Published on Apr 29, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারতীয় এবং মার্কিন মহাকাশ সংস্থাগুলির নিখুঁত সহাবস্থানের জন্য এর চেয়ে ভাল সময় হতে পারে না।

ভারত সফরে নাসা-র প্রধান: ভারত-মার্কিন মহাকাশ কর্মসূচিতে বড় প্রেরণা

ইউএস ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) প্রধান বিল নেলসন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে আসেন। তাঁ এই সফর এক উপযুক্ত সময়ে ঘটেছে বলে মনে করা যেতে পারে। ভারত-মার্কিন মহাকাশ সহযোগিতা গত কয়েক বছর ধরে ক্রমবৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই সফর সম্ভবত তার গতি আরও ত্বরান্বিত করবে।

জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্বারা প্রথম ঘোষিত ধারণাটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) প্রধান ড. এস সোমনাথ নিশ্চিত করেছেন যে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ একজন ভারতীয় মহাকাশচারীকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (আইএসএস) পাঠানোর জন্য ইসরো ও নাসা একসঙ্গে কাজ করছে। নাসা প্রধানের একটি বিবৃতি উল্লেখ করে সোমনাথ বলেছেন যে, ভারতীয় মহাকাশচারীরা একটি মার্কিন যানে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেবেন।’ এটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, বিশেষ করে দু মহাকাশ সংস্থার মধ্যে বিপুল আস্থা ও স্বাচ্ছন্দ্যের মাত্রাকেই প্রতিফলিত করে।

সম্ভাব্য ভারতীয় সংবেদনশীলতা স্বীকার করে নিয়ে নেলসন স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরো দ্বারা নির্ধারিত নভোচ নির্বাচন করবে এবং নাসা এ   ক্ষেত্রে কোন হস্তক্ষেপ করবে না। সোমনাথ বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন যে, ভারতীয় মহাকাশচারীরা মার্কিন সংস্থায় বিস্তৃত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।  মহাকাশচারীদের পাশাপাশি পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যকারিতার ভারপ্রাপ্ত কর্মীরাও মার্কিন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন। নেলসন  বলেন যে, দুটি মহাকাশ সংস্থা হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সহযোগিতার উপর মনোযোগ দিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে, যা আসন্ন মানব মহাকাশ মিশন অন্যান্য সম্ভাবনা অন্বেষণ করবে।

ইতিমধ্যে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন গগনযান ২০২৪ সালের শুরুর দিকে রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভারতীয় মহাকাশ বিভাগের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা গগনযানের জন্য মডিউল মাইক্রোমেটিওরয়েড অ্যান্ড অরবিটাল ডেব্রি (এমএমওডি) সুরক্ষা ঢাল যাচাই করার সুবিধার্থে নাসার হাইপারভেলোসিটি ইমপ্যাক্ট টেস্ট (এইচভিআইটি) ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।

ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্ডিয়া-ইউএস জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন সিভিল স্পেস কো-অপারেশন-এর (সিএসজেডব্লিউজি) মতো প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলগুলির মাধ্যমে নাগরিক মহাকাশ সহযোগিতার বিষয়ে তাদের বিস্তৃত আলোচনা চালিয়েছে। এটির সর্বশেষ আলোচনাটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটন ডিসি-তে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

নেলসন এবং ভারতের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং-এর মধ্যে বৈঠকের পরে ভারতীয় মন্ত্রী বলেছেন যে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বছরের শুরুর দিকে পৃথিবী পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যৌথ মাইক্রোওয়েভ রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট চালু করবে। মহাকাশ বিভাগের একটি বিবৃতি অনুসারে, নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (এনআইএসএআর বা নিসার) স্যাটেলাইটটি ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ইসরো-র জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলের (জিএসএলভি) মাধ্যমে চালু করা হবে নিসার-কে একটি মহান অবজারভেটরি হিসেবে চিহ্নিত করে নেলসন বলেছেন যে, ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে অনেক কিছু করতে পারে। ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে নির্মিত নিসার ‘বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আর্থ ইমেজিং স্যাটেলাইট

নিসার কোনও নতুন প্রকল্প নয়তবে এই যৌথ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, নিসার স্যাটেলাইটের তথ্য ভূমির বাস্তুতন্ত্র, পৃথিবীর ভূ-পরিসরের বিকৃতি, পর্বত, মেরু সমুদ্রের বরফ ক্রিয়োস্ফিয়ার, আঞ্চলিক স্তর থেকে পৃথিবীর স্তরে উপকূলীয় মহাসাগরগুলি অধ্যয়নের জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে মিশনটি ইসরো-এস-ব্যান্ড এবং নাসা-এল-ব্যান্ড এসএআর বহন করে এবং জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) নাসা-সমন্বিত করা হয়েছিল বর্তমানে বেঙ্গালুরুর ইউআর রাও স্যাটেলাইট সেন্টারে এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জেপিএল এবং নাসার কর্মকর্তা ইসরো-সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন। বিষয়টি এই কারণেও তাৎপর্যপূর্ণ যে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটন উভয়ই যে বৃহত্তর কৌশলগত অংশীদারিত্বের চেষ্টা চালাচ্ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ নবীকৃত ও উদ্যমী ভারত-মার্কিন সহযোগিতার প্রদর্শন অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যিক শক্তিগুলির সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য চিরাচরিত পথের ঊর্ধ্বে উঠে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলি প্রসারিত করতে ইচ্ছুক। ইন্ডিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেস-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ইসরো-র ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেস বিশিষ্ট মার্কিন শিল্পের সঙ্গে (যেমন বোয়িং, ব্লু অরিজিন এবং ভয়েজার) সহযোগিতার নির্দিষ্ট আইটেমগুলির ক্ষেত্রে আলোচনায় এবং ভারতীয় বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার অন্বেষণে নিযুক্ত। এটি উভয় দেশের বেসরকারি খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে কারণ তারা একে অপরের শক্তিকে কাজে লাগাতে আরও স্থিতিশীল মূল্য শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহাকাশ বাজারে ভারতের উপস্থিতি সামান্য এবং সামগ্রিকের মাত্র ২ শতাংশ। ভারত এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করতে আগ্রহী। ইসরো এবং নাসা যে আলোচনায় সম্পৃক্ত হয়েছে, তা এমনটা করার জন্য ফলপ্রসূ হতে পারে। পূর্ববর্তী আলোচনার পর মহাকাশ বিভাগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাস্তবায়ন ব্যবস্থা সংক্রান্ত এমন একটি ধারণা রয়েছে, যা ইসরো ও নাসা উভয়ই বিবেচনা করছে এবং উভয় পক্ষই একটি খসড়ায় পারস্পরিক ভাবে সম্মত হয়েছে, যেটি আন্তঃসরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

নেলসন ২০৪০ সালের মধ্যে একটি ভবিষ্যতের ভারতীয় বাণিজ্যিক মহাকাশ কেন্দ্রে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদী। একটি প্রশ্নের উত্তরে নেলসন উল্লেখ করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি ভারত ২০৪০ সালের মধ্যে একটি বাণিজ্যিক মহাকাশ কেন্দ্র করতে চায়। তত দিনে আমরা একটি বাণিজ্যিক মহাকাশ কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারব। যদি ভারত এ বিষয়ে সহযোগিতা চায়, তা হলে আমরাও তাতে সম্মত। তবে সেটা ভারতের ব্যাপার। তিনি আরও বলেছেন যে, একটি বাণিজ্যিক মহাকাশ কেন্দ্র শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ফার্মা গবেষণা-সহ অন্যান্য গবেষণার জন্য নানাবিধ পথ খুলতে পারে। ভারত চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি এবং আমাদের অভিজ্ঞতা ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি।

মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে প্রায় এক দশকের মধ্যে ভারতের নিজস্ব  মহাকাশ কেন্দ্র তৈরি করা উচিত। মোদী এ হেন ঘোষণা করলেও শুধু মাত্র প্রথম বার কেন্দ্র নির্মাণেই নয়, তার ব্যবস্থাপনার বিষয় সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও বিশাল। প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক ভাবে এটি ইসরো-র জন্য একটি কঠিন কাজ হলেও সঠিক অংশীদারদের সহযোগিতায় ভারত একটি ছোট মহাকাশ কেন্দ্র তৈরি করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রযুক্তিগত উপায়ের পাশাপাশি এ বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ভারতীয় মহাকাশ কর্মসূচিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্তি নতুন কিছু নয়। ভারত তার মহাকাশ কর্মসূচি শুরু করার সময় ফ্রান্সের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হলেও প্রধানত ঠান্ডা লড়াইয়ের ভূ-রাজনীতির কারণে দুই দেশের পথ আলাদা হয়ে যায়। তবে আর কটি ঠান্ডা লড়াই ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকায় ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই পক্ষে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং ভারতীয় ও মার্কিন মহাকাশ সংস্থাগুলির জন্য সহযোগিতার উদ্দেশ্যগুলি একেবারে আদর্শ সময়ে সমাপতিত হয়েছে।

 


এই নিবন্ধটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য ডিপ্লোম্যাট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.