ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমন্বয়কারীর কাজ পূর্বনির্দিষ্ট হয়ে আছে
সরকার দেশের প্রথম জাতীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমন্বয়কারী বা ন্যাশনাল মেরিটাইম সিকিউরিটি কোঅর্ডিনেটর (এনএমএসসি) নিয়োগ করেছে। নৌবাহিনীর প্রাক্তন ভাইস চিফ, ভাইস অ্যাডমিরাল অশোক কুমার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে এনএমএসসি হবেন। অ্যাডমিরাল কুমার ভারতের বিস্তীর্ণ উপকূলরেখার সুরক্ষা এবং একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ই ই জেড)স্বার্থ রক্ষা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজকর্মের ব্যবস্থা করবেন।
জাতীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা সমন্বয়কারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে কথাবার্তা চলেছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধের পরে সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রথম একটি প্রস্তাব এসেছিল। ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন ও একজন সামুদ্রিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিকে গতি দেয়। এই ব্যবস্থাকে তখন ভাবা হয়েছিল সব সামুদ্রিক বিষয় সংক্রান্ত একটি নোডাল পয়েন্ট অব রেফারেন্স হিসেবে। পরবর্তী বছরগুলিতে উপকূলীয় পরিকাঠামোতে উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ এবং নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টায় উপকূলীয় নিরাপত্তা যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তা সত্ত্বেও ভারতের সামুদ্রিক সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় কখনওই প্রকৃত অর্থে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারেনি, কারণ অনেক রাজ্যের সামুদ্রিক পুলিশ উপকূলীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন সম্পর্কে উদাসীন থেকে গেছে। উপকূলীয় গুজরাট থেকে সাম্প্রতিক একটি মাদক উদ্ধারের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে সমুদ্রপথটি পাকিস্তান–আফগানিস্তান-ভিত্তিক ড্রাগ কার্টেলের কাছে কতটা প্রিয়।
২০০৮ সালে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন এবং একজন সামুদ্রিক নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিকে গতি দেয়। এই ব্যবস্থাকে তখন ভাবা হয়েছিল সব সামুদ্রিক বিষয় সংক্রান্ত একটি নোডাল পয়েন্ট অব রেফারেন্স হিসেবে।
এনএমএসসি-র কার্যকারিতা নির্ভর করবে তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্যের সনদের চূড়ান্ত আকারের উপর, যা এখনও অজানা। যা স্পষ্ট তা হল অ্যাডমিরাল কুমারের মোটের উপর দায়িত্ব হবে সামগ্রিক ভাবে সামুদ্রিক বিপদের মোকাবিলা করা। তিনি সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল’ মন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হতে পারেন। গত বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বিতর্কে প্রধানমন্ত্রী সামুদ্রিক ক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পাঁচটি নীতির কথা বলে এই সংক্রান্ত ধারণাটিকে আরও সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে সামুদ্রিক বাণিজ্যের বাধা অপসারণ; বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি; সম্মিলিত ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অ-রাষ্ট্রীয় শক্তির দ্বারা সৃষ্ট বিপদের মোকাবিলার প্রস্তুতি; সামুদ্রিক পরিবেশ ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ; এবং দায়িত্বশীল সামুদ্রিক সংযোগকে উৎসাহিত করা। এই বছর সরকারের একটি মেরিটাইম থিয়েটার কমান্ড প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব ওই বৃহত্তর উদ্যোগে জরুরি তৎপরতার মাত্রা যোগ করেছে।
এখন এটুকু বলাই যথেষ্ট যে অ্যাডমিরাল কুমারকে দ্রুত সক্রিয় হতে হবে। উপকূলীয় নিরাপত্তা এবং সামুদ্রিক সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের প্রশ্নে অগ্রগতি সত্ত্বেও রাজ্য সরকারগুলি সাধারণ ভাবে উপকূলীয় সুরক্ষায় বড় ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক নয়৷ সামুদ্রিক থানার কম সংখ্যা থেকে শুরু করে উপকূলীয় কাজের জন্য টহলদার নৌকার ব্যবহার না–করা, উপকূল-ভিত্তিক পরিকাঠামোর অনুপস্থিতি, জনবলের ঘাটতি এবং অব্যবহৃত তহবিল—নিরাপত্তা ব্যবস্থার এমন পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলি আজও থেকে গেছে। এমএনএসসি-কে অবিলম্বে এই ঘাটতিগুলি পূরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
সংখ্যায় কম সামুদ্রিক থানা থেকে শুরু করে উপকূলীয় কাজের জন্য টহলদার নৌকার ব্যবহার না–করা, উপকূল-ভিত্তিক পরিকাঠামোর অনুপস্থিতি, জনবলের ঘাটতি এবং অব্যবহৃত তহবিল—নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলি আজও থেকে গেছে।
অনেকে মনে করেন ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলির প্রবণতা হল সন্ত্রাসবাদের বিপদের উপর অত্যধিক মনোযোগ দেওয়া এবং মানব পাচার, অবৈধ মাছ ধরা, জলবায়ু-সংক্রান্ত সংকট বা সামুদ্রিক দূষণের মতো অ–চিরাচরিত চ্যালেঞ্জগুলির উপর কম জোর দেওয়া। অ্যাডমিরাল কুমার নৌবাহিনী, উপকূলরক্ষী, মেরিন পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সম্প্রসারিত যোগাযোগের মাধ্যমে একটা ভারসাম্য তৈরি করবেন। ভারতের ছোট বন্দরগুলির নিরাপত্তার দিকটি– যেখানে প্রশাসনকে যৌক্তিক করার প্রচেষ্টা (ভারতীয় বন্দর বিল, ২০২১-এর পরিপ্রেক্ষিতে) ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছে– ভাল করে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হতে পারে।
কেন্দ্রীয় সামুদ্রিক পুলিশ বাহিনী গঠনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি প্রস্তাব এখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কাছে পড়ে রয়েছে। নতুন সত্তার নিজস্ব কাডার, নিয়ম, ম্যানুয়াল, আইন ও পরিকাঠামো থাকতে পারে, আর এর শীর্ষে থাকতে পারেন একজন ডিরেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তবে নতুন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে অপরাধ নথিভুক্ত করার এবং তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তার জন্য সংসদে এখনও উপকূলীয় নিরাপত্তা বিল, ২০১৩ খসড়াটি পাস হয়নি। এদিকে নিরাপত্তা পরিকল্পনাকারীদের সামনে আরেকটি জটিল বিষয় হল বিভিন্ন অংশীদারের দায়িত্ব চিহ্নিত করা।
বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া সামলানো ছাড়াও এনএমএসসি–র দৃষ্টি থাকবে উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থার উপর, বিশেষ করে ছোট নৌকাগুলিতে আরও উপকূলীয় রাডার এবং স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (এআইএস) প্রয়োজনের উপর। নিজস্ব ক্ষেত্র সংক্রান্ত সচেতনতা ও মানুষের মাধ্যমে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ের দিকেও আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। মেরিটাইম এজেন্সিগুলির মধ্যে একের সঙ্গে অন্যের এক্তিয়ারের পরিধি নিয়ে সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এনএমএসসি নিশ্চয়ই এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইবেন যে গোয়েন্দা তথ্যের অপ্রতুল ভাগাভাগির পুরনো সমস্যা যেন আর ফিরে না–আসে।
বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া সামলানো ছাড়াও এনএমএসসি–র দৃষ্টি থাকবে উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থার উপর, বিশেষ করে ছোট নৌকাগুলিতে আরও উপকূলীয় রাডার এবং স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থার (এআইএস) প্রয়োজনের উপর।
সামুদ্রিক উন্নয়নের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সামরিক ও বেসামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পরিবেশবাদীরা বলছেন যে ঘোষিত এতগুলি পরিকাঠামো প্রকল্পের ধাক্কায় দ্বীপগুলির ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। উন্নয়ন ও সামুদ্রিক সংরক্ষণের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা এনএমএসসি-কে দেওয়া হবে কিনা তা দেখতে হবে।
সব মিলিয়ে অ্যাডমিরাল কুমার ভারতের বিভিন্ন সামুদ্রিক অংশীদারের জন্য কমন গ্রাউন্ড তৈরিতে মনোনিবেশ করবেন। এই মুহূর্তে তাঁকে সম্ভবত কাজ করতে বলা হবে ন্যাশনাল কমিটি ফর স্ট্রেনদেনিং মেরিটাইম অ্যান্ড কোস্টাল সিকিউরিটি (এনসিএসএমসিএস)-র সঙ্গে, যেটি হল সামুদ্রিক ও উপকূলীয় নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ পর্যালোচনা ব্যবস্থা। তবে দীর্ঘমেয়াদে এনএমএসসি-কে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তার ভিন্ন ভিন্ন ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়সাধন করতে হবে। তা অবশ্যই একটা অত্যন্ত কঠিন কাজ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.