Author : Kabir Taneja

Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 22, 2022 Updated 6 Days ago

প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের দেওয়ার মতো বিশেষ কিছু না থাকলেও দেশ হিসেবে ভারত আন্তঃ-আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সমন্বিত উন্নয়নের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে পারে।

ভারত-সৌদি আরব সামরিক সহযোগিতা এক ধাপ এগোল
ভারত-সৌদি আরব সামরিক সহযোগিতা এক ধাপ এগোল

ভারত ও সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এত দিন সীমাবদ্ধ ছিল মুক্ত সমুদ্রে দুই নৌবাহিনীর পারস্পরিক আন্তঃ-সহযোগিতার মধ্যে। এ বার সৌদি আরবের স্থলবাহিনীর প্রধান কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাদ বিন আবদুল্লা মহম্মদ আল মুতাইরের সর্বপ্রথম ভারত সফর সেই সম্পর্ককে এর ঊর্ধ্বে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এই সাফল্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত বিস্তারকেও দর্শায়। সদ্য সমাপ্ত কম্প্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ ইকনমিক এগ্রিমেন্টে (সি ই পি এ) রিয়াধের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারত অঞ্চল দু’টির মধ্যে উন্নয়নশীল আন্তঃসহযোগিতার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।

দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের সঙ্গে রিয়াধের সম্পর্কের স্থিতিশীল প্রসার ঘটেছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানে গালফ সফর করেন এবং এর পর ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দুই দেশের মধ্যে প্রথম যৌথ নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এর পরপরই লেফটেন্যান্ট জেনারেল আল মুতাইর ভারত সফরে আসেন। এই পরিদর্শনের সময়ে নয়াদিল্লি এবং রিয়াধ অস্ত্র ক্রয় এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শিল্প সহযোগিতা-সহ প্রতিরক্ষা আন্তঃসহযোগিতা বিস্তারে সম্মত হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আল মুতাইর এবং জেনারেল নারাভানে নিজেদের সফররত ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন এবং তাতে যেখানে তাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তার পিছনের ম্যুরালে দেখা যাচ্ছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের পরাজয়ের পরবর্তী সময়ে ঢাকায় পাক সেনার আত্মসমর্পণের শর্ত স্বাক্ষর করার ছবিটি। এটি দর্শায় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সাম্প্রতিক অতীতে ঘটা পরিবর্তন সৌদি আরবের জন্য কোনও সমস্যা নয় এবং ভারত ও কাশ্মীরের প্রশ্নে গালফ রাজধানীগুলিতে পাকিস্তানের প্রভাবও সীমিত।

দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের সঙ্গে রিয়াধের সম্পর্কের স্থিতিশীল প্রসার ঘটেছে। নয়াদিল্লির জন্য এই কৌশলগত এবং যুদ্ধ কৌশল সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন অপেক্ষাকৃত দ্বিধাগ্রস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠা চিন এবং অঞ্চলটির তিন প্রধান শক্তি, যথা সৌদি আরব, ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের এক তাৎপর্যপূর্ণ পুনর্নির্মাণকে কেন্দ্র করে পশ্চিম এশিয়ার (মধ্য প্রাচ্য) নিরাপত্তার প্রথাগত ধারার পুনর্গঠন চলেছে। ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ফলে ইজরায়েল এবং আরব বিশ্বের একাংশের মধ্যে একটি গোপনীয় পারস্পরিক চুক্তি প্রকাশ্যে এসে পড়ে। যদিও ক্ষমতার এই সুদৃঢ়করণের নেপথ্যে রয়েছে ইরানের আঞ্চলিক শক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিহত করার সাধারণ আগ্রহ, এটির বাস্তবায়ন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে যিনি চেয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রদানকারীর চিরাচরিত ভূমিকা থেকে সরে আসে। এই আলোচনার প্রভাব এখনও অঞ্চলটি জুড়ে অনুভূত হচ্ছে, যখন নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞরা মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকান শক্তির ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার বিদ্যমান ধারণাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। এবং প্রাক্তন কূটনীতিক মার্টিন ইন্ডিক ‘আমেরিকা-পরবর্তী’ মধ্য প্রাচ্যের রূপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মধ্য প্রাচ্যের মতো অঞ্চলে প্রথাগত ভাবে অসীম ক্ষমতাশালী একটি দেশের প্রভাব খাটানোর নিজস্ব ভূমিকা সম্পর্কে আমেরিকার দ্বিধাকে সম্ভবত সবচেয়ে ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বিশেষজ্ঞ আমোস ইয়াডলিন এবং আসাফ ওরিয়ন। এর জন্য তাঁরা ‘স্থান পরিত্যাগ না করেও অনুপস্থিত থাকা’র মতো উপমা দিয়েছেন। অঞ্চলটিতে আমেরিকার উপস্থিতি প্রশ্নাতীত হলেও তার নিজস্ব শক্তি ব্যবহারের ইচ্ছা ‘সীমিত এবং ক্ষয়িষ্ণু’।

এই আলোচনার প্রভাব এখনও অঞ্চলটি জুড়ে অনুভূত হচ্ছে, যখন নীতিনির্ধারক এবং বিশেষজ্ঞরা মধ্য প্রাচ্যে আমেরিকান শক্তির ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার বিদ্যমান ধারণাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। এবং প্রাক্তন কূটনীতিক মার্টিন ইন্ডিক ‘আমেরিকা-পরবর্তী’ মধ্য প্রাচ্যের রূপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এই অঞ্চলের নিরাপত্তা গঠনের মৌলিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অপরিহার্য। হামলার আশঙ্কা অপরিবর্তিত থাকলেও মধ্য প্রাচ্যে এই পরিবর্তনগুলি ঘটছে। পারস্য উপসাগরের জলপথগুলি ধারাবাহিক ভাবে টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়াদিল্লি ২০২১ সালে অপারেশন সংকল্পের আয়োজন করেছিল, যেখানে আমেরিকা-ইরান উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলিকে ভারতীয় পতাকাধারী জলযানগুলির সুরক্ষিত যাতায়াত সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। জানা যাচ্ছে যে, ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলি সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রতি দিন ১৬টিরও বেশি পণ্যবাহী জাহাজকে নিরাপদে পথ দেখিয়েছিল, যা তেল ও গ্যাসের এক অন্যতম আমদানিকারী হিসেবে ভারতের শক্তি সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনের মতো এশিয়ার অন্যান্য আমদানিকারী দেশও একই পথে হাঁটার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানের পতনের পর থেকে মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ের অনিশ্চয়তা উত্তরোত্তর বেড়েছে। এই ঘটনাপ্রবাহের ফলে যারা এত দিন সুরক্ষা বলয়ের অধীনে কাজ করছিল, সেই সব দেশেরও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে হবে, যাদের মধ্যে ভারত অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বলয়ের আরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ অথচ বিশেষ আলোচিত নয় এমন পরিণতি রয়েছে এবং সেটি হল অঞ্চলটির ইসলামি রাজনীতির পরিসরে এক মধ্যপন্থী ও বিশ্ববাদী চিন্তাধারার প্রচার চালানো। এর ছায়া পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরব উভয় দেশের উপরেই। এবং সৌদি আরব আরও দৃঢ় ভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজের জায়গা মজবুত করতে সচেষ্ট হয়েছে। এমনটা করার জন্য তারা একটি সংস্কারবাদী কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে যাতে সমাজ এবং রাজনীতিতে ধর্মের প্রথাগত ভূমিকাকে আক্রমণ করা হয়েছে। যদিও এই সংস্কারগুলি দীর্ঘমেয়াদি ভাবে কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্ব বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে সৌদি আরবের নিজের অর্থনীতির দরজা খুলে দেওয়া ভারতের জন্য বহু সুযোগের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে বেসরকারি সংস্থার পরিচালনাধীন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে। রিয়াধ তেলের উপরে তার অর্থনৈতিক নির্ভরতা থেকে সরে আসার চেষ্টা চালালেও এই রূপান্তরকে সম্ভবপর করতে প্রয়োজন এশীয় অর্থনীতির সাহায্য এবং হাইড্রো-কার্বনের প্রতি দেশগুলির সুতীব্র চাহিদা। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে সাম্প্রতিকতম সি ই পি এ-তে ভারতের অতি পারদর্শী এক লক্ষ ৪০ হাজার কর্মীকে ভিসা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে এই ধরনের বোঝাপড়া দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংক্রান্ত সম্পর্কের সূচনা করতে পারে। এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাত্রা তীব্র। উপসাগরীয় দেশগুলি তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রের জন্য পশ্চিমি দেশগুলির উপরে গভীর ভাবে নির্ভরশীল। মিশর রাশিয়ার থেকে মিগ ২৯ যুদ্ধবিমান কিনলেও এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি চিনের থেকে উইং লুং ইউ এ ভি ক্রয় ও ব্যবহার করলেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ভারতের অবদান যৎসামান্যই। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরব উভয়েই ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে নির্মিত ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে, তবুও এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি এবং মস্কোর জড়িত থাকার ফলে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার সম্ভাব্য বিক্রয়যোগ্যতা সম্পর্কেও বিশেষজ্ঞরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। লাদাখে ২০২০ সালে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই নয়াদিল্লির ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নির্মাণের আহ্বান জোরালো হয়েছে এবং ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে কার্বাইন আগ্নেয়াস্ত্র সংক্রান্ত একটি সাম্প্রতিক চুক্তি ব্যর্থ হয়েছে।

ভারতীয় যুদ্ধজাহাজগুলি সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রতি দিন ১৬টিরও বেশি পণ্যবাহী জাহাজকে পথ দেখিয়েছিল, যা তেল ও গ্যাসের এক অন্যতম আমদানিকারী হিসেবে ভারতের শক্তি সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এখনকার মতো উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতের বিস্তারের কেন্দ্রে থাকা উচিত বাণিজ্য, শক্তি নিরাপত্তা এবং জনসংখ্যার মতো বিষয়গুলি সম্পর্কিত দেশীয় স্বার্থ। ভারতের দেশীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির ভাঁড়ারে বর্তমানে এমন বিশেষ কিছু নেই, যা উপসাগরীয় দেশগুলির কাছে উপলব্ধ বিকল্পের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে অথবা পশ্চিমি একচেটিয়া আধিপত্য, এমনকি রুশ ও চিনা বিকল্পের অবসান ঘটাতে পারে। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং নির্মাণ ক্ষেত্রে বিস্তৃত সহযোগিতা একটি সদর্থক উচ্চাকাঙ্ক্ষা হলেও অতি প্রয়োজনীয় স্বার্থগুলি পূরণ করার বর্তমান গতিপথই এই কৌশলগত প্রসারের মূল ভিত্তি। ভবিষ্যতের জন্য নিজের সুরক্ষামূলক এবং স্থিতিশীল নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলতে ভারতের উচিত উপসাগরীয় দেশগুলির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, যাতে অঞ্চলটিকে তৃতীয় কোনও পক্ষ দ্বারা পরিকল্পিত ‘নিরাপত্তা ঘেরাটোপ’-এর উপরে নির্ভর করতে না হয়। এ দিক থেকে ভারতীয় অর্থনীতি এবং বাজার একটি আন্তঃ-আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সহযোগিতামূলক বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করার জন্য আদর্শ পরিস্থিতিতে আছে যাতে সৌদি আরবের মতো দেশগুলি তাদের সংস্কারবাদী লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথে উপকৃত হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.