Author : Maya Mirchandani

Expert Speak Raisina Debates
Published on Nov 09, 2022 Updated 12 Days ago

আমেরিকা আফগানিস্তানকে তালিবানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জের সি টি সি কমিটির বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়া ছিল প্রাথমিক ফোকাস।

ভূ–রাজনৈতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের কাউন্টার টেররিজম কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছে
ভূ–রাজনৈতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ভারত রাষ্ট্রপুঞ্জের কাউন্টার টেররিজম কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছে

রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কমিটি (‌সি  টি সি)‌–র ২৮–২৯ অক্টোবরের বৈঠক হয়ে গেল ভারতে, এবং ২০০৫ সালের পর এটাই সংগঠনটির নিউ ইয়র্কের সদর দফতরের বাইরে প্রথম বৈঠক। ভারত একে তুলে ধরেছে ২৬/‌১১–র হতাহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ এবং ভারতে ও দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমাগত সন্ত্রাসবাদ ও হিংসাত্মক চরমপন্থার দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উপায় হিসাবে।

এই বিশেষ বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সি টি সি–র বর্তমান চেয়ার রাষ্ট্রদূত রুচিরা কাম্বোজ বলেছেন যে সন্ত্রাসবাদ এখন আর কোনও একটি বিশেষ দেশের সমস্যা নয়। তাঁর বক্তব্য, ভারতের বৈঠকটি সন্ত্রাসবাদীদের সামাজিক মিডিয়া–সহ ইন্টারনেট ও তার সহায়ক প্রযুক্তির অপব্যবহার বা অন্যায় ব্যবহার এবং সন্ত্রাসের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অর্থপ্রদানের নতুন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কিত ‘‌সাম্প্রতিক ঘটনাবলি ও প্রমাণভিত্তিক গবেষণা’‌ প্রতিফলিত করবে ।

ভারত সি টি সি–র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে এমন সময়ে যখন আফগানিস্তানকে ঠিক তেমনই ডামাডোলের মধ্যে ফেলে মার্কিন সেনা চলে গিয়েছে, যেমন ডামাডোলের মধ্যে ২০০১ সালের অক্টোবরে তারা ঢুকেছিল। এই অসমাপ্ত যুদ্ধের পরিণতি হল শত শত সহস্র আফগান বেসামরিক নাগরিককে রক্ষণশীল, জঙ্গি তালিবান সরকারের মর্জির উপর রেখে যাওয়া, নারী ও সংখ্যালঘুদের উপর নিরবচ্ছিন্ন নিপীড়ন, এবং ক্রমাগত, ঘন ঘন সন্ত্রাসবাদী হামলা। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের মূল চালিকাশক্তি শ্রেণিটির কয়েক দশকের পুরনো নৈকট্য ভারতের পক্ষে সরাসরি তার অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে আরও বিপদের মুখে ফেলেছে, যার ফলে সি টি সি–র এই মেয়াদ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারতে জিহাদি মৌলবাদের অধ্যয়নে প্রায় ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে যে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা স্থানীয় ধর্মীয় সংঘাতে সহিংসভাবে প্রকাশ পায়। ফলস্বরূপ এই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে পাকিস্তানে যুবকদের নিয়োগ, এবং তাদের রসদ ও প্রশিক্ষণ প্রদানের আকাঙ্ক্ষা প্রায়শই মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের শিকার হিসাবে ভারতের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির কাছে বড় ধরনের চিন্তার কারণ আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থান ও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দৃঢ় সম্পর্ক, এবং নতুন বা পুনরুদ্ধার করা সংস্থান ও জনশক্তি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা–সহ এখনকার নতুন বাস্তবতা। তার উপর ইসলামাবাদে এই সময়ে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের প্রতি মার্কিন সরকারের নতুন মনোভাব বৈঠকের আয়োজনের সময় ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

কমিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ভারত দু’‌বার সি টি সি–র চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে। ভারত‌ প্রথমবার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল ২০১১ সালে ভয়ঙ্কর  মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার তিন বছরেরও কম সময় পরে, যখন তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি ও এখনকার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ পুরি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে একটি নতুন ‘‌জিরো টলারেন্স’‌ দৃষ্টান্ত তৈরির জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন করেছিলেন। বিভিন্ন দেশ এই পন্থা অবলম্বন করলেও সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এটি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার না–দেওয়ার দিকে এবং জেনোফোবিয়া ও ইসলামোফোবিয়ার দিকে পরিচালিত করেছে। বিশেষজ্ঞ ঊষা রামনাথনের যুক্তি, ‘‌‘‌৯/১১ সেই মুহূর্তটি প্রদান করেছিল যখন ‘‌অসাধারণ’‌–এর প্রাত্যহিকতা বৈধতা খুঁজতে থাকে এবং পেতে থাকে।’‌’‌

এক দশক পরে বিশ্ব এখন ইসলামবাদী, জিহাদি সন্ত্রাসবাদ ছাড়াও মোকাবিলা করছে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, নব্য নাৎসি ও দক্ষিণপন্থী চরমপন্থীদের সন্ত্রাসবাদী হিংস্রতার নতুন রূপের, যারা মুসলিম–বিরোধী, অভিবাসী–বিরোধী, ও এলিট–বিরোধী শস্তা জনপ্রিয় রাজনীতির দ্বারা পুষ্ট হয়েছে ও মৌলবাদের পথ গ্রহণ করেছে। এমন একটি  বৈশ্বিক পরিবেশে ভারত সি টি সি–র সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে।

আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের শিকার হিসাবে ভারতের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে নয়াদিল্লির কাছে বড় ধরনের চিন্তার কারণ আফগানিস্তানে তালিবানের পুনরুত্থান ও পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের দৃঢ় সম্পর্ক, এবং নতুন বা পুনরুদ্ধার করা সংস্থান ও জনশক্তি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা–সহ এখনকার নতুন বাস্তবতা।

‘‌সন্ত্রাসবাদী’‌র সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক

এক বছরের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার সময় মিসেস কাম্বোজের পূর্বসূরি টি এস তিরুমূর্তি সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে দিল্লির জিরো টলারেন্স–এর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছিলেন, “সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তাদের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে সন্ত্রাসবাদের লেবেল দেওয়ার প্রবণতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে৷ এই ধরনের শ্রেণিকরণ বিশ্ব সম্প্রদায়কে প্রাক–৯/১১ যুগের ‘‌আমার সন্ত্রাসবাদী বনাম তোমার সন্ত্রাসবাদী’‌-র দিকে নিয়ে যাবে।’‌’‌

কট্টরপন্থার গতিশীলতার পরিবর্তন এবং সমাজে আজ যে ধরনের সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ছে—বিশেষ করে দক্ষিণপন্থী বিপদ, তা সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা নিউজিল্যান্ডে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ হোক, মিয়ানমার বা শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ মৌলবাদী বা ভারতের চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো হোক—তার প্রেক্ষাপটে ভারত এই বিভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ ও বিপদগুলিকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য নতুন পরিভাষা গ্রহণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রদূত তিরুমূর্তি গত বছর গ্লোবাল কাউন্টার টেররিজম স্ট্র্যাটেজি (জি সি টি এস)–র সপ্তম পর্যালোচনার উপর একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার সময় সাধারণ পরিষদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন ‘জাতিগত ও জনগোষ্ঠীগত কারণে উদ্বুদ্ধ সহিংস চরমপন্থা, সহিংস জাতীয়তাবাদ,  ও দক্ষিণপন্থী চরমপন্থার মতো উদীয়মান বিপদগুলির’‌ নাম করে নতুন পরিভাষা গ্রহণ করার আড়ালে ‘‌আমরা এখন আবার আমাদেরকে বিভক্ত করার চেষ্টা দেখতে পাচ্ছি’। তিনি একে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা বলে অভিহিত করেছিলেন। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যোগ করেছিলেন:‌ ‘‌‘‌সমসাময়িক ‘‌ধর্ম নিয়ে ভীতি’‌র উত্থান, বিশেষ করে হিন্দু–বিরোধী, বৌদ্ধ–বিরোধী ও শিখ–বিরোধী ফোবিয়া একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়, এবং এই বিপদ মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ ও তার সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের মনোযোগ প্রয়োজন।”

এবং এখানেই চ্যালেঞ্জ নিহিত আছে। র‌্যাডিক্যালাইজেশন বলতে কী বোঝায় এবং তার দেশীয় রাজনীতির উপর প্রভাবের মূল্যায়নের প্রশ্নে উগ্রবাদের ধরনগুলিকে সংজ্ঞায়িত বা শ্রেণিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলির প্রতিক্রিয়া থেকে বোঝা যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পুরোপুরি ভাঙ্গন ধরেছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন আন্তঃরাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। কাজেই এখন চেয়ার হিসাবে জাতিগত ও জনগোষ্ঠীগতভাবে অনুপ্রাণিত সহিংস চরমপন্থা (আর ই এম ভি ই)–র বিষয়ে আলোচনার পথ খোঁজা ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টিকে অবশ্যই রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রিভেনটিং অ্যান্ড কাউন্টারিং  এক্সট্রিমিজম (পি/সিভিই) ফ্রেমওয়ার্ক–এর আওতায় আনতে হবে। এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একটি ডিজিটালাইজড বিশ্বে অত্যাবশ্যক, যেখানে উত্তেজনা সহজেই সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। এমনটি আমরা সম্প্রতি ব্রিটিশ শহর লিস্টারে দেখেছি।

সদস্য রাষ্ট্রগুলির জাতীয় স্বার্থের দ্বারা নির্ধারিত সিদ্ধান্ত এবং একটি আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা রক্ষার প্রয়োজন, এই দুইয়ের টানাপড়েনের মধ্যে বৈশ্বিক রাজনীতির জটিলতা ও দ্বন্দ্বগুলি নিঃসন্দেহে ভারত ও এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার কাজটি ধারাবাহিকভাবে প্রভাবিত করেছে।

অতএব, দিল্লি বৈঠকটিও অবশ্যই থেমে দাঁড়ানো এবং ভাবনাচিন্তার একটি মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। ৯/১১–র পর ২০ বছর ধরে বিশ্ব একাধিক সংগঠনের মৌলবাদী জিহাদকে, এবং যাদের এখন জাতিগত বা জনগোষ্ঠীগতভাবে অনুপ্রাণিত হিংসাত্মক চরমপন্থী বলে অভিহিত করা হচ্ছে তাদের সন্ত্রাসবাদকে, কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগের অভাবসহ প্রান্তিকতা, পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্য, ও লক্ষ্যভিত্তিক সহিংসার মতো কারণগুলির পুশ ফ্যাক্টর, বা সেই পুল ফ্যাক্টরগুলি যা ঝুঁকির মধ্যে থাকা পুরুষ ও মহিলাদেরকে এমন কিছুর সঙ্গে সংযুক্ত হতে উস্কে দেয় যেগুলি হিংসাকে ‘‌সংগ্রামের’‌ মাধ্যম হিসাবে সমর্থন করে, সেগুলো এক অতি–কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা আজ বিশ্বব্যাপী মৌলবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদকে ইন্ধন দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তাদের নিজস্ব রাজনীতির ফলে মেরুকৃত সমাজের উত্থান এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের সহজলভ্যতার মধ্যে এফ বি আই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী সহিংস চরমপন্থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রধান অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের বিপদ হিসাবে ঘোষণা করেছে, আর ব্রিটেন সেই প্রথম দেশগুলির মধ্যে ছিল যারা স্থানীয়ভাবে সমর্থিত নব্য নাৎসি গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করে।

সদস্য রাষ্ট্রগুলির জাতীয় স্বার্থের দ্বারা নির্ধারিত সিদ্ধান্ত এবং একটি আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা রক্ষার প্রয়োজন, এই দুইয়ের টানাপড়েনের মধ্যে বৈশ্বিক রাজনীতির জটিলতা ও দ্বন্দ্বগুলি নিঃসন্দেহে ভারত ও এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার কাজটি ধারাবাহিকভাবে প্রভাবিত করেছে। কাউন্টার টেররিজম কমিটির দ্বারা নির্ধারিত বাধ্যবাধকতাগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এবং ভারত দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা থেকে উপকৃতও হয়েছে, বিশেষ করে ২৬/১১ তদন্তের ক্ষেত্রে, তা রাষ্ট্রপুঞ্জের মাধ্যমে হোক বা আর্থিক অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে। রাষ্ট্রপুঞ্জের গৃহীত সন্ত্রাসবাদের উপর বেশ কয়েকটি সেক্টোরাল কনভেনশনের একটি পক্ষ হিসাবে ভারতের নিজস্ব সন্ত্রাসবাদ নীতিটি, তার বাস্তবায়ন যেভাবেই হয়ে থাকুক না কেন, তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের অনুসরণে, বিশেষ করে ১২৬৭ ও ১৩৭৩–এর ভিত্তিতে। ২০০৮ সালে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ভিত্তি যে ‘বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন’ তা সংশোধনের সময় ওই প্রস্তাবদুটির ভিত্তিতেই করা হয়েছিল। সংশোধনীতে ১৩৭৩ নম্বর প্রস্তাব উদ্ধৃত করে সি টি সি তৈরি করা এবং ১২৬৭ নম্বর প্রস্তাব যেভাবে ব্যক্তিদের সন্ত্রাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করেছে, তা উদ্ধৃত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ১২৬৭–র ভিত্তিতে ৯/১ থেকে এ যাবত চারবার ইউ এ পি এ সংশোধন করা হয়েছে। অতি সম্প্রতি ২০১৯ সালে তা সংশোধন করে প্রথমবারের মতো ব্যক্তিদের সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়ে অনেক সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মতো ইউ এ পি এ–ও রাষ্ট্রকে ব্যক্তির উপর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দিয়ে মূলত এবং প্রায়শই যথাযথ প্রক্রিয়ার অধিকার হ্রাস করে। রাষ্ট্রগুলি যে ক্ষমতাগুলি হাতে নিয়েছে সেগুলিকে পুনরায় বিবেচনা করার সময় কি এখন হয়েছে?

কোনও সংশয় নেই যে ভারতের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার নানা সমস্যা রয়েছে, যেমন কাশ্মীর ও উত্তর–পূর্বে বিদ্রোহ, বামপন্থী সন্ত্রাসবাদ, বা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ যার মধ্যে আন্তঃসীমান্ত মদতপুষ্ট ইসলামিস্ট এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় হিংসাও রয়েছে। যাই হোক, যেহেতু রাষ্ট্রপুঞ্জের কাউন্টার টেররিজম কমিটি এর গত দুই দশকের প্রভাব পর্যালোচনা করছে এবং এই অস্বাভাবিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের সভাপতিত্বে ভবিষ্যতের জন্য একটি পথ নির্ধারণ করেছে, তাই দিল্লিকে অবশ্যই বর্তমান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বাইরে তাকাতে হবে। এবং সেই সঙ্গেই ভারতকে এমন একটি কাঠামোর প্রস্তাব করতে হবে যা মতাদর্শগত, জাতিগত ও জনগোষ্ঠীগত চরমপন্থা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের চ্যালেঞ্জের আকার ধারণকারী নতুন ঘটনাবলির মোকাবিলার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত বহুপাক্ষিক সম্পৃক্ততা, নীতিগত কূটনীতি, আইনের শাসন ও সাংবিধানিক সুরক্ষার নিজস্ব ইতিহাস প্রতিফলিত করে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.