Author : Rajen Harshé

Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 29, 2022 Updated 7 Days ago

গণতান্ত্রিক রূপান্তর অর্জনে সফল হতে লিবিয়াকে তার পথের একাধিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হবে।

লিবিয়ার জটিল পরিস্থিতি: গণতন্ত্রের অভিমুখে বন্ধুর পথ

Source Image: Ben Sutherland — Flickr/CC BY 2.0

লিবিয়ার জটিল পরিস্থিতি: গণতন্ত্রের অভিমুখে বন্ধুর পথ

গণতন্ত্রের অভিমুখে লিবিয়ার উত্তরণের পথে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনিয়ে আছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তোব্রুকে অবস্থিত এবং পূর্বাঞ্চল দ্বারা শাসিত লিবিয়ার পার্লামেন্ট ফাতি বাশাঘাকে প্রধানমন্ত্রী রূপে নির্বাচন করে। অতঃপর, বাশাঘার নতুন সরকার ২০২২ সালের ১ মার্চ পার্লামেন্ট দ্বারা অনুমোদিত হয়। যদিও ক্ষমতাসীন আবদুল হামিদ বেইবাহের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রপুঞ্জ সমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাশাঘার হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার অনীহা লিবিয়ায় অশান্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ (ইউ এন) বাশাঘার নিয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, বাশাঘা ‘প্রত্যাশিত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেননি।’ এই গভীর রাজনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিনে ২,৯০,০০০ ব্যারেল তেল উত্পাদনকারী লিবিয়ার বৃহত্তম তৈলাঞ্চল এল শাহারা তেল উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এবং বিক্ষোভকারীরা মূল রফতানি টার্মিনাল বন্ধ রাখার হুমকি দেয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে তেলের দাম যখন বাড়ছে, তখন অন্য দিকে এই নাটকীয় ঘটনা ঘটছে। প্রসঙ্গত, লিবিয়ায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় তেলের মজুত রয়েছে এবং শক্তি উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যাগুলি প্রায়ই লিবিয়াকে সশস্ত্র সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই সন্ধিক্ষণে সরকারি ক্ষমতা দখলের জন্য বাশাঘা এবং বেইবাহার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা লিবিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সামান্য পরিমাণ হলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা স্থাপন করা জরুরি।

২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর নির্ধারিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি রাখা হয়েছে যেখানে লিবিয়ার ২৫ লক্ষ ভোটারের মতদান করার কথা ছিল। ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে বেইবাহ নির্বাচন করার পরিকল্পনা করলেও বাশাঘার আগমনে তাঁর নিজের অবস্থানই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। লিবিয়ার রাজনীতি ও সমাজকে স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির অক্ষমতা লিবিয়াকে কার্যত একটি অবরুদ্ধতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। লিবিয়া কৌশলগত ভাবে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত যা তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ফলে রাজনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং ঐক্যবদ্ধ লিবিয়া অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আনতে এবং বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম। যদিও লিবিয়ায় স্থিতিশীল রাজনীতির পরিসর গড়ে তোলা এক অলীক কল্পনা। বিগত দশকের বিশৃঙ্খল বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক মাত্রার মূল্যায়ন এবং লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নেতৃত্বের গুণমান বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) বাহিনীর হাতে মুয়াম্মার গদ্দাফি শাসনের পতনের পর, লিবিয়ার খণ্ডিত রাজনীতি প্রায়ই স্থানীয় যুদ্ধবাজ, উপজাতীয় মিলিশিয়া, বিভিন্ন স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িত কেন্দ্রমুখী প্রবণতার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১২ সালের জেনারেল ন্যাশনাল কংগ্রেস (জি এন সি) নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস নির্বাচন উভয়ই — যেখানে ১৮ শতাংশের কম ভোট পড়েছে — লিবিয়ায় একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিসর গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি লিবিয়াকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, যা মূলত বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই তুলে ধরেছে। এক দিকে পশ্চিম লিবিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জ সমর্থিত গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ইউনিটি (জি এন ইউ), যার নেতৃত্বে ছিলেন ফয়েজ আল-সাররাজ (২০১৬-২০২১), তুরস্ক এবং কাতারের দৃঢ় সমর্থনে ত্রিপোলির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। অন্য দিকে জেনারেল খলিফা হাফতার, যিনি ২০১৫ সালের পরে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, লিবিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ অংশে তাঁর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন। এল এন এ তোব্রুককে তার রাজধানী হিসেবে বেছে নিয়েছিল। হাফতারও রাশিয়া, মিশর, ফ্রান্স, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউ এ ই) মতো বৈদেশিক শক্তিগুলির সম্পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন। সম্পদ সমৃদ্ধ লিবিয়াকে আফ্রিকার প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করে, এই বৈদেশিক শক্তিগুলির প্রত্যেকে সামুদ্রিক এবং শক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত ভূ-রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে বিবেচনা করে লিবিয়ার প্রতি তাদের নিজস্ব নীতি নির্ধারণ করেছিল। লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় এবং দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেয়। তেল সরবরাহে এই ধরনের বাধা বিবদমান সমস্ত পক্ষকেও প্রভাবিত করেছে।

লিবিয়ার রাজনীতি ও সমাজকে স্থিতিশীল করতে বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির অক্ষমতা লিবিয়াকে কার্যত একটি অবরুদ্ধতার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এর পাশাপাশি লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ ৫০,০০০ উদ্বাস্তু এবং ২,৬৮,০০০ বাস্তুচ্যুত মানুষ সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ান পলিটিক্যাল ডায়ালগ ফোরামের (এল পি ডি এফ) মাধ্যমে রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা পরিবর্তনের পথ তৈরি করে। অবশেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বাধীন ৫+৫ যৌথ সামরিক কমিশনের মাধ্যমে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীগুলি ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে জেনেভায় একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই পদক্ষেপ রাষ্ট্রপুঞ্জের পৃষ্ঠপোষকতায় লিবিয়ায় গণতন্ত্রের অভিমুখে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করে। আশ্চর্যজনক ভাবে লিবিয়ার প্রেক্ষাপটে পূর্বের প্রতিদ্বন্দ্বী যেমন মিশর এবং তুরস্ক তাদের সম্প্রীতির পরে লিবিয়ার গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে সমর্থন করেছিল

এই রূপান্তরকে নিয়ন্ত্রণ করার রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, পার্লামেন্টের নির্বাচন কমিটি এবং দ্বিধাবিভক্ত বিচারব্যবস্থা সংক্রান্ত অভিন্ন সাধারণ ক্ষেত্রগুলিতে সহমতের অভাবে লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। নিয়মের অস্পষ্টতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক নেতারা নিয়মের তোয়াক্কা না করে সুবিধে মতো ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে থাকেন। লিবিয়ার রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে ভাবে সংবিধান প্রণয়ন এবং নির্বাচন পরিচালনার পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে, তা অবশ্যই একটি সমালোচনামূলক যাচাইয়ের দাবি রাখে।

উদীয়মান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী

প্রথমত, নতুন নির্বাচনী আইনগুলি পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয়নি। তবে সেগুলি কেবল মাত্র এইচ ও আর-এর স্পিকার, আগুইলা সালেহ ইসা সরাসরি অনুমোদন করেছিলেন। এগুলিকে আইন না বলে ডিক্রি বলাই শ্রেয়। যে পদ্ধতিতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা কার্যনির্বাহী পরিকাঠামোকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছে। তাঁর বক্তব্য পেশ করার সময়ে স্পিকার জেনারেল হাফতারের মিত্র হিসেবেই কাজ করেছিলেন। হাফতার নির্বাচনে হেরে গেলেও নিজের সামরিক পদে পুনর্বহাল হওয়ার পথ খোলা রাখতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে ২০২১ সালের নভেম্বরে আগুইলা সালেহ ইসা নিজেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নিজের প্রার্থী পদ ঘোষণা করেন

হাফতার এবং আগুইলা সালেহ ইসার বিপরীতে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তোব্রুকের পার্লামেন্টে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ‘সমস্ত লিবিয়ানের’ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া বেইবাহের এক ভিন্ন ভূমিকা ছিল। বেইবাহ পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিসরাতার এক শক্তিশালী ব্যবসায়ী। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তাঁর ভোটের জন্য দেশকে প্রস্তুত করা, প্রতিষ্ঠানগুলিকে একত্র করা, মিলিশিয়া ভেঙে ফেলা এবং ধীরে ধীরে নিরাপত্তা বাহিনীকে সংহত করার কথা ছিল। যে হেতু গৃহযুদ্ধের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী ত্রিপোলি এবং তোব্রুক ভিত্তিক দু’টি সমান্তরাল সরকারের তরফে কাজ করছিল, তাই লিবিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনই সর্বাধিক ছিল। পাশাপাশি লিবিয়ায় এক তোব্রুক-ভিত্তিক পার্লামেন্ট এবং ত্রিপোলি-ভিত্তিক স্টেট কাউন্সিলও ছিল। নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে একটি ঐক্যবদ্ধ লিবিয়ায় প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে রাজধানী স্থাপনের পথ প্রশস্ত করতে হয়েছিল। এই অর্পিত কাজগুলি সম্পাদন করার সময়ে আশ্চর্যজনক ভাবে বেইবাহ প্রচলিত নিয়ম অনুসারে নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধা থাকা সত্ত্বেও ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নিজের মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন।

এই ধরনের সুবিধাবাদ এবং স্বার্থের সংঘাত লিবিয়ায় বৈদেশিক শক্তিকে ডেকে আনবে এবং সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়াকে উস্কে দেবে যা লিবিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কটকে তীব্রতর করে তুলবে।

গদ্দাফির শাসনের শেষের দিনগুলি থেকেই বেইবাহ লিবিয়ার হয়ে কাজ করেছেন, তাঁর অত্যন্ত শক্তিশালী বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক এবং বিপুল সম্পদ শুধু মাত্র ব্যাপক দুর্নীতির দ্বারাই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে তিনি নিজের ভাবমূর্তি গড়তে এবং আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে তাঁর সমর্থনকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। নিজের অবস্থানকে আরও মজবুত করার জন্য যখনই তিনি কোনও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, তখনই বেইবাহ জমি এবং বাড়ি ক্রয়, বেতন বৃদ্ধি এবং বিবাহে ভর্তুকি দেওয়ার মতো জনপ্রিয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্প ঘোষণা এবং তাতে বিনিয়োগ করার উপরে নির্ভর করেছেন। সর্বোপরি, মুয়াম্মার গদ্দাফির ছেলে সইফ আল-ইসলাম গদ্দাফি  ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আই সি সি) যাঁকে ধরতে চায় এবং যিনি অনুপস্থিত অবস্থায় ২০১৫ সালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন — ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম নথিভুক্ত করেন। প্রাথমিক ভাবে ১০ বছরেরও বেশি সময় আগে গণ অভ্যুত্থানের সময়ে মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কারণে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তাঁকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিলেন। প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অনুমতি পাওয়ার পরেই গদ্দাফি ঘোষণা করেন যে, তিনি ‘লিবিয়ার হারানো ঐক্য পুনরুদ্ধার করতে চান।’

উপসংহার

সংক্ষেপে লিবিয়ার অবরুদ্ধতার সারমর্ম এ ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাশাঘার নিয়োগ বিভাজনমূলক রূপে প্রমাণিত হচ্ছে। কারণ বর্তমানে বেইবাহ নতুন প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নারাজ। রাজনীতির বিভাজনমূলক প্রকৃতি বাস্তবে তেল উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলেছে, যা লিবিয়ার অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। ২০১১ সালে গদ্দাফির পতনের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধ শুধু মাত্র লিবিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং কাতার-সহ বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তিও লিবিয়ার সংকটে জড়িয়ে পড়েছিল। এখনও পর্যন্ত লিবিয়ার নেতৃত্ব এমন সংবিধান প্রস্তুত করেনি, যা পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা যথাযথ ভাবে বিবেচিত এবং অনুমোদিত হতে পারে। অন্য দিকে হাউসের স্পিকার আগুইলা সালেহ ইসা শুধু সংবিধান অনুমোদনই করেননি, বরং প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জও একই সংবিধানের পথে এগিয়েছে। অন্যান্য প্রার্থী যেমন জেনারেল হাফতার, বেইবাহ এবং সইফ আল-ইসলাম গদ্দাফিও ভোটের ময়দানে নেমেছেন। প্রকৃতপক্ষে শীর্ষ পদ দখলের দাবিদার প্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের নীতিহীন ভূমিকা কেবল মাত্র রাজনৈতিক সুবিধাবাদ এবং প্রার্থীদের মধ্যে স্বার্থের তীব্র সংঘর্ষকেই প্রকাশ্যে এনেছে। এই ধরনের সুবিধাবাদ এবং স্বার্থের সংঘাত লিবিয়ায় বৈদেশিক শক্তিকে ডেকে আনবে এবং সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যাওয়াকে উস্কে দেবে যা লিবিয়ার রাজনৈতিক সঙ্কটকে তীব্রতর করে তুলবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.