস্থাটির তরফ থেকে আরও নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।

২০২১ সালের অক্টোবরে শেষ প্লেনারির পরে প্যারিসে ওয়ার্কিং গ্রুপ ও গ্রুপের সাম্প্রতিক পূর্ণাঙ্গ বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এফএটিএফ-এর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সংস্থাটি পাকিস্তানকে ধূসর তালিকায় রেখেছে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটি ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রফতানিতে প্রায় ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, এবং সঙ্কোচনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৩৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে সংস্থার সভাপতি মার্কাস প্লেয়ার পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রশ্নে কোনও আলোচনা নাকচ করে দেন, কারণ দেশটি ৩৪টি অ্যাকশন আইটেম–এর মধ্যে ৩০টি পূর্ণ করেছে। প্যারিসে এফএটিএফের কার্যালয়ে আফগান, বালোচ ও উইগুরদের বিক্ষোভ সংগঠনটিকে সন্ত্রাসবাদের প্রসারে পাকিস্তানের ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে, দেশটিকে কালো তালিকার আওতায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। এই ঘটনা পাকিস্তানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তার জনগণের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু প্রবাসীদের, কতটা অবিশ্বাস আছে তা তুলে ধরেছে। পাকিস্তানে রাজনৈতিক এলিটরা অবশ্য দেশটিকে ধূসর তালিকায় রাখাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। সম্প্রতি তাঁর সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেন, ‘‌‘‌দেশ এফএটিএফ–এর সমস্ত প্রযুক্তিগত দাবি পূরণ করেছে, এবং শুধু গ্রুপের কিছু সদস্যের কারণে প্রহরী সংস্থাটি দেশকে ধূসর তালিকা থেকে অপসারণ করতে অস্বীকার করেছে।”

জলে কুমির ডাঙায় বাঘ

কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে আরও স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বিলটি অনেক বিতর্ক ও বিরোধের পর পাস হয়েছিল। এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফেসিলিটি–র আওতায় আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার (আইএমএফ) থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হিসেবে সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া সরকারের অবশ্য আর কোনও বিকল্প ছিল না। বিলটিতে বলা হয়েছে যে ব্যাঙ্ক সরকার সহ কোনও সংস্থার কাছ থেকে নির্দেশ বা অনুরোধ স্বীকার করবে না, এবং সরকারকে সরাসরি ঋণ দেবে না। বিরোধীরা এটিকে ‘‌জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরোধী’‌ বলে অভিহিত করেছে,‌ এবং এটি পাস হওয়ার একদিন পরে আদালতে তা চ্যালেঞ্জ করেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলেরও এর কিছু ধারা সম্পর্কে আপত্তি আছে। যাই হোক, যখন বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বী এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা দিন দিন বেড়ে চলেছে, তখন একথা কল্পনা করা কঠিন যে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক দাবিগুলি অস্বীকার করে নিজের পথে হাঁটবে। এই দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তানের পক্ষে তার নিজের সুবিধার জন্য আফগানিস্তানের পরিস্থিতি প্রভাবিত করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান এখন তালিবান শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দরবার করছে;‌ কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি কী ভাবে হবে সে সম্পর্কে যে হেতু পাকিস্তানের কোনও ধারণা বা সংস্থান নেই, তাই সংকট মোকাবিলার কোনও উপায়ও তার হাতে নেই।

একটি সহজ উপায় হল দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের দমন করা এবং স্বীকার করা যে তার সামরিক-গোয়েন্দা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। তা হলে আন্তর্জাতিক চাপের কিছুটা উপশম হতে পারে। যাই হোক তেমন সম্ভাবনা খুব একটা আছে বলে মনে হয় না, কারণ তা হলে দেশটির দর কষাকষির ক্ষমতা কমে যাবে এবং সামরিক বাহিনী ও আইএসআই-এর আপাত অপরাজেয়তার ছবিটিও চুরমার হয়ে যাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.