Author : Sediq Sediqqi

Expert Speak Raisina Debates
Published on Sep 16, 2022 Updated 1 Days ago

তালিবান দ্বারা আফগানিস্তান দখলের এক বছর পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে ঘটে চলা মানবিক সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের দেওয়া পূর্ব প্রতিশ্রুতিগুলি পুনর্নিশ্চিত করতে হবে।

তালিবানের অধীনে কাবুল: কলঙ্কের বর্ষপূর্তি
তালিবানের অধীনে কাবুল: কলঙ্কের বর্ষপূর্তি

আফগানিস্তানের মাটি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের বিচ্ছিন্ন এবং প্রত্যাহার করার কৌশলের একটি অংশ স্বরূপ দোহা শান্তি আলোচনা বিগত ২০ বছর যাবৎ একটি স্থিতিস্থাপক রাষ্ট্রের বলিদানের বিনিময়ে অর্জিত অগ্রগতিকে নস্যাৎ করে দেয়। এটি দ্বিতীয় বারের মতো আফগানিস্তানের পতনকে চিহ্নিত করে এবং আমাদের এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ঠান্ডা লড়াইয়ের দিনগুলিতে সোভিয়েতকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যকে সাহায্য করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানকে তালিবানের হাতে সমর্পণ করা হয়। তালিবান হল সেই গোষ্ঠী, পাকিস্তানের আই এস আই দ্বারা ১৯৯৪ সালে যে গোষ্ঠীর সূচনা করা হয় আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপরে ভিত্তি করে একটি উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং একটি যথার্থ আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীও গড়ে তোলা হয়।

আফগানরা বরাবরই দীর্ঘস্থায়ী এবং স্থিতিশীল শান্তির পক্ষে এবং এমনটা অর্জন করার জন্য তাঁরা সর্বোত্তম চেষ্টা চালাতে প্রস্তুত। কিন্তু আফগানিস্তান বৃহৎ শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি স্থায়ী যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। উনবিংশ শতাব্দীতে আফগানিস্তান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য একটি বাফার জোনের ভূমিকা পালন করেছিল, যাতে রাশিয়াকে ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখা যায়। এবং দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের এক যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে ওঠে, যার ফলে শুধু মাত্র ২০ লক্ষ আফগান প্রাণই হারাননি, দেশটিও বিধ্বস্ত হয়েছে। সোভিয়েতকে পরাজিত করতে আফগানিস্তানের ভূমিকা ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিলেও তার ফলে আফগানিস্তানের জনসাধারণ যে অশেষ যন্ত্রণা, কষ্ট এবং ভোগান্তির সম্মুখীন হন, তা আজও বিদ্যমান।

গণতন্ত্রের দুই দশক

২০০১ সালে পাশ্চাত্যের হস্তক্ষেপ আফগানিস্তান এবং সমগ্র বিশ্বের মধ্যে পারস্পরিক  সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। আফগানরা মনে করেছিলেন যে, তাঁদের আর্ত চিৎকার বিশ্বের দরবারে গিয়ে পৌঁছেছে এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলি তাঁদের দেশের নবনির্মাণের কাজে সাহায্য করার জন্য আগ্রহী। ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে বৈশ্বিক অংশগ্রহণের অভূতপূর্ব ধারা পরিলক্ষিত হয় এবং এর ফলস্বরূপ আফগান সমাজে এক রাজনৈতিক এবং সামাজিক রূপান্তর ঘটে। এই রূপান্তরের হাত ধরে অতি রক্ষণশীল আফগান সমাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা সর্বজনীন মূল্যবোধের সূচনা, উদার উন্নয়ন ত্রাণ সহায়তা, গণতন্ত্রের সূচনা, বাক স্বাধীনতা, সমাজের সর্ব স্তরে নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং আফগান দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের মতো ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়। এই সময় দেশটি প্রথম বার রাজনৈতিক ক্ষমতার গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রত্যক্ষ করে। নির্বাচনী জালিয়াতির কথা উত্থাপিত হলেও সংশ্লিষ্ট সময়কালে আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম বারের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন হয়।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রাষ্ট্র এবং দেশ নির্মাণের কাজটি পূর্ণোদ্যমে চলছিল এবং নির্বাচিত নেতৃবৃন্দের দ্বারা আফগানিস্তান শাসনের ধারণাটি সম্পূর্ণ রূপে স্বীকৃতি পেয়েছিল। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপরে ভিত্তি করে একটি উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং একটি যথার্থ আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীও গড়ে তোলা হয়। নাগরিক সমাজ বৃদ্ধি পাওয়ার এবং মানব সম্পদের ভাণ্ডার বর্ধিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানে এমন এক প্রাণবন্ত তরুণ প্রজন্মের উত্থান ঘটে, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আগ্রহী ছিল।

আফগান যুদ্ধ তার প্রাথমিক বছরগুলিতে একাধিক পশ্চিমি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তালিবানের পরাজয় ও দেশ নির্মাণ উদ্যোগের মতো প্রভাবশালী আখ্যানকে রাজনৈতিক প্রচারে কাজে লাগিয়ে দেশগুলির তৎকালীন শাসকদলগুলি নির্বাচনে জয়লাভ করে।

২০২১ সালের মধ্যে সে দেশের নারীদের পার্লামেন্টের লোয়ার হাউসের ২৭%, আপার হাউসের ২২%, সরকারি কর্মচারীদের ২২% (এর মধ্যে ৯% সিদ্ধান্তগ্রহণকারী স্তরে), সরকারি কর্মীদের ২২%, নিরাপত্তা ক্ষেত্রের ৫% এবং আইন ও বিচার বিভাগের ১০% জুড়ে সক্রিয় হতে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট সময়ে মন্ত্রিসভার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা বহাল ছিলেন এবং দু’জন মহিলা প্রতিনিধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউ এন-এ আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কাজ করেছিলেন। বিদ্যালয়গুলিতে (প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) ১ কোটি ২০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছিল, যার মধ্যে ছাত্রীদের পরিমাণ ছিল ৪০%।

তালিবানের যুদ্ধের সঙ্গে আফগানরা মানিয়ে নিলেও এবং সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে সক্ষম হলেও পাশ্চাত্য শক্তিগুলির অনেকেই তদানীন্তন স্থিতাবস্থার বিরোধিতা করে। তালিবানকৃত হিংসার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া, জনবহুল শহরগুলিতে প্রায় নিয়মিত বোমা হামলা, বহু সংখ্যক নাগরিকের মৃত্যু এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দোলাচল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয় এবং তালিবানের নিষ্ঠুর যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় ইতি টানতে দোহা শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা করতে বাধ্য করে।

আফগান যুদ্ধ তার প্রাথমিক বছরগুলিতে একাধিক পশ্চিমি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তালিবানের পরাজয় ও দেশ নির্মাণ উদ্যোগের মতো প্রভাবশালী আখ্যানকে রাজনৈতিক প্রচারে কাজে লাগিয়ে দেশগুলির তৎকালীন শাসকদলগুলি নির্বাচনে জয়লাভ করে। স্বার্থ চরিতার্থ হওয়ার পরে এই পন্থা পরিত্যাগ করা হয় এবং সকল ইতিবাচক পদক্ষেপ দোহার আলোচনা কক্ষের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

দোহা শান্তি আলোচনা

দোহা শান্তি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হল যে, ২০২০ সালে শান্তি চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত খলিলজাদ ও তালিবানের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হয় এবং আলোচনায় অংশগ্রহণ করা থেকে আফগানদের সম্পূর্ণ রূপে বিরত রাখা হয়। বৈধ আফগান প্রশাসনকে বাদ দিয়ে তালিবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালানোয় রাজি হওয়া তালিবানকে সুবিধে করে দেয় এবং একই সঙ্গে রাশিয়া ও চিনের মতো অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তালিবানকে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে। এমনটা হওয়ার আগে যে সব তালিবান নেতা আফগানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তাদেরই পরবর্তী সময়ে দোহার বিলাসবহুল আবাসনে বসে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক শক্তিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালাতে দেখা যায়।

এই আলাপ আলোচনাকে কাজে লাগিয়ে তালিবান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরিশ্রান্ত করে তোলে এবং রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান এবং চিনের সহায়তায় আফগানিস্তানে বহাল থাকা আন্তর্জাতিক সেনার বিরুদ্ধে বিজয়ের প্রচার চালায়। এই চুক্তিকে ব্যবহার করে তালিবান আফগান সরকারকে ৫০০০ তালিবান বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়, যাদের আফগান জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনী বিগত বছরগুলিতে আটক করেছিল। আফগান সরকারের সঙ্গে যে কোনও রকমের মুখোমুখি আলোচনা চালানোর জন্য এটিই ছিল তালিবানের পূর্বশর্ত। পরাজয়বাদ, হতাশা, পরিত্যাগ, আফগান সরকারের প্রতি সমর্থন হ্রাস এবং বারংবার প্রত্যাহারের ঘোষণা তালিবানের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার অনেক আগেই পাশ্চাত্যের একাধিক বিশেষজ্ঞ ও আধিকারিকদের মনোভাবকে প্রভাবিত করে।

বৈধ আফগান প্রশাসনকে বাদ দিয়ে তালিবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালানোয় রাজি হওয়া তালিবানকে সুবিধে করে দেয় এবং একই সঙ্গে রাশিয়া ও চিনের মতো অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তালিবানকে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান করে।

২০২২ সালের ১৫ আগস্ট তালিবানের আফগানিস্তান দখলের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বিগত ২০ বছরে হওয়া প্রতিটি অগ্রগতি তারা ইতিমধ্যেই নস্যাৎ করে দিয়েছে। আল কায়দার নেতাকে আশ্রয় দেওয়া, মানুষদের উপরে অত্যাচার চালানো, বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীদের বহিষ্কার, মহিলাদের প্রকাশ্যে আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং এ রকম আরও অসংখ্য নিপীড়নমূলক প্রবিধান জারি করা হয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে সারা বিশ্ব অবগত।

আফগানরা তাঁদের বর্তমান অবস্থার তুলনায় ভাল জীবন এবং এক মুক্ত ও উন্নতিশীল সমাজের দাবি রাখেন। এবং তাঁদের এই প্রাপ্য সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের দায় বর্তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপরেই। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা, তাদের ভ্রমণের উপরে পুনরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং আফগানিস্তানের জনসাধারণের উপরে চালানো সকল  অত্যাচারের জন্য তালিবানকে দায়ী করা।

আফগান তহবিলের বৈদেশিক সম্পদের ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তালিবানকে না দেওয়ার সাম্প্রতিকতম মার্কিন সিদ্ধান্ত এই পরিপ্রেক্ষিতে এক স্বাগত পদক্ষেপ, যা আফগান জনসাধারণের উপর তালিবানের ক্রমাগত আক্রমণ ও তালিবানকৃত অপকর্মের বিরুদ্ধে এক স্পষ্ট বার্তা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত অবিলম্বে আফগানিস্তানের মানবিক সঙ্কটের দিকটি খতিয়ে দেখা এবং তালিবানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত না হয়ে আফগানদের সাহায্য করার কাজ চালিয়ে যাওয়া। আফগানিস্তানে রাজনৈতিক বিকল্প খোঁজার কাজটি সহজতর করার দায়িত্বও তাদের নিতে হবে। বিগত কুড়ি বছর যাবৎ সৃষ্ট ব্যাপক পরিমাণ মানব সম্পদ আফগানিস্তানকে আত্মনির্ভরশীলতার পথে নিয়ে যেতে পারে। ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ের যে আফগান প্রজন্ম রাষ্ট্রীয় আমলাতন্ত্রের অঙ্গ থেকেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, তারাই আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য এক নির্ভরযোগ্য বিকল্প।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.