Expert Speak India Matters
Published on Apr 22, 2022 Updated 16 Days ago

ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য দেশে হালকা ট্যাঙ্ক তৈরির প্রয়াস প্রশংসনীয়, তবে আমাদের সামনের বিপদসঙ্কুল পথ সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার।

হালকা ট্যাঙ্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ছে
হালকা ট্যাঙ্ক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ছে

মোদী সরকার ৩ মার্চ, ২০২২-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর (আইএ) জন্য হালকা ট্যাঙ্ক তৈরির কথা ঘোষণা করেছিল। এই সিদ্ধান্তটি ২০২০ সালের ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট প্রসিডিওর (ডিপিপি) এর মেক-আই ক্যাটাগরির অধীনে নেওয়া হয়েছিল, এবং বিষয়টি এসেছিল ভারতের কে৯–বজ্র মোবাইল হাউইটজারকে হালকা ট্যাঙ্কে রূপান্তরের পটভূমিতে। কে৯–বজ্র হল একটি ট্র্যাক্‌ড ১৫৫এমএন/২ স্বচালিত হাউইটজার, যা ৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। এর একটি রেজিমেন্ট, এখন চিনাদের সঙ্গে চলতি  সংঘাতের সময় লাদাখে মোতায়েন করা হয়েছে। তা ছাড়া চিন-ভারত সীমান্তের অন্যান্য অংশেও বজ্র রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। কে৯–বজ্র কিন্তু কখনওই পর্যাপ্ত বা বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প হবে না ডেডিকেটেড লাইট ট্যাঙ্কের, যার জন্য সরকার এখন নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। বজ্র মোতায়েন করার সিদ্ধান্তটি ছিল মূলত ভারতের চিনের সঙ্গে সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার তাৎক্ষণিক সামরিক পরিস্থিতি ও সেনার ফায়ারপাওয়ার প্রয়োজনের প্রতিক্রিয়া। ওজনের দিক থেকে কে৯–বজ্র হল একটি ৫০-টন ট্র্যাক্‌ড যান, যা লাদাখে মোতায়েন টি–৯০ বা টি–৭২ মেন ব্যাটল ট্যাঙ্ক (এমবিটি)–এর মতো প্রকৃত ট্যাঙ্কের থেকে কিছুটা বেশি ওজনের। টি–৯০–এর ওজন ৪৮ টন এবং পুরনো টি–৭২–এর ওজন ৪৬ টন। দুটি রাশিয়া-নির্মিত এমবিটি-ই ১২৫ মিমি বন্দুক দিয়ে সজ্জিত।

বজ্র মোতায়েন করার সিদ্ধান্তটি ছিল মূলত ভারতের চিনের সঙ্গে সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার তাৎক্ষণিক সামরিক পরিস্থিতি ও সেনার ফায়ারপাওয়ার প্রয়োজনের প্রতিক্রিয়া।

এখন যেখানেই মোতায়েন করা হোক না কেন, কে৯–বজ্র, টি–৯০ ও টি–৭২–এর ওজন চিন-ভারত সীমানা বরাবর উচ্চতায় কার্যকর যুদ্ধের পক্ষে অনেক বেশি ভারী। তবে এগুলিকে কার্যকর বলে ধরা হলেও এগুলির মোতায়েন আইএ-র উপর লজিস্টিক বোঝা চাপিয়ে দেয়, যে বোঝা কয়েক বছর ধরে বাহিনী কমানোর চেষ্টা করছে। মেকানাইজড ফোর্স ডিরেক্টরেট জেনারেল অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্মের ওজন কমাতে নিবিড় ভাবে কাজ করছে। তা ছাড়া চিনারা টাইপ–১৫ নামে একটি ডেডিকেটেড লাইট ট্যাঙ্ক ডিজাইন করেছে এবং তৈরিও করে ফেলেছে, আর অতি–উচ্চতার যুদ্ধের জন্য সেগুলোর উপযোগিতার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে সেগুলো মোতায়েন করেছে। টাইপ–১৫–এর ওজন ৩৫ টন এবং একটি ১০৫ মিমি বন্দুক–সহ তা ভারতীয় বাহিনীর টি–৯০ বা টি–৭২ এবং কে৯–বজ্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে হালকা। এটি গত তিন দশকে নির্মিত কয়েকটি হালকা ট্যাঙ্কের মধ্যে একটি। ভারতীয় সমকক্ষদের তুলনায় এর বন্দুকের আকার ছোট হলেও এটি একটি সক্ষম সাঁজোয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যাপক ভাবে স্বীকৃত। চিনারা টাইপ–১৫ লাইট ট্যাঙ্ক তৈরি করেছিল, কারণ তারা অতি–উচ্চতার যুদ্ধের জন্য কম ওজনের সাঁজোয়া প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন অনুমান করেছিল, বিশেষ করে এখন বিবাদাস্পদ সীমান্তে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সামরিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য।

কী ভাবে ভারতীয় সেনা এখানে পৌঁছেছে এবং সামনের চ্যালেঞ্জ

এই পটভূমিতে ভারত ২০২০ সালের মে মাসে চিন-ভারত সীমান্তের চলতি দুর্যোগের পরে রুশ লাইট ট্যাঙ্ক স্প্রুট এসডিএম১ কেনার কথা বিবেচনা করেছিল। ২০২১ সালের এপ্রিল  মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে ২৫ টন ওজন শ্রেণীর ৩৫০টি হালকা ট্যাঙ্ক সংক্রান্ত তথ্যের জন্য  ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ মেকানাইজড ফোর্সেস একটি অনুরোধ (আরএফআই) পাঠিয়েছিল। রাশিয়ার প্রস্তাব সত্ত্বেও ভারত এখন সেগুলি আমদানি না–করে দেশে একটি হালকা ট্যাঙ্ক তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে। এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতে হবে, কিন্তু ভারতের সাঁজোয়া বাহিনীর জন্য পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাহিনী কতটা সমস্যাজর্জরিত তা ভুললে চলবে না। জনসাধারণের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত যে ভারত হালকা ট্যাঙ্কের জরুরি প্রয়োজন অনুভব ও তার অনুসন্ধান শুরু করল চলতি চিন-ভারত সীমান্ত সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে। সঙ্কটকাল সব সময়েই নতুন উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করে, এবং হালকা ট্যাঙ্কের দেশীয় উন্নয়নের বিষয়টিতে সরকারের সিদ্ধান্তও তার ব্যতিক্রম নয়। এই ঘটনাটি ভারতের প্রধান শত্রু গণপ্রজাতান্ত্রিক চিনের সামর্থ্য ও অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারতীয় বাহিনীর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিণতি। সাধারণত বাহিনী হালকা সাঁজোয়া গাড়ির চেয়ে মাঝারি থেকে ভারী ওজনের সাঁজোয়া গাড়িকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ পাকিস্তান ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পনাকারীদের চিন্তাভাবনায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ জায়গা নিয়ে রেখেছিল। কাজেই চিনের সঙ্গে চলতি সীমান্ত–অচলাবস্থার আগে পর্যন্ত হালকা ট্যাঙ্ক তৈরির ভাবনা গতি পায়নি।

হালকা ট্যাঙ্কের দেশীয় উন্নয়নের গুণাগুণ নির্বিশেষে, এখন ভারতের সিদ্ধান্ত–গ্রহণকারীদের স্বীকার করতে হবে যে দেশে তৈরি এই ট্যাঙ্কের প্রাথমিক সংস্করণটি পেতে পেতে সম্ভবত ন্যূনতম পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও), কমব্যাট ভেহিক্যালস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এস্টাব্লিশমেন্ট (সিভিআরডিই), হেভি ভেহিকেলস ফ্যাক্টরি (এইচভিএফ) লিমিটেড এবং সম্ভবত কিছু বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্থা মিলিত ভাবে লাইট ট্যাঙ্ক প্রকল্পে নেতৃত্ব দেবে;‌ কিন্তু সংস্থাগুলি অলৌকিক সাফল্য অর্জন না–করলে পাঁচ বছরের কম সময়ের মধ্যে ট্যাঙ্ক হাতে আসা সম্ভব নয়।

সঙ্কটকাল সব সময়েই নতুন উন্নয়নমূলক উদ্যোগের সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করে, এবং হালকা ট্যাঙ্কের দেশীয় উন্নয়নের বিষয়টিতে সরকারের সিদ্ধান্তও তার ব্যতিক্রম নয়।

ট্যাঙ্কটির নির্মাণ–চক্রের সময়কাল আশা করা যায় খুব বেশি দীর্ঘ হবে না, তবে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে একটি হালকা ট্যাঙ্কের যুদ্ধ–কার্যক্ষমতা এবং তা মোতায়েনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভারতীয় বাহিনীর অবশ্যই স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অন্যথায় এটি ডিআরডিও ও তার সহযোগী সংস্থাগুলির ট্যাঙ্ক ডিজাইনারদের ‘অন্ধকারে’‌ রেখে দেবে। প্রায় ৭০ টনের অর্জুন এমবিটি-র মতো সাঁজোয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরির অতীতের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যেন লাইট ট্যাঙ্ক প্রকল্পে না–হয়। ভারতীয় বাহিনীর দ্বারা কার্যক্ষমতার মানদণ্ড পরিবর্তন করার নজির রয়েছে অর্জুন এমবিটি-তে। পরে বাহিনীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকারের নির্দেশে এই ট্যাঙ্ক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এমকে১এ ভ্যারিয়েন্টে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও এটি এখনও একটি অতিরিক্ত ওজনের ট্যাঙ্ক, এবং শুধু ‌কিছু ‘‌পকেটে’,‌ যেমন ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে মরুভূমি অঞ্চলে তা মোতায়েন করা যেতে পারে। অর্জুন–এর খরচও যা অনুমান করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। অর্জুন এমবিটি-র এমকে১ এবং এমকে১এ, দুটিরই মোতায়েন নিয়ে বাহিনীর অনিচ্ছা ও বিলম্বের ঘটনা এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে একটি দেশীয় লাইট ট্যাঙ্ক তৈরির সময় কী কী করা উচিত হবে না। কারণ, তা দেশীয় সামর্থ্য বলি দিয়ে বাহিনী ও সরকারকে হালকা ট্যাঙ্ক আমদানি করতে বাধ্য করতে পারে। আসন্ন মাস ও বছরগুলিতে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞায় আক্রান্ত রাশিয়া সরবরাহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উৎস হবে। ভারত যদি একটি বিকল্প উৎসের দিকে যায়, তা হলেও তাকে হার্ডঅয়্যার আমদানি করতে হবে, এবং তাতে ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে সামরিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যতের যে কোনও সরকারের প্রয়াস ব্যাহত হবে। শেষে বলা যায়, ভারতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অবশ্যই জাতীয় স্তরে সরকারের পরিবর্তন হলেও যাতে ক্রমাগত অর্থায়ন অক্ষুণ্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে, এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য হালকা ট্যাঙ্ক তৈরি করার লক্ষ্যে সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের একত্র করে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) এবং চূড়ান্ত উৎপাদনের উপর ঘনিষ্ঠ ভাবে নজর রাখতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.