Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 21, 2022 Updated 6 Days ago

আঞ্চলিক রাজনীতির পরিসরে ইজরায়েল স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে গালফ অঞ্চলটি একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ইজরায়েল এবং পরিবর্তনশীল মধ্যপ্রাচ্য

Source Image: Shoshanah — Flickr/CC BY 2.0

ইজরায়েল এবং পরিবর্তনশীল মধ্যপ্রাচ্য

ভূমিকা 

বাহরিনে ইজরায়েলি প্রেসিডেন্ট নাফতালি বেনেটের সাম্প্রতিক সফর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে আবারও তুলে ধরেছে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম এক্সারসাইজ ২০২২-এ (আই এম এক্স ২২) ইজরায়েলের অংশগ্রহণের পরবর্তী সময়ে এমনটা ঘটেছে। আই এম এক্স ২২-এ প্রায় ৬০টি দেশ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে সৌদি আরব ও ওমানও ছিল যাদের সঙ্গে ইজরায়েলের কোনও আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সভাপতিত্বে ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং বাহরিনকে একত্র করার শান্তি চুক্তি অর্থাৎ ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ডস অনুসারে দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণে এই পদক্ষেপগুলি করা হয়েছিল। এই নিবন্ধে এমন কিছু বিষয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে যা অঞ্চলটিতে ইজরায়েলের ভূমিকা পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। এটিতে বিশেষ ভাবে দেখানো হয়েছে যে, উপসাগরীয় দেশগুলির বিপুল আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের জোট বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তন আনছে।

জোটের শত্রু

ঐতিহাসিক ভাবে তার শিকড় ঔপনিবেশিক শক্তি এবং অঞ্চলটির একাধিক দেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল থাকার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের চরিত্র বরাবরই অশান্ত। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইজরায়েলের গঠন, যা অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রের মতে অবৈধ এবং তারা এটাকে প্যালেস্তাইনিদের অধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করে। এই মনোমালিন্যের ফলে ১৯৪৮, ১৯৫৬, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালের আরব-ইজরায়েল সংঘাতের মতো একাধিক উল্লেখযোগ্য সংঘাত ঘটেছে, যা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী বেশ কয়েকটি অ-রাষ্ট্রীয় নাশকতাবাদী গোষ্ঠীর জন্ম দেয়।

ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি বিশেষ গুরুত্বের স্থান দখল করে রয়েছে, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ইজরায়েলকে অর্থ, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদান করেছে এবং সংঘাতের সময়ে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যদিও গত দশকের শেষার্ধ ইরান-ইরাক যুদ্ধ, কুয়েতে ইরাকের আক্রমণ, ইয়েমেনি গৃহযুদ্ধ এবং এ ধরনের আরও বেশ কিছু সংঘাতের সাক্ষী থাকার ফলে ইজরায়েল বিক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। তবুও গত কয়েক দশকে ইজরায়েল ধারাবাহিক ভাবে নিজেকে এই বিক্ষুব্ধ অঞ্চলটিতে একটি শান্তির দ্বীপ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে এবং বর্তমানে সে এই অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সমঝোতাকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের নেপথ্যে একাধিক কারণ বর্তমান।

মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলের ভূমিকাকে সমর্থনকারী বিষয়গুলি

প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইজরায়েলের পারস্পরিক জোট অঞ্চলটিতে অন্য প্রত্যেকটি জোটের উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি বিশেষ গুরুত্বের স্থান দখল করে রয়েছে, যারা দীর্ঘ দিন ধরে ইজরায়েলকে অর্থ, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রদান করেছে এবং সংঘাতের সময়ে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নিরাপত্তা এবং তেল ক্রয় সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অন্য উপসাগরীয় দেশগুলির জন্য ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের পথ সুগম করেছে।

দ্বিতীয়ত, বিশেষ করে গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে ভাটা পড়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চলটিতে এই দেশগুলির নিরাপত্তার জামিনদার হওয়ার বদলে নিজেকে অঞ্চলটিতে অস্ত্র ও প্রযুক্তির এক জন বিক্রেতা হিসেবেই তুলে ধরতে চেয়েছে। এ হেন মনোভাব বিশ্বব্যাপী বহু দেশকেই প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সরবরাহ করার ইজরায়েলের ভূমিকার সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০২০ সালের আব্রাহাম অ্যাকর্ডের অংশ রূপে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মধ্যে অস্ত্রের কেনাবেচার কারণে এটিকে ‘আর্মস সেলস অ্যাকর্ডস’ (‘অস্ত্র বিক্রয় চুক্তি’) হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এটি দর্শায় যে, কী ভাবে চাহিদা জোগান সমীকরণ সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।

তৃতীয়ত, ইরানের প্রসঙ্গটি ইজরায়েল এবং অন্য গালফ ও আরব দেশগুলির একত্র হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ধন জুগিয়েছে। ইরান ইজরায়েলের তীব্র সমালোচক ও প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকা পালন করেছে এবং প্রায়শই কাসাম ব্রিগেড (হামাসের সশস্ত্র শাখা), এমনকি হিজবুল্লাহর মতো বিভিন্ন ইজরায়েল-বিরোধী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করেছে। একই ভাবে গালফ দেশগুলি, যারা নিজ নিজ রাজপরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা মাথায় রেখেই বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশনীতি তৈরি করে, ইরানের এবং ইসলামিক রাজতন্ত্রের দ্বারা এই সকল পরিবারের প্রতিস্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীণ বিপ্লবের সূচনা করার ইরানি কৌশলের বিরোধিতা করেছে। এ ভাবে ইজরায়েল এবং গালফ দেশগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে উদ্ভূত একাধিক বিবৃতিতে ইরানকে প্রতিহত করা এই জোটগুলির অন্যতম প্রধান ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

চতুর্থত, অনেক ইসলামপন্থী শক্তি মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার মতো বিভিন্ন অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলির বৃদ্ধিতে সমর্থন জুগিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই গোষ্ঠীগুলি গালফ দেশগুলির জন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে, যার ফলে আরব দেশগুলি ইসলামবাদী শক্তিগুলির (সহিংস এবং অহিংস) বিরুদ্ধে আরও বেশি করে ইজরায়েলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে আগ্রহী হয়েছে।

ইজরায়েলের স্বীকৃতির প্রতিবন্ধকতা

ইজরায়েলের প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আঞ্চলিক রাজনীতিতে একটি স্বীকৃত শক্তি হিসেবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে হলে তাদের এখনও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক পেরোতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হল, ইজরায়েলের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও (কথিত) সৌদি আরব আনুষ্ঠানিক ভাবে সে দেশের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক গড়ে তোলেনি।

যদিও ক্ষমতাসীন যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন স্পষ্টতই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে অনেক বেশি মুক্তমনা এবং কৌশলী, তাঁর বাবা রাজা সলমন (৮৬) সৌদি আরবের সরকারি নীতি নির্ধারণে প্যালেস্তাইনিদের প্রভাব বজায় রাখাতেই বিশ্বাসী। কিন্তু তাঁর বয়স এবং ভগ্ন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুজবের কথা মাথা রাখলে, পরিস্থিতি যে দ্রুত বদল হতে চলেছে, সে কথা অনুমান করা যায়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সৌদি আরব এই অঞ্চলে এবং অর্গানাইজেশন অফ দি ইসলামিক কোঅপারেশন (ও আই সি) — যা বর্তমানে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য দল — গোষ্ঠীগুলির মধ্যে প্রধান শক্তি সমঝোতাকারী।

বার বার এ হেন আগ্রাসনের ঘটনা ঘটার ফলে আরব জনসাধারণ তাঁদের দেশে আগত ইজরায়েলিদের সহজে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রদান করবে না। এর ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে সেই সব দেশে যেখানে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়।

ইজরায়েলি নেতৃত্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি সাধন হয়নি, যা ইজরায়েলের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। ইজরায়েলের প্যালেস্তাইনি প্রতিবেশ অঞ্চলগুলি দখল করে নেওয়ার খবর প্রায়শই মধ্যপ্রাচ্যের আরব জনগণকে উত্তেজিত করে তোলে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০২১ সালে গাজা স্ট্রিপে রক্তপাতের ঘটনা কাতার, কুয়েত, ইরাক এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলিতে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইজরায়েলি সরকারের প্রতি বিরল কিন্তু সমালোচনার আলোড়ন তুলেছে। এমনকি বাহরিনের মতো দেশেও নাগরিক সমাজের সদস্যদের ইজরায়েলের সমালোচনায় খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে। বার বার এ হেন আগ্রাসনের ঘটনা ঘটার ফলে আরব জনসাধারণ তাঁদের দেশে আগত ইজরায়েলিদের সহজে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রদান করবে না। এর ফলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে সেই সব দেশে যেখানে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়।

উপসংহার

মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতি যা গালফ দেশগুলি দ্বারা পরিচালিত হয়, তা মূলত এমন একটি অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে আঞ্চলিক রাজনীতির পরিসরে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে এবং ইরানকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিকাঠামোয় পুরোপুরি সংযুক্ত হওয়ার আগে ইজরায়েলকে এখনও একাধিক মাইলফলক অর্জন করতে হবে।

এখানে দু’টি মূল বিষয় হল ইজরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সরকারি জোট যা এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশের ইসলামিক পরিচিতি সুদৃঢ় করবে এবং ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে টানাপড়েন ও দ্বন্দ্ব কমাতে সাহায্য করবে, যা আরব জনসাধারণের মধ্যে ইজরায়েলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও সাহায্য করবে। এর মধ্যে প্রথমোক্তটি সহজসাধ্য মনে হলেও, শেষোক্ত ঘটনাটি যে ঘটবেই, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই ইজরায়েল অন্যান্য দেশের সঙ্গে নিজেদের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক মজবুত করে তুললেও, আরব বিশ্বে তাকে তার নাগরিকদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে, যদি তাঁরা আরব দেশগুলিতে ভ্রমণে ইচ্ছুক হন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.