Author : Amish Raj Mulmi

Published on Apr 23, 2024 Updated 0 Hours ago

দেশে অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবে প্রতিদিন ১,৭০০ নেপালি বিদেশে চলে যাচ্ছেন, আর গন্তব্যের মধ্যে আছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধস্থলও

নেপালের যুবারা দলে দলে দেশ ছাড়ছেন

পোখরার পশ্চিমে একটি শহর সায়াংজার-‌এর ২৩ বছর বয়সী হরি আরিয়ালের জন্য নেপাল সেনাবাহিনীতে চাকরি যথেষ্ট ছিল না। তিনি দুই বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তাঁর বেতনক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং পদত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী নেপালিদের পোস্ট করা ভিডিওগুলি না–দেখা পর্যন্ত তাঁর বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। তারপর এই সম্ভাবনায় উচ্ছ্বসিত আরিয়াল একজন মধ্যস্থের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি তাঁকে পর্যটন ভিসায় দুবাই এবং পরবর্তীতে রাশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। ৪ ডিসেম্বর ২০২৩-এ আরিয়াল তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় রুশ সামরিক পোষাক পরিহিত ছবিসহ একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যার ক্যাপশন ছিল:‌ 'জীবন এমনই'। এরপর আরিয়ালের পরিবার আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।

২ জানুয়ারি ২০২৩-এ নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে যে আরিয়াল ও অন্য দুই নেপালি যুদ্ধে
নিহত হয়েছেন। তাঁদের নিয়ে এই দূরবর্তী যুদ্ধে নেপালি হতাহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩। আনুষ্ঠানিকভাবে, কমপক্ষে ২০০ নেপালি রুশ সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন বলে জানা গিয়েছে। বেসরকারিভাবে, সংখ্যা আরও

 

বেশি হতে পারে। অভিবাসন বিভাগের পরিসংখ্যান দেখায় যে ১,৮৯০ জন নেপালিকে ২০২৩ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের পর্যটক ভিসা দেওয়া হয়েছিল, যাঁদের বেশিরভাগই, কর্মকর্তাদের মতে, আর ফিরে আসেননি। ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা X-এ একজন বন্দী নেপালি সৈন্যের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, এবং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অন্তত চারজন নেপালিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী বন্দী করেছে। নেপাল সরকার নেপালি নাগরিকদের নিয়োগ বন্ধ করার জন্য মস্কোতে একাধিক কূটনৈতিক নোট পাঠিয়েছে, এবং পরবর্তী নির্দেশ না–দেওয়া পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের সমস্ত কাজের অনুমতি স্থগিত করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। বিদেশমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে, রাশিয়া নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত। তবে এর পদ্ধতিটি এখনও স্পষ্ট নয়।


ইউক্রেনের একজন সরকারি কর্মকর্তা X-এ একজন বন্দী নেপালি সৈন্যের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, এবং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অন্তত চারজন নেপালিকে ইউক্রেনীয় বাহিনী বন্দী করেছে।



কিন্তু এই প্রচেষ্টা অনেক দেরিতে শুরু হয়েছে।
বিদেশমন্ত্রীর মতে একশোর বেশি নেপালি পরিবার তাঁদের পরিবারকে উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। 'প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেটওয়ার্ক'সহ অসাধু মধ্যস্বত্বভোগীরা আরিয়ালের মতো কয়েকশো নেপালিকে উপসাগরীয় রাজ্যগুলির মাধ্যমে ছাত্র ও পর্যটন ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় যেতে সহায়তা করেছে, যেখানে তাঁদের প্রতি মাসে নেপালি রুপিতে ৪০০,০০০ রুপি (প্রায় ৩,০০০ ডলার) পর্যন্ত বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এবং এমনকি ফাস্ট-ট্র্যাক করা রুশ নাগরিকত্বেরও। এই এজেন্টরা নেপালিদের রুশ যুদ্ধের ফ্রন্টে যাতায়াতের জন্য জনপ্রতি ৫০০,০০০ নেপালি রুপি পর্যন্ত  চার্জ করে। রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে একজন অজ্ঞাতনামা নেপালি যোদ্ধা এনপিআরকে বলেছেন, ‘দারিদ্র্য বিভিন্ন দেশের লোকদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য ঠেলে দিচ্ছে এবং তারা যতটা সম্ভব নিয়োগ করছে।’‌

দেশে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব প্রতিদিন কমপক্ষে ১,৭০০ নেপালিকে
বিদেশে উড়ে যেতে বাধ্য করছে, এবং দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট মরিয়া নেপালিদের কাছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একটি লাভজনক গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। নেপালের বাইরে চলে যাওয়ার ইচ্ছা এতটাই ব্যাপক যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় জাহাজ নির্মাণের চাকরির জন্য ভাষা দক্ষতার পরীক্ষায় ৩০,০০০ জনেরও বেশি আবেদন করেছিলেন। কোরিয়ার কর্মসংস্থান বিধি একই বছরে একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করতে বাধা দেয়। তাই যাঁরা ভাষা পরীক্ষায় ফেল করেছেন তাঁরা ম্যানুফ্যাকচারিং চাকরির জন্য পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁদের বিক্ষোভের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে দুই নেপালি নিহত হন, এবং একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

নেপালি অভিবাসীরা কখনই যুদ্ধ ও সংঘাতের সঙ্গে অপরিচিত ছিল না। দুটি বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১০০,০০০ গোর্খাকে সারা বিশ্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে দ্বিতীয় ইরাক যুদ্ধের শীর্ষপর্যায়ে ১২ জন নেপালি
নির্মাণ শ্রমিককে একটি ইসলামপন্থী গোষ্ঠী অপহরণ করে হত্যা করে, যার ফলে দেশজুড়ে ব্যাপক মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়। ২০ বছরেরও বেশি সময় পরে, ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুসারে প্রায় ২.১ মিলিয়ন নেপালি নেপালের বাইরে বাস করেন, যা মোট জনসংখ্যার ৭.৪ শতাংশ। তাঁদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ নারী, এবং সকল কর্মীর গড় (‌মিডিয়ান)‌ বয়স ছিল মাত্র ২৮। ২০২৩ সালে নেপালি কর্মীরা ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা জাতীয় জিডিপির ২৭ শতাংশ। নেপালের রেমিট্যান্স-টু-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির একটি, এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। নেপালিরা অন্তত ১৫০টি দেশে কাজ করছেন বলে জানা যায়, তবে দেশটি এর এক-‌দশমাংশেরও কম দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।


দেশে কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭০০ নেপালিকে বিদেশে উড়ে যেতে বাধ্য করছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নেপালিদের জন্য একটি লাভজনক গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।



এমনটা নয় যে শুধু অভিবাসী নেপালি কর্মীরা বিদেশে আছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় চিনা ও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের পরে সংখ্যায় তৃতীয় নেপালি শিক্ষার্থীরা, এবং দেশটিতে প্রায় ৫২,০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। নেপালি সম্প্রদায় হল অস্ট্রেলিয়ার ১১তম বৃহত্তম অভিবাসী সম্প্রদায়। ২০২১ সালে ছিলেন ১২৯,৮৭০ জন নেপালি, যা ২০১১ থেকে পাঁচগুণ বেশি। একইভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেপালিরা ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুসারে দ্রুত বর্ধনশীল এশীয় অভিবাসী জনসংখ্যা:‌ ২০১০ সালের ৫১,৯০৭ থেকে ২০২০ সালে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ২০৫,২৯৭। প্রায় ১২,০০০ নেপালি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়ন করে, যা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য ১২তম প্রধান স্থান তৈরি করে।

এই সবই 'গ্লোবাল নেপালি' শব্দবন্ধটিকে নতুন অর্থ দেয়। জমানা বজায় রাখাকে অগ্রাধিকার দেয় এমন সরকারের কাছে অর্থনীতির অগ্রাধিকার কম থাকায় বিদেশে নেপালিদের সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে যাঁরা ঘরে ফিরেছেন তাঁদের ১৬ শতাংশ
বেকার ছিলেন। এইভাবে নেপালিরা অন্যান্য দেশের জন্য শ্রমের একটি বিশাল পুল তৈরি করেছেন। অভিবাসী নেপালি কর্মীরা এখন অনুপস্থিত অবস্থায় ভোটাধিকারের দাবি করেন। কাঠমান্ডু সম্প্রতি ভোটের অধিকার ছাড়াই অনাবাসী নেপালিদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের পথ প্রশস্ত করেছে। এদিকে নেপালিরা বৈশ্বিক সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ধরা পড়েছেন। সব মিলিয়ে অভিবাসী নেপালি এখন একটি ঘরোয়া রাজনৈতিক সমস্যাও।


নেপালিরা কেন বিদেশে পাড়ি জমান?

নেপালিরা সবসময়ই অর্থনৈতিক কারণে দেশের বাইরে গিয়েছেন। যদিও বাণিজ্য ছিল ঐতিহাসিক কারণগুলির মধ্যে একটি, দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার অধীনে অভিবাসনের গতি বাড়ে। তখন সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ এবং হাজার হাজার লোককে উত্তর-পূর্ব ভারতের চা বাগানে কাজের প্রলোভন তৈরি করে, যা ভারতে প্রথম বিশাল নেপালি ডায়াস্পোরা গঠন করে। ।


১৯৯০-এর দশকে নেপালের উদারীকৃত পাসপোর্ট জমানা, যা সময়ের দিক থেকে উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে শ্রমের চাহিদা এবং মাওবাদী গৃহযুদ্ধের সূচনার সঙ্গে মিলে যায়, সবই পরবর্তীকালে তৃতীয় দেশে অভিবাসনে অবদান রাখে।



আজও ভারত নেপালি অভিবাসীদের জন্য একটি প্রাথমিক গন্তব্য রয়ে গিয়েছে, এবং সেখানে ২.৫-৫ মিলিয়ন নেপালি রয়েছেন। ১৯৯০-এর দশকে নেপালের উদারীকৃত পাসপোর্ট জমানা, যা সময়ের দিক থেকে উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে শ্রমের চাহিদা এবং মাওবাদী গৃহযুদ্ধের সূচনার সঙ্গে মিলে যায়, সবই পরবর্তীকালে তৃতীয় দেশে অভিবাসনে অবদান রাখে। ২০০৮ সালে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি সত্ত্বেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নেপালিরা বিদেশে যাওয়া অব্যাহত রেখেছেন। ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২-‌এর মধ্যে সরকার ৪.৭ মিলিয়নেরও বেশি নতুন শ্রম পারমিট
জারি করেছে

আজ
সাতটি দেশে —কাতার, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই) ও মালয়েশিয়ায়—সমস্ত নেপালি অভিবাসীর ৮০ শতাংশ রয়েছেন। পর্তুগাল, মাল্টা, ক্রোয়েশিয়া ও রোমানিয়ার মতো ইউরোপীয় দেশগুলিতেও নেপালি অভিবাসী জনসংখ্যা প্রচুর, আর এশিয়ায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া হল দুটি পছন্দের গন্তব্য। কোশি ও মাধেশ প্রদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেপালি অভিবাসী এসেছেন। ২০১১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে সমস্ত নেপালি পরিবারের ৫৬ শতাংশের অন্তত পরিবারের একজন সদস্য বিদেশে থাকেন।

এই অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স নেপালি অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে এবং পরিবারগুলোকে নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য থেকে বার করে আনতে সাহায্য করেছে। রেমিট্যান্স আশ্চর্যজনকভাবে নেপালের বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের কেন্দ্রীয়
ব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে রেমিট্যান্স প্রাপ্ত পরিবারগুলির দরিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা ২.৩ শতাংশ কম, এবং প্রতি ১০ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবারের দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ১.১ শতাংশ কমে যায়৷ আবার একই সময়ে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে উপভোগ বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয়ও প্রচুর বেড়েছে।


রেমিট্যান্সের কারণে মূলধন গঠন কম হয়, এবং একটি সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ক্রমাগত কম কৃষি উৎপাদনশীলতাও বহির্গমনের কারণে শ্রমিকের ঘাটতির ফলাফল হতে পারে।



যদিও কেউ যুক্তি দিতে পারেন যে নেপালে নিম্ন-আয়ের পরিবারের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য রেমিট্যান্স অত্যাবশ্যক, এর অন্য অর্থনৈতিক প্রভাবগুলির দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। রেমিট্যান্সের কারণে মূলধন গঠন কম হয়, এবং একটি
সমীক্ষায় বলা হয়েছে ক্রমাগত কম কৃষি উৎপাদনশীলতাও  বহির্গমনের কারণে শ্রমিকের ঘাটতির ফলাফল হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, অভিবাসনের সামাজিক গতিশীলতার দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেওয়া হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় সমস্ত অভিবাসী শ্রমিকের বয়স ১৮ থেকে ৪৪-‌এর মধ্যে, আর অর্ধেকের বয়স ২৫-৩৪ বছর, যার অর্থ নেপালের সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল জনসংখ্যার মানুষ আর দেশের অভ্যন্তরে থাকেন না এবং কাজ করেন না। বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে নিরুৎসাহিত করে এমন কার্যকর নীতিনির্ধারণের পরিবর্তে পরের পর নেপালি সরকার নতুন দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং অভিবাসীদের সঙ্গে 'নগদ উপার্জনকারী গরু'র মতো আচরণ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করেছে।


কম দর-‌কষাকষি ক্ষমতা

বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাজার একটি উচ্চ-সরবরাহ, কম চাহিদার বাজার। বেশিরভাগ অভিবাসী শ্রমিকেরা দারিদ্র্যপীড়িত পরিবার থেকে আসেন, নিয়োগের ফি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য অর্থ ধার করেন, এবং তাঁরা সাধারণত আধা-দক্ষ বা অদক্ষ। কর্মী নিয়োগ করা হয় প্রাইভেট রিক্রুটিং এজেন্সির সাহায্যে, যা জনশক্তি কোম্পানি নামেও পরিচিত, অথবা অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক এবং এজেন্টদের মাধ্যমে। শ্রমিকদের দুর্বল দর কষাকষির ক্ষমতার কারণে 'এই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মধ্যস্থতাকারীরা যেমন নেপালে গুরুত্বপূর্ণ চাকরি-মেলা এবং নিয়োগের কাজ সম্পাদন করে, তেমনই শিল্পে আপত্তিজনক ও অনৈতিক নিয়োগের অনুশীলনেরও ব্যাপক প্রমাণ রয়েছে'। রাশিয়ার ফ্রন্টে অবৈধ পাচার এর একটি উদাহরণ। একটি
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে নেপাল সাতটি বৃহত্তম নিয়োগকারী দেশে সম্ভাব্য অভিবাসী কর্মীদের জন্য 'ফ্রি ভিসা, ফ্রি টিকিট' নীতি চালু করা সত্ত্বেও বেশিরভাগ অভিবাসী ৮০,০০০-১,৮০,০০০ নেপালি রুপি নিয়োগ ফি হিসাবে প্রদান করেছে। জনশক্তি কোম্পানিগুলি সিস্টেমের ত্রুটিগুলিকে কাজে লাগায়, যার ফলে 'অভিবাসী শ্রমিকদের বহন করা প্রকৃত খরচ এবং সরকারিভাবে নথিভুক্ত করা খরচের মধ্যে একটি বিস্তৃত পার্থক্য' থাকে।


কর্মী নিয়োগ করা হয় প্রাইভেট রিক্রুটিং এজেন্সিদের সাহায্যে, যা জনশক্তি কোম্পানি নামেও পরিচিত, অথবা অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক এবং এজেন্টদের মাধ্যমে।



অভিবাসীদের প্রতারণা, পাচার, ভয়ানক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য করা এবং কখনও কখনও নিয়োগকর্তাদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার কথা শোনাও অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোতে নারীরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফলস্বরূপ, নেপাল ২০১৭ সালে উপসাগরীয় দেশগুলিতে মহিলাদের গৃহপরিচারিকার কাজ করা
নিষিদ্ধ করেছিল, এবং ২০২১ সালে একটি আইন জারি করেছিল যে ৪০ বছরের কম বয়সী মহিলাদের বিদেশ ভ্রমণে তাঁদের পরিবার এবং স্থানীয় ওয়ার্ড অফিসের সম্মতি প্রয়োজন। এই ধরনের আইনগুলি সাধারণত নেপালি মহিলাদের বিদেশে পাচার হওয়া থেকে রক্ষা করার ইচ্ছা থেকে উদ্ভূত হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়। কিন্তু ভাষ্যকাররা উল্লেখ করেছেন যে সরকার এই আইনের আড়ালে নারীদের চলাফেরা ও অধিকার সীমিত করে।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মৃত অভিবাসী শ্রমিকদের কফিন নামার ঘটনাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে ২০০৮-০৯ সাল থেকে ১০,৬৬৬ নেপালি অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে মারা গিয়েছেন — প্রতি বছর ৭০০ জনেরও বেশি। ২০২২ সালের কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের তদন্তে বলা হয়েছে, স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় ৬,৫০০ শ্রমিক মারা যান এবং তাঁদের মধ্যে প্রায় ১,৭০০ জন ছিলেন নেপালি

বিদেশে নেপালি কর্মীদের শোষণের জন্য নেপালের দুর্বল কূটনৈতিক উপস্থিতি এবং ক্ষমতাকে প্রায়শই দায়ী করা হয়। সরকার সম্প্রতি ১০,০০০-‌এর বেশি নেপালি কর্মী আছেন এমন দেশগুলিতে কূটনৈতিক
মিশন খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেপাল ৫০০০-‌এরও বেশি কর্মী সহ দেশগুলিতে তার মিশনে শ্রম অ্যাটাশে বা পরামর্শদাতা নিয়োগ করে এবং ১০০০-‌এরও বেশি মহিলা অভিবাসী শ্রমিকের দেশগুলিতে একজন মহিলা শ্রম অ্যাটাশে নিয়োগ করে৷ কিন্তু অভিবাসনের গতির কারণে এটি পর্যাপ্ত নয়, এবং শ্রমিকদের চাহিদা নেপালের জারি করা শ্রম অনুমোদনের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ


নেপাল ৫০০০-‌এরও বেশি কর্মী সহ দেশগুলিতে তার মিশনে শ্রম অ্যাটাশে বা পরামর্শদাতা নিয়োগ করে এবং ১০০০-‌এরও বেশি মহিলা অভিবাসী শ্রমিকের দেশগুলিতে একজন মহিলা শ্রম অ্যাটাশে নিয়োগ করে৷



এসব কারণে নেপালে শ্রম অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। এটি যেমন হাজার হাজার পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বার করে এনেছে এবং অভ্যন্তরীণ বেকারত্ব মোকাবিলার সুযোগ করে দিয়েছে, তেমনই এর ফলে নেপালের সবচেয়ে কর্মক্ষম মানুষেরা বিদেশে কাজ করতে চলে গিয়েছেন। পরপর নেপালি সরকারগুলি অভিবাসনের গতিকে থামাতে পারেনি, কারণ তাদের দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ নেই। এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, এবং দল ও নেতারা অভিবাসীদের জন্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। কিন্তু যা মূলত একটি ব্রেন ড্রেন, যার ফলে সেরা নেপালি প্রতিভা ও কর্মীবাহিনী তাঁদের জীবনের সেরা সময় বিদেশে চলে যাচ্ছেন, তার মোকাবিলা করার মতো দৃঢ় আত্মবিশ্বাস কোনও নেতারই নেই।



অল রোডস লিড নর্থ: নেপাল'স টার্ন টু চায়না (প্রসঙ্গ/হার্স্ট/অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস) এর লেখক আমিশ রাজ মুলমি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.