Author : Arya Roy Bardhan

Published on Apr 07, 2024 Updated 0 Hours ago

জলবায়ু ‌সক্রিয়তার বর্তমান প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে মিলেট খাদ্য ও জলের মধ্যে সমঝোতা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য একটি কার্যকর সমাধান প্রদান করে

ভারতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মিলেট

ভারতে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মিলেট

আন্তঃসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) অনুসারে, আগামী দুই দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা
১.৫ ডিগ্রি উষ্ণায়নে পৌঁছবে বা ছাড়িয়ে যাবে। জলবায়ু সক্রিয়তার বর্তমান প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে এমন আনুষঙ্গিক নীতিগুলি বাস্তবায়িত করা প্রয়োজন। বিশ্ব উষ্ণায়ন শুধু জলের প্রাপ্যতার উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে না, একইসঙ্গে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করবে। তাই কৃষি ক্ষেত্রকে, যা প্রায় ৮৯ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করে, এমন অনুশীলনের দিকে সরানো দরকার যা পুষ্টি ও জলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং ন্যূনতম সামাজিক ব্যয় বহন করে।


যেগুলি অত্যন্ত জলনিবিড় এমন  কিছু খাদ্যশস্য বাজারের সর্বাধিক অংশ দখল করে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও জলের প্রাপ্যতার মধ্যে সমঝোতা চাপিয়ে দেয়।



ভারত একটি অত্যন্ত জল–অপ্রতুল অর্থনীতি।
বিশ্বের জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ হলেও তাদের জন্য ভারতে আছে বিশ্বের জল সম্পদের মাত্র ৪ শতাংশ। ভূগর্ভস্থ জলের সম্পদের দীর্ঘায়িত শোষণের ফলে এটি হ্রাস পেয়েছে, যা ভূগর্ভস্থ জল ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য অবিলম্বে অভিযোজন নীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। যদিও অটল ভূজল যোজনার মতো কর্মসূচিগুলি ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়, একইসঙ্গে জলের ব্যবহার কমানোর প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেওয়া উচিত৷ যেগুলি অত্যন্ত জলনিবিড় এমন কিছু খাদ্যশস্য বাজারের সর্বাধিক অংশ দখল করে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও জলের প্রাপ্যতার মধ্যে সমঝোতা চাপিয়ে দেয়। খাদ্য ও জলের সমঝোতা এড়াতে বাজরার মতো শুষ্ক ফসলের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই বিষয়টি তুলে ধরার জন্য যে কীভাবে ভারতীয় অনুশীলনগুলি বিশ্বব্যাপী প্রতিলিপি করা যেতে পারে।


ভারতের মিলেট থেকে সরে যাওয়া

ধান, গম ও আখ, যেগুলি সবচেয়ে জলনির্ভর ফসল, তা ভারতের ফসল উৎপাদনের
৯০ শতাংশ। ভারত হল সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক, যার প্রতিটি কিলোগ্রাম উৎপাদনে প্রায় ৩,৫০০ লিটার জল ব্যবহৃত হয় এবং তা তাৎপর্যপূর্ণভাবে তার সামাজিক উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে। বিশ্বব্যাপী মিথেন নির্গমনের ১০ শতাংশের জন্য ধান দায়ী, এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় মিথেন নির্গমনের প্রায় ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী। এসব সত্ত্বেও, ভারতে ধান ও গম প্রবর্তক সবুজ বিপ্লব কৃষকদের জমি ও ভোক্তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মিলেটগুলির উপস্থিতি মুছে দিয়েছে (সারণী ১)।

ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জলের মজুদ হ্রাসের মুখে মিলেটগুলিকে প্রধান খাদ্যশস্য হিসাবে পুনরায় চালু করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে। জোয়ার, বাজরা ও রাগি–র মতো মিলেটগুলির বৃষ্টিপাতের প্রয়োজনীয়তা ধান চাষের প্রয়োজনীয়তার
৩০ শতাংশেরও কম। যদিও বৈশ্বিক তাপমাত্রার অনুমিত বৃদ্ধির সঙ্গে গম চাষ অকার্যকরযোগ্য হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, মিলেট এমন একটি টেকসই বিকল্প সরবরাহ করে যার ফলন খরা বা উচ্চ তাপমাত্রার পরিস্থিতিতে বৃদ্ধি পেতে পারে। এ কথাও জানা গিয়েছে যে চালের তুলনায় মিলেটে ৩০ থেকে ৩০০ শতাংশ বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে, এবং তা নিশ্চিত করে যে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য পুষ্টির নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হবে না।

সারণী ১: ২০১০–১১ থেকে ২০১৯–২০ পর্যন্ত ক্ষেত্রফল (১০০০ হেক্টর), উৎপাদন (১০০০ টন) এবং ফলন (কেজি/হেক্টর)‌ অনুযায়ী ভারতে মিলেট চাষ

সূত্র:
নীতি আয়োগ


ভারতীয় নীতির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ

২০১১–১২ সালে বাজরা উৎপাদনের জন্য উপলব্ধ উন্নত প্রযুক্তি দেখানোর জন্য এবং ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য
ইনিশিয়েটিভ ফর নিউট্রেশনাল সিকিউরিটি থ্রু ইনটেনসিভ মিলেটস প্রোডাকশন চালু করা হয়েছিল। স্থিতিশীলতার অনুসারী কৃষির জন্য জাতীয় মিশন, 'জল ব্যবহারের দক্ষতা' এবং 'পুষ্টি ব্যবস্থাপনা'-এর উপর ব্যাপকভাবে ফোকাস করে, কৃষকদের বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে বাজরা চাষকে উৎসাহিত করে। ২০১৩ সালে প্রবর্তিত ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট (এনএফএসএ) মোটা শস্য বিতরণের নির্দেশ দেয়, কিন্তু মিলেটের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বিধান করেনি। শুধুমাত্র জোয়ার, বাজরা এবং রাগি সরকার দ্বারা সংগ্রহ করা হয়, কিন্তু কোনও উৎপাদন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই অপ্রধান মিলেটগুলি অরক্ষিত থেকে যায়। যাই হোক, পরে ২০১৮ সালে, মিলেটগুলি 'নিউট্রি সিরিয়াল' হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল, এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা মিশনের অধীনে সেগুলির প্রসারের প্রয়াস শুরু হয়েছিল, যার ফলে ২০১৮–কে মিলেটের জাতীয় বছর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

২০২১ সালে, ভারত জোয়ার এবং রাগির জন্য ক্রয় এবং বিতরণের সময়কাল যথাক্রমে ৬ মাস থেকে ৯ এবং ১০ মাসে বাড়িয়েছে। সরকার স্বীকার করেছে যে শহুরে সম্প্রদায়ের কাছে বিপণন মিলেটের দিকে সামগ্রিক অগ্রাধিকার স্থানান্তর করার জন্য যথেষ্ট হবে না — একটি বিস্তৃত পরিবর্তনের প্রয়োজন যা শুধুমাত্র বিতরণ প্রকল্প ও সংগ্রহের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে। অধিকন্তু, আন্তর্জাতিক পছন্দগুলিকে সারিবদ্ধ করতে এবং মিলেট চাষের প্রসারের জন্য ফসলগুলিকে লাভজনক করার উপযোগী একটি আন্তর্জাতিক বাজার থাকা দরকার। ভারত ভবিষ্যতের খাদ্যশস্য হিসাবে মিলেটকে সমর্থন করার এই প্রয়োজনীয়তাকে চিহ্নিত করেছে, এবং তার প্রস্তাবের ফলে রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০২৩ সালকে
মিলেটের আন্তর্জাতিক বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে। ২০২১–২২ সাল থেকে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প মন্ত্রক (এমওএফপিআই) দ্বারা গৃহীত খাদ্য পণ্যগুলির জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের অধীনে সরকার "রেডি টু কুক" মিলেট–ভিত্তিক পণ্যগুলির উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে ৮০০ কোটি টাকা সংরক্ষিত রেখেছিল।


কম গ্লাইসেমিক সূচকের সাথে, এটি অনুমান করা হয় যে তারা ডায়াবেটিস প্রতিরোধের পাশাপাশি শরীরের ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।



চাহিদা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ভোক্তাদের মিলেটের অধিক পুষ্টির বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। গ্লুটেন–মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি মিলেট আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্কের সমৃদ্ধ উৎস। কম গ্লাইসেমিক সূচকের পাশাপাশি, অনুমান করা হয় যে এগুলি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এবং শরীরের ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। অধিকন্তু, শস্যে পলিস্যাকারাইড এবং খাদ্যতালিকাগত ফাইবারের আকারে প্রায়
৬৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যা নিয়মিত মিলেট ভোক্তাদের মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের প্রকোপ কমায়। এতে ক্যালসিয়াম ধানের চেয়ে বেশি, এবং লোহার পরিমাণ গম ও চাল উভয়ের চেয়েও বেশি। এটি এই সত্যটি পুনর্ব্যক্ত করে যে পুষ্টি নিরাপত্তার মূল্যে সম্পদের প্রাপ্যতা বাড়ানো হবে না।


ভারতীয় মূল্যশৃঙ্খলকে শক্তিশালী করা

ভারত মিলেটের
বৃহত্তম উৎপাদক এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। গত ৫ দশকে চাষের একর জমির ৫৬ শতাংশ হারানো সত্ত্বেও, উৎপাদনশীলতা এবং উন্নত প্রযুক্তির কারণে মিলেটের উৎপাদন ১১.৩ থেকে ১৬.৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। ভারতীয় প্রচেষ্টা থেকে প্রতিলিপিযোগ্য কাঠামো এবং নীতি–প্রাসঙ্গিক জ্ঞান যেভাবে তৈরি হয়েছে তা মিলেটের প্রসারের জন্য তুলে ধরা দরকার।

গত পাঁচ দশকে ভারতীয় গবেষণা জাতীয় ও রাজ্য স্তরে
৮০ এবং ২০০টিরও বেশি উন্নত জাত উদ্ভাবনের দিকে পরিচালিত করেছে, যেগুলির শস্যের উচ্চ ফলন এবং সেইসঙ্গে বায়োটিক ও  এবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে৷ নতুন ফোরাজ জোয়ার কাল্টিভার উচ্চতর হজম ক্ষমতা (‌ডাইজেস্টিবিলিটি)‌ দেখিয়েছে;‌ এগুলি সায়ানোজেন–নিরাপদ এবং আগের চাষের তুলনায় ক্ষতিও কম হয়। অন্যদিকে, প্রান্তিক কৃষকদের খাদ্য, পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেওয়ার সমাধান হিসেবে বায়োফোর্টিফাইড বাজরা তৈরি করা হয়েছে। বাজরা পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং জলবায়ু সহনশীল, যা শুষ্ক এবং আধা–শুষ্ক অঞ্চলের কৃষকদের জন্য একে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি হবে।

সারণী ২: ভারতের বিশিষ্ট রাজ্যে ছোট বাজরার ক্ষেত্রফল, উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতা (২০১৯–২০)

সূত্র:
কৃষি মন্ত্রক


বাজরার পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য মানসম্পন্ন ইনপুট প্রয়োজন, যা মানসম্মত বীজ উৎপাদন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে। রাগি, লিটল মিলেট, কোডো মিলেট, ফক্সটেল মিলেট, বার্নইয়ার্ড মিলেট, প্রসো মিলেট ও ব্রাউনটপ মিলেট, যাদের নিয়ে ভারতে স্মল মিলেটের পরিবার গঠিত, সেগুলিকেও সংগ্রহের আওতায় আনা দরকার।l


আবশ্যকতা

মিলেট খাদ্য নিরাপত্তা এবং সম্পদ আহরণের মধ্যে বর্তমান দ্বন্দ্বের একটি কার্যকর সমাধান প্রদান করে। যাই হোক, মিলেট শিল্পের পরিধি বাড়াতে, বাজারগুলি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হওয়ার আগে উপযুক্ত নীতি তৈরি করা প্রয়োজন। স্মল মিলেটের উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের জন্য কার্যকরী গবেষণা প্রয়োজন, কারণ কৃষকেরা উৎপাদনশীলতার সমস্যার সম্মুখীন হন, যা তাঁদের লাভ–সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। ন্যূনতম সমর্থন মূল্য (‌এমএসপি) ও ভর্তুকির আকারে বাজারের হস্তক্ষেপ এবং ফসলের উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে হবে। মিলেটের আন্তর্জাতিক বছরটি বৈশ্বিক পছন্দগুলিকে আকার দিতে এবং মিলেটের পুষ্টি ও স্থিতিশীলতার সুবিধা উভয় বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে ব্যবহার করা উচিত। পরিশেষে, ক্রমবর্ধমান উষ্ণ বিশ্বে মিলেটের বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও উপভোগ বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সরকারগুলিকে প্ররোচিত করতে এর জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার বৈশিষ্ট্যগুলির উপর জোর দেওয়া উচিত।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন–এর সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.