Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 16, 2024 Updated 0 Hours ago
মলদ্বীপের নয়াদিল্লিকে প্ররোচিত করা উচিত নয়

সোশ্যাল মিডিয়ার এই দিনে এবং যুগে, কূটনীতি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কখনও কখনও, সোশ্যাল মিডিয়ার কোলাহল সত্যিই ডুবিয়ে দেয় সেই সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে যার জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন;‌ কিন্তু কখনও কখনও এটি এমন অন্তর্নিহিত প্রবণতাগুলিকে সামনে নিয়ে আসে যেগুলির অন্যথায় রূপ নিতে সময় লাগত। ভারত–মলদ্বীপের বিবাদ এমনই একটি ঘটনা যেখানে ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা উত্তেজনা বেড়েছে মালে-র কিছু অবাঞ্ছিত মন্তব্যের কারণে, যা এই বিষয়টিই তুলে ধরে যে কীভাবে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরা দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। মলদ্বীপে নতুন সরকারের কিছু সদস্যের বাগাড়ম্বরমূলক উচ্ছ্বাস নয়াদিল্লির সঙ্গে মালে তথা মলদ্বীপের মূল পার্থক্যকে প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লক্ষদ্বীপ সফর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং কূটনৈতিক স্তরে ঝড়ের সূত্রপাত করেছে বলে মনে হচ্ছে, যা অনেকগুলি মাত্রায় অনুরণিত হয়ে চলেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, এবং বলিউডের সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে কৌশলগত সম্প্রদায়, প্রত্যেকেরই একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কোচি–লক্ষদ্বীপ সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ এবং কিছু অন্যান্য প্রকল্পের উদ্বোধন করতে লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন, কিন্তু এটি করার সময় তিনি স্নরকেলিং ও অবসরযাপন ক্রিয়াকলাপের জন্যও সময় বার করেছিলেন, যা সামাজিক মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল।


ভারত–মলদ্বীপের বিবাদ এমনই একটি ঘটনা যেখানে ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকা উত্তেজনা বেড়েছে মালে-র কিছু অপ্রয়োজনীয় মন্তব্যের কারণে, যা এই বিষয়টিই তুলে ধরে যে কীভাবে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীরা দূরে সরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

ভারতে যেমন কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে লক্ষদ্বীপে পর্যটন বাড়ানো একটি ভাল লক্ষ্য হবে, মলদ্বীপে আবার কেউ কেউ মোদীর সফরকে মলদ্বীপের বিকল্প পর্যটন গন্তব্য হিসাবে লক্ষদ্বীপকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা হিসাবে দেখেছেন। এই প্রক্রিয়ায়, ভারতীয়দের ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়, যা ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই মন্তব্যগুলির মধ্যে কয়েকটি মলদ্বীপের যুব ক্ষমতায়ন, তথ্য ও শিল্প মন্ত্রকের উপমন্ত্রীদের কাছ থেকে এসেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় এক্স–এ হ্যাশট্যাগ #BoycottMaldives ট্রেন্ডিং হতে শুরু করে। অনেক ভারতীয় তাঁদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, এবং কেউ কেউ মলদ্বীপে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।

বিদেশমন্ত্রক মলদ্বীপের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম সাহেবকে তলব করার সঙ্গেসঙ্গেই সরকারগুলি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। এর পরেই মলদ্বীপ সরকার ভারতীয় হাইকমিশনার মুনু মাহাওয়ারকে তলব করে।

প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল এবং তাদের আপত্তিকর সামাজিক মিডিয়া পোস্টের জন্য তিনজন উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। একটি বিবৃতিতে মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রক ‘‌বিদেশি নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অবমাননাকর মন্তব্যের অস্তিত্ব’‌ স্বীকার করে নিয়ে জোর দিয়ে বলে, ‘‌‘‌এই মন্তব্যগুলি ব্যক্তিগত মতামত এবং মলদ্বীপের সরকারি অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’‌’‌

ইব্রাহিম সোলি-র সময়ে উচ্চ সুসম্পর্ক থাকলেও মোহাম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকে মলদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নড়বড়ে হয়েছে। তিনি একটি ভারতবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁর প্রচারাভিযান চালিয়েছিলেন, এবং তাঁর 'ইন্ডিয়া আউট' প্রচারণা গত বছর উল্লেখযোগ্য মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। ভারত ও পূর্ববর্তী মলদ্বীপ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার অভিযোগ এনে মুইজ্জু শপথ নেওয়ার পরপরই ভারতকে তাঁর দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য তুরস্ক ছিল মুইজ্জুর প্রথম গন্তব্য, এবং তিনি এই সপ্তাহে চিনে রয়েছেন। তাঁর পূর্বসূরিরা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে ভারত সফর করলেও তিনি সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিয়েছেন। ডিসেম্বরে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ মিটিংয়ে মালে অনুপস্থিত ছিল। অতি সম্প্রতি, মুইজ্জুর সরকার নয়াদিল্লির সঙ্গে একটি চুক্তি পুনর্নবীকরণ না–করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ভারতকে মলদ্বীপের জলসীমায় হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করার অনুমতি দিয়েছিল।


দ্বিপাক্ষিক সফরের জন্য তুরস্ক ছিল মুইজ্জুর প্রথম গন্তব্য, এবং তিনি এই সপ্তাহে চিনে রয়েছেন। তাঁর পূর্বসূরিরা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে ভারত সফর করলেও তিনি সেই ঐতিহ্য ভেঙে দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সঙ্কট ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ দুটি প্রতিবেশীর মধ্যে এই ভিন্নতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলের সমস্ত রাষ্ট্রকে তাদের দুটি আঞ্চলিক মহাশক্তি ভারত ও চিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সূক্ষ্ম কূটনৈতিক বিবেচনা। মুইজ্জুর অধীনে মলদ্বীপের ক্ষেত্রে সেই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এবং এই ভারসাম্যহীনতা এমন একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে শুধু দুটি সরকারের মধ্যেই নয়, দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কেরও দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বিন্যাস সত্ত্বেও, অতীতে মলদ্বীপে একটি উপলব্ধি ছিল যে, ভারত এই অঞ্চলে এমন একটি মূল্যবান নিরাপত্তা অংশীদার যে মালের সামান্য সামুদ্রিক নজরদারি শক্তি ও সক্ষমতা পূরণ করে। এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয় যে এমনকি আবদুল্লা ইয়ামিন, যাঁর প্রেসিডেন্সির অধীনে মালে চিনের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, তিনিও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সবচেয়ে খারাপ পর্যায়েও ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছিলেন। এছাড়াও ভারত মলদ্বীপের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, একটি শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য এবং একটি ঐতিহ্যগত দাতা। পর্যটন মলদ্বীপের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখে, এবং দ্বীপরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভ্রমণার্থী ভারত থেকে যায়। এই উপসংহারে পৌঁছনোর জন্য বড় কোনও দূরদর্শিতার প্রয়োজন নেই যে মালে-র নয়াদিল্লিকে উত্তেজিত করা এড়ানো উচিত। ভারত মহাসাগরে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূগোল বিবেচনা করে যদি নয়াদিল্লির জন্য মলদ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়, তাহলে মালে-র জন্যও ভারত এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ভিত্তি হিসাবে রয়ে গেছে। এটি অপরিহার্য করে তোলে যে পারস্পরিক সংবেদনশীলতাকে স্পষ্টভাবে উচ্চারিত লক্ষ্মণরেখার সঙ্গে সম্মান করা হয়।



এই ভাষ্যটি ‌প্রথম এনডিটিভিতে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.