Author : Ullas Rao

Published on Apr 30, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত পরিচ্ছন্ন ও স্থিতিশীল শক্তির দিকে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের কার্বন ফাইনান্সে নেতৃত্ব গ্রহণ করা খুব দূরের কথা বলে মনে হয় না।

ভারতকে নতুন শক্তি সংলাপে নেতৃত্ব দিতে হবে

কপ২৮-এর চূড়ান্ত প্রস্তুতিপর্ব ভারতের হাত থেকে জি২০ প্রেসিডেন্সির স্থানান্তরকে চিহ্নিত করেছিল, আর সেই সময় কপ২৮–এর প্রেসিডেন্ট ডক্টর সুলতান আল–জাবের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন যাতে বিপদাপন্ন না–হয় সেজন্য দেশগুলির কাছে ধারণাগুলিকে কাজে রূপান্তরিত করার জন্য স্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন   ভূ–অর্থনৈতিক ব্লকের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য দেশগুলি সঠিক শব্দের জন্য — ফেজ–আউট না ফেজ–ডাউন — তা নিয়ে হট্টগোল করলেও সমস্ত অর্থে সপ্তাহব্যাপী আলোচনাকে একটি দর্শনীয় সাফল্য হিসাবে ঘোষণা করা যেতে পারে। কারণ সেখানে উদীয়মান জলবায়ু সক্রিয়তা আখ্যানের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অংশীদারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশাল জ্ঞানভান্ডার আহরিত হয়েছিল। সেই দিক থেকে, বিতর্কটি রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত হলেও, সঠিক শব্দের সন্ধান অর্থহীন ছিল। এটি সত্যিই প্রশংসনীয় যে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের অংশ হিসাবে জলবায়ু সক্রিয়তার উপর জোর দেওয়ার ঘটনাটি ওয়র্ল্ড বায়োফুয়েল অ্যালায়েন্স–সহ কিছু জোটকে রূপ দিয়েছে। জলবায়ু সক্রিয়তা আলোচনার জটিলতাগুলির মধ্যে দিয়ে এগনোর জন্য ব্যাটনটি যথাযথভাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই)–র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল, যে বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি উৎপাদনকারী হিসাবে জলবায়ু সক্রিয়তা সংক্রান্ত সংলাপের মধ্যস্থতা করা ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আদর্শ স্থানে রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাসদার–সহ বিভিন্ন নবায়নযোগ্য শক্তিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। সৌর ও পারমাণবিক শক্তির সঙ্গে একযোগে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ২০৫০ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন শক্তির ৪৪ শতাংশ অর্জনের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ রয়েছে। এটি কপ২৮–এর সময় অর্জিত ইউএই ঐকমত্যের অধীনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে রূপান্তরের ক্ষেত্রে ঐকমত্য তৈরির জন্য দেশটিকে একটি আদর্শ প্রার্থী করে তোলে।

এমনকি গ্লোবাল সাউথের বিপরীতে গ্লোবাল নর্থের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে বিশ্ব বিভক্ত থাকা সত্ত্বেও, কপ২৮–এর মতো ফোরামগুলি সংকীর্ণ দেশীয় নির্বাচকমণ্ডলীকে তুষ্ট করার আগে গ্রহের সাধারণ মঙ্গলের জন্য একটি ভবিষ্যৎ তৈরি করার লক্ষ্যে   আদর্শ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে৷ এই লক্ষ্যে, ‘‌মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ’‌–এর মতো উত্তেজক মেট্রিকগুলির শক্তিশালী আখ্যান থেকে বিভ্রান্ত না–হওয়া অনিবার্য, কারণ অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলিকে পর্যায়ক্রমে শক্তি পরিবর্তনের চারপাশে আবর্তিত বৃহৎ আলোচনার মধ্যে অবিচ্ছিন্নভাবে সংযুক্ত করতে হবে, যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলির শিল্পায়নের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত না–হয়। রাষ্ট্রগুলি জ্বালানি চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে যে আর্থ–সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, এবং তার ফলস্বরূপ জলবায়ু বিপদ যে আরও ঘনীভূত হয়, তা এখন আর কল্পনার চিত্র নয়। উদাহরণ হিসেবে আফ্রিকার খনি শিল্পের কথা ধরা যাক। পরিচ্ছন্ন শক্তিতে রূপান্তর শুরু করার জন্য খনি কর্পোরেশনগুলির একটি আদর্শ শক্তি পোর্টফোলিও তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে খরচ–প্রতিযোগিতামূলকতা অর্জনের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন শক্তিতে ভবিষ্যতের মূলধন বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত সঞ্চয় তৈরি করা যায়। এই প্ল্যান্টগুলিকে সম্পূর্ণরূপে ডিকমিশন করার যে কোনও প্রচেষ্টা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক আবাসস্থলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, সেইসঙ্গেই অসহায় অংশীদারদের এমন কার্যকলাপের (বন উজাড় ও চোরাচালান) দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে যা পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের উপর বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। দুর্ভাগ্যবশত, এই গুরুতর বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব গ্লোবাল নর্থ ও সাউথের মধ্যে একটি ব্যবধান তৈরি করে চলেছে।
 


ভারত: ক্লিন এনার্জি ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিচ্ছে

এখানেই ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অতুলনীয় নেতৃত্ব এই উদ্বেগগুলিকে প্রশমিত করতে কাজে আসে, যা সমস্ত অংশীদারের স্বার্থের জন্য একটি সাধারণ কাঠামোতে পৌঁছে দিতে পারে। জলবায়ু ক্রিয়া প্রশমনে প্রযুক্তি ও অর্থের যোগসূত্রের যে ভূমিকার কথা বলা হয়েছে, তার উপর যত গুরুত্বই দেওয়া হোক তা মাত্রাতিরিক্ত বলে গণ্য হবে না। একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাকায় তেল দেওয়ার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও, ভারত ইতিমধ্যেই
মোট শক্তির মিশ্রণে পরিচ্ছন্ন শক্তির অংশ ৪০ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার জন্য ক্রমাঙ্কিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স (আইএসএ)–এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে ভারত ধীরে ধীরে হলেও ইউনিটপ্রতি শক্তি খরচ প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, এবং এভাবে পরিচ্ছন্ন ও স্থিতিশীল শক্তির দিকে এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে, মাথাপিছু আয়ের অন্যতম ধনী দেশ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধান প্রণয়নের জন্য আদর্শ জায়গায় আছে, কারণ দেশ ও কর্পোরেশনগুলি স্থিতিশীল শক্তির দিকে একটি কৌশলগত পরিবর্তন চিহ্নিত করার জন্য বিশেষায়িত অর্থের জন্য সোচ্চার আহ্বান জানাচ্ছে। শক্তি নির্গমন বাণিজ্যের জন্য নতুন প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি গ্লোবাল সাসটেনেবল ফাইন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (জিএসএফআই)–এর ঘোষণা ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের ফাঁক মেটানোর জন্য প্রশংসনীয় উদ্যোগ।


অন্যদিকে, মাথাপিছু আয়ের অন্যতম ধনী দেশ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধান প্রণয়নের জন্য আদর্শ জায়গায় আছে, কারণ দেশ ও কর্পোরেশনগুলি স্থিতিশীল শক্তির দিকে একটি কৌশলগত পরিবর্তন চিহ্নিত করার জন্য বিশেষায়িত অর্থের জন্য সোচ্চার আহ্বান জানাচ্ছে।



এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের কার্বন ফাইনান্সে নেতৃত্ব গ্রহণ করা খুব দূরের কথা বলে মনে হয় না। একটি নির্দিষ্ট চাহিদা ও সু–উন্নত পুঁজিবাজারের সঙ্গে সেবির মতো বাজার নিয়ামক সংস্থাগুলির জন্য একটি সক্রিয় কার্বন–ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয় সংস্কার শুরু করার এটাই উপযুক্ত সময়। এটি দেশের মধ্যে এবং অন্য দেশের সঙ্গে কার্বন অফসেটগুলির জন্য দক্ষ ও সাশ্রয়ী উপায় প্রদান করে। সেবি–র পক্ষে পুঁজিবাজার সংস্কার শুরু করার এটি একটি সুযোগ, যাতে করে তারল্য ও বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রসারিত করার (‌হেজিং)‌ জন্য ডেরিভেটিভস (কার্বন ফিউচার)–সহ পরিচ্ছন্ন শক্তির বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতকে একটি আর্থিক কেন্দ্রে পরিণত করা যায়। গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক–সিটি (গিফট)–রও একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক এক্তিয়ার হিসাবে এই বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে পুঁজি করার সুযোগ রয়েছে৷

সম্ভবত, গিফট তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় নিয়মাবলি–সহ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল সেন্টার (‌ডিআইএফসি)–এর মতো সংস্থাগুলির ভারতীয় সংস্করণ হতে পারে, যেগুলি ঝুঁকির বৈচিত্র্যকরণে ও গভীরতর লিকুইডিটি আনতে সহায়তা করার লক্ষ্যে নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অংশগ্রহণের জন্য প্রণোদনা সহ কার্বন–ক্রেডিট বাজার চালু করতে আদর্শভাবে উপযুক্ত। বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক আর্থিক সহযোগিতা — যেমন গিফট ও ডিআইএফসি–র মধ্যে — এই সুযোগগুলি আরও প্রসারিত করতে পারে৷ আইওএসসিও সদস্য হিসাবে ভারতের নিয়ামক সালিশি প্রশমিত করার জন্য নিয়ামক ও রিপোর্টিং মানগুলির সামঞ্জস্য বিধান করা উচিত, এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির জন্য ভৌত পরিকাঠামো দ্বারা সমর্থিত উন্মুক্ত ক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজিকে আকর্ষণ করা উচিত। যেহেতু ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে উঠে আসার লক্ষ্য রাখে, তাই ভারতের সার্বভৌম মুদ্রার আধিপত্য অনিবার্য। এই লক্ষ্যে, ভারতীয় রুপিতে নতুন শক্তি আর্থিক সম্পদের সুবিধা ও মূল্য ভারতীয় রুপির আন্তর্জাতিকীকরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে।
সাংহাই (সিওয়াইএন) –এর বেঞ্চমার্কড অপরিশোধিত তেলের বাণিজ্যের ক্রমবর্ধমান পরিমাণ ও মূল্য এর একটি উদাহরণ।


আইওএসসিও সদস্য হিসাবে ভারতের নিয়ামক সালিশি প্রশমিত করার জন্য নিয়ামক ও রিপোর্টিং মানগুলির সামঞ্জস্য বিধান করা উচিত, এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির জন্য ভৌত পরিকাঠামো দ্বারা সমর্থিত উন্মুক্ত ক্ষেত্রে বিদেশী পুঁজিকে আকর্ষণ করা উচিত।



সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের ভারতীয় সংস্করণ ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড (এনআইআইএফ) সহযোগিতার সুযোগের সন্ধান করতে পারে কার্বন ভিশন ফান্ডের সঙ্গে, যা আরব আমিরশাহি তৈরি করতে চলেছে একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে —‌ ঝুঁকির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লাভ আনতে সক্ষম পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তিতে বরাদ্দের পোর্টফোলিও প্রসারিত করা। যেহেতু ভারত গ্লোবাল সাউথের ম্যাসকট হিসাবে নতুন শক্তি সংলাপে আধিপত্য দেখায়, তাই নীতিনির্ধারকদের জন্য ‘‌সবুজ সার্বভৌম’‌–সহ বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থায়নের মাধ্যমে অর্থায়ন বাড়ানোও বাধ্যতামূলক, যাতে বিনিয়োগকে আকর্ষণ করা যায় অপরিণত নতুন সবুজ–শক্তি শিল্পে। এই শিল্পটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে, এবং রাজকোষের তহবিলের ক্ষতি না–করেই স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ভারতকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতাদের মধ্যে স্থান করে দিতে পারে। একটি বিস্তৃত বন্ড বাজারের সঙ্গে বেসরকারি ক্ষেত্র ভারতের পরিচ্ছন্ন শক্তি ক্ষেত্রের সুযোগ নিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ডেকে আনতে পারে। গ্রিন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ), এবং দ্বৈত তালিকাভুক্ত গ্রিন ইনডেক্স ফিউচার (যেমন সিঙ্গাপুরে এনএসই ফিউচার) এই প্রচেষ্টার পরিপূরক হতে পারে। সার্বভৌমের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন শক্তির পথ অনুসরণকারী প্যাসিভ ফান্ড আকর্ষণ করা একটি অনুঘটক হিসাবে দেখা হবে।



উল্লাস রাও দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি–ভিত্তিক একজন শীর্ষস্থানীয় অ্যাকাডেমিক এবং আর্থিক অর্থনীতিবিদ, যিনি ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিভিন্ন মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.