Expert Speak Young Voices
Published on Feb 25, 2022 Updated 11 Hours ago

রাজনীতিতে লিঙ্গবৈষম্য মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের প্রয়োজনের ইঙ্গিতবাহী;‌ তা হলেই রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণ সম্ভব হবে।

শিক্ষার সঙ্গে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের যোগসূত্র

Source Image: Ajichan — iStock/Getty

শিক্ষার সঙ্গে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের যোগসূত্র

সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক অগ্রগতি ঘটেছে, কিন্তু সর্বাধিক প্রভাবিত করেছে রাজনৈতিক ভূমিকায় নারীদের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি। নারীরা আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংখ্যার অনুপাতে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব কম। ঘর থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই নারীরা সিদ্ধান্তগ্রহণ থেকে বাদ পড়ে যান। রাজনীতিতে নারীদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে, এবং সেই উদ্দেশ্যেই ভারত লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ভারতীয় সংবিধানে সমান সুযোগের বিধান থাকা সত্ত্বেও আইনসভাগুলিতে, এবং সমস্ত স্তরে রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, মহিলাদের উপস্থিতি কম। সম্ভাব্য কারণগুলির সন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই শিক্ষা রাজনীতিতে একটি ভূমিকা পালন করে, তবে তা শুধু মহিলাদের জন্য। কারণ নারী রাজনীতিবিদদের সাক্ষরতার হার পুরুষ রাজনীতিবিদদের তুলনায় বেশি, যা বোঝায় যে শুধু মহিলাদেরই রাজনৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন।

রাজনীতিতে নারীদের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে, এবং সে জন্যই ভারত লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সংসদের মোট সদস্যের মধ্যে নারীরা ১০.৫ শতাংশ। রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের দুর্দশা আরও প্রকট, কারণ সেখানে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব ৯ শতাংশ। স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরেও লোকসভায় মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব ১০ শতাংশও বাড়েনি। ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলিতে নারী কর্মীর সংখ্যা প্রচুর;‌ কিন্তু তাঁদের প্রায়ই প্রান্তিক পর্যায়ে রেখে দেওয়া হয়, এবং ভোটের সময় তাঁদের দলীয় টিকিট দেওয়া হয় না।। ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের কম প্রতিনিধিত্বের বেশ কিছু কারণ আছে, যেমন মহিলাদের উপর প্রথাগত ভূমিকা চাপিয়ে দেওয়া, রাজনৈতিক নেটওয়ার্কের অভাব, আর্থিক চাপ, সম্পদের অনুপলব্ধতা ইত্যাদি৷ কিন্তু রাজনীতিতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির পথে একটি বড় বাধা হল দেশে নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার অভাব। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, ভারত ১৫৩টি দেশের মধ্যে শিক্ষাগত অর্জনে ১১২তম স্থানে রয়েছে, যা বুঝিয়ে দেয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নির্ধারণকারী একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষা। মহিলাদের সামাজিক গতিশীলতা তাঁদের শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হয় তা নেতৃত্ব দেওয়ার একটি সুযোগ তৈরি করে, এবং নেতৃত্বের সূক্ষ্ম ক্ষমতা জাগিয়ে তোলে। রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাবের কারণে নারীরা তাঁদের মৌলিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যান।

গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে, ভারত ১৫৩টি দেশের মধ্যে শিক্ষাগত অর্জনে ১১২তম স্থানে রয়েছে, যা বুঝিয়ে দেয় রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নির্ধারণকারী একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষা।

ভারতীয় নারী রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত, যেমন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, দিল্লির বিধায়ক আতিশি মারলেনা, উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। এর থেকে এমন ধারণাই জোরালো হয় যে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে নারীদের মধ্যে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাক্ষরতার বিষয়টি শুধু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তা ভোটদান পর্যন্ত প্রসারিত। প্রথমত, যে সব রাজ্যে নারী সাক্ষরতা কম সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ কম, আর যে সব এলাকায় নারী সাক্ষরতা বেশি সে সব এলাকায় নারীদের অংশগ্রহণও বেশি। তারপর, গত দশকের তুলনায় নারী সাক্ষরতার উন্নতি সত্ত্বেও নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ তুলনামূলক ভাবে আগেকার মতোই রয়ে গেছে। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে পুরুষদের সঙ্গে সাক্ষরতার এই ধরনের কোনও যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায় না। সামগ্রিক ভোটার অংশগ্রহণ ও মহিলা ভোটারের অংশগ্রহণের মধ্যে বৈষম্য সেই রাজ্যগুলিতে বেশি যেখানে সাক্ষরতার হার কম। পুরুষরা কিন্তু শিক্ষিত হন বা না–হন, একই অনুপাতে অংশগ্রহণ করেন।

উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে, যেখানে বিধানসভায় মহিলা প্রতিনিধিত্বের হার ১০ শতাংশ, সেখানে মহিলা প্রতিনিধিদের ৭৭.‌৫ শতাংশ গ্র‌্যাজুয়েট বা পোস্ট–গ্র‌্যাজুয়েট, কিন্তু আনুপাতিক হারে পুরুষদের ক্ষেত্রে তা কম। একই ভাবে, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিধানসভায় নির্বাচিত মহিলাদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশের সাক্ষরতার হার প্রায় ৬০ শতাংশ, যেখানে পুরুষ নেতাদের মধ্যে তা যথেষ্ট কম। এই তুলনাটি ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার একেবারে বাস্তব ছবিটি তুলে ধরে:‌ মহিলা রাজনীতিবিদরা পুরুষ রাজনীতিকদের তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষিত, কিন্তু প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে এখনও পিছিয়ে। এ থেকে এটাও স্পষ্ট হয় যে ভারতে মহিলাদের জন্য সাক্ষরতা এবং রাজনীতির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট যোগসূত্র আছে৷ রাজনৈতিক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার অভাবের কারণে নারীরা রাজনীতিতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন, এবং ভারতে লিঙ্গসমতা একটি অধরা স্বপ্ন থেকে যায়। নিঃসংশয়ে নারী প্রতিনিধিত্বের একটা বিরাট গুরুত্ব রয়েছে সাসটেনেব্‌ল ডেভলপমেন্ট গোল্‌স (এসডিজি ৫ (৫.৫ এবং ৫.গ)–এর পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এই লক্ষ্যগুলি হল লিঙ্গসমতা অর্জন এবং মেয়ে ও নারীদের ক্ষমতায়ন, বিশেষ ভাবে নেতৃত্ব ও জনগণের কাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণে, এবং এমন নীতি নেওয়ায় যা অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে‌। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে ভোটারদের অর্ধেক নারী, এবং নীতিগুলি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই তৈরি করা হয়। কাজেই শাসনে ও নীতি প্রণয়নে তাঁদের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিৎ, কারণ এই ক্ষেত্রে ঘাটতি সংশ্লিষ্ট নীতির কার্যকারিতা ও প্রাসঙ্গিকতা কমিয়ে দিতে পারে।

রাজনৈতিক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার অভাবের কারণে নারীরা রাজনীতিতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন, এবং ভারতে লিঙ্গসমতা একটি অধরা স্বপ্ন থেকে যায়।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব থাকার সময়ে বান কি-মুন বলেছিলেন, “যেখানে নারীরা বেশি শিক্ষিত ও ক্ষমতায়িত, সেখানে অর্থনীতি আরও বেশি উৎপাদনশীল ও শক্তিশালী। যেখানে নারীদের পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব থাকে, সেই সমাজগুলি বেশি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল…’‌’‌ (ইউএনএসসি ২০১৩ )। ‌এই উক্তি লিঙ্গসমতা অর্জনে এবং দেশগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করতে শিক্ষার তাৎপর্যের উপর জোর দেয়৷ ভারতে শিশুকন্যা শিক্ষার হার কম, এবং দেশ এখনও পিতৃতন্ত্রের কবলে রয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ভাবে মহিলাদের নির্দিষ্ট ভূমিকার গণ্ডিতে আটকে দেয়। এর ফলে আরও গুরুতর সমস্যা তৈরি হয়, যেখানে আমরা দেখি নীতিপ্রণয়ন ও অন্তর্ভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের অভাব। এর কারণ শিক্ষার অভাব মহিলাদের এই দিকগুলি সম্পর্কে অজ্ঞ করে রাখে, এবং এ ভাবে তাঁরা একটি পঙ্কিল চক্রে আটকা পড়ে যান৷ সরকার তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে নারী শিক্ষার (‘‌বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’‌) প্রচারের মাধ্যমে, এবং নিয়ে এসেছে পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের মতো সাংবিধানিক সংশোধনী (সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪৩–ঘ মহিলাদের জন্য অন্তত এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে) ও মহিলা সংরক্ষণ বিল, ২০০৮, যা লোকসভার সমস্ত আসনে এবং সমস্ত রাজ্য বিধানসভায় মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত করার প্রস্তাব এনেছিল।

নারীদের যুগ যুগ ধরে অংশগ্রহণে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এখন আমরা যে গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন সেখানে এই অপক্ক পদক্ষেপগুলি অর্থহীন হয়ে পড়েছে। তাই এমন নীতিসমূহের জরুরি প্রয়োজন রয়েছে যা দেশে মহিলাদের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারে, যেমন আরও কঠোর নীতি প্রণয়ন এবং দেশে শিশুকন্যার শিক্ষার বাস্তবায়ন, রাজ্য বিধানসভার ও সংসদীয় নির্বাচনে নারীদের ন্যূনতম সম্মত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলির উদ্যোগ, মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করা; নারীদের জন্য নিরাপদ রাজনৈতিক ক্ষেত্র, এবং নারীদের প্রথাগত ভূমিকার অবসান। এই দিকগুলির কথা মাথায় রেখে বলা যায়, ভারতে মহিলাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের এখনও অনেক পথ বাকি আছে, বিশেষ করে সরকারের বৃহত্তর স্তরে। তবে আরও বেশি মহিলা রাজনৈতিক নেতা এবং আরও বেশি মহিলার গণতান্ত্রিক অধিকার অনুশীলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নীতিগত পরিবর্তন আশা করতে পারি, যা ভারতকে তার রাজনৈতিক কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.