Published on Apr 10, 2024 Updated 0 Hours ago

দ্বীপরাষ্ট্রটির পর্যটন এবং ইন্ডিয়া-আউট বা ভারত-তাড়াও নীতির চেয়েও বড় সমস্যা রয়েছে এটি ইসলামপন্থী চাপ ও চিনের মাঝে পড়ে জর্জরিত হচ্ছে

মুইজ্জুর মলদ্বীপের ভূ-রাজনীতিতে ‘ভূ’-এর অভাব

ভারতীয় নাগরিকরা মলদ্বীপ ভ্রমণ করতে রীতিমতো অস্বীকার করছেন। মলদ্বীপ এমন একটি দ্বীপরাষ্ট্র, যার সম্প্রতি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডক্টর মোহাম্মদ মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউট’ বা ‘ভারত তাড়াও’ নীতি প্রচার করে জয়লাভ করেছেন এবং সে দেশের তিনজন মন্ত্রী ভারত সম্পর্কে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরে যাওয়ার টুইটকে অনুসরণ  করে ভারতীয় পর্যটকদের মলদ্বীপ ত্যাগ করে লক্ষদ্বীপ ভ্রমণ আসলে অর্থনৈতিক ভাবে জাতীয়তাবাদী হয়ে ওঠা উদীয়মান দেশের অভিব্যক্তি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেমলদ্বীপ ভারতীয় পর্যটক দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষতি বুঝতে পারবে। কয়েক সপ্তাহ যদি না-ও বা হয়, কয়েক মাসের মধ্যে সেই জায়গায় দ্বীপরাষ্ট্র ছেয়ে যাবে চিনা পর্যটকে। আর ভারতের দিক থেকে দেখলে মলদ্বীপের আর কোনও প্রসঙ্গই থাকবে না।

মলদ্বীপের অর্থনীতি অবশ্য ভেঙে পড়বে না, যেমনটা মেড ইন চায়না’ বা ‘চিন নির্মিত’ কোভিড-১৯ সঙ্কটের কারণে হয়েছিল। ২০২০ সালে লদ্বীপের জিডিপি ৩৫ শতাংশ কমে ৩.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা কিনা মিজোরামের প্রায় মোট রাষ্ট্রীয় দেশীয় পণ্যের (জিএসডিপি) সমান এবং ২০২২ সালে সেই জিডিপি বেড়ে মাত্র ৬.১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (যা কিনা পুদুচেরির জিএসডিপি) হয়েছে। তাই এ কথা স্পষ্ট যে, মলদ্বীপের অর্থনীতি ভেঙে না পড়লেও ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, দ্বীপরাষ্ট্রটির জিডিপি-র এক-চতুর্থাংশ পর্যটন থেকে আসে এবং ভারত এই পর্যটক সরবরাহকারী মেরু অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে আগামী দুই মরসুমের মধ্যেই এই ভারতীয় পর্যটকদের আর মলদ্বীপের মাটিতে দেখা মিলবে না। ২০২৩ সালে দুই লক্ষেরও বেশি ভারতীয় মলদ্বীপে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই শেষ

 

মলদ্বীপ উচ্চ সমুদ্রে এমন একটি ঝড় হয়ে উঠেছে, যা একটি নতুন ভারসাম্যে পৌঁছবে।

 

মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় পর্যটকদের প্রস্থান শেষ না হলেও তা দ্বীপদেশটির কফিনে একটি পেরেক অবশ্যই। অবশ্যই তাই-ই শুধু নয়। মলদ্বীপ এমন একটি দেশ, যারা সম্প্রতি ভারতীয় উদারতার নিরিখে কৃতঘ্ন ব্যবহার করেছে। ২০১৪ সালে পানীয় জল প্রদান এবং ২০২০ সালে গুরুত্বপূর্ণ টিকা সরবরাহ করা থেকে শুরু করে দেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা অথবা ১৯৮৮ সালে অভ্যুত্থান রোধ করা… ভারত প্রতিটি সঙ্কটে মলদ্বীপের পাশে দাঁড়িয়েছেমলদ্বীপ উচ্চ সমুদ্রে এমন একটি ঝড় হয়ে উঠেছে, যা একটি নতুন ভারসাম্যে পৌঁছবে। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে ভারতীয় পর্যটকরা এখন তাঁদের সমুদ্র সৈকত অবকাশের জন্য নটি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সমন্বিত ৭৫০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারতীয় উপকূলরেখা অন্বেষণ করবেন

এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে, এই মলদ্বীপ প্রসঙ্গটি ভারতের জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। কারণ ভারত ফেব্রুয়ারি মাসে বাজেট নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। এপ্রিল-মে মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন হবে এবং জুন মাসে এর ফলাফল ঘোষণা হবেএই সময়কালের মাঝে এবং তার পরেও দেশটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, এর ক্রমবর্ধমান স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে সম্পদ তৈরি, অর্থনীতির সংস্কার এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার পুনরুদ্ধারের উপর মনোযোগ দেবে। মালে যাওয়ার শেষ ফ্লাইটের সময় যতটুকু লাগে, তার চেয়েও কম সময়ে মলদ্বীপ আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। অভ্যন্তরীণ ভারতীয় রাজনীতি এতটাই ব্যস্ত থাকবে যে, সে ক্ষেত্রে এ হেন অপরিপক্ব মলদ্বীপের টুইটের আর কোনও অর্থই থাকবে না।

 

হিংসাত্মক মতাদর্শকে আলিঙ্গন করার একটি মূল্য আছে, যা আত্ম-স্বার্থের ক্ষতি সাধন করে এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবকেই দর্শায়। আর নিজের ব্য-আবিষ্কৃত আভিজাত্যে মালে তা বুঝতে অক্ষম, আলোচনা তো দূরের কথা

 

কিন্তু পাঁচ লক্ষ জনসংখ্যাবিশিষ্ট দেশকে যা জানতে, বুঝতে এবং তার পরে মোকাবিলা করতে হবে, তা হল দ্বীপরাষ্ট্রটিকে প্রায় পিষে ফেলার মতো দুটি বিপজ্জনক বিষয়- ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং কৌশলগত ভুল। একটি ছোট দ্বীপ অর্থনীতির জন্য ভূ-অর্থনীতির মূল্যে ভূ-রাজনীতি খেলায় নেমে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ। হিংসাত্মক মতাদর্শকে আলিঙ্গন করার একটি মূল্য আছে, যা আত্ম-স্বার্থের ক্ষতি সাধন করে এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবকেই দর্শায়। আর নিজের ব্য-আবিষ্কৃত আভিজাত্যে মালে তা বুঝতে অক্ষম, আলোচনা তো দূরের কথা। ভারতকে অপমান করা এবং ভূ-রাজনৈতিক পেশী প্রদর্শন নমনীয়তার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা সহজ, কিন্তু আরব সাগরের মাঝখানে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু আগুন নিয়ে খেলছেন। ভারতের বিশেষ কিছু করার দরকার নেই। কারণ মলদ্বীপের রাজনীতি তার নিজের বিদ্বেষেই ফেটে পড়বে।

 

ধর্মীয় গোঁড়ামি

মলদ্বীপ যে প্রথম চাপের মুখে পড়েছে তা হল, ইসলামি সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে নৈতিক ও ধর্মীয় যোগদান। মাথাপিছু ভিত্তিতে ইসলামিক স্টেটে মলদ্বীপের অবদান সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে মলদ্বীপ সিরিয়া ও ইরাকে ইসলামিক স্টেটকে ২৫০ জন মহিলা এবং পুরুষ সরবরাহ করেছে, যার অনুপাত প্রতি ২০০০ জন নাগরিকের মধ্যে একজন। ইসলামিক স্টেটের ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার মানসিকতায় তাঁদের বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৫০ জন সেখানে শিবিরে বন্দি। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু মলদ্বীপবাসী এখনও সন্ত্রাসবাদী হয়ে ওঠা এবং তাদের হয়ে কাজ করার প্রলোভনে আকৃষ্ট। এটি ভারতের জন্য একটি বিপদকেই তুলে ধরে এবং তা প্রতিরোধ বা মোকাবিলার জন্য বর্তমান সরকার সব কিছু করতে আগ্রহী। বর্তমানে যেহেতু মুইজ্জু তার ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারে জনগণের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই দূরে সরিয়ে রেখেছেন, তাই তাঁর শূন্য-সহনশীলতা নীতির অংশ হিসাবে মলদ্বীপ থেকে সন্ত্রাসবাদ রফতানি পরিচালনা ও প্রতিরোধ করার জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

মুইজ্জুকেও বুঝতে হবে যে পর্যটন ও সন্ত্রাসবাদ একই পথে একসঙ্গে চলতে পারে না। দ্রুতই ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলির নাগরিকরা — মলদ্বীপে যাঁদের পর্যটকের সম্মিলিত সংখ্যা ৫,৩০,০০০ এবং যা শীর্ষ তিনটি (ভারত, রাশিয়া এবং চিন) দেশের সর্বমোট পর্যটকের তুলনায় বেশি --নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নেবেন এবং মরিশাস, সেশেলস, শ্রীলঙ্কা আশেপাশের লক্ষদ্বীপে নিরাপদ ভাবে ছুটি কাটাতে আগ্রহী হবেন। এবং যদি চিনা পর্যটকরা মনে করেন যে তাঁদের জন্য পথ সহজ হয়ে যাবে, তা হলে তাঁদেরও মনে রাখতে হবে যে, সন্ত্রাস কোনও ধর্মকে রেয়াত করে না এবং যে কেউ তাদের শিকার হতে পারেন। যখন কোনও বোমা ফেটে পড়ে, তখন তা জাতীয়তা বা বর্ণ কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিগত বিতর্কের কথা ভাবে না।

 

মুইজ্জুর সরকার মলদ্বীপের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলে বর্ণবাদী মন্তব্যকে ন্যায্যতা প্রদানের চেষ্টা করেছিলেন

 

যে বোমা ফেলছে, সে-ও বোমার আঘাত থেকে ছাড় পায় না। ২০২১ সালের মে মাসে একটি বিস্ফোরণে মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ আহত হন। এর আগে ২০০৭ সালে দেশের অবশ্য পর্যটন গন্তব্য সুলতান পার্কে দেশের প্রথম সন্ত্রাসবাদী হামলার পর মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে হওয়া সমস্ত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছিলেন। মলদ্বীপবাসীরা বিশ্বে যা ঘটছে, তার দ্বারা প্রভাবিত। তাঁরা পাকিস্তানে যান, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে এবং চরম ধর্মীয় ধারণা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন,’ তিনি বলেছিলেন। তাই পাকিস্তানের উদ্বেলিত সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র যদি মলদ্বীপের রোল মডেল আকাঙ্ক্ষা হয়ে ওঠে, তা হলে দেশটির অর্থনীতি গোল্লায় যাবে এবং কোনও পর্যটক এ হেন দেশে ভ্রমণে রাজি হবে না, যেখানে সন্ত্রাসের বিচ্যুতি রেখা অবকাশের সামুদ্রিক তটের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে।

এই বিচ্যুতি রেখা মলদ্বীপের অভ্যন্তরেও প্রভাব ফেলেছে। বিস্ফোরণ থেকে শুরু করে বৌদ্ধ স্থাপনার উপর ভাঙচুর চালানো হয়ে যোগ দিবস উদ্‌যাপনে বিঘ্ন ঘটানোর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীরা দেশের ভিতর থেকে পর্যটন গন্তব্যকেন্দ্রগুলির উপর আঘাত হানছে। মুইজ্জুর সরকার মলদ্বীপের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলে বর্ণবাদী মন্তব্যকে ন্যায্যতা প্রদানের চেষ্টা করেছিলেন। যাই হোক, মলদ্বীপ কাস্টমস সার্ভিসের মতে, কোনও পর্যটক মলদ্বীপে ভগবদগীতা, বাইবেল বা ইসলামের জন্য আপত্তিকর কোন ধর্মীয় উপকরণ বহন করতে পারবেন না। সম্ভবত, মুইজ্জু সরকার মানে শুধুমাত্র চরমপন্থীদের জন্য বাক-স্বাধীনতা প্রদান

এই ধর্মীয় উগ্রবাদ রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হয়ে উঠলে মলদ্বীপের জন্য শুধু শুভকামনাই দেওয়ার আছে। আর যদি তা না হয়, এই ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর কাজ হল সন্ত্রাসবাদ সরবরাহের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা এবং সন্ত্রাসবাদী বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করা। অন্যথায় মলদ্বীপের ভবিষ্যৎও পাকিস্তানের মতোই হতে পারে।

 

চিন নামক কৌশলগত ভুলকে আলিঙ্গন করা

দ্বিতীয় যে চাপটি মলদ্বীপকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেবে তা হল, মুইজ্জুর সরকার চিনের ফাঁদে পা দিয়েছে। মুইজ্জু ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারকে কেন্দ্র করে ক্ষমতায় এসেছেন। সেই প্রচারের সম্প্রসারণ হিসেবে তিনি পাঁচ দিনের চিন সফরের মাধ্যমে তাঁবিদেশমন্ত্রক বিষয়ক কাজ শুরু করেন। তিনি চিনকে মূল্যবান মিত্র এবং অবিচ্ছেদ্য সহযোগী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যদি এটি চিন সম্পর্কে তাঁর সঠিক মূল্যায়নের অভাবের কারণে হয়, তা হলে তাঁকেই শ্রীলঙ্কার মতো এ বার তলিয়ে ভেবে দেখতে হবে। শ্রীলঙ্কা চিনা অর্থে অস্ত্রায়নের চাপে রয়েছে, যেখানে বেজিং দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ঋণ ত্রাণ প্রদানে বাধা দিচ্ছে।

শি জিনপিংয়ের অধীনে চিন একটি দুর্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে, যার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হল ক্রেতা দেশগুলি অর্থাৎ পূর্বে উত্তর কোরিয়া এবং পশ্চিমে পাকিস্তান। মলদ্বীপ এই দুর্বৃত্তায়নের ধারায় যোগ দিতে চায় কি না, সেটি তাকেই ভেবে দেখতে হবে। কারণ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এ হেন দুর্বৃত্তায়নের ধারার পরিণতি হল নিম্নগামী সর্পিল। তবে মলদ্বীপের গৃহীত সিদ্ধান্তের কিছু ফলাফল আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল নয়াদিল্লির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। এ বিষয়ে বেজিং ভাল মতোই অবগত এবং সম্ভবত বেজিংই এমনটা ঘটিয়েছে।

 

শি জিনপিংয়ের অধীনে চিন একটি দুর্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে, যার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হল ক্রেতা দেশগুলি অর্থাৎ পূর্বে উত্তর কোরিয়া এবং পশ্চিমে পাকিস্তান।

 

চিনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য চিনের সব পদের চেয়ারম্যান শি-র কাছে যেমন সব কিছু আটক, তেমনই মলদ্বীপে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করে ভারতকে প্যাঁচে ফেলার ইচ্ছে চিনের তরফে এ হেন রাজনৈতিক খেলার প্রসঙ্গে একটি পদক্ষেপ। মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হিসাবে এমনটা করার জন্য এবং তাঁর দেশকে চিনের দাসে পরিণত করার জন্য অর্থাৎ মলদ্বীপকে শি-এর খামখেয়ালিপনার মুখাপেক্ষী করে রাখার জন্য মুইজ্জুকে লোকে মনে রাখবে। এর ফলে মলদ্বীপের জনগণ বেজিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন এবং দেশটি পিপলস লিবারেশন আর্মি দ্বারা ব্যবহৃত ও চালিত এক কৌশলগত সাধনী হয়ে উঠবে।

মুইজ্জুর বেজিং-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁর দেশকে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দেবে। অবশ্যই এই দেউলিয়া অবস্থা তত দিন প্রকাশ্যে আসবে না, যত দিন না পর্যন্ত ঋণ প্রদানকারীরা দেশটি দখল করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যতক্ষণ না এটির সঙ্গে সংযুক্ত অস্বচ্ছ শর্তগুলি একটি সংঘর্ষ বিন্দুতে পৌঁছয়, সেই বিন্দু পর্যন্ত অর্থের লেনদেনকে খারাপ বলে মনে হয় না। পাকিস্তান ও কেনিয়া থেকে শুরু করে জাম্বিয়া ও মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত দেশগুলি চিনের ঋণের চাপে জর্জরিত। শ্রীলঙ্কা এর উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। সে দেশে কেবলমাত্র পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থান বিলুপ্ত হয়নি, এর পাশাপাশি ২০২৩ সালে দেশটির মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৬০ শতাংশেরও বেশি। শ্রীলঙ্কার ঋণের ১০ শতাংশ ধরে রেখে বেজিং একটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পুনর্বিন্যাসে বাধা দিয়েছে। ভারতের তরফে আর্থিক আশ্বাস এবং ঋণ পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি না ঘটলে শ্রীলঙ্কার অবস্থা করুণতম হত।

মলদ্বীপের সংস্কার না হলে নৈসর্গিক দ্বীপটি বিশ্ব জুড়ে পর্যটকদের আগমন থেকে বঞ্চিত হবে। তবে তা মালের পতনের নিরিখে ডুবন্ত কৌশলগত হিমশৈলের চূড়ামাত্র। এক দিকে ইসলামপন্থী, অন্য দিকে চিনা চাপের মুখে পড়েও দেশটিকে নিজেদের মনোযোগকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আন্তর্জাতিক কৌশলগত সম্প্রদায় এ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই অবগত। বর্তমানে অবশ্য বেশির ভাগ ভারতীয়ও এমনটা বুঝতে পারছেন। পরিশেষে, যে সকল ‘বুদ্ধিজীবী মোদী সরকারকে ভারতীয় সংস্থাগুলি দ্বারা মলদ্বীপের পৃথক করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, তাঁরা কৌশলগত বিভ্রান্তির দ্বীপে বসবাস করছেন এবং ব্যবসায়িক স্বাধীনতাকে অস্বীকার করার অজ্ঞতায় নিমজ্জিত। একটি সংস্থা ব্যবসা করতে প্রত্যাখ্যান করলে অপর সংস্থা এমনটা না-ও করতে পারে। এবং সরকারের কখনওই তাদের সিদ্ধান্তে নাক গলানো উচিত নয়।

 

মুইজ্জুর বেজিং-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁর দেশকে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দেবে। অবশ্যই এই দেউলিয়া অবস্থা তত দিন প্রকাশ্যে আসবে না, যত দিন না পর্যন্ত ঋণ প্রদানকারীরা দেশটি দখল করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

 

নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এই সকল ঘটনাপ্রবাহের উপর নিবিড় নজর রাখতে হবে, একটি ভাল প্রতিবেশী দেশের ভূমিকা পালন করতে হবে এবং প্রয়োজনে মলদ্বীপকে সাহায্য করতে হবেতবে এ কথাও নয়াদিল্লিকে বুঝতে হবে যে, দেশটি এমন একজন রাজনীতি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যিনি স্পষ্টতই ভারতকে মলদ্বীপ থেকে বিতাড়িত করতে চান। মুইজ্জুকে তাঁর ভূ-রাজনীতির সামান্য ‘ভূ’টুকু বোঝার জন্য শুধু মাত্র সুনামির মতো একটি সঙ্কটই যথেষ্ট। বেজিং থেকে মালে দূরত্ব ৫৮০০ কিমি, জিবুতি থেকে ৩৫০০ কিমি, করাচি থেকে ৩৪০০ কিমি, কলম্বো থেকে ৭৬৬ কিমি এবং ভারতের তিরুনন্তপুরম থেকে মাত্র ৬০০ কিমি। এ বার এই ‘ভূ’ ক্ষেত্রে অন্য সমস্ত সমস্যাকে নিহিত করা গেলে তার মধ্যে পড়বে স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষার খরচ; বাণিজ্য খরচ; দীর্ঘ দূরত্বের কারণে পণ্যের দাম; এবং ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির লভ্যতার অভাব – যা কিনা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হতে চলেছে। এ সবেরই মূল্য চোকাতে হবে মলদ্বীপকে। যদি মুইজ্জুর ইন্ডিয়া-আউট রাজনীতিমলদ্বীপের ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করার ‘ভূ’কৌশলী পদক্ষেপকে টেক্কা দিতে পারে, তা হলে নির্বাচনী ব্যক্তিদের স্বার্থ মুইজ্জু-আউট’-এ পরিণত হওয়ার আগে শুধু মাত্র একটি নির্বাচনী চক্রের অপেক্ষা

২০০ টি জন-অধ্যুষিত দ্বীপের এই দেশে পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়গুলি একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, সহিংস সন্ত্রাসবাদ এবং ইন্ডিয়া ইন’ নীতি ঘিরেই আবর্তিত হবে। কয়েক দশক ব্যাপী ভারতের পূর্ববর্তী অবস্থানেই মোদী অটল থেকেছেন। আপাতত বন্ধুত্বের জাহাজ মলদ্বীপের উপকূলে নোঙর করা থাকলেও মুইজ্জুর তরফে সম্পৃক্ততা ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্কের স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্য নির্ধারণ করবে। দেউলিয়া না হওয়া পর্যন্ত এবং বাস্তব রাজনীতিতে আঘাত না আসা পর্যন্ত ছোট দেশগুলি বৃহৎ শক্তির খেলায় সামান্য বোড়ে হয়েই রয়ে যাবে।

 


গৌতম চিকারমানে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.