Expert Speak India Matters
Published on Feb 07, 2022 Updated 23 Days ago

মোদি সরকারের খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি উপর–উপরেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, মূল স্তরে বাজেটের ভিত্তিগত উন্নতি করতে সক্ষম হয়নি।

মোদির বাজেটগুলি:‌ অর্জন উচ্চ, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন নেই
মোদির বাজেটগুলি:‌ অর্জন উচ্চ, কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন নেই

বাজেটে প্রতিফলিত হয় সরকারের অর্থনৈতিক দর্শন, নিকট-মেয়াদি রাজনৈতিক অর্থনীতির চাপ ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি। মনমোহন সিং–এর ইউপিএ আমলের শেষের বছরগুলো এবং মোদী সরকারের বিগত বাজেটগুলোর পর্যালোচনা (নিচের সারণি দেখুন)‌ এটাই স্পষ্ট করে যে, সুনির্দিষ্ট ফলাফলের ক্ষেত্রে পার্থক্য সত্ত্বেও এগুলির মধ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে বড় ধরনের মিল আছে। সোজা কথায়, ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার মতোই এখানেও শাসকদের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু অন্য কিছু বদলায়নি।

এই বিষয়টা দেখুন:‌ উন্নয়নের জন্য অসাধারণ ব্যয়ের জনপ্রিয় ‌কথনের বিপরীতে মোদীর বছরগুলিতে চলতি সময়ের জিডিপি (‌মোট আভ্যন্তর উৎপাদন)‌–র তুলনায় ব্যয়ের মাত্রা কমেছে। ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বাজেটারি ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৩ অনুযায়ী নির্ধারিত জিডিপি–র ২ শতাংশের আর্থিক ঘাটতির (এফডি) সীমার মধ্যে থাকার বিষয়ে ইউপিএ সরকার অনেক বেশি ঢিলেঢালা ছিল;‌ কিন্তু অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা সঠিক ভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলেন, এবং উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিডিপি–র ৪.৫ শতাংশ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এফডি নামিয়ে আনেন ৩.৫ শতাংশে।

বিজেপির অর্থমন্ত্রীরা আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়ার প্রবণতা দেখিয়ে থাকেন। তা খুব ভয়ঙ্কর বিষয় নয়, কারণ ভর্তুকি কমানো, এবং কর, ইউজার চার্জ বা উদ্বৃত্ত সম্পদের নগদীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো প্রায়–অনতিক্রম্য রাজনৈতিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়।

ব্যয় সঙ্কোচনের মাত্রা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিডিপির (২০১৪ আর্থিক বর্ষ) ১৩.৯ শতাংশ থেকে ২০১৯ আর্থিক বর্ষে ১২.২ শতাংশে নিয়ে আসার ঘটনা ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে রাজস্ব ঘাটতি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জিডিপির ৩.২ শতাংশ থেকে ২.৭ শতাংশে কমাতে সাহায্য করে। তবে পরবর্তীতে তা আবার বেড়ে ৩.৩ শতাংশ হয়েছে। এর কারণ ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির ভর্তুকির বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত, ব্যালান্স শিট বহির্ভূত, অতিরিক্ত ঋণের দায়বদ্ধতা।

বিজেপির অর্থমন্ত্রীরা আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়ার প্রবণতা দেখিয়ে থাকেন। তা খুব ভয়ঙ্কর বিষয় নয়, কারণ ভর্তুকি কমানো, এবং কর, ইউজার চার্জ বা উদ্বৃত্ত সম্পদের নগদীকরণের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো প্রায়–অনতিক্রম্য রাজনৈতিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। কর রাজস্ব ২০১২ থেকে ২০২০ অর্থবর্ষের মধ্যে অ–ব্যতিক্রমী ভাবেই স্থিতিশীল রয়েছে জিডিপি–র ৬.৯ থেকে ৭.৩ শতাংশের মধ্যে। শুধু ২০১৩ অর্থবর্ষে তা জিডিপি–র ৭.৫ শতাংশে পৌঁছেছিল।

ফলস্বরূপ, বাজেট শুধু প্রান্তিক ভাবেই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রগত বরাদ্দের মধ্যে নগদের প্রবাহের সামান্য পরিবর্তন করতে পারে;‌ আর পারে রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল এলাকার জন্য বরাদ্দের সামান্য পরিবর্তন করতে, করের হার যুক্তিপূর্ণ করে তুলতে এবং আরও বেশি সরকারি খরচের ভারসাম্যের জরুরি প্রয়োজনের দিকে নজর রাখতে, যাতে করে বৈষম্য ও তার বিশ্রী বহিঃপ্রকাশ চরম দারিদ্র্য কমানো সম্ভব হয়, এবং উন্নতি ঘটানো যায় মানব পুঁজি সূচকের। আর সেই সঙ্গেই নিম্ন-মানের পরিকাঠামো সুবিধা বাড়ানো যায়, যা উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধির গতিরোধ করে।

মোদির সাফল্যের বইয়ের সবচেয়ে দুর্বল জায়গাটি হল বৃদ্ধি। ২০১২-১৪ অর্থবর্ষে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জিভিএ-র ৬.০৫ শতাংশ থেকে তা বেশ সপ্রতিভ ভাবে ২০১৫ অর্থবর্ষে ৭.২ শতাংশে, এবং পরবর্তী দুই বছরে ৮ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে স্থানচ্যুতির আগে শেষ স্বাভাবিক বছর ২০১৯-২০ সালে তা কমে ৩.৯ শতাংশে নেমে গিয়েছিল।

চিত্তাকর্ষক বক্তৃতা করার দক্ষতার সঙ্গে বিজেপির প্রধান ভোট–শিকারী হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদি যে সংসদীয় প্রক্রিয়া থেকে দূরত্ব রেখে চলেন, তার মূল কারণ সম্ভবত এটাই যে তিনি পেশাদার সাংসদ নন।

সাধারণত সব কিছুতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী স্বভাববহির্ভূত ভাবে বাজেট তৈরির প্রক্রিয়া থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। শুরুর দিনগুলিতে প্রয়াত অরুণ জেটলি অর্থ মন্ত্রকের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর অসুস্থতা (২০১৮–২০১৯) পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে, তখন রেলের তৎকালীন মন্ত্রী পীযূষ গয়াল ২০১৯-২০-র বাজেট পেশ করেছিলেন। তারপর তিনি বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। উল্টোদিকে, যখন মোরারজি দেশাই ১৯৬৯ সালে পদত্যাগ করেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক বছরের জন্য অর্থমন্ত্রীও ছিলেন, এবং ১৯৭০ সালে বাজেট পেশ করেছিলেন।

চিত্তাকর্ষক বক্তৃতা করার দক্ষতার অধিকারী এবং বিজেপির প্রধান ভোট–শিকারী হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মোদী যে সংসদীয় প্রক্রিয়া থেকে দূরত্ব রেখে চলেন, তার মূল কারণ সম্ভবত এটাই যে তিনি পেশাদার সাংসদ নন। তিনি দেরিতে, একান্ন বছর বয়সে, জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রথমে তিনি ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন, এবং তারপর বিধানসভার সদস্য হন। উচ্চ কার্যনির্বাহী পদের জন্য পেশাদার দক্ষতা অর্জনের জন্য এটাই ব্যবহৃত পথ। তারপর থেকে তিনি ক্রমাগত উচ্চ কার্যনির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, প্রথমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

রাজনীতি ও সংসদীয় নেটওয়ার্কিংয়ের জমি তৈরির দায়িত্ব অন্যদের হাতে রেখে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি একজন পুরোদস্তুর প্রধান নির্বাহী হিসেবে রয়েছেন। বাজেটগুলিকে তিনি বড়সড় নীতি ঘোষণার মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেন না। তার জন্য তিনি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ১৫ আগস্টের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণটি বেশি পছন্দ করেন। সেখানে তিনি হিসাবমতো ২ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি অনলাইন, লাইভ দর্শকের সামনে বাস্তবায়ন এবং অর্জনের বিষয়ে তার সরকারের বার্ষিক রিপোর্ট কার্ডও উপস্থাপন করেন।

বাজেটের দিনটিকে অলঙ্কারবর্জিত করা

প্রধানমন্ত্রী মোদী কি এমন প্রবণতা তৈরি করতে পারেন, যা বাজেটের দিনটিকে আরও পেশাদার ও অলঙ্কার–বর্জিত করে তুলবে? বাজেট ম্যানেজমেন্ট হওয়া উচিত সারা বছর ধরে রাজ্য সরকারগুলি–সহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বিস্তৃত ও ক্রমাগত পরামর্শভিত্তিক একটি উন্মুক্ত, সহযোগিতামূলক প্রয়াস।

পণ্য ও পরিষেবা কর পরিষদ (‌জিএসটি কাউন্সিল) উৎপাদনশীল সহযোগিতার একটি আদর্শ মডেল হিসেবে তৈরি অবস্থায় রয়েছে। প্রযুক্তির দৌলতে এখন এই ধরনের একীকরণ সম্ভব।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বিশদের দিকে নজর রয়েছে, এবং তিনি স্বচ্ছতার একজন প্রবক্তা। কেন্দ্র, রাজ্য ও পৌর বাজেট সংযুক্ত করার জন্য মূল সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক কার্যকর পদক্ষেপ করতে পারে। রাজস্ব নকশায় এই ধরনের একীকরণ কাজের পরিধি ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে অযথা একাধিক সংস্থার একই কাজ করার বিষয়টি এড়াতে পারে, এবং প্রকল্প ও কর্মসূচির দক্ষতা বাড়াতে পারে। পণ্য ও পরিষেবা কর পরিষদ (‌জিএসটি কাউন্সিল) উৎপাদনশীল সহযোগিতার একটি আদর্শ মডেল হিসেবে তৈরি অবস্থায় রয়েছে। প্রযুক্তির দৌলতে এখন এই ধরনের একীকরণ সম্ভব। এখনকার পাবলিক ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে একটি গভর্নমেন্ট ইন্টিগ্রেটেড ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএফএমআইএস)‌–এ সরে গেলে নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থাপনার সহায়ক আন্তঃসরকারি হিসাব–ব্যবস্থাগুলির সংযোগ সহজতর হবে।

মধ্যমেয়াদী বাজেটের আনুষ্ঠানিকীকরণ

ভারত ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি ও জিডিপি–র আনুপাতিক ঋণ–এর মতো মাপকাঠিগুলিকে সামগ্রিক আর্থিক নির্দেশিকা হিসেবে ব্যবহার করে। অতীতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাগুলি সামগ্রিক আর্থিক পরিমিতির অধীনে মধ্যমেয়াদি, ক্ষুদ্র আর্থিক ব্যয়ের ছত্র তৈরি করে দিত। পরিকল্পনা শেষ হওয়ার পর ভারতের প্রয়োজন বার্ষিক বাজেটের বাইরে একটি বিকল্প ছত্রের। মধ্য-মেয়াদি ব্যয় কাঠামো এই ধরনের ছত্রের ব্যবস্থা করতে পারে। সুসংবাদ হল ভারতের রাজস্ব বহুমুখী এবং স্থিতিশীল। রাজস্ব শুদ্ধতার সৌজন্যে ঋণ করার সহজ সুযোগ ভারসাম্য হিসেবে কাজ করে। কিছু বাজেট প্রস্তাব ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিক মধ্যমেয়াদি (তিন থেকে পাঁচ বছর) ব্যয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে। এই ধরনের পূর্বাভাস বাজেট প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির জন্য ভবিষ্যৎ আর্থিক পরিসর তালাবদ্ধ করে রাখলে আর্থিক দুঃসাহসিকতার পথে হাঁটা কঠিন হয়, এবং তার ফলে সামরিক কেনাকাটার মতো বহুবার্ষিক কর্মসূচির জন্য নিয়মিত অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়।

পরিবর্তনের পরিকল্পনা

মধ্যমেয়াদি আর্থিক বরাদ্দ তালাবদ্ধ করা হলে তা বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করবে ফলাফল অর্জনের অভিপ্রেত পথ সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি এবং সামগ্রিক স্তরভিত্তিক ভাবনাচিন্তা করতে, যার মধ্যে দিয়ে ব্যয় ও আয় উভয় দিকের প্রয়োজনীয় সমস্ত আন্তঃক্ষেত্র সংযোগগুলিকে যুক্ত করা যাবে।

আর্থিক পরিসর তালাবদ্ধ করে রাখলে আর্থিক দুঃসাহসিকতার পথে হাঁটা কঠিন হয়, এবং তার ফলে সামরিক কেনাকাটার মতো বহুবার্ষিক কর্মসূচির জন্য নিয়মিত অর্থায়ন নিশ্চিত করা যায়।

বিনিয়োগ একটি ভাল উদাহরণ যেখানে এই ধরনের মধ্যমেয়াদি চিন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর প্রক্রিয়াটি সময়–নিবিড় এবং ফল পেতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগে। একই ভাবে কর থেকে ভবিষ্যতের উচ্চতর রাজস্বের জন্য বাজেট করতে হলে যা জরুরি তা হল কর সংগ্রহের আগে থেকেই কর–আচরণ সম্পর্কে তথ্য ও তার বিশ্লেষণ, এবং একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও ডিজিটাল ব্যবস্থা তৈরি করা যা কর মূল্যায়নকে শস্তা ও কর ফাঁকিকে ব্যয়বহুল করে তোলে। পণ্য ও পরিষেবা করের মতো একটি বড় কর সংস্কার বাস্তবায়নের সময় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব অর্থনৈতিক খরচ বাড়িয়ে তোলে (২০১৭-২০)।

বাজেট বাস্তবায়ন রিপোর্ট শেয়ার করা

এখনকার বাজেট প্রক্রিয়ায় বাজেট উপস্থাপিত হয় বাজেটের দিনটিকে ঘিরে একটি এককালীন অনুষ্ঠান হিসাবে। জনসাধারণকে ক্রমাগত জড়িত রাখা সম্ভব হতে পারে ত্রৈমাসিক বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট সর্বজনীন ভাবে শেয়ার করা হলে। এই রিপোর্টে অর্থমন্ত্রক টাকা দেওয়ার প্রস্তাবিত সময়সীমা এবং সংস্থাগুলির তহবিল ব্যবহারের সময়সীমা কতটা সঠিক ভাবে মেনে চলা হয়েছে তার তথ্য দেওয়া হবে। এই ধরনের রিপোর্ট বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা বাড়ায় এবং উন্মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনকে উৎসাহিত করে।

কার্যসম্পাদন বাজেটিং

২০১৭-১৮ থেকে বাজেট নথির সেটের অংশ হয়ে গিয়েছে একটি ফলাফল নথি বা আউটকাম বাজেট। কিন্তু এই বিশাল নথিটি প্রয়োজনের তুলনায় কম ব্যবহৃত হয় এবং যে ভাবে তৈরি করা হয় তা খুব একটা সহায়ক হয় না। উৎপাদন ও ফলাফল সূচকদুটি প্রায়শই বিভ্রান্তির শিকার হয়। উৎপাদন সূচকগুলির যা পরিমাপ করা উচিত তা হল নির্ধারিত খরচের মধ্যে নির্দিষ্ট ফলাফল অর্জনের জন্য তহবিল ব্যবহারের দক্ষতা। আর ফলাফল সূচকগুলির পরিমাপ করা প্রয়োজন একটি কর্মসূচি কতটা কার্যকর পরিবর্তন আনতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ১৯৭৫ সালের ২০ দফা কর্মসূচির সময় থেকে কর্মসূচিগুলির ফলাফলের প্রামাণিক যাচাইয়ের বিষয়টি বাদ পড়ে গেছে।

জনসাধারণকে ক্রমাগত জড়িত রাখা সম্ভব হতে পারে ত্রৈমাসিক বাজেট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত রিপোর্ট সর্বজনীন ভাবে শেয়ার করা হলে। এই রিপোর্টে অর্থমন্ত্রক টাকা দেওয়ার প্রস্তাবিত সময়সীমা এবং সংস্থাগুলির তহবিল ব্যবহারের সময়সীমা কতটা সঠিক ভাবে মেনে চলা হয়েছে তার তথ্য দেওয়া হবে।

স্বচ্ছ ভারত এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ‘‌উন্মুক্ত মলত্যাগমুক্ত’‌ এলাকা তৈরির ক্ষেত্রে ফলাফলের বিষয়টি দেখা যাক। কর্মসূচির তথ্য গ্রামীণ এলাকায় ১০০ শতাংশ (২০২০-২১) কাজ হওয়ার কথা জানিয়েছে, কিন্তু বিশ্লেষকেরা উল্লেখ করেছেন যে এই দাবিকে জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫, ২০১৯-২০–এর তথ্য সমর্থন করছে না৷ এটি এই বিষয়টি তুলে ধরে যে বস্তুগত উৎপাদন (টয়লেট, প্রশিক্ষণ সেশন, মানুষের কাছে পৌঁছনো) আর ফলাফল (ওডিএফ) এক বিষয় নয়, কারণ ফলাফল পাওয়ার জন্য আচরণগত পরিবর্তন প্রয়োজন।

কর্মসূচির পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো

নিবিড় পর্যবেক্ষণ, ফলাফলের মূল্যায়ন ও কর্মসূচি সংশোধনের জন্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজখবরের ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে নীতি ও কর্মসূচিগুলির ক্রমাগত সূক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব, কিন্তু তার সংশ্লিষ্ট কাঠামোটি কোনও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এই ধরনের নতুন কাজগুলি করার ক্ষমতা বিকশিত করতে সরকারি ক্ষেত্রের সিদ্ধান্তগ্রহণ ও বাস্তবায়নের স্থাপত্যে বিশেষজ্ঞদের ও প্রযুক্তিগত সংস্থান যুক্ত করতে হবে।

২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোদি–বাজেটগুলি জনসাধারণের জন্য কাজকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উচ্চতর স্তরে নিয়ে গেছে পরিকাঠামো (হাইওয়েগুলি হল দুর্দান্ত উদাহরণ), রেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডিজিটাল গ্রিড, সামাজিক সুরক্ষা ও বিমা কর্মসূচি, এবং দরিদ্রদের মর্যাদা দেওয়ার প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে।

বাজেট তৈরি করা ও কার্যসম্পাদনা মূল্যায়ন পরস্পরের পরিপূরক হওয়ায় অর্থমন্ত্রক এই ভূমিকা পালন করতে পারে। বিকল্প হিসেবে নীতি আয়োগ ইতিমধ্যেই সমীক্ষা ও সূচক উন্নয়ন (উচ্চাশী জেলা, পৌরসভার কর্মসম্পাদন) কমিশন করে থাকে। তৃতীয় বিকল্প হলেন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি), যিনি ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের অনুরোধ–সহ নির্বাচিত কর্মসূচিগুলির ঐতিহাসিক কার্যসম্পাদনা পরীক্ষা করেন।

২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত মোদি–বাজেটগুলি জনসাধারণের জন্য কাজকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উচ্চতর স্তরে নিয়ে গেছে পরিকাঠামো (হাইওয়েগুলি হল দুর্দান্ত উদাহরণ), রেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ডিজিটাল গ্রিড, সামাজিক সুরক্ষা ও বিমা কর্মসূচি, এবং দরিদ্রদের মর্যাদা দেওয়ার প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে। এগুলি বিশাল লাভ।

মাথাভারী ও খণ্ডিত লক্ষ্য পূরণের শ্বাসরুদ্ধকর তাড়ায় পেছনে পড়ে গেছে বাজেটের ভিত্তিগত উন্নতি ও পরিবর্তনের পরিচালন। বাজেট সংক্রান্ত শাসন ব্যবস্থায় গতি সঞ্চার করতে পারলে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বৈষম্য হ্রাস, স্থিতিশীল বৃদ্ধি, ভারতের নিরাপত্তা সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং বিদেশে অংশীদারিত্ব বিকাশের সর্বাধিক লাভজনক কর্মসূচিতে মূলধনের আদর্শ বরাদ্দের পথ আরও সুগম হতে পারে। কিন্তু এসবই প্রধানমন্ত্রীর সময় ও রাজনৈতিক পুঁজি খেয়ে ফেলবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.