Expert Speak India Matters
Published on Oct 14, 2022 Updated 7 Days ago

আজকের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, ভূ–রাজনৈতিক সুযোগ ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের অনন্য সমন্বয় ভারতকে একটি শক্তিশালী গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর নিখুঁত সুযোগ করে দিয়েছে।

ভারতীয় বিজ্ঞানের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ
ভারতীয় বিজ্ঞানের ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ

৭৫–এ পৌঁছে ভারত সম্পর্কে গর্ব অনুভব করার অনেক কারণ আছে। তবে, এক বিশ্বনেতা হতে হলে তাকে অবশ্যই তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে জাতীয় শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ বহুবর্ষব্যাপী অবহেলিত স্তম্ভে চালিত করতে হবে: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।

বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ভারতের খুবই খামতি রয়েছে। ভারতের গবেষণা ও উন্নয়ন (আর অ্যান্ড ডি) ব্যয়কে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জি ডি পি) শতাংশ হিসাবে বিবেচনা করলে দেখা যাবে বিশ্বব্যাঙ্কের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮ সালে ভারত তার জি ডি পি–র ০.৬৬ শতাংশ আর অ্যান্ড ডি–তে ব্যয় করেছে, যেখানে চিনে তা ২.১৪ শতাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩ শতাংশ।  আরও উদ্বেগজনক হল দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা। বিগত ২০ বছরে গবেষণায় চিনের ব্যয় তার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, অন্যদিকে বিস্তৃত অর্থনীতির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।

সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্ক

‌এটি একটি বিশাল ভুল। বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হল দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক। আর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী ডেভিড গ্রস–এর কথায়, ‘‌‘‌ভারত… একটি বৈজ্ঞানিক শক্তি হওয়ার সম্ভাবনাসম্পন্ন”। একটি দেশীয় কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করা এই সম্ভাবনার অনেকগুলি লক্ষণের মধ্যে একটি মাত্র।

আজকের দিনে গ্রসের বিবৃতি আগের চেয়েও সত্য। ভারত একটি সুবিধাজনক জায়গায় আছে। সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি চিন–কেন্দ্রিকতার পরিবর্তে বহুমুখী হয়ে ওঠার কারণে ভারত শুধু ভূ–রাজনৈতিক প্রবণতা থেকেই নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই), জৈবপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তির মতো উদীয়মান প্রযুক্তির বৈজ্ঞানিক প্রবণতাগুলির অসম্ভব দ্রুত উন্নয়ন থেকেও উপকৃত হবে৷ বিজ্ঞান আজ যৌগিক উদ্ভাবনের এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে একটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি অন্য ক্ষেত্রেও অগ্রগতি ঘটায়। প্রোটিন অধ্যয়নের জন্য ডিজাইন করা গুগলের আলফাফোল্ড এ আই মডেলটি এর একটি উদাহরণ। মাত্র এক বছরের মধ্যে বিজ্ঞানের কাছে পরিচিত প্রায় সমস্ত প্রোটিনের কাঠামোর ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আলফাফোল্ড, এবং তা ইতিমধ্যেই জৈবপ্রযুক্তি গবেষকদের কাছে একটি অপরিহার্য হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এই ধরনের ওলটপালট করে দেওয়া আবিষ্কার বিজ্ঞানের সীমানায় ক্রমশ বেশি করে সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এবং ভারতকে তার বৈজ্ঞানিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এই প্রজন্মের গতিবেগের সুবিধা নিতে হবে।

ভারত একটি সুবিধাজনক জায়গায় আছে। সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি চিন–কেন্দ্রিকতার পরিবর্তে বহুমুখী হয়ে ওঠার কারণে ভারত শুধু ভূ–রাজনৈতিক প্রবণতা থেকেই উপকৃত হবে না, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই), জৈবপ্রযুক্তি ও নবায়নযোগ্য শক্তির মতো উদীয়মান প্রযুক্তির মতো বৈজ্ঞানিক প্রবণতাগুলির অসম্ভব দ্রুত উন্নয়ন থেকেও৷

শুরুতে ভারতকে অবশ্যই গবেষণা ও উন্নয়নের (জি ই আর ডি) উপর তার মোট  ব্যয় বাড়াতে হবে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দীপক পেন্টাল যুক্তি দিয়েছেন যে জি ই আর ডি–কে জিডিপির ১ শতাংশে উন্নীত করা একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য। তার চেয়েও বড় কথা, গত ৩০ বছরের মতো এই ব্যয় স্থবির থাকতে পারে না; অন্তত ভারতের অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জি ই আর ডি বৃদ্ধি করা অত্যাবশ্যক।

২০২০ সালের নতুন শিক্ষা নীতিতে একটি ভাল সুপারিশ করা হয়েছে, কিন্তু তা ২০২২ সাল পর্যন্ত এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। সুপারিশটি হল ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এন আর এফ) গঠন করে তার মাধ্যমে পাঁচ বছরে ৫০,০০০ কোটি টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বড় আকারের গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়ন করা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের আদলে তৈরি করা যেতে পারে, যা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার বিশাল শক্তিকেন্দ্রে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

যদিও প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ গবেষণা ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে আসতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য কিন্তু হতে হবে বেসরকারি ক্ষেত্রের আর অ্যান্ড ডি ব্যয়কে উৎসাহিত করা। ২০২১ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রভাবশালী দেশগুলিতে জি ই আর ডি ব্যয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি হয় বেসরকারি ক্ষেত্রে, যা গুগল–এর আলফাফোল্ডের মতো সাফল্য ব্যাখ্যা করে। বিপরীতে ভারতীয় বেসরকারি ক্ষেত্র গবেষণা তহবিলে মাত্র ৩৭ শতাংশ অবদান রাখে। এই ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিয়া ও শিল্পের মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর জন্য এন আর এফ–এর লক্ষ্য অমূল্য।

যাই হোক, বেশি অর্থ মানেই আরও উদ্ভাবন নয়। বিজ্ঞানের জন্য মূলত মানুষের প্রতিভা প্রয়োজন, এবং ভারতের বিজ্ঞান কৌশলটির অবশ্যই মানব পুঁজির কর্ষণে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা উচিত। মৌলিক গবেষণায় সেরা ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে পি এইচ ডি এবং পোস্টডক্টরাল স্টাইপেন্ড বাড়ানোর জন্য যে কোনও বর্ধিত ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যবহার করা উচিত। ডক্টরাল গবেষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ প্রকল্পের মতো উদ্যোগগুলি একটি দুর্দান্ত সূচনা, তবে এগুলি অবশ্যই আরও প্রসারিত করা উচিত।

২০২১ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রভাবশালী দেশগুলিতে জি ই আর ডি ব্যয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি হয় বেসরকারি ক্ষেত্রে, যা গুগল–এর আলফাফোল্ডের মতো সাফল্য ব্যাখ্যা করে।

এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ভারতের ভূ–রাজনৈতিক সুবিধাগুলি কার্যকর। ভারত বৈজ্ঞানিক বিনিময় উত্সাহিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ব্যবহার করতে পারে। কোয়াড ফেলোশিপের মতো প্রোগ্রাম, যা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য চারটি কোয়াড দেশের (মার্কিন, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া) ১০০ জন শিক্ষার্থীর অর্থায়ন করে, উদ্যোগ হিসাবে ভাল হলেও এতে কিন্তু সুযোগ খুব কম। ভারতকে অবশ্যই তার অংশীদারদের সঙ্গে আরও প্রতিভা বিনিময় কর্মসূচির কথা বিবেচনা করতে হবে, আর সেই সুযোগের সঙ্গে জনপরিষেবা বাধ্যবাধকতার শর্ত যুক্ত করতে হবে। এটি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপের ছাঁচে হতে পারে, যার লক্ষ্য হবে স্নাতক শেষ করার পর ছাত্রদের ভারতে ফিরিয়ে এনে দেশের গবেষণা বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলা। এই ধরনের বাধ্যবাধকতার একটি উদাহরণ হতে পারে স্নাতকের পরে একটি জাতীয় ল্যাবে কয়েক বছর গবেষণা করা।

বৈজ্ঞানিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে চিনের সাফল্য থেকে ভারতেরও শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিবেচনা করার মতো একটি প্রকল্প হল চিনের থাউজেন্ড ট্যালেন্টস প্ল্যান। ২০০৮ সালে এটা চালু করা হয়েছে, এবং প্রকল্পটি উচ্চ বেতন, অতিরিক্ত গবেষণা তহবিল ও বাসস্থান ভর্তুকি–সহ অন্যান্য সুবিধার মতো প্রণোদনার মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত শীর্ষস্থানীয় চিনা বিজ্ঞানীদের চিনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। প্রতিভা দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের নিজস্ব উল্লেখযোগ্য প্রবাসীদের জন্য এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করা উচিত, যার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মের ভারতীয় বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে।

তাঁর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে তার স্বাধীনতার শতবর্ষের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জের কথা বলেছিলেন। তা অর্জনের জন্য আমাদের শুধু ভারতে তৈরি করাই নয়, ভারতে উদ্ভাবন করা দরকার। আজকের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, ভূ–রাজনৈতিক সুযোগ ও বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের অনন্য সমন্বয় ভারতকে একটি ‌শক্তিশালী গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরুর নিখুঁত সুযোগ করে দিয়েছে। উদ্ভাবনের প্রতি আজ এই অঙ্গীকারই হল ভারতের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Jyotirmai Singh

Jyotirmai Singh

Jyotirmai Singh is a PhD candidate in Physics at Stanford University interested in quantum sensing. He obtained his undergraduate degree in Physics from UC Berkeley.

Read More +
Preey Shah

Preey Shah

Preey Shah is an MS candidate in Computer Science at Stanford University with a focus in artificial intelligence. He obtained his undergraduate degree in Computer ...

Read More +