পাকিস্তান: অস্থিরতা সৃ্ষ্টিকারী রায়ের পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ
১৭ জুলাই পাঞ্জাবের ২০টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন পাকিস্তানের ভঙ্গুর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে। ফলাফলগুলি সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল বলে দাবি করা নিছকই কমিয়ে বলা হবে। নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক পণ্ডিতদের মধ্যে কার্যত ঐকমত্য ছিল যে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পি এম এল এন) এই আসনগুলির অর্ধেকের বেশি জিতে নেবে। বিতর্কের একমাত্র বিষয় ছিল বিজয়ের মাত্রা ও ব্যবধান নিয়ে। কিন্তু পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণীর বিপরীতে পি এম এল এন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে, এবং ২০টি আসনের মধ্যে মাত্র চারটি আসনে জয়লাভ করতে পেরেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, যিনি গত এপ্রিলে অনাস্থা প্রস্তাবে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, অত্যাশ্চর্য প্রত্যাবর্তন করেছেন এবং ১৫টি আসন জিতেছেন, যার মধ্যে অনেকগুলি উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে। আশ্চর্যের কথা নয় যে ইমরান দাবি করছেন তিনি অবিলম্বে আগাম সাধারণ নির্বাচনের করার যে দাবি করছেন তাতে জনগণের সমর্থন পেয়ে গিয়েছেন।
এই নির্বাচনগুলি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই কারণে যে এই ফলাফলের উপর শুধু পাঞ্জাবের হামজা শাহবাজের নেতৃত্বাধীন পি এম এল এন সরকারের ভাগ্যই নির্ভরশীল ছিল না, সেই সঙ্গে তাঁর পিতা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন ইসলামাবাদের ফেডারেল সরকারের ভাগ্যও নির্ভরশীল ছিল। আবার ফেডারেল সরকারের টিকে থাকার সঙ্গে জড়িত নভেম্বরে সর্বশক্তিমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান কে হবেন সেই বিষয়টি। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার আরেক বার মেয়াদবৃদ্ধি হবে, না নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগ করা হবে, তা নির্ভর করছে রাজনীতি কীভাবে চলবে তার উপর। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাকিস্তানের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন ছিল খুব বেশি, যাতে কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পি এম এল এন–এর ক্ষতির অর্থ অর্থনৈতিক সংস্কারের সমাপ্তি, যা কিনা আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের (আই এম এফ) প্রোগ্রাম বিপন্ন করতে পারে। এখন রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য অদূরদর্শী ও ভ্রান্ত জনপ্রিয়তাবাদের (পপুলিজম) প্রয়োজন হবে, কারণ পি এম এল এন–এর বিপর্যয়ের প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে ছিল জ্বালানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের চড়া বৃদ্ধি এবং বিদ্যুতের শুল্কের আসন্ন বৃদ্ধি, যেগুলি এনহ্যান্সড ফান্ড ফেসিলিটি (ইএফএফ) প্রোগ্রাম আবার চালু করার জন্য আই এম এফ–এর বাধ্যতামূলক পদক্ষেপের অংশ।
সোজা কথায় পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা নির্ভর করছিল উপনির্বাচনের উপর। ফলাফল যা এল তা কিছু দুঃস্বপ্নকে সত্য করে তুলল।
অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইলের সাহসী দাবি যে তিনি পাকিস্তানকে খেলাপি ও দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু এর রাজনৈতিক অনুরণন দরিদ্র জনগণের মধ্যে তেমন শোনা যাচ্ছে না। তারা তাঁকে এবং পি এম এল এন সরকারকে দায়ী করছে তাদের দেউলিয়া করে দিয়ে পাকিস্তানের অভিজাতদের বাঁচানোর জন্য, যাদের সামান্য ক্ষতিও হয়নি। তাদের সুযোগ–সুবিধাগুলি সুরক্ষিত রেখে শুধু জনগণকে সব কিছু ত্যাগ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইসমাইলের বিপরীতে, যে রাজনীতিবিদদের জনগণের কাছ থেকে রায় চাইতে হয় তাঁদের কাছে তাঁর ‘আলোড়নকারী’ শব্দগুলির বা পাকিস্তানকে আসন্ন খেলাপি অবস্থা থেকে বাঁচাতে রাজনৈতিক ত্যাগের চেতনার কোনও দাম নেই।
সোজা কথায় পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা নির্ভর করছিল উপনির্বাচনের উপর। ফলাফল যা এল তা কিছু দুঃস্বপ্নকে সত্য করে তুলল। কাগজে–কলমে পাঞ্জাবে সরকার হারানো ফেডারেল সরকারের টিকে থাকাকে সত্যিই প্রভাবিত করে না। কিন্তু প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে, একটি বৈরী ও দ্বন্দ্ববাদী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে লাহোর হারানোর পর ইসলামাবাদে ফেডারেল সরকার পরিচালনা করা অসম্ভব না–হলেও অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাব, উভয়েরই নিয়ন্ত্রণ যদি পি টি আই–এর হাতে থাকে, তাহলে ইসলামাবাদ সব সময়েই ইমরানপন্থীদের অবরোধের মধ্যে থাকবে।
হামজা আপাতত একটি সাংবিধানিক এবং বিচারবিভাগীয় উপায় ব্যবহার করে টিকে গেলেন। কিন্তু হামজার মুখ্যমন্ত্রিত্ব যেন–তেন–প্রকারেণ টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালানোর সময় পাঞ্জাব এবং পাকিস্তান উভয়ই দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়েছে৷ সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। ইমরান যদি শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব দখল করতে পারেন, তা হলে ফেডারেল সরকার চালানো অসম্ভব হবে। আবার হামজা যদি টিকে থাকতে পারেন, তাহলে ইমরান পাকিস্তানের রাজপথে মারদাঙ্গা শুরু করিয়ে দেবেন, শাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কারকে অসম্ভব করে তুলবেন। আবার এসবের মধ্যে সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করলে তার নিজস্ব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া হবে, যার মধ্যে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে যা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার অবস্থান অত্যন্ত নড়বড়ে হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। আরও খারাপ ঘটনা হল সেনাবাহিনীর রাজনীতি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে গেছে বলে মনে হচ্ছে। জেনারেল বাজওয়ার আরেকটি মেয়াদবৃদ্ধির সম্ভাবনা এখন ক্রমশই কমে যাচ্ছে, তা শাহবাজ সরকার নভেম্বরে বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত টিকে থাকুক বা না–থাকুক। যদিও জেনারেল বাজওয়া রাজনীতি থেকে দূরে থাকার জন্য পুরো বাহিনীর জন্য নির্দেশ জারি করেছিলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনী বিপর্যয় থেকে হাত ধুয়ে ফেলতে পারবে না, এবং এমন ভান করতেও পারবে না যে সব কিছু যেমন চলছিল তেমনই চলছে। ইমরান খান শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে ধেয়ে আসছেন একেবারে প্রকাশ্যে। ইমরান জেনারেল বাজওয়াকে তির্যকভাবে ‘মির জাফর ’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন, অর্থাৎ একজন বিশ্বাসঘাতক যিনি পাকিস্তানে শাসন পরিবর্তনের জন্য তথাকথিত মার্কিন মদতপুষ্ট ষড়যন্ত্রে অংশ নিয়েছিলেন। পিটিআই তার ট্রোল বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে, এবং তারা শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে আক্রমণ করে চলেছে, যা পাকিস্তানে বেশ নজিরবিহীন ঘটনা।
যে সেনাবাহিনী সাধারণত এ ধরনের যে কোনও কর্মকাণ্ডকে দমন করে, আশ্চর্যের বিষয় হল তারা নিজেদের অসহায় মনে করছে। এর একটি কারণ ক্ষমতার অলিন্দে অনুচ্চে যা শোনা যায় এবং মিডিয়াও যে ইঙ্গিত দেয়, সেই অনুযায়ী ইমরান খানকে নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্য, এমনকি বিভাজনও রয়েছে: কেউ কেউ তাঁকে মেগালোম্যানিয়াক হিসেবে দেখেন, যিনি দেশের জন্য এবং সেনাবাহিনীর উপর আধিপত্যের জন্য বিপজ্জনক; আবার অন্যদের কাছে তিনি পাকিস্তানকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে বের করে আনার একমাত্র ভরসা। তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন, ইমরান খান একাধিকবার টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনীর উপর নির্ভর করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি অনুভব করেন যে তাঁর আর সামরিক বাহিনীর ক্রাচের প্রয়োজন নেই, এবং তিনি ‘এসট্যাবলিশমেন্ট’কে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, এমনকি তাঁর সামনে নতজানু করতেও পারেন। সামরিক কর্তাদের দ্বিধা হল যে ইমরানের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করলে তা শুধু সেনাবাহিনীর উচ্চস্তরে বিভাজনই প্রকাশ্যে নিয়ে আসবে না, ইমরানের সমর্থনে বড় আকারের গোলযোগের সম্ভাবনাও তৈরি করবে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী যদি কিছু না করে, তবে ইমরান শুধু সরকারকে অস্থিতিশীল করবেন না, সেই সঙ্গে সামরিক কর্তাদের বিরুদ্ধেও এগোবেন। তিনি সেনাবাহিনীর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন জেনারেলদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে, আর এইভাবে পাকিস্তানের একমাত্র সত্যিকারের কার্যকরী প্রতিষ্ঠানের সংহতি নষ্ট হয়ে যাবে।
রাজনৈতিকভাবে, এই নির্বাচনী পরাজয় অনেক বর্তমান এবং সম্ভাব্য মিত্রদের খুবই বিচলিত করে তুলেছে। এখন অকস্মাৎ পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে পিএমএলএন–কে আর নিশ্চিত বিজয়ী বলে মনে হচ্ছে না। যে রাজনীতিকরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পিএমএলএন–এর দিকে তাকিয়ে ছিলেন, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছেন। ক্ষমতাসীন জোটের ভেতর থেকে ইতিমধ্যেই অসন্তোষের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে জোটের অংশীদাররা ঘোষণা করেছে যে সরকার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অবশিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করবে, কিন্তু খবর আসছে পর্দার আড়ালে মিত্রেরা অস্থির হয়ে পড়েছে। তারা জোটে থাকবে কি না তা নির্ভর করছে সামরিক স্থাপনা থেকে পাওয়া সংকেতের উপর। সেনাবাহিনী যদি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে ইসলামাবাদের সরকার অক্ষম এবং আগাম নির্বাচন অনিবার্য, তাহলে মুত্তাহিদা কৌমি মুভমেন্ট (এম কিউ এম) ও বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি (বি এ পি)–র মতো ছোট দলগুলি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে, এবং এই বছরের পরের দিকে, সম্ভবত অক্টোবরে, নির্বাচনের সম্ভাবনা জোরদার হয়ে উঠবে। তা না হলে এই সরকার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকবে। আপাতত কিন্তু আগামী আগস্টে বর্তমান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত এই সরকার থেকে যাওয়া খুবই সমস্যাসঙ্কুল বলে মনে হচ্ছে।
আসন্ন অর্থনৈতিক পতন
উপনির্বাচনের ফলাফলের কারণে উদ্ভূত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব ইতিমধ্যেই অর্থনীতিতে অনুভূত হচ্ছে, যা এখন উদ্বেগজনক গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলাফলের পর থেকে পাঁচ দিনে পাকিস্তানি রুপি মার্কিন ডলারের তুলনায় প্রায় ২৫ টাকা কমে যায় (১০ শতাংশের বেশি) এবং ২৩০–এ তার লেনদেন হয়। খোলা বাজারে মার্কিন ডলার ২৪০–এও পাওয়া যাচ্ছিল না। রুপির পতনের ফলে পাকিস্তানের স্টেট ব্যাঙ্ক আমদানিকারীদের অর্থ আটকে দিয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু রিপোর্ট অনুসারে, ৬০টির মতো জরুরি ওষুধ বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলি পাকিস্তানকে নিম্নতর মানে অবনমিত করে বাণিজ্যিক ঋণ পাওয়া অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারগুলি ইতিমধ্যেই ঋণশোধে ব্যর্থতা আশঙ্কা করছে, এবং পাকিস্তানের বন্ডের সুদের হার ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। পাকিস্তানের ‘বন্ধু’রা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তানের পলিসি রেট ১৫ শতাংশ, যার অর্থ বাণিজ্য ও শিল্পকে ১৭–২০ শতাংশ সুদের হার বহন করতে হচ্ছে। এদিকে, বিদ্যুতের দর এখনও বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে, এবং রুপির পতনের কারণে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে, যা কিনা আরও বেশি মূল্যস্ফীতি ডেকে আনতে পারে।
কিন্তু পাকিস্তানে আসন্ন অর্থনৈতিক পতন একটি সাইড–শো। মূল ফোকাসে রয়ে গেছে রাজনৈতিক টানাপড়েন। এটা প্রায় জনগণ এবং ক্ষমতার অভিজাতদের মৃত্যু–আকাঙ্ক্ষার মতো। পাকিস্তান আজ মুঘল সাম্রাজ্যের সময়কার শেষ দিনগুলির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে দেখা গিয়েছিল যখন হানাদাররা দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে তখন অভিজাতরা কে উজির হবেন তা ঠিক করার জন্য দরবারের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, ইসলামাবাদের ক্ষমতাসীন জোট এখন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছে: তার একটি আগাম নির্বাচন ডাকার সামর্থ্যও নেই, কারণ উপনির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে ইমরান খানের পিছনে রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। আবার বিরোধী পক্ষ চণ্ডমূর্তি ধারণ করায় ক্ষমতাসীন জোটটির পক্ষে প্রশাসন চালানো ও শাসন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে, আর তার রাজনৈতিক পুঁজি পুনরুদ্ধার করার মতো পদক্ষেপও করতে পারবে না।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অর্থ হল অর্থনীতিকে পতন থেকে রক্ষা করার জন্য আরও তিক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়া, যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আরও বেশি করে জনগণকে বিরূপ করে তুলবে। সরকার পক্ষের লোকজন যেমনটি আশা করছে এবং দাবি করছে, সেইভাবে আগামী বছরের শেষের দিককার নির্বাচনের আগে অর্থনীতির মোড় ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যাই হোক, সরকার যদি জনপ্রিয়তাবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে, তবে তা শুধু অর্থনীতিকে শেষ অবস্থার দিকেই ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে না, বরং বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে। সেক্ষেত্রে এটি সব প্রেক্ষিতেই সবচেয়ে খারাপ হবে, অর্থাৎ কিনা চলিত ভাষায় যেমন বলা হয় সেভাবে একসঙ্গে ‘১০০টি পেঁয়াজ খাওয়া এবং ১০০টি বেত্রাঘাত’ নেওয়ার সামিল হবে।
মূল কথা হল শাহবাজ শরিফ সরকারের ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই। সম্ভাবনা হল সরকার কয়েক সপ্তাহের বেশি টিকবে না, খুব বেশি হলে আরও কয়েক মাস। কিন্তু যদি জোর করে নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে অন্তত তিন মাসের জন্য গোটা দেশ অচলাবস্থায় চলে যাওয়া।
মূল কথা হল শাহবাজ শরিফ সরকারের ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই। সম্ভাবনা হল সরকার কয়েক সপ্তাহের বেশি টিকবে না, খুব বেশি হলে আরও কয়েক মাস। কিন্তু যদি জোর করে নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে এর অর্থ হবে অন্তত তিন মাসের জন্য গোটা দেশ অচলাবস্থায় চলে যাওয়া। এই সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই তিন মাসে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তার উপর নির্ভর করবে অর্থনীতি বাঁচবে কি না। যদিও আই এম এফ ঘোষণা করেছে যে তারা তত্ত্বাবধায়ক কোনও সরকারের সঙ্গেও কথা বলতে তৈরি, নির্বাচনে লড়তে যাওয়া রাজনীতিবিদরা এই পদক্ষেপগুলির দায় অস্বীকার করবেন। তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেবেন যে জয়ী হলে এই ব্যবস্থাগুলিকে তাঁরা উল্টে দেবেন৷ অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না। তাছাড়া আমলাতন্ত্র অর্থনৈতিক বা প্রশাসনিক বা এমনকি কূটনৈতিক বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না, এবং পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে।
বাজওয়া বা অন্য কারওই ভারতের সঙ্গে সারগর্ভ কিছু করার মতো রাজনৈতিক ওজন অবশিষ্ট নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর একই গান গাইছে না, এবং সেনাপ্রধানের কথার তেমন গুরুত্বও নেই, কারণ সেনাপ্রধান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তার পিছনে আর ঐকমত্য নেই।
পাকিস্তানে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তা থেকে ভারতের অনেক কিছু শেখার আছে। যে চিরন্তন এবং সংশোধন–অযোগ্য আশাবাদীরা পাকিস্তানের সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক তৈরির সুযোগের একটি জানালা খোলা দেখছিল, তাদের এই সত্যটি জানা দরকার যে প্রবাদের জানালা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। জেনারেল বাজওয়া ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংযোগের জন্য যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তার স্বরূপ উদ্ঘাটিত হচ্ছে। বাজওয়া বা অন্য কারওই ভারতের সঙ্গে সারগর্ভ কিছু করার মতো রাজনৈতিক ওজন অবশিষ্ট নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর একই গান গাইছে না, এবং সেনাপ্রধানের কথার তেমন গুরুত্বও নেই, কারণ সেনাপ্রধান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তার পিছনে আর কোনও ঐকমত্য নেই। এমনিতেও এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই বাজওয়ার উত্তরসূরি বাজওয়া যা করতে সম্মত হয়েছেন তা বজায় রাখবেন বা রাখতে আগ্রহী হবেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিষ্ফল সম্পৃক্ততায় সময় নষ্ট করার পরিবর্তে, ভারতের স্বার্থ আরও ভালভাবে রক্ষিত হবে পাকিস্তানে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কৌশলগত ও কূটনৈতিক পরিণতির জন্য প্রস্তুত হতে তার সংস্থান কাজে লাগালে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.