Author : C. Raja Mohan

Expert Speak Raisina Debates
Published on Feb 18, 2022 Updated 28 Days ago

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের এক প্রধান সুবিধাপ্রাপক দেশ হিসেবে ভারতের অবশ্যই উচিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভেঙে পড়া রুখতে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করা।

ভারত এবং অতিমারি পরবর্তী ভূ-রাজনীতি

Image Source: C.R Shelare — Getty

ভারত এবং অতিমারি পরবর্তী ভূ-রাজনীতি

এই প্রতিবেদনটি ভারত@৭৫: আকাঙ্ক্ষা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দৃষ্টিভঙ্গি সিরিজের অন্তর্গত।


চিনের উত্থান এবং তার সম্প্রসারণবাদ, রাশিয়ার নিজেকে ফের জাহির করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের পুনর্বিন্যাস এবং ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভেঙ্গে পড়া ভারতের জন্য অভূতপূর্ব প্রতিবন্ধকতা ও সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। এক দিকে যখন বেজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধি নতুন প্রতিবন্ধকতাকে তুলে ধরে, অন্য দিকে তখন ভারতের কৌশলগত আন্তঃসহযোগিতার ক্রমবর্ধমান গভীরতা নতুন সুযোগগুলিকেই দর্শায়। একই সঙ্গে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থান নতুনতর সুযোগগুলিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু নেতিবাচক দিকের প্রশমনেও সাহায্য করেছে। ভারতের সাফল্য বর্তমানে নির্ভর করছে কত তাড়াতাড়ি সে তার প্রথাগত বিশ্বধারণার পুনর্গঠন করতে পারে, তার উপরে।

সারা বিশ্ব ছেয়ে ফেলার দু’বছর পরেও যখন কোভিড-১৯ অতিমারি বহাল রয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রাক বিদ্যমান কৌশলগত ধারাগুলি ত্বরান্বিত হচ্ছে। অতিমারির ফলে ঔষধ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম-সহ অন্যান্য উৎপাদিত দ্রব্যের ক্ষেত্রে চিনের উপরে অতি নির্ভরতার বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়াও সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে প্রতিরোধক্ষম করে তোলার জন্য রাজনৈতিক পদক্ষেপের সূচনা ঘটেছে। এ ছাড়াও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও এর ফলে সুস্পষ্ট হয়েছে। চিনের সঙ্গে বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যার ফলে ওয়াশিংটনও আমেরিকার অভ্যন্তরীণ শিল্প এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্ষমতার সশক্তিকরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে।

প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থান নতুনতর সুযোগগুলিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ কিছু নেতিবাচক দিকের প্রশমনেও সাহায্য করেছে।

চিনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রতিরোধ — যা অতিমারির অনেক আগেই শুরু হয়েছিল — বর্তমানে এক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ওয়াশিংটনের বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ববর্তী পদক্ষেপের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে ব্রতী হয়েছে এবং চতুর্দেশীয় ফোরামটিকে (যেটি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এক সূত্রে আবদ্ধ করে) পুনরায় শক্তিশালী করে তুলেছে। বাইডেন আরও এক ধাপ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং আমেরিকার নতুন সামরিক জোট অউকাস-এর সূচনা করেছেন। এই জোটের চুক্তি অনুযায়ী ওয়াশিংটন এবং লন্ডনের তরফে ক্যানবেরাকে পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ সরবরাহের পাশাপাশি সাইবার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত উদীয়মান কৌশলগত প্রযুক্তির বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক আন্তঃসহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।

২০২০ সালের বসন্ত কালে লাদাখ অঞ্চলে বেজিংয়ের আগ্রাসনের ফলে যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছিল, তা নিয়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সঙ্কটের এখনও পর্যন্ত কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। উচ্চ হিমালয়ে ভারত এবং চিনের সামরিক সংঘাত ২০২০ সালের জুন মাসে দুই দেশের সেনাদলের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের আকার ধারণ করে, এমনটা বিগত কয়েক দশকে এই প্রথম বার ঘটতে দেখা গেছে। সামরিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্তরে অনবরত আলোচনা চালানো সত্ত্বেও দিল্লি বেজিংকে তার আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণে নিরস্ত করতে এবং লাদাখের পূর্ববর্তী আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা বহাল করার বিষয়ে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। চিনের আগ্রাসন এবং পূর্ব নির্ধারিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির শর্তগুলি মেনে চলার অনীহার সঙ্গে যুঝতে দিল্লির কাছে তার চিন নীতির পুনর্বিবেচনা করা এবং বেজিংয়ের উত্থানের ফলে সৃষ্ট নতুন ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

সামরিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্তরে অনবরত আলোচনা চালানো সত্ত্বেও দিল্লি বেজিংকে তার আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণে নিরস্ত করতে এবং লাদাখের পূর্ববর্তী আঞ্চলিক স্থিতাবস্থা বহাল করার বিষয়ে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

অব্যবহিত উত্তর-ঔপনিবেশিক পর্যায়ে ভারত ভূ-রাজনীতি সংক্রান্ত ধারণা ও শীর্ষ ক্ষমতা ধরে রাখা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিরূপণে ক্ষমতা বণ্টনের মতো বিষয়গুলিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নিরিখে ভারতের অনন্য পরিচিতি ‘এক বিশ্ব’র মতো সর্বজনীন ধারণা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির সহাবস্থান, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান, জোটের বিরোধিতা, উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংহতি, পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রচারকে আহ্বান জানায়।

যদিও বাস্তব বিশ্বের টানাপড়েনের মাঝে এ হেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকাঠামোকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটি কখনওই সহজ ছিল না। প্রতিবেশের মধ্যে নয়াদিল্লি ব্রিটিশ রাজ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে উপমহাদেশীয় প্রভাব বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু চিনের সঙ্গে ১৯৬২ সালের যুদ্ধ ১৯৫০-এর দশকের আদর্শবাদের ভিত নাড়িয়ে দেয় এবং জওহরলাল নেহরু সামরিক সাহায্যের জন্য আমেরিকার দ্বারস্থ হন। বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তমান সমীকরণ ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিবেশকে আকার দিতে থাকে এবং নেহরুর উত্তরসূরি ইন্দিরা গাঁধীও চিন-মার্কিন আঁতাতের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্য নেন। ভারতের পক্ষে তার ঘোষিত আদর্শবাদ এবং আপস ও বাস্তবপন্থী রাজনীতির দাবি রাখা বিদেশনীতির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার কাজটি একটি নাছোড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই টানাপড়েনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে: যখন ভারত অন্তর্মুখী হয় এবং বিশ্বের সঙ্গে তার বাণিজ্যিক যোগাযোগ সীমিত করে ফেলে, সেই সময়ে ভারতের আপেক্ষিক অর্থনৈতিক নিম্নগতি এবং এর সঙ্গে কৌশলগত প্রাধান্য হ্রাসও পরিলক্ষিত হয়। অবশেষে ১৯৯০-এর দশকে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অভিমুখের পরিবর্তন ভারতের আপেক্ষিক পতনের মুখ ঘুরিয়ে দেয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে উচ্চ বৃদ্ধির হার ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত করার পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, এবং নয়াদিল্লি ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বের প্রকৃতি এবং তাতে তার নিজস্ব স্থান নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করে।

ভারতের পক্ষে তার ঘোষিত আদর্শবাদ এবং আপস ও বাস্তবপন্থী রাজনীতির দাবি রাখা বিদেশনীতির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার কাজটি একটি নাছোড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিজেকে বিমূর্ত নিয়ম এবং সর্বজনীন নীতির পথ প্রদর্শক মনে করার অবস্থান পরিবর্তিত হতে শুরু করে ক্ষমতার বাস্তবসম্মত উপলব্ধি এবং বিশ্ব ব্যবস্থাকে আকার দেওয়ায় তার ভূমিকা নিরূপণের মাধ্যমে। ১৯৯০-এর দশকে একমাত্রিক মুহূর্তটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য, ভারত একটি বহুমুখী বিশ্বের ধারণাকে তুলে ধরতে রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে যোগ দেয়। এর ফলে এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কেও প্রত্যক্ষ ভাবে খারাপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। অবশেষে একবিংশ শতাব্দীতে চিনের উত্থান ভারতের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রগতিকে গুরুতর ভাবে বাধা দিতে শুরু করলে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে নয়াদিল্লির নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। চিনের সঙ্গে অনবরত সীমান্ত সংকট দিল্লিকে ওয়াশিংটনের আগেকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে একটি কৌশলগত নির্ভরতা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার নিরাপত্তা সংক্রান্ত অংশীদারিত্ব জোরালো করে তোলার পাশাপাশি আমেরিকার সঙ্গে অংশীদারিত্বের পরিপূরক হিসেবে নয়াদিল্লি মধ্যশক্তির দেশগুলিকে নিয়ে এক জোট গঠনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টানাপড়েনকে প্রশমিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমানে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের সঞ্চারপথের অনিশ্চয়তা এবং চিনের সম্ভাব্য চমকের পরিপ্রেক্ষিতে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপে ফ্রান্স এবং এশিয়ায় জাপানের মতো মধ্যশক্তির দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার কাজে ভারত আরও ব্যাপক ভাবে শক্তি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

ইউরোপে ফ্রান্স এবং এশিয়ায় জাপানের মতো মধ্যশক্তির দেশগুলির সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার কাজে ভারত আরও ব্যাপক ভাবে শক্তি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

মধ্যশক্তির দেশগুলির সমন্বয়ের উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ, মধ্য প্রাচ্য এবং এশিয়ায় তার মিত্র শক্তির ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করছে। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র শক্তিগুলিকে ‘ফ্রি রাইডার’ বা ‘সুবিধাভোগী’ বলে তিরস্কার করলেও জো বাইডেন পৃথিবীব্যাপী মার্কিন নেতৃত্ব পুনর্বহাল করার কাজে মিত্রশক্তিগুলির গুরুত্বের উপরে বিশেষ জোর দিয়েছেন। কিন্তু এর পাশাপাশি বাইডেন জোট শক্তিগুলির উর্ধ্বে উঠে আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে সমমনস্ক অংশীদার দেশগুলির বৃহত্তর দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়েও আগ্রহ দেখিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে হস্তক্ষেপ করার পরে বর্তমানে বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় মনোনিবেশ করেছেন। আমেরিকা চায়, প্রাচ্যে তার মিত্র দেশগুলি আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়ে আরও বেশি করে মনোযোগী হয়ে উঠুক।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশই যখন সে দেশের যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বজনীন দায়বদ্ধতা কাটছাঁট করার আশংকায় হতাশ, ভারতের পক্ষে তখন এটিকে সদর্থক অভিমুখ দেওয়া সম্ভব। ইউরোপ এবং এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত ভূমিকার পুনর্বিন্যাস ভারতকে তার প্রতিবেশী অঞ্চল এবং তার বাইরেও নিরাপত্তা সংক্রান্ত অধিক দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। এ রকমটা হওয়ার জন্য ভারতকে একক ভাবে কাজ করার চেনা হাতছানিকে উপেক্ষা করতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক প্রক্রিয়াগুলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলিতে অন্য দেশগুলির সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে।

প্রচলিত নর্থ সাউথ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বব্যাপী নতুন অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই না করে নয়াদিল্লির উচিত স্থিতিশীল বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি এবং লাভ ও খরচের ন্যায্য বণ্টনের স্বার্থে প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলির মধ্যে এক নতুন ঐকমত্য গড়ে তোলা ও সেটিকে বহাল রাখার চেষ্টা করা।

অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের এক প্রধান সুবিধাপ্রাপক দেশ হিসেবে ভারতের অবশ্যই উচিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভেঙে পড়া প্রতিহত করতে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করা। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিশ্বের দুই প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে টানাপড়েনের পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জর্জরিত। প্রচলিত নর্থ সাউথ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বব্যাপী নতুন অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই না করে নয়াদিল্লির উচিত স্থিতিশীল বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি এবং লাভ ও খরচের ন্যায্য বণ্টনের স্বার্থে প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিগুলির মধ্যে এক নতুন ঐকমত্য গড়ে তোলা ও সেটিকে বহাল রাখার চেষ্টা করা। অতিমারি পরবর্তী বিশ্ব দেখেছে, কী ভাবে ভারত অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে প্রতিরোধক্ষম সরবরাহ শৃঙ্খল নির্মাণ এবং কোয়াডের মতো (ভারত, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান) এককালীন নিরাপত্তা জোটের সশক্তিকরণের মতো নতুন রাজনৈতিক চিন্তাভাবনায় মনোনিবেশ করেছে।

নতুন বিশ্বজনীন সুযোগগুলিতে সাড়া দিলেও দেশ হিসেবে ভারতের সমস্যাগুলি যতটা না বাহ্যিক, তার চেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ। দ্রুততর এবং উচ্চ গুণমানবিশিষ্ট বৃদ্ধি ব্যতীত আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের প্রচেষ্টা হতাশাজনকই থাকবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সমন্বয় বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপক বৈচিত্রময়তা দীর্ঘ দিন যাবৎ একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে ভারতের আত্মপ্রকাশের পথকে জটিল করেছে। এই প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়াদিল্লিকে শুধু মাত্র যে বিশ্বজনীন সম্ভাবনাগুলি থেকে উপকৃত হতেই বাধা দেবে, তা নয়; একই সঙ্গে তা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অনভিপ্রেত বহিরাগত হস্তক্ষেপকেও আমন্ত্রণ জানাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.