Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 02, 2023 Updated 0 Hours ago

যেখানে তাদের উপস্থিতি সীমিত, সেই সব অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে ভারত এবং ইতালি একে অন্যকে অনায়াসে সমর্থন করতে পারে। একই সঙ্গে দেশ দু’টির উচিত জাপানের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের আলোচনা পুনরায় সূচনা করা।

ইতালির সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে ভারত। চিনের হাত বাড়ানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য রোমের অজ্ঞাত নয়

বালিতে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের মাঝে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য ইতালির প্রাইম মিনিস্টার জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দেখা করেন। ২০২৩ সালে বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত অর্থনীতির গোষ্ঠীর নেতৃত্বভার গ্রহণ করার পর মোদী-মেলোনি সাক্ষাৎ দু’পক্ষের মধ্যে ২০২১ সাল থেকে বিদ্যমান আলাপ-আলোচনার ধারাবাহিকতাকেই বজায় রাখে, যে বছর পরিবর্তনশীল সভাপতিত্বের দায়ভার ছিল ইতালির উপর। তখন কোভিড-১৯-পরবর্তী যুগে তীব্র আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে ও দুই প্রাইম মিনিস্টারের মধ্যে সম্পৃক্ততাকে সুসংহত করতে ইতালির প্রাইম মিনিস্টার মারিও দ্রাঘি রোমে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে অপর যে ধারণাটি উঠে এসেছে, তা হল জি২০ শীর্ষ সম্মেলন সংক্রান্ত আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির বিকাশের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মতবিনিময়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দুই সরকারের মধ্যে এই ধরনের আদান-প্রদান ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে।

অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, স্বার্থ

ভারত ও ইতালি উভয় দেশেরই প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন এবং ভারত মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে অবাধ, স্বাধীন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমুদ্ররেখা সংরক্ষণে একটি শক্তিশালী অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্বার্থ রয়েছে। এই স্বার্থ সুস্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোম নিজের বিদেশনীতির অংশ হিসাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের ধারণাকে গ্রহণ করতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। ২০১৮ সালে রোম চিনের সঙ্গে একটি সমঝোতাপত্র (মউ) স্বাক্ষর করেছে, যা ইউরোপে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই)-এর বিপজ্জনক প্রভাবগুলি নিয়ে ইতালির বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

কোভিড-১৯-পরবর্তী যুগে তীব্র আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে ও দুই প্রাইম মিনিস্টারের মধ্যে সম্পৃক্ততাকে সুসংহত করতে ইতালির প্রাইম মিনিস্টার মারিও দ্রাঘি রোমে নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে দেখা করেছিলেন

তারপর থেকেই ইতালি নিজের জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষাকে শক্তিশালী করতে প্রকাশ্যে বেজিংয়ের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। ওই একই সময়ে জার্মানি যখন চিনা বিনিয়োগের কাছে নিজের কৌশলগত পরিকাঠামোর দরজা উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন মারিও দ্রাঘির নেতৃত্বাধীন পূর্ববর্তী ইতালীয় সরকার বারংবার চিনা সংস্থাগুলিকে ইতালীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উৎপাদন ক্রয় বা তাতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত রাখার জন্য ভেটো প্রয়োগের কর্তৃত্ব দেখিয়েছে। ড্রোনের মতো সংবেদনশীল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইতালীয় উৎপাদনে অনুপ্রবেশ করার চিনা প্রচেষ্টা দেখে একাধিক ইতালীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান রোমের সঙ্গে সংযোগস্থাপনের নেপথ্যে চিনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে  প্রশ্ন তুলেছে।

ইতালিতে বর্তমানে নতুন সরকার এসেছে। ইতালির প্রথম মহিলা প্রাইম মিনিস্টার জর্জিয়া মেলোনির ভাইয়েরা প্রথম থেকেই চিনের প্রতি এককাট্টা অবস্থান গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় এই ইতালীয় রক্ষণশীল নেতা অভ্যন্তরীণ বিষয়ের নিরিখে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্য স্বীকার করেও প্রকাশ্যে তাইওয়ানের গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন। মেলোনির বক্তব্য সাম্প্রতিক ইতালীয় ইতিহাসে তো বটেই, এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের মধ্যে নজিরবিহীন। বিদেশনীতি সংক্রান্ত মারিও দ্রাঘির দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই মেলোনি ইউক্রেনের প্রতি তাঁর দৃঢ় সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন এবং বিশ্ব জুড়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার লড়াইকে সশক্ত করার পক্ষ অবলম্বন করেছেন। ইতালির নতুন সরকার তার বৈদেশিক নীতিকৌশলে ইন্দো-প্যাসিফিককে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির কতটা প্রসার ঘটায়, তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবুও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশটিকে সে পথে এগোনোর জন্য বাধ্য করতে পারে।

সঠিক লক্ষ্যের দিকে

বিগত কয়েক বছরে ইতালি ও ভারতের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হয়েছে, যার নেপথ্যে রয়েছে ইতালিকে ভারতের নতুন বৈশ্বিক বৈদেশিক নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যক্তিগত সদিচ্ছা। রোমে অনুষ্ঠিত শেষ জি২০ অধিবেশনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং দ্রাঘি ভারত-ইতালি সম্পর্কের অগ্রগতি ঘটানোর জন্য একগুচ্ছ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং প্রথম বারের জন্য একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তাঁরা ভারত মহাসাগরের সামুদ্রিক সমুদ্র-রেখাগুলির নিরাপত্তা-সহ সংবেদনশীল নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করেন। রোমে ক্ষমতায় এসেছে একটি নতুন রক্ষণশীল সরকার, তারা আন্তর্জাতিক বিষয়ে একটি বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করতেও রাজি, ফলে উভয় পক্ষের কাছেই বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্য সহযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠে এক নতুন বাস্তবসম্মত দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে।

উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ইতালির সংগঠিত সহযোগিতা এবং লিবিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি অবিচল সমর্থনদেশটিকে পশ্চিম এশিয়া সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসবাদী হুমকি মোকাবিলা করার পাশাপাশি এই অঞ্চলে উন্নয়ন ও বাণিজ্য প্রকল্পগুলিতেও এক তাৎপর্যপূর্ণ স্থান দিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে ভারত এবং ইতালি একে অন্যকে অনায়াসে সমর্থন করতে পারে সেই সব অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে, যেখানে তাদের উপস্থিতি সীমিত। উত্তর আফ্রিকার  দেশগুলির সঙ্গে ইতালির সংগঠিত সহযোগিতা এবং লিবিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি অবিচল সমর্থন, দেশটিকে পশ্চিম এশিয়া সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসবাদী হুমকি মোকাবিলা করার পাশাপাশি এই অঞ্চলে উন্নয়ন ও বাণিজ্য প্রকল্পগুলিতেও এক তাৎপর্যপূর্ণ স্থান দিয়েছে। একই সময়ে সফল অ্যাক্ট ইস্ট নীতি ইতিমধ্যে ভারতকে বৃহত্তর ভারত মহাসাগরে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে, যা একই সঙ্গে দেশটিকে গালফ অব আডেনের জলভাগের উপরে – যেখানে ইতালির উপস্থিতি রয়েছে – সেখানে প্রভাব ফেলে  এমন নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় এক অপরিহার্য অংশীদার করে তুলেছে। অঞ্চলটি সম্পর্কে ভারতের জ্ঞান এবং কোয়াডের সদস্যপদ দেশটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসাবে তুলে ধরেছে এবং সাগরের (সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিয়ন) মতো নীতিগুলি অঞ্চলটির নিরাপত্তার নিরিখে ইতালীয় অবদানের জন্য এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে ইতালীয় বিনিয়োগের জন্য একটি মঞ্চ গড়ে তুলতে পারে।

২০২১ সালের জুলাই মাসে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এবং দিল্লিতে ইতালীয় দূতাবাস প্রযুক্তি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রেক্ষিতে আন্তঃসহযোগিতার বিকাশের জন্য ভারত-ইতালি-জাপানের একটি ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্বের ধারণার সূচনা করে। এটি এখনও সম্পূর্ণ ভাবে কার্যকর না হলেও, জি২০ রোম সম্মেলনের সময়ে দুই সরকারের সফল আন্তঃসংযোগ এবং মোদী ও দ্রাঘির স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মঞ্চে দিল্লি এবং রোমের মধ্যে পরামর্শ বিনিময় ও সহায়তা প্রদানের পন্থাগুলির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য এই উদীয়মান অংশীদারিত্বের রূপরেখা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়। পার্লামেন্টে স্থিতিশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং বাস্তববাদী ও জাতীয় স্বার্থভিত্তিক বিদেশনীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি প্রদানকারী নতুন ইতালীয় সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে এই ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত আলোচনা পুনরায় চালু করতে পারে, যা আখেরে ভারত-ইতালি সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.