ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট: নৌবাহিনী এবং আত্মনির্ভর ভারত মিশন
দেশের পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের নিরিখে ২০২২-২৩ সালের ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেট খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন। ভারত ও চিনের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্ত সঙ্কটের কারণে বাজেটে স্বাভাবিক ভাবেই ভারতীয় সেনাবাহিনী (আই এ) এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর (আই এ এফ) উপর নজর থাকলেও পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনীর অস্ত্র ব্যবস্থা ও প্ল্যাটফর্মগুলির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে ভারতীয় নৌবাহিনী (আই এন) এবং আত্মনির্ভর মিশনের ভূমিকা বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। বর্তমান ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেটের আওতায় মহাদেশগুলির উপরে একচেটিয়া মনোযোগ দেওয়া থেকে সরে এসে নিরাপত্তা নীতিগুলির লক্ষ্য এবং অভিমুখ পুনর্বিন্যাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান আপস-আলোচনায় ভারতের অবস্থানকে শক্তিশালী করে গলওয়ান সঙ্কটের নিরিখে আই এন একটি অবদানকারী ভূমিকা পালন করেছে। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশীয় সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নতুন উদ্যমে আত্মনির্ভরতা বা স্বনির্ভরতার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার পরিকল্পনাকে এক সুতোয় বেঁধেছেন। ২০২১-২২ সালের তুলনায় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন (আর অ্যান্ড ডি) বাজেট ১৭.৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর অ্যান্ড ডি বাজেটের ২৫ শতাংশের একটি অংশ শিল্প, স্টার্ট আপ এবং পঠন-পাঠনের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। উদ্ভাবন এবং স্বদেশিকরণ প্রচারের লক্ষ্যে এই অর্থ বরাদ্দ করাও একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ।
বর্তমান ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাজেটের আওতায় মহাদেশগুলির উপরে একচেটিয়া মনোযোগ দেওয়া থেকে সরে এসে নিরাপত্তা নীতিগুলির লক্ষ্য এবং অভিমুখ পুনর্বিন্যাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আই এন-এর আধুনিকীকরণের দিকে বাজেটের মূলধনী বরাদ্দের বিন্যাস এবং কী ভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর নতুন উপকরণ সংগ্রহ ও আধুনিকীকরণের জন্য বাজেট-বরাদ্দে আত্মনির্ভরতার উপাদান প্রতিফলিত হয়, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। চিনের আগ্রাসন এবং যুদ্ধবাজ মানসিকতার মোকাবিলার কৌশল নির্ধারণে ও ভারতীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজে কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হল আই এন।
পরিসংখ্যান কী বলে?
২০২২-২৩ সালে, আই এন-কে পূর্ববর্তী বছরের বাজেটের ৩৩,২৫৩.৫৫ কোটি টাকার তুলনায় মূলধনী ব্যয় হিসেবে ৪৭,৫৯০.৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ এই পরিসংখ্যান দর্শায় যে, ২০২১-২২ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দকৃত মূলধনী ব্যয়ের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে বরাদ্দ ৪৩.১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থ বর্ষ |
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দ অর্থ (রাজস্ব ও মূলধন) সংখ্যাগুলি কোটির নিরিখে |
তিনটি বাহিনীর সামগ্রিক বাজেট (রাজস্ব ও মূলধন) সংখ্যাগুলি কোটির নিরিখে |
বাহিনীভিত্তিক বরাদ্দের নিরিখে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভাগের পরিমাণ (শতাংশে) |
২০২১-২২ |
৫৬,৬১৪.২৩ |
৩,৪৭,০৮৮.২৮ |
১৬.৩১ |
২০২২-২৩ |
৭২,৯৯৭.৪১ |
৩,৮৫,৩৭০.১৫ |
১৮.৯৪ |
উত্স: বাজেট পরিসংখ্যান থেকে গৃহীত লেখকের নিজস্ব তথ্য
উপরের সারণিটি ইঙ্গিত দেয় যে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে তিনটি বাহিনীর (রাজস্ব এবং মূলধন) সামগ্রিক মোট বরাদ্দের তুলনায় ভারতীয় নৌবাহিনীর বরাদ্দ (রাজস্ব এবং মূলধন) বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের বছরের তুলনায়, বাজেটে ভারতীয় নৌবাহিনীর সামগ্রিক অনুপাত ২.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থ বর্ষ |
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বরাদ্দকৃত মূলধনী ব্যয় (পরিসংখ্যান কোটিতে) |
তিনটি বাহিনীর সামগ্রিক মূলধনী ব্যয় (পরিসংখ্যান কোটিতে) |
সামগ্রিক মূলধনী ব্যয়ের নিরিখে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভাগ (শতাংশে) |
২০২১-২২ |
৩৩,২৫৩.৫৫ |
১,৩৫,০৬০.৭২ |
২৪.৬২ |
২০২২-২৩ |
৪৭,৫৯০.৯৯ |
১,৫২,৩৬৯.৬১ |
৩১.২৩ |
সূত্র : আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য-সহ লেখকের নিজস্ব পরিসংখ্যান
দ্বিতীয় সারণিটি দর্শিয়েছে যে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট মূলধনী ব্যয়ের (তিনটি বাহিনীর) তুলনায় নৌবাহিনীর মূলধনী ব্যয়ের অনুপাতও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জন্য পূর্ববর্তী বছরের বাজেটের ২৪.৬২ শতাংশের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.২৩ শতাংশে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য মোট বরাদ্দের (রাজস্ব এবং মূলধন) ৬৫.১৯ শতাংশ মূলধনী ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, যে পরিমাণ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ছিল ৫৮.৭৩ শতাংশ। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির ২৮তম প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাজেট এস্টিমেটের (বি ই) অধীনে আনুমানিক মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ৬৭,৬২২.৯৬ কোটি টাকা এবং বি ই অনুযায়ী মূলধনী ব্যয়ের জন্য প্রকৃত বরাদ্দের পরিমাণ ৪৭,৫৯০.৯৯ কোটি টাকার মধ্যে ২০,০৩১.৯৭ কোটি টাকার ফারাক রয়েছে। একই ভাবে, বি ই অনুযায়ী ২০২১-২২ সালের জন্য সম্ভাব্য এবং বরাদ্দকৃত মূলধনী ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল ৩৭,৬৬৭.২৩ কোটি টাকা। এই পরিসংখ্যান পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২০২২-২৩ সালে সম্ভাব্য মূলধন এবং বরাদ্দকৃত মূলধনের মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনার দিকে ইঙ্গিত করে। এ ভাবে আই এন-এর মূলধনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিকেল (এস পি ভি) মডেলের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান মাল্টি রোল হেলিকপ্টার (আই এম আর এইচ) তিনটি বাহিনীরই চাহিদা পূরণ করবে।
অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা শিল্প এবং আত্মনির্ভরতাকে উৎসাহিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে বিশেষত অভ্যন্তরীণ শিল্পের জন্য মোট মূলধনের ৬৮ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে, যে পরিমাণ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ছিল ৫৮ শতাংশ। শিল্প, স্টার্ট আপ এবং শিক্ষাক্ষেত্রের প্রচারকারী দেশীয় বিন্যাস এবং মুখ্য মঞ্চ ও ব্যবস্থাগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত উন্নয়ন ও উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন বাজেটের ২৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। শিল্প দ্বারা নির্ধারিত বিন্যাস এবং উন্নয়নের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (এম ও ডি) দ্বারা ১৮টি প্রধান মঞ্চের শনাক্তকরণ এবং ঘোষণা করা হয়েছে। আই এন-এর চাহিদা মেটানোর জন্য মেক ওয়ান বিভাগের অধীনে নেভাল শিপবর্ন আনম্যানড এরিয়াল সিস্টেম (এন এস ইউ এ এস) এবং জাহাজের জন্য ১২৭ মিমি নেভাল গান এবং ইলেকট্রিক প্রপালশন ইঞ্জিনগুলির (ই পি ই) নকশা ও নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করা হবে। স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিকেল (এস পি ভি) মডেলের মাধ্যমে ইন্ডিয়ান মাল্টি রোল হেলিকপ্টার (আই এম আর এইচ) তিনটি বাহিনীরই চাহিদা পূরণ করবে।
নৌবাহিনীর স্বদেশিকরণ
অস্ত্র, মঞ্চ এবং ব্যবস্থাগুলির ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠা একটি কৌশলগত প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে। এই গুরুত্বের কথাই স্বদেশিকরণ এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে অনুরণিত হয়েছে। আত্মনির্ভরতা সংক্রান্ত একটি পুনরুজ্জীবিত জাতীয় উদ্দীপনা দ্বারা চালিত হয়ে আই এন-এর আধুনিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে একটি দশ বছর ব্যাপী ইন্টিগ্রেটেড কেপেবিলিটি ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানেরও (আই সি ডি পি) সূচনা করা হয়েছে। এই আই সি ডি পি পূর্ববর্তী ১৫ বছর ব্যাপী মেরিটাইম কেপেবিলিটি পার্সপেক্টিভ প্ল্যানকে (এম পি সি সি) প্রতিস্থাপন করেছে। পরিকল্পনার প্রধান পরিবর্তন মেরিটাইম থিয়েটার কম্যান্ডের বিকাশকে পূরণ করবে এবং প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও নমনীয়তা জোগাবে।
এম ও ডি দেশীয় উৎপাদন সংশ্লিষ্ট পণ্য-সহ পর্যায়ক্রমে তিনটি আমদানি নিষেধাজ্ঞার তালিকা প্রকাশ করেছে। এটি অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার মিশন অনুযায়ী কাজ করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি পথ নির্দেশিকা তৈরি করেছে। বৃহত্তর ভাবে স্বদেশিকরণের প্রক্রিয়াটিতে পূর্বে চুক্তিবদ্ধ প্রধান মঞ্চগুলির অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং আধুনিকীকরণের ব্যাপারটি ও উন্নয়নাধীন প্রকল্পগুলি এর আওতায় পড়বে।
পরিকল্পনার প্রধান পরিবর্তন মেরিটাইম থিয়েটার কম্যান্ডের বিকাশকে পূরণ করবে এবং প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে আরও নমনীয়তা জোগাবে।
মঞ্চগুলির আধুনিকীকরণ
ভারতীয় নৌবাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ধ্রুব এম কে থ্রি নামে একটি প্রধান এ এল এইচ ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেটি একটি পারফরমেন্স বেসড লজিস্টিকস (পি বি এল) প্রবিধান অনুযায়ী হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল) দ্বারা সম্পূর্ণ দেশীয় ভাবে পরিকল্পিত এবং নির্মিত উন্নত মানের হেলিকপ্টার৷ ধ্রুব নতুন প্রজন্মের একটি কার্যকর দ্বৈত ইঞ্জিন, বহুমুখী, মাল্টি মিশন হেলিকপ্টার। একই ভাবে ডি আর ডি ও এয়ার ইন্ডিপেনডেন্ট প্রপালশন (এ আই পি) তৈরি করেছে, যেটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, যা একবার আধুনিকীকরণ করলে এবং সাবমেরিনের সঙ্গে সংযুক্ত করলে তাদের জলের উপরে থাকার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, ফলে কাজের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। প্রথম সংস্কারের কাজটি ২০২৫ সালের মধ্যে কালভারি শ্রেণির অ-পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনগুলির ক্ষেত্রে ঘটতে চলেছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হল, প্রজেক্ট ৭৫ ওয়ান স্করপিন শ্রেণির ৬টি প্রথাগত সাবমেরিনের সংযোজন যার মোট মূল্য ৫.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সিরিজের সাবমেরিনগুলির উন্নয়নের ফলে আই এন এস ভাগশিরে দেশীয় উপাদানের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশে। এর পাশাপাশি, ভারতে প্রথম বার একটি সামুদ্রিক ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি করা হচ্ছে। এই স্করপিন শ্রেণির সাবমেরিনগুলির বিশেষ ক্ষমতাবলির মধ্যে অত্যাধুনিক নজর এড়িয়ে চলার ব্যবস্থা, দূরপাল্লার গাইডেড টর্পেডো-সহ জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সেন্সর স্যুট ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য।
অদূর ভবিষ্যতের প্রধান কর্মসূচি
২০২২-২৩ অর্থবর্ষের মূলধনী বাজেট ব্যয়ের অংশ হিসেবে সর্বাধিক প্রতীক্ষিত স্বদেশি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বিক্রান্ত মোট স্বদেশি সামগ্রীর একটি সিংহভাগকেই উপস্থাপন করে। সাবমেরিন-বিরোধী যুদ্ধ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আই এন গার্ডেনরিচ অ্যান্ড শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (জি আর এস ই) কর্তৃক দেশীয় ভাবে নির্মিত এ এস ডব্লিউ জাহাজগুলি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে, যার লক্ষ্য হল রুশ অভয় শ্রেণির কর্ভেটগুলিকে প্রতিস্থাপন করা।
প্রজেক্ট ১৭ এ-র নীলগিরি শ্রেণির আধুনিক স্টেলথ ফ্রিগেট যার মধ্যে সাতটি জাহাজ রয়েছে, মাজাগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স লিমিটেড (এম ডি এস এল) এবং গার্ডেনরিচ অ্যান্ড শিপবিল্ডার্স লিমিটেডে (জি আর এস ই) নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পে দেশীয় উপাদানের পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ, যা প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে উত্সাহিত করে। এম ও ডি-র ‘বাই (ইন্ডিয়ান)’, ‘বাই অ্যান্ড মেক (ইন্ডিয়ান)’ এবং ‘বাই (ইন্ডিয়ান – আই ডি ডি এম)’ বিভাগের অধীনে ৭৬,৩৯০ কোটি টাকার সরঞ্জাম সংগ্রহের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনীর আটটি দেশীয় নিউ জেনারেশন কর্ভেট (এন জি সি) নির্মাণের কাজে প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই প্রকল্পে দেশীয় উপাদানের পরিমাণ প্রায় ৭৫ শতাংশ, যা প্রতিরক্ষা খাতে স্বনির্ভরতা অর্জনে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে উত্সাহিত করে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব দীর্ঘমেয়াদি আধুনিকীকরণের জন্য ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডি আর ডি ও), হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল) এবং অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এ ডি এ) সঙ্গে একজোট হয়ে একটি দেশীয় উন্নত দ্বৈত ইঞ্জিন ডেক বেসড ফাইটার (তেজসের একটি নৌ রূপ) নির্মাণের পরিকল্পনা চালাচ্ছে।
এ ছাড়াও শিল্প, পঠন-পাঠন এবং স্টার্ট আপের মতো দেশীয় ক্ষেত্রগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য ডিফেন্স ইনোভেশন অর্গানাইজেশন (ডি আই ও) এবং নেভাল ইনোভেশন অ্যান্ড ইনডিজেনাইজেশন অর্গানাইজেশনের (এন আই আই ও) মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটির মূল লক্ষ্য হল প্রজেক্ট ‘স্প্রিন্ট’-এর বাস্তবায়ন (প্রতিরক্ষা উৎকর্ষের জন্য উদ্ভাবনের (আই ডি ই এক্স), নেভাল ইনোভেশন অ্যান্ড ইনডিজেনাইজেশন অর্গানাইজেশন (এন আই আই ও) এবং টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট এক্সিলারেশন সেলের (টি ডি এ সি) মাধ্যমে গবেষণা এবং উন্নয়নে আমূল পরিবর্তনকে সহায়তা জোগানো)। এই উদ্যোগটির লক্ষ্য দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা স্বদেশিকরণ এবং উদ্ভাবনের সংস্কৃতি তৈরি করা।
উপসংহার
ভারতীয় নৌবাহিনীকে কার্যকরী প্রস্তুতি নিতে হবে এবং পাকিস্তানি নৌবাহিনী ও বৃহত্তর পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির (পি এল এ এন) বিরুদ্ধে লড়তে হবে। এর পাশাপাশি, ভারতকে বাজেটের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও দ্রুত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। ভারতীয় নৌবাহিনী একটি প্রযুক্তি-সচেতন বাহিনী হওয়ায় এর কার্যকরী এবং আধুনিকীকরণ পরিকল্পনা পূরণের জন্য অতিরিক্ত সংস্থান প্রয়োজন। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় আই এন-এর মূলধনী ব্যয়ের অংশ বৃদ্ধি পেলেও মূলধনী ব্যয় বাজেটে প্রত্যাশিত পরিমাণ এবং বরাদ্দকৃত পরিমাণের মধ্যে এখনও একটি ফারাক রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য জাহাজ নির্মাণ শিল্প সরকারি ক্ষেত্র পরিচালিত সংস্থাগুলির একচেটিয়া অধিকারভুক্ত। এমনকি এম ও ডি এবং সার্ভিসেস হেড কোয়ার্টারের (এস এইচ কিউ) মাধ্যমে দেশীয় নকশায় নির্মিত নৌবাহিনীর জাহাজ এবং সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রসিডিয়োরের (ডি এ পি) একটি অংশকে বরাদ্দ করা হয়েছে। এবং যে কোনও প্রদত্ত প্রকল্পের জন্য বিদ্যমান পরিকাঠামোর উপর ভিত্তি করে ভারতীয় শিপইয়ার্ডগুলি নির্বাচন করা হয়। এটি স্বদেশিকরণের পথে একটি অন্যতম প্রধান বাধা স্বরূপ, কারণ এটি দেশীয় বেসরকারি সংস্থাগুলির বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা ও সাব-কমপোনেন্টের বৈদেশিক বিক্রেতাদের উপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তোলে। সাম্প্রতিক বাজেট এবং প্রধান পরিকাঠামোগত সংস্কারগুলি জাহাজ নির্মাণ খাতে এই ধরনের সীমিত ভাবনার পরিবর্তনের দিকে একটি প্রগতিশীল পদক্ষেপ। এর পাশাপাশি এটি বেসরকারি খাতের সম্ভাবনাকে বাধামুক্ত করে আরও ভাল ও সামগ্রিক স্বদেশিকরণের দিকে চালিত করে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.