Author : Damya Bhatia

Expert Speak Young Voices
Published on Nov 23, 2022 Updated 16 Days ago

ভারতীয় ব্যবসাগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রিয়াকলাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, এবং পাশাপাশি টেকসই জি ভি সি-গুলির সঙ্গে তা একীভূত করবে

ভারত: টেকসই বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল ও নেট–জিরো অতিক্রমণের লক্ষ্য
ভারত: টেকসই বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল ও নেট–জিরো অতিক্রমণের লক্ষ্য

২০২১ সালে গ্লাসগোতে কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরো নির্গমন অর্জনের জন্য ভারতের ইচ্ছার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল (‌গ্লোবাল ভ্যালু চেন, সংক্ষেপে জি ভি সি)[১] ‌সূত্রে রপ্তানি বিশ্বব্যাপী রপ্তানির ৫০ শতাংশেরও বেশি, তাই যে কোনও দেশকে স্থিতিস্থাপক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পেতে হলে জি ভি সি–র সঙ্গে দৃঢ় সংযোগ প্রয়োজন। ‘‌ফ্যাক্টরি এশিয়া’‌–র কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও,[২] ভারত জি ভি সি–তে সংযুক্তির ক্ষেত্রে তার প্রতিযোগীদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে, এবং এই ক্ষেত্রে কিছু বাধাসৃষ্টিকারী কারণ হল জলবায়ু ক্রিয়া ও বিশাল বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফ ডি আই) আকৃষ্ট করার অক্ষমতা। সুশীল সমাজ ও বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে জি ভি সি–গুলির পাশাপাশি অনেক নেতৃস্থানীয় বহুজাতিক সংস্থা তাদের সরবরাহকারীদের কার্বন পদচিহ্ন কমানোর চেষ্টা করছে। জলবায়ু–সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎপাদন ও সংযোগ প্রদান করে ভারত এর সুবিধা নিতে পারে। এটি ভারতীয় ব্যবসাগুলিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ দেবে। এইভাবে শুধু নেট–জিরো উত্তরণকে শক্তিশালী করার জন্যই নয়, বরং শক্তিশালী অর্থনৈতিক বৃদ্ধি অর্জনের জন্য জি ভি সি–কে ডিকার্বনাইজ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি কেন ভারতীয় ব্যবসাগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রিয়াকে চালিত করবে, এবং টেকসই ও স্থিতিস্থাপক জি ভি সি–তে ভারতের সংযুক্তিকে সক্ষম করবে, তার উপর আলোকপাত করে।

সুশীল সমাজ ও বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে জি ভি সি–গুলির পাশাপাশি অনেক নেতৃস্থানীয় বহুজাতিক সংস্থা তাদের সরবরাহকারীদের কার্বন পদচিহ্ন কমানোর চেষ্টা করছে।

জলবায়ু  পরিবেশ থেকে লাভ

ডেলয়েট–এর গ্লোবাল ২০২২ সি এক্স ও সাসটেনেবিলিটি সার্ভে রিপোর্ট অনুসারে, ৮০ শতাংশেরও বেশি ভারতীয় এক্সিকিউটিভ বিশ্বাস করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনে সাড়া দেওয়ার প্রশ্নে বিশ্ব একটি সংকটমুহূর্তে রয়েছে, এবং তাঁরা পরিবেশগত, সামাজিক ও শাসনগত (ই এস জি) ব্যান্ডওয়াগনে উঠে পড়েছেন। নৈতিক পছন্দ অনুযায়ী কাজ করতে এবং পরিবেশগত পদচিহ্ন থেকে বৃদ্ধিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যবসার উপর আরও বেশি নির্ভর করছে। আজ জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্নভাবে কোম্পানিগুলিকে প্রভাবিত করে, যার মধ্যে আছে অপারেশনাল ক্ষেত্রে ভৌত ঝুঁকি থেকে শুরু করে চরম আবহাওয়াগত পরিবর্তনের ঝুঁকি, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সমাজের প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়। তাই শিল্প জুড়ে ব্যবসায়িক পোর্টফোলিওতে কম–কার্বন সমাধানে উত্তরণ বিশ্বব্যাপী নির্গমন প্রোফাইলকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পারে, জলবায়ু–প্ররোচিত ব্যাঘাত কমাতে পারে, পরোক্ষ নির্গমন মোকাবিলায় ব্যবসাকে সহায়তা করতে পারে, এবং সামগ্রিকভাবে ব্যবসাগুলিকে আরও টেকসই করে তুলতে পারে। মাহিন্দ্রা গ্রুপের সি ই ও অনীশ শাহ বলেছেন, ‘‌একটি নতুন ধরনের আর ও সি ই, অর্থাৎ ‘জলবায়ু ও পরিবেশ থেকে লাভ’‌-এর ধারণাটি ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, যা শুধুমাত্র ব্যবসা কীভাবে এবং কী উৎপাদন করে তা নয়, বরং কীভাবে সামাজিক ও আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই তার মূল্য নির্ধারিত হবে তার উপরেও বিশাল প্রভাব ফেলে।’‌ স্থিতিশীলতার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রদর্শনের জন্য ই এস জি স্কোর একটি শক্তিশালী ম্যাট্রিক্স হিসাবে কাজ করে। যে কোম্পানিগুলির উচ্চ মুনাফা থাকলেও কম ই এস জি স্কোর রয়েছে তাদের মূলধনের প্রবাহ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে;‌ আর যে সব কোম্পানি তাদের কার্বন পদচিহ্ন কমানোর জন্য সচেতন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তাদের তহবিল ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করার সম্ভাবনা থাকছে। তহবিল ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের থেকে এই বিনিয়োগগুলি ভারতকে তার জি ভি সি সংযোগগুলিকে শক্তিশালী করতে এবং জলবায়ু–সহনশীল উৎপাদনে আরও বিনিয়োগ করতে সহায়তা করতে পারে। জি২০ সাসটেনেবল ফাইন্যান্স ওয়ার্কিং গ্রুপ (এস এফ ডব্লিউ জি) লক্ষ্য

করেছে নেট–জিরো উত্তরণ অর্জনের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিশ্রুতির বিস্তার ঘটেছে। যদিও এই ব্যবসাগুলির যুক্তিসঙ্গত ডিকার্বনাইজেশন পরিকল্পনা রয়েছে, বর্তমান সরঞ্জামগুলিতে পরিবর্তন সংক্রান্ত বিবেচনা এবং টেকসই লক্ষ্যগুলির সঙ্গে বিনিয়োগকে সারিবদ্ধ করার পদ্ধতির অভাব এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে বর্তমানে কার্বন–সহ জলবায়ু পরিবর্তনকে সমর্থন করার জন্য বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রয়োজনীয় অনেক বড় খাতে বিনিয়োগে বাধা দেয়।[৩] এখানে এস এফ ডব্লিউ জি–র মতো গোষ্ঠীগুলি বেসরকারি ক্ষেত্রের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলির কার্যকরী বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য কাজ করতে পারে; জি২০ দেশগুলির একটি দৃঢ় ট্রানজিশনাল ফ্রেমওয়ার্ক শুধু এই বিনিয়োগগুলিকেই শক্তিশালী করবে না, বরং শক্তিশালী ও টেকসই জি ভি সি সংযোগগুলি অর্জনে সহায়তা করবে। আসন্ন জি২০ প্রেসিডেন্সির সময় ভারত একটি শক্তিশালী টেকসই ফাইন্যান্স ফ্রেমওয়ার্ক রোডম্যাপের জন্য চাপ দিতে পারে, এবং তা দেওয়া উচিতও, কারণ তা বেসরকারি ক্ষেত্রকে কম–কার্বন পোর্টফোলিওতে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করে।

জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্নভাবে কোম্পানিগুলিকে প্রভাবিত করে, যেমন অপারেশনাল ক্ষেত্রে ভৌত ঝুঁকি থেকে শুরু করে চরম আবহাওয়াগত পরিবর্তনের ঝুঁকি, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি সমাজের প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়।

ভারত ও কৃষি মূল্য শৃঙ্খল

ভারতের কৃষিক্ষেত্রকে একটি উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করে বলা যায় কৃষি হল ভারতীয় অর্থনীতির জীবনরেখা। যাই হোক, ক্ষেত্রটি দেশের মোট মূল্য সংযোজনে (জি ভি এ) মাত্র ২০ শতাংশ অবদান রাখে, এবং বিশ্বের কৃষি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ।  জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের অবক্ষয়ের ফলে এখন ভারতে কৃষি উৎপাদনশীলতা উদ্বেগজনক বিপদের সম্মুখীন। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ–তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের চাহিদা ৫৯–৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলি পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা কঠিন করে তুলবে। কাজেই বৃদ্ধি বজায় রাখতে এবং একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের অংশ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু–সহনশীল উৎপাদনে বিনিয়োগ শুরু করা ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য একটি গুরুতর প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। আমরা ইতিমধ্যেই জলবায়ু–সহনশীল উৎপাদনে বিনিয়োগের সুফল দেখতে পাব যদি ভারতীয়  কনগ্লোমারেট ইম্পেরিয়াল টোব্যাকো কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (আই টি সি) দিকে তাকাই৷ আই টি সি তার জলবায়ু–সহনশীল প্রোগ্রামগুলির মাধ্যমে, এবং আই টি সি মেটা মার্কেট ফর অ্যাডভান্সড এগ্রিকালচারাল রুরাল সার্ভিসেস (আই টি সি মার্স)‌ –এর মতো উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করে, ভারতে কৃষিক্ষেত্রকে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। জলবায়ু–সহনশীল কৃষিতে আই টি সি–র কৌশলগত ফোকাস গম, চাল, মশলা ও পাতা তামাকের শক্তিশালী রপ্তানি বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে; এবং একটি নতুন ও টেকসই রাজস্ব প্রবাহ তৈরি করেছে। ফলে কৃষকদের উপকার হচ্ছে। আজ আই টি সি মার্স–এর মতো প্রোগ্রামগুলি ভারতে প্রতিযোগিতামূলক কৃষি মূল্য শৃঙ্খল তৈরির দিকে এমন একটি পদক্ষেপ যা স্থিতিস্থাপক ও টেকসই।

কৃষির বাইরে তাকানো

কৃষি শুধু একটি ক্ষেত্র যেখানে জলবায়ু–সহনশীল উৎপাদন ভারতের জি ভি সি সংযোগগুলিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। অন্যান্য প্রধান ভারতীয় কর্পোরেট সংস্থাও—যেমন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ও টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস ইত্যাদি—কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করছে। এই ধরনের উদ্যোগ সামগ্রিক সংযোগ ও উৎপাদন প্রক্রিয়া উন্নত করবে, এবং ছোট সংস্থাগুলির অনুসরণযোগ্য শক্তিশালী উদাহরণ হিসাবে কাজ করবে।

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ–তে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের চাহিদা ৫৯–৯৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলি পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন করা কঠিন করে তুলবে।

কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে সামগ্রিক পরিবর্তন বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলিকে  ভারতে কারখানা স্থাপন এবং/বা সরবরাহকারী বাড়ানোর সঙ্কেত দেবে। অধিকন্তু এটি ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেট–এর মতো উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভারতের বেসরকারি সংস্থাগুলিতে জলবায়ু ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করতে বাধ্য করবে, এবং একই সঙ্গে দেশে শক্তিশালী জি ভি সি সংযোগের জন্য অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে। ভারতের আসন্ন জি২০ প্রেসিডেন্সি হল সরবরাহ শৃঙ্খলকে ডিকার্বনাইজ করা এবং শক্তিশালী টেকসই আর্থিক রূপান্তর কাঠামো গড়ে তোলার জন্য বড় আকারের আলোচনাকে উৎসাহিত করার আরেকটি সুযোগ, যা ভারতের নেট–জিরো রূপান্তরের প্রেরণা হতে পারে। অতএব আগামী বছরগুলিতে ভারতীয় ব্যবসার অবদানগুলি ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতের নেট–জিরো রূপান্তর লক্ষ্যগুলিকে অর্জনযোগ্য করতে সাহায্য করবে৷


[১] গ্লোবাল ভ্যালু চেন (জি ভি সি) হল লিড ফার্ম ও সরবরাহকারীদের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত নেটওয়ার্ক, যা একটি পণ্য বা পরিষেবাকে পরিকল্পনার স্তর থেকে বাজারে নিয়ে আসে।
[২] ফ্যাক্টরি এশিয়া হল এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত উৎপাদন ও সাপ্লাই চেন হাবের নাম।
[3] উপরোক্ত

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.