Author : Jhanvi Tripathi

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 20, 2022 Updated 16 Days ago

ভারত-আমিরশাহি সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) ভারতের অর্থনীতিকে উন্নত করতে এবং নিজস্ব ভূ-অর্থনৈতিক কৌশল অনুসরণ করতে সাহায্য করবে।

ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ ও ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ
ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ ও ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত আলাপ–আলোচনার ক্ষেত্রে ভারত সতর্কতা ও ধীরগতির জন্য কুখ্যাত। সুতরাং, এই ঘটনাটি খুবই উল্লেখযোগ্য যে সরকার ৮৮ দিনের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির (ইউএই) সঙ্গে একটি সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সিইপিএ) সই করেছে। নতুন সিইপিএ-তে ভবিষ্যতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টস বা এফটিএ) সম্পর্কে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির বেশ কিছু সূচক রয়েছে। একদিকে, সিইপিএ শুল্ক হ্রাসের বিষয়ে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। অন্যদিকে ডিজিটাল ট্রেড কম্পোনেন্ট–এর মতো নতুন বিষয়গুলিতে কিছুটা বাধো বাধো ভাব থেকে গেছে, যদিও মান সম্পর্কে বোঝাপড়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরসিইপি থেকে ভারতের সরে আসা এবং চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বোধগম্য ভাবে দেশটিকে পশ্চিমে নতুন বাজার ও অংশীদার সন্ধান করার পথে নিয়ে গেছে।

নতুন কোনও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের দ্বিধা সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে বার বার দেখা গিয়েছে, তা সে আঞ্চলিক সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপি) হোক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলোচনা আবার শুরু করার প্রয়াস হোক। আরসিইপি নিয়ে আলোচনা ২০১৩ সাল থেকে ছয় বছর ধরে চলেছিল; ভারত ২০১৯ সালের শেষের দিকে তা থেকে সরে আসে। ১৫ বছর আগে ২০০৭ সালে প্রথম আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথাবার্তাও বার বার নানা কারণে বাধা পেয়েছে। ভারতের স্বাক্ষরিত সর্বশেষ চুক্তিটি ছিল ২০১১ সালের আগস্টে ভারত-জাপান সিইপিএ। তারপর থেকে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে, এমনকি পুরনো এফটিএ আপগ্রেড করা হয়েছে, কিন্তু নতুন কোনও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। আরসিইপি থেকে ভারতের সরে আসা এবং চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বোধগম্য ভাবে এখন ভারতকে পশ্চিমে নতুন বাজার ও অংশীদার সন্ধান করার পথে নিয়ে গেছে।

ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ ভারতের ভূ-অর্থনৈতিক কৌশলের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ, তার বেশ কিছু কারণ আছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, এবং বর্ধিত ভাবে জিসিসি অঞ্চল, ভারতের জন্য এক স্বাভাবিক বাণিজ্যিক অংশীদার, কারণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই দেশগুলি পরস্পরের পরিপূরক। ভারতের সমস্যা হল যখন তার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসার প্রসঙ্গ আসে, তখন সাধারণত পণ্যের লেনদেন প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতির হয়। এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের রফতানির সম্ভাব্য মানচিত্র অনুসারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের প্রায় ১০১০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ সম্পাদনের ঘটনা বার বার পেছনের পায়ে সরে এসে খেলার পরিবর্তে সক্রিয় ভাবে বাজারে ঢোকার জন্য ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ।

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের রফতানির সম্ভাব্য মানচিত্র অনুসারে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের প্রায় ১০১০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে।

যদি আমরা মূল্যের ভিত্তিতে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে শীর্ষ ১০টি বাণিজ্যিক পণ্যের দিকে তাকাই (নিচের সারণি ১ ও ২), আমরা দেখতে পাই যে বাণিজ্য চলছে সাধারণ পণ্যগুলি নিয়ে। এটি দুটি সম্ভাবনার কোনও একটিকে বোঝায়। একটি সম্ভাবনা হল এই বাজারগুলির কোনও একটিকে অন্য কোনও বাজারে রফতানির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি কিছু পণ্যের জন্য সম্ভাব্য সত্য হলেও পুরো ছবিটা এরকম নাও হতে পারে। কারণ উভয় দেশের কারওই মুক্ত বাণিজ্যের বা উন্নয়ন সংক্রান্ত অবস্থার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারমূলক সহযোগিতার কোনও বিস্তৃত বাজারি নেটওয়ার্ক উপলব্ধ নেই। অন্য সম্ভাবনাটি, যা এক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য, তা হল এই সাধারণ পণ্য লাইনগুলিতে একটি মূল্য–শৃঙ্খল আছে। খনিজ জ্বালানি, মূল্যবান ধাতু, জাহাজ, লোহা ও ইস্পাত, পারমাণবিক যন্ত্রপাতি হল সেই সব ক্ষেত্র যেখানে দেশগুলি একে অন্যের পরিপূরক। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিইপিএ থেকে শুল্ক হ্রাস হল ইনভার্টেড ডিউটি স্ট্রাকচার[1] এবং অভ্যন্তরীণ শুল্ক পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অ–স্থিতিশীলতা মোকাবিলার একটি কার্যকরী পথ। সেই দিক থেকে এই বিষয়টি স্বাগত যে ভারত থেকে রফতানিকৃত পণ্যের ৯০ শতাংশই শূন্য শুল্ক আকর্ষণ করবে। চুক্তিটি ১ মে, ২০২২ তারিখে কার্যকর হবে।

অন্য ঘটনাগুলিও ভারতের ‌তরফে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইঙ্গিত দেয়। ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল জেনেরিক–এর জন্য স্বয়ংক্রিয় নিবন্ধন ও বিপণন অনুমোদন সংক্রান্ত ধারাটি নিয়ে আলোচনাও মান–স্বীকৃতির ক্ষেত্রে একটি খুব আকর্ষণীয় ঘটনা। এই অনুমোদন উন্নত দেশগুলির তরফেও অনুমোদনের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। যাই হোক, ভবিষ্যতে পণ্যের ক্ষেত্রে ভারতের তার নিজস্ব মানের পারস্পরিক স্বীকৃতির জন্য চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মান–সমন্বয় বা স্ট্যান্ডার্ডস হারমনাইজেশন ও মূল্য অনুবর্তিতা বা কস্ট অফ কমপ্লায়েন্স–এর দৃষ্টিকোণ থেকে এই লক্ষ্যেই কাজ করা উচিৎ।

মান সংক্রান্ত বিধিগুলির একটি আনুষঙ্গিক হল মূল উৎপাদক দেশ সংক্রান্ত কঠোর নিয়ম (রুলস অফ ওরিজিন বা আরওও)‌। সিইপিএ অনুযায়ী এর জন্য ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন প্রয়োজন। এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই আরওও মূল্য ভবিষ্যতে একটি সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। যা বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী একটি পণ্য ভারত/আমিরশাহি থেকে রফতানি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য নতুন মূল্যের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ যুক্ত হতে হবে রফতানিকারক দেশটিতে। মূল্যবান ধাতুগুলির মতো পণ্যের ক্ষেত্রে এত পরিমাণে মূল্য সংযোজন সম্ভব নয়। তবে চুক্তির বয়ান জনসাধারণের জন্য উপলব্ধ করা হলে এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

একটি পণ্য ভারত/আমিরশাহি থেকে রফতানি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য নতুন মূল্যের কমপক্ষে ৪০ শতাংশ যুক্ত হতে হবে রফতানিকারক দেশটিতে।

চুক্তির আরেকটি অংশ যা তার বয়ান উপলব্ধ হলে যাচাই করা যাবে তা হল ই-কমার্স ও ডিজিটাল বাণিজ্য সংক্রান্ত বোঝাপড়া। এটি অবশ্য প্রথমবার নয় যে ভারত একটি এফটিএ-তে ই-কমার্স অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করল। কিন্তু এই সংক্রান্ত নিয়মগুলির ক্ষেত্রে ভারত কখনই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্ধারিত প্রয়োজন পেরিয়ে উদারীকরণের সীমাকে আরও প্রসারিত করার চেষ্টা করেনি। রিপোর্ট অনুসারে আইপিআর, ডিজিটাল বাণিজ্য ও সরকারি সংগ্রহের বিষয়গুলি ‘সর্বোত্তম প্রচেষ্টার’ ভিত্তিতে হবে। এখানে দুটি লক্ষ্যণীয় বিষয় আছে। প্রথমত, ই-কমার্স লেনদেনের উপর শুল্ক স্থগিতের বাইরে ডিজিটাল বাণিজ্যের আরও বৃহত্তর বিষয়গুলিও এফটিএ–র আওতায় আসার কথা। দ্বিতীয়ত, এই বিষয়গুলিতে কোনও বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি নেই। এর অর্থ হল, এই বিষয়গুলিতে ডব্লিউটিও-প্লাস[2] প্রয়োজনীয়তা গ্রহণ না–করার বিষয়ে ভারত তার নিজের আন্তর্জাতিক অবস্থান বজায় রেখেছে।

সামগ্রিক ভাবে, ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ থেকে বর্তমান সরকারের রফতানি বাড়ানোর উপর জোর দেওয়ার বিষয়টি ভাল ভাবে বোঝা যাচ্ছে। ঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হলে এটি ভারতীয় শিল্পের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হবে। কারণ ভারতীয় শিল্পের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, এবং বর্ধিত ভাবে পুরো উপসাগর, একটি পরিচিত বাজার। তবে চুক্তিটি এই বিষয়টিও সামনে এনেছে যে আইপিআর ও ডিজিটাল বাণিজ্যের মতো বিষয়গুলিতে ভারত তার অবস্থানের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যা ইইউ এবং ব্রিটেনের সঙ্গে ভারতের চলতি আলোচনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। ইতিমধ্যে ভারত-আমিরশাহি সিইপিএ অবশ্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও রাজনৈতিক ঝুঁকি হ্রাস করার উদ্দেশ্য পূরণ করেছে।


[1] ইনভার্টেড ডিউটি স্ট্রাকচার বলতে বোঝায় পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মধ্যবর্তী স্তরের উপর শুল্ক চূড়ান্ত পণ্যের তুলনায় বেশি, যার ফলে উৎপাদনের অভ্যন্তরীণ খরচ বেড়ে যায়।
[2] ডব্লিউটিও-প্লাস প্রয়োজনীয়তা হল যে কোনও বাণিজ্য চুক্তির সেই নিয়মগুলি যা ডব্লিউটিও–তে স্বীকৃত বাণিজ্য বিধিগুলি ছাপিয়ে উদারীকরণের সুযোগকে আরও প্রসারিত করে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.