Image Source: iStock
২০২৪ সালের ৪ মার্চ শাহবাজ শরিফ একটি চমকপ্রদ নির্বাচনের পর পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা ব্যাপক ভাবে বিশ্লেষণ করা হলেও পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার বৃত্তও সম্পূর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ ২০১৭ সালে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা থেকে শুরু করে ২০১৮ সালে ইমরান খানকে সেই পদে নিয়োগ করে পরে ২০২২ সালে ইমরানকে অপসারণ করা, ২০২৩ সালে ইমরানের দলের নির্বাচনী সাধনীকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া এবং অবশেষে ২০২৪ সালে নওয়াজ শরিফের জাতীয় পরিষদে প্রত্যাবর্তনকে পুনরায় সক্ষম করে শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আনা… বৃত্ত বলতে এই ঘটনাপ্রবাহকেই বোঝানো হয়েছে। ২০১৮-২০২৪ সময়কালটিকে দেশের রাজনীতির সঙ্গে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার ঐতিহাসিক নিদর্শনের একটি ক্ষুদ্র বিশ্ব রূপে তুলনা করা চলে। যাই হোক, ঠিক কোন কারণের জন্য বিচারবিভাগ এতটা পরস্পরবিরোধী আচরণ করতে বাধ্য হয়েছে? তার ইতিহাস জুড়ে পাকিস্তানের বিচারবিভাগ, বিশেষ করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ‘ডুয়েল সারভাইভালিস্ট অ্যাপ্রোচ’ বা ‘দ্বৈত ভাবে টিকে থাকা’র পদ্ধতি দ্বারা চালিত হয়েছে।
- প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকা: পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভ হিসেবে টিকে থাকা যেখানে রাজনৈতিক ব্যবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক বাহিনীর করায়ত্ত; এ ক্ষেত্রে বিচারবিভাগ প্রাতিষ্ঠানিকতার কথা স্বীকার করে নেয়।
- বিচারগত ভাবে টিকে থাকা: পাকিস্তানি জনগণ ও বিশ্ব… উভয়ের দৃষ্টিতে আইনের ব্যাখ্যা ও বিরোধের মধ্যস্থতা করতে সজ্জিত একটি বিশ্বাসযোগ্য বিচারগত সংস্থা হিসেবে টিকে থাকা; এ ক্ষেত্রে বিচারবিভাগ তার আইনি পরিচিতি বাঁচিয়ে চলে।
ইতিহাস জুড়ে এবং বর্তমান মিশ্র প্রশাসন… উভয় ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের বিচারবিভাগ এই দ্বৈত ভাবে টিকে থাকার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছে এবং তার নিজস্ব মিশ্র সত্তাকে প্রকাশ্যে এনেছে। প্রায়শ না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকা
যেহেতু পাকিস্তান স্বাধীনতার পরপরই রাষ্ট্রীয় রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক হস্তক্ষেপের মোকাবিলা করেছিল, তাই বিচারবিভাগ, বিশেষ করে আইয়ুব খানের সামরিক আইন (ডোসো বনাম ফেডারেশন অব পাকিস্তান) প্রয়োজনীয়তার মতবাদ প্রয়োগ করে আইনত বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি স্পষ্ট ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মহম্মদ মুনির পরবর্তী সময়ে বিচারবিভাগকে ‘নিশ্চিহ্ন’ ও ‘বিলুপ্ত’ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপন্থী সিদ্ধান্তগুলিকে প্রয়োজনীয় বলে সমর্থন করেছিলেন। পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থার মূল ইতিহাসে হামিদ খান দর্শিয়েছেন যে, সামরিক প্রশাসনের সময় প্রয়োজনের মতবাদ প্রয়োগে বিচারবিভাগের উৎসাহ ‘এই ভুল বোঝাবুঝির সঙ্গেই যুক্ত ছিল যে, অসাধারণ পরিষেবা প্রদানের পরে সামরিক বাহিনী... বিচারবিভাগের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নেবে।’ এটি বিশেষত ১৯৭৮ সালে জুলফিকার আলি ভুট্টোর জালিয়াতি বিচারে বিচারবিভাগের সম্মতি এবং তাঁর চূড়ান্ত মৃত্যুদণ্ড দ্বারা দৃষ্টান্তমূলক হয়ে ওঠে। জিয়া-উল-হক এবং পারভেজ মোশাররফের সামরিক শাসনামলে বিচারবিভাগ তর্কাতীত ভাবে তলানিতে এসে পৌঁছয়। ২০০৭ সালের আইনজীবী আন্দোলন বিচার ব্যবস্থাকে তার হারানো বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার অক্ষাংশ প্রদান করেছিল, যা রাজনৈতিক দুর্নীতি মোকাবিলায় তার সক্রিয়তা থেকেই স্পষ্ট।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মহম্মদ মুনির পরবর্তী সময়ে বিচারবিভাগকে ‘নিশ্চিহ্ন’ ও ‘বিলুপ্ত’ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য প্রতিষ্ঠানপন্থী সিদ্ধান্তগুলিকে প্রয়োজনীয় বলে সমর্থন করেছিলেন।
যাই হোক, ‘মিশ্র শাসন’-এর যুগে বিচারবিভাগ একাধিক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকতাকে সহায়তা করার জন্য তার সদিচ্ছা দর্শিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পাকিস্তানের সংবিধানের ৬২(১)(চ) অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত পানামা পেপারস মামলা (২০১৭)। এ ক্ষেত্রে এসসিপি ঘোষণা করে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ‘সাদিক’ (সত্যবাদী) এবং ‘আমিন’ (বিশ্বস্ত) ছিলেন না। তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে শরিফকে আজীবনের জন্য ক্ষমতার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে অযোগ্য বলেও ঘোষণা করা হয়। যে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনী শরিফকে (সেনাবাহিনীর অপছন্দের ব্যক্তি) ইমরান খান (যাঁকে তখন সেনাবাহিনী আরও বেশি নমনীয় বলে মনে করেছিল) দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চাইছিল, আদালতের রায় কার্যকর ভাবে সেনাবাহিনীর সেই রাজনীতিকেই সক্ষম করে তোলে। এমনকি নওয়াজ শরিফের ক্ষমতার শেষের দিকে আদালত রাজনীতিবিদদের (বিশেষ করে পিএমএল-এন থেকে) অপসারণ করার / অযোগ্য ঘোষণা করার আগ্রহ দেখিয়েছিল।
বিচারগত ভাবে টিকে থাকা
যখনই বিচারবিভাগ প্রাতিষ্ঠানিকতার তরফে হুমকির সম্মুখীন হয়, তখনই ‘এটি খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়ে’, যেমনটা ইমরান খানও দাবি করেছিলেন। আবার বিপদ কেটে যাওয়ার পরেই (প্রতিষ্ঠানের পছন্দগুলি পরিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) সুপ্রিম কোর্ট প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকার জন্য ইতিমধ্যেই দেওয়া কোনও পুরনো অযৌক্তিক রায় পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে। পারস্পরিক সম্পর্ক কার্যকারণকে না বোঝালেও বিচারবিভাগের আচরণের সামঞ্জস্যতা উভয় পক্ষের ঘনিষ্ঠতাকেই দর্শায়, যা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রমাণিত। সম্প্রতি ২০২৪ সালের ৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট জেডএবি বনাম রাষ্ট্রের মামলায় নিজের রায় পুনর্মূল্যায়ন করেছে এবং স্বীকার করে নিয়েছে যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ন্যায্য বিচার পাননি। এটি ইয়াহিয়া খান-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে আদালতের পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠার ঘটনারই পুনরাবৃত্তি করে, যেখানে আদালত আসমা জিলানি বনাম পঞ্জাব সরকার (আপাতদৃষ্টিতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়া-উল-হকের মেয়াদ পর্যন্ত সামরিক বাহিনী যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও পঞ্জাব সরকার নিজেকে নিরাপদ বলে মনে করেছিল) মামলায় নিজের ডোসো রায় বাতিল করেছিল। অতি সম্প্রতি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের দৌড়ে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফের আজীবন অযোগ্যতা খারিজ করেছে, ‘সাদিক’ ও ‘আমিন’ সংক্রান্ত পূর্ববর্তী ধারণাকে বাতিল করে দিয়েছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে এটিকে ‘বিলম্বিত সংশোধন’ বলে উল্লেখ করলেও রায়টি এমন এক সময়ে এসেছে, যা আবার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য (২০২৩ সালের শেষের দিকে মারাত্মক ভাবে ইমরান খান বিরোধী হয়ে পড়ার সময়ে) উপযুক্ত ছিল। কার্যকর ভাবে যখন এসসিপি-র সংশোধন আইনে খারাপ বলে বিবেচিত তার পুরনো রায়গুলিকে খারিজ করার মাধ্যমে বিচারগত ভাবে টিকে থাকার জন্য কাজে লাগিয়েছিল, তখন ২০২৪ সালের রায় শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকার জন্য সহায়ক হয়েছিল।
পারস্পরিক সম্পর্ক কার্যকারণকে না বোঝালেও বিচারবিভাগের আচরণের সামঞ্জস্যতা উভয় পক্ষের ঘনিষ্ঠতাকেই দর্শায়, যা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে প্রমাণিত।
বর্তমানের মিশ্র শাসনে ন্যায়বিচার
পাকিস্তান ২০০৭-পরবর্তী সময়ে তার আশাবাদ থেকে বেরিয়ে এসে মিশ্র শাসনের সময়কালে (যখন বেসামরিক নেতারা সেনাবাহিনী দ্বারা সমর্থিত হন) প্রবেশ করে। পরবর্তী সিজেপি-রা (প্রধান বিচারপতি) বিক্ষিপ্ত ভাবে স্বাধীন অবস্থান নেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ভাবে সহায়তা করেছেন। একই মিশ্র কৌশল বর্তমান প্রধান বিচারপতি কাজি ফয়েজ ঈশাও প্রদর্শন করেছেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শপথ নেওয়ার সময় নিজের স্ত্রীকে পাশে দাঁড়ানোর অনুমতি দিয়ে (পাকিস্তানের ইতিহাসে যা প্রথম) বিচারপতি ঈশা তাঁর নিজের ২০১৯ সালের রায়ের (এসসি বিচারক হিসাবে) উপর পুনরায় জোর দিয়ে বিচারগত ভাবে টিকে থাকতে পেরেছিলেন। সেই সময়ে রায়টি ছিল এই যে, ‘সংবিধান সশস্ত্র বাহিনীর কোনও সদস্যকে জোরপূর্বক যে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করতে পারে।’ যাই হোক ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিচারপতি ঈশা এসসিপি বেঞ্চের নেতৃত্ব দেন, যেটি এক দিকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-এর নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেয় এবং অন্য দিকে নিম্ন আদালত ইমরান খানকে এক সপ্তাহের মধ্যে অসংখ্য মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ও সাজা দেয়। তদুপরি, বিচারপতি ঈশা পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে তাঁর প্রথম মহিলা রেজিস্ট্রার প্রদান করলেও এসসিপি ইদ্দত মামলায় জনরোষের মুখে পড়ে। কারণ আদালত ইমরান খানের সঙ্গে বুশরা বিবির বিয়েকে ‘অ-ইসলামিক’ বলে ঘোষণা করেছিল, যা আসলে ‘নারীদের মর্যাদা এবং গোপনীয়তার অধিকারের উপর আঘাত হেনেছিল’। ইদ্দত মামলাটি বিচারবিভাগের ইতিহাসে একটি নতুন নিম্ন স্তরকে দর্শায়, যা আইন লঙ্ঘন করে বা আইন নির্মাণ করে নির্বাচনী মঞ্চ থেকে ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকতার ধ্বজা ওড়ানোর চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক অন্যান্য ক্ষেত্রে বিচারবিভাগের সমসাময়িক মিশ্র কৌশলটি আরও বেশি করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে:
প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকা: ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিচারপতি ঈশার অধীনে এসসিপি সেই ১০০ জনেরও বেশি নাগরিকের সামরিক আদালতে বিচারের অনুমতি দেয়, যাঁদের ৯ মে সামরিক ঘাঁটিতে (যার কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণই নেই) হামলায় জড়িত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল (যার মধ্যে ইমরান খানের বিপুল সংখ্যক সমর্থক রয়েছেন)। আদালত তার নিজস্ব ২৩ অক্টোবরের রায়কে বাতিল করেছে, যেখানে বেসামরিক আদালতে নাগরিকদের বিচার করার কথা বলা হয়েছিল। ডিসেম্বরের রায়টি এসসি দ্বারা যাচাইকৃত সামরিক আদালতের চূড়ান্ত আদেশের উপর শর্তসাপেক্ষ থাকলেও এটি সামরিক আদালতের সেই সাধারণ নীতি লঙ্ঘন করেছে যে, নাগরিকদের উপর সামরিক আদালতের কোনও এক্তিয়ার নেই (দেশু নীতি)। প্রকৃতপক্ষে, পিটিআইও এই রায়কে ‘একটি বিচারগত অভ্যুত্থান... এবং মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ৯ মে বিক্ষোভের অভূতপূর্ব প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জন্য সন্দেহাতীত ভাবে সংবেদনশীল ছিল। যার ফলে বিচারবিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকার জন্য দীর্ঘস্থায়ী নীতিগুলিকে খারিজ করতে হবে। উপরন্তু, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সেনা আইনের অধীনে নাগরিকদের বিচার করার পক্ষে যে কথা বলেছিলেন, তা সেনাবাহিনীর অগ্রাধিকারের প্রভাবকেই দর্শায়।
ইদ্দত মামলাটি বিচারবিভাগের ইতিহাসে একটি নতুন নিম্ন স্তরকে দর্শায়, যা আইন লঙ্ঘন করে বা আইন নির্মাণ করে নির্বাচনী মঞ্চ থেকে ইমরান খানকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকতার ধ্বজা ওড়ানোর চেষ্টা করেছে।
বিচারগত ভাবে টিকে থাকা: ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের পর এসসিপি-র বিচারপতি ঈশার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ব্যবসার জন্য সামরিক জমি ব্যবহার সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করে। তাঁর রায়ে বিচারপতি ঈশা ‘সরকারকে সশস্ত্র বাহিনীকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পরিবর্তে প্রতিরক্ষার দিকে মনোনিবেশ সুনিশ্চিত করার কথা বলে’ (আগের এসসিপি রায়ের সঙ্গে যা সঙ্গতিপূর্ণ)। ঈশা-নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেও একই কথার উপর জোর দেওয়া হয়, জুলফিকার আলি ভুট্টোর বিচারের পুনর্মূল্যায়ন করার সময় বিচারবিভাগকে অবশ্যই ‘নম্রতার সঙ্গে (তার) অতীত ভুল পদক্ষেপের মোকাবিলা করতে হবে’। যাই হোক, বিচারবিভাগ দৃশ্যত এই উভয় ক্ষেত্রেই বিচারগত ভাবে টিকে থাকার চেষ্টা চালালেও শেষের মামলাটি ছিল নিছক প্রতীকীই, যখন আগের মামলাটি আদালতের পুনরাবৃত্তিমূলক তিরস্কারসম ছিল। আদালতের রায় রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশাল ও গভীর সম্পৃক্ততাকে প্রভাবিত করতে পারেনি (যাকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানী আয়েশা সিদ্দিকা সামরিক ব্যবসা বা মিলবাস বলে বর্ণনা করেছেন)। তদুপরি, সামরিক বাহিনীকে তার অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা থেকে বিরত থাকতে বলার বিষয়ে এসসিপি-র সিদ্ধান্ত বিশেষ কোনও গুরুত্ব বহন করে না। কারণ বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির স্পেশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন কাউন্সিলের ক্ষমতায় (পাকিস্তানকে তার চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে বের করে আনার জন্য নির্মিত) বহাল রয়েছেন, যেখানে অন্যান্য সেনা আধিকারিক একাধিক ক্ষমতায় আসীন। এসআইএফসি-তে সেনাবাহিনীর বর্তমান উপস্থিতি প্রকৃতপক্ষে ইমরান খানের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল থেকে আবার এক ধাপ এগিয়ে, যার সদস্য ছিলেন শুধু মাত্র জেনারেল কমর বাজওয়া।
সংক্ষেপে, তার ইতিহাস জুড়ে, পাকিস্তানের বিচারবিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক আবরণ দিয়েছে, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে প্রাতিষ্ঠানিকতার স্বার্থের বিরুদ্ধে বিচারগত ভাবে টিকে থাকার জন্য এবং তার সাংবিধানিক পরিসরকে রক্ষা করার জন্য আদালত নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে পিটিআই এবং ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগের সম্ভাব্য পুনর্বিবেচনাকে অসম্ভব (যদিও অসম্ভবই বটে) বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই পাকিস্তান যখন একটি ভঙ্গুর আইনসভা দ্বারা সমর্থিত একটি নতুন নির্বাহীর সূচনা করছে, তখন প্রতিষ্ঠানবান্ধব রূপে নিজেকে তুলে ধরে দেশটির বিচারবিভাগ টিকে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিচারবিভাগের প্রতি পাকিস্তানের জনসাধারণের বিশ্বাস ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচারবিভাগ কি মিশ্র শাসনের অধীনে নিজস্ব মিশ্র কৌশল বজায় রাখবে না কি এটি নিজের অধিকার দর্শিয়ে একটি অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে আবির্ভূত হবে?
বশির আলি আব্বাস নয়াদিল্লির কাউন্সিল ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডিফেন্স রিসার্চের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।
বান্টিরানি পাত্র নয়াদিল্লির সেন্টার ফর এয়ার পাওয়ার স্টাডিজের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.