Author : Sushant Sareen

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 02, 2022 Updated 7 Days ago

ইমরান খানের ক্ষমতা এক অনাস্থা প্রস্তাবের জেরে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ফলে পাকিস্তানে তীব্র বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে।

নিজের গোলোকধাঁধায় ইমরান
নিজের গোলোকধাঁধায় ইমরান

পাকিস্তানে রাজনৈতিক ক্ষমতা যতটা না অ্যাসেম্বলির সংখ্যাতত্ত্ব সংক্রান্ত, তার চেয়ে ঢের বেশি রাজনীতির অঙ্ক সম্বন্ধীয়। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান পাকিস্তানি রাজনীতির এই কঠোর বাস্তব ভুলে গিয়েছিলেন, যখন তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে তাঁর প্রশাসনের প্রতি পাকিস্তানি সেনার সমর্থন অপরিবর্তনীয়। যদিও পাকিস্তানের রাজনীতিতে পাকিস্তানি সেনার উপস্থিতি ধ্রুবসত্য, কিন্তু পাকিস্তানি সেনার মূল্যবোধ তার বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং সংশ্লিষ্ট সময়ে সরকারের চারপাশের পরিস্থিতির ভিত্তিতে বদলাতে থাকে। এই অর্থে, সেনা এমন এক ক্ষমতাশালী মাপকাঠি, যার সমর্থন কখনই সুনিশ্চিত বলে ধরে নেওয়া উচিৎ নয়। ইমরান খান এত দিনে এ কথা বুঝতে পেরেছেন এবং এর ফলে বর্তমানে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী পক্ষের অনাস্থা প্রস্তাবে (এন সি এম) জয়লাভ করার জন্য তিনি অ্যাসেম্বলির অঙ্কে আরও বেশি করে মনোনিবেশ করেছেন। তিনি মনে করেন যে, কোনও প্রকারে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সমর্থ হবেন এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবেন। যদিও পরিবর্তনশীল সমীকরণের কথা মাথায় রাখলে এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, যদি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তাঁর অনুকূল না হয়, তা হলে তাঁর কোনও অঙ্কই কাজে লাগবে না।

সমস্যা এটাই যে, কেউই এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয় কী ভাবে জোট, পাকিস্তান শাসনকারী তেহরিক-এ-ইনসাফ-এর (পি টি আই) অসন্তুষ্ট অংশ এবং বিরোধী পক্ষের বেশ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানি সেনার হস্তক্ষেপ ছাড়া তাঁদের নির্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করবেন।

এখনকার মতো পাকিস্তানি সেনা দৃশ্যত এক নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইমরান প্রশাসনের অধীনে পাকিস্তানি সেনার ‘ওয়ান পেজ’ বা ‘সীমিত ক্ষমতা’ সম্পর্কে আর কোনও উচ্চবাচ্য করা হচ্ছে না। এই নিরপেক্ষতা যদিও রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও ধোঁয়াটে করে তুলেছে। প্রাথমিক ভাবে এ কথা স্পষ্ট যে, এই সমীকরণে সেনা উপস্থিত থাকলেও, তা এখনকার মতো অন্য কোনও পরিবর্তনশীল পক্ষকে প্রভাবিত করবে না। সমস্যা এটাই যে, কেউই এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নয় কী ভাবে জোট, পাকিস্তান শাসনকারী তেহরিক-এ-ইনসাফ-এর (পি টি আই) বিক্ষুব্ধ অংশ এবং বিরোধী পক্ষের বেশ কিছু ব্যক্তি পাকিস্তানি সেনার হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনও ভূমিকা নেবেন। অন্য দিকে বাকি সব কিছু অপরিবর্তিত থাকলে সেনার নিরপেক্ষতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেতে পারে। কারণ ক্ষমতা অর্জন ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রশাসন সেনার সহায়তার উপরে নির্ভরশীল। হয়তো এই কারণেই ইমরান খান পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এবং বলেছেন কেবল মাত্র পশুরাই নিরপেক্ষ হতে পারে

সংখ্যাগরিষ্ঠের খেলা

বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্ট যে, ইমরানের বিরুদ্ধে পরিবর্তনের হাওয়া জোরালো হচ্ছে। মেম্বারস অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র (এম এন এ) হিসেবে পি টি আই-এর মাত্র ১৫৫ জন সদস্য বর্তমান , যা ৩৪২ আসনের অ্যাসেম্বলির সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন থেকে সংখ্যায় ১৭ কম। পাকিস্তানের তিন প্রধান বিরোধী দলের — পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পি এম এল এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পি পি পি) এবং মুত্তাহিদা মজলিশ-এ-আমল (মৌলানা ফজলুর রহমানের জামিয়াত-উলেমা ইসলাম দ্বারা পরিচালিত এম এম এ) একত্রে এম এন এ-র সমসংখ্যক নির্বাচিত সদস্য রয়েছে।

ইমরানের জোটের অংশীদাররাই — পাকিস্তান মুসলিম লিগ কায়েদ-এ-আজম (পি এম এল কিউ), মুত্তাহিদা কৌমি মুভমেন্ট (এম কিউ এম), বালুচিস্তান আওয়ামি পার্টি (বি এ পি), গ্র্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (জি ডি এ) এবং কয়েকটি ছোট গোষ্ঠী ও নির্দল প্রার্থী যারা সকলেই ২০১৮ সালে পাকিস্তানি সেনার নির্দেশে ইমরানকে সমর্থন জুগিয়েছিল — তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতার নেপথ্যে থেকেছে। যদিও এ কথা ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইমরান আগামিদিনে কোনও মতেই সাহায্যের জন্য জোটের শক্তিশালী সদস্যদের উপর নির্ভর করতে পারবেন না।

পি এম এল কিউ (৫) বা এম কিউ এম (৭)-এর কেউই প্রকাশ্যে ইমরানকে সমর্থন জানায়নি এবং এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, উভয় গোষ্ঠীই বিরোধী পক্ষে যোগদান করার জন্য তাঁদের পক্ষে লাভজনক রফা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বি এ পি (৫)-এর সমর্থনও সুনিশ্চিত নয়। এই তিনটি দলই এন সি এম বা নো কনফিডেন্স মোশনের ফলাফল বিরোধী পক্ষের অনুকূলে নিয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি পি টি আই-এর অন্দরে এক বিরাট সংখ্যক এম এন এ, যাঁদের মোট সংখ্যা ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে, শুধু মাত্র ইমরানের উপরে ক্ষুব্ধই নন, তাঁরা এমনটাও মনে করেন যে, ইমরানের সঙ্গে তাঁদের কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। ফলে এটা স্পষ্ট যে, হিসেবের অঙ্ক ইমরানের বিরুদ্ধে যেতে চলেছে। যদিও শেষ মুহূর্তে আরও এক বার পাকিস্তানি সেনা ইমরানের সরকারকে রক্ষা করতে তৎপর হয়, তা হলে হিসেবটা আবারও বদলে যাবে।

ইমরান খান তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন কি না সেই সম্ভাবনার চেয়েও ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, সেই অনিশ্চয়তাই সমীকরণ বা পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে। পাকিস্তান ও তার সেনার সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, যদি ইমরান তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হন, তা হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে তাঁর সব রকম ফ্যাসিবাদী কর্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন, যেমনটা করার হুমকি তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। এই প্রথম নয়, এর আগেও ইমরান তাঁর প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করা, যেমন ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর মতো দুর্নীতিবিরোধী শাখার অপব্যবহার করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো, বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো, গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করা, কেউ তাঁর বিরোধিতা করলেই সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিজস্ব ট্রোল আর্মি লেলিয়ে দেওয়া এবং কঠোর আইন প্রণয়নের মতো পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে চরিত্রের বিদ্বেষমূলক, অপবাদসূচক এবং প্রতিশোধকামী দিকগুলিকে দর্শিয়েছেন। এন সি এম-এর ফাঁড়া কেটে গেলে বা ফলাফল ইমরানের পক্ষে গেলে তিনি যে প্রতিপক্ষের সমূলে বিনাশ করতে উদ্যত হবেন, সে বিষয়ে প্রায় সকলেই ভীত। আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি পাকিস্তানি সেনার উচ্চপদস্থ কর্মীদেরও নিশানা করতে পারেন। ইতিমধ্যেই তিনি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছেন এবং একটি সামরিক অভিযান চলাকালীন খলিফা ওমর যেমন ইসলামি জেনারেল খালিদ বিন ওয়ালিদকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, তেমনই বর্তমান সেনাপ্রধানকে বদল করে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন

পাকিস্তান ও তার সেনার সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, যদি ইমরান তাঁর ক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হন, তা হলে তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকদের বিরুদ্ধে তাঁর সকল প্রকার ফ্যাসিবাদী কর্ম পরিকল্পনার বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবেন, যেমনটা করার হুমকি তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন।

এমনটা শোনা যাচ্ছে যে, ইমরান সত্যিই বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল কমর বাজওয়াকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় পেশওয়ারের কোর কম্যান্ডার প্রাক্তন আই এস আই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফইজ হামিদকে ক্ষমতায় বহাল করে সেনার অভ্যন্তরে এক অভ্যুত্থান ঘটাতে চাইছেন। ইমরান এমনটা এক্ষুনি না করলেও নভেম্বর মাসে বাজওয়ার মেয়াদ শেষ হলে অবশ্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। বিরোধীরা এ কথা জানেন যে, হামিদের অধীনে পাকিস্তানি সেনা ইমরানের ব্যক্তিগত সেনাতে পরিণত হবে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ নির্ধারিত আগামী নির্বাচনে ইমরানকে জেতানোর জন্য এই সেনাকেই সর্বতো ভাবে ব্যবহার করা হবে। এমনকি সেনার অভ্যন্তরেও ইমরানের পাকিস্তানি সেনার রাজনীতিকরণ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে। এটা সব সময়ই একটা লক্ষ্মণরেখা হিসেবে ধরা হয়, যা পেরোনো ঠিক নয়।

ইমরানের যে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্তই সেনাকে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে। যেমনটা তারা ১৯৯৯ সালে মুশাররফকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছিল। সর্বোপরি ইমরানের সেনার রাজনীতিকরণ করার ফলে সেনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার ছাপ এন সি এম-এর ফলাফলে গভীর ভাবে পরিলক্ষিত হবে।

পিঠ বাঁচানোর পরিকল্পনা

কিন্তু ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হলেও তার পরে কী হবে? এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। বর্তমান অ্যাসেম্বলি কি ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে এবং তার মেয়াদ সম্পূর্ণ করবে? না কি এক বা দু’মাসের মধ্যেই নতুন নির্বাচনের কথা ঘোষণা করা হবে? এমনটা শোনা যাচ্ছে যে, প্রতিপক্ষের শীর্ষ নেতারা একটি কর্ম পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করেছেন। কিন্তু সেটা ঠিক কী, তা কেউই জানে না। বিরোধী দলগুলি ইমরানের পতন দেখতে উৎসুক হলেও তারা এ-ও জানে যে, পাকিস্তান বর্তমানে এমন এক গভীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং কৌশলগত দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রিত্বের পদটি একটি কাঁটার মুকুটসম। জনসাধারণের কাছে অত্যন্ত অপ্রিয় বেশ কিছু কঠোরতম সিদ্ধান্ত আগামী কয়েক মাসে গ্রহণ করতে হবে। কোনও রাজনীতিবিদই আগামী নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাইবেন না। তাঁরা চাইবেন এখনকার মতো কোনও অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, যাতে তাঁরা বর্তমান প্রতিবন্ধকতাগুলিকে এড়িয়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া অন্যান্য গতানুগতিক রাজনৈতিক জটিলতাও রয়েছে। পক্ষবদলকারী দল এবং রাজনীতিকরা বিরোধী পক্ষে যোগদান করার বিনিময়ে তাঁদের প্রাপ্য সুনিশ্চিত করতে চান, যাতে এ হেন পদক্ষেপ তাঁদের জন্য লাভজনক হয়। কে কী পাবে এবং লোকচক্ষুর আড়ালে সেই প্রাপ্যের প্রতিশ্রুতির জামিনদার কে হবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এবং ভবিষ্যতে নাগরিক-সামরিক সমীকরণ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে সেনার সঙ্গে বোঝাপড়ার দিকটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

আপাতত, মনে হচ্ছে এন সি এম-এর পরবর্তী সময়ের জন্যই অধিকাংশ প্রশ্ন মুলতুবি রাখা হয়েছে। এই অধ্যায়টি রাজনীতির অঙ্কে পরিবর্তন আনবে কি না এবং তা ইমরান খানকে সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে কি না, অথবা অঙ্কের দাঁড়িপাল্লা তাঁর বিরুদ্ধে ঝুঁকে আছে কি না, সে সবই এন সি এম-এর তারিখ যত এগিয়ে আসবে তত স্পষ্ট হবে। ইমরান খান সম্ভবত জানেন যে, তাঁর খেলা সাঙ্গ হতে চলেছে। তাই তিনি দ্বিমুখী কৌশল অবলম্বন করছেন। প্রথমটি হল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। জনসমাবেশে তাঁর বিষোদগারের মূল লক্ষ্য হল, নিজের এক নিবেদিতপ্রাণ ইসলামি জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তি গড়ে তোলা যার পতনের জন্য দুষ্ট ও ষড়যন্ত্রকারী পশ্চিমি শক্তি, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলানো সেনাবাহিনীই দায়ী। তিনি চান, জনসাধারণ তাঁকে এমন এক দেশপ্রেমিক হিসেবে মনে রাখুক, যিনি পাকিস্তানের স্বার্থে লড়েছিলেন। তিনি যে তাঁর ব্যর্থ প্রশাসন এবং তাঁর ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দ্বারা দেশকে রসাতলে পাঠিয়েছেন, আর ক্রোনি ক্যাপিটালিজমকে উৎসাহ দিয়েছিলেন, সে কথা বলাই বাহুল্য।

পাকিস্তান প্রশাসন ইচ্ছাকৃত ভাবে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা করার পরিকল্পনা করছে যাতে তারা এন সি এম-এ বিপক্ষে মতদান করতে পারে এমন সকল পি টি আই সদস্যকে মতদানের পূর্বেই অযোগ্য বলে ঘোষণা করতে পারে।

দ্বিতীয়টি হল যে, তিনি লড়াই ছাড়া হার মানবেন না। তিনি নিজের প্রতিপক্ষদের পরাজিত করার জন্য যে কোনও সৎ কৌশলের আশ্রয় নেবেন, এমনকি অসৎ কৌশল গ্রহণেও পিছপা হবেন না। তিনি ইতিমধ্যেই ফাঁকা হুমকি দিয়েছেন যে, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে তিনি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন। যদিও তেমনটা কেউ বিশ্বাস করছেন না। কারণ এক বার ক্ষমতাচ্যুত হলে তিনি কিছু বললে বা করলে তাঁকে আটক করা হবে। তা সত্ত্বেও তিনি জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। ইমরান ইতিমধ্যেই অর্থনীতিতে এমন কিছু বিপজ্জনক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা তাঁর উত্তরাধিকারীদের জন্য বিপর্যয়কর হবে। তাঁর নেওয়া কিছু জনপ্রিয় পদক্ষেপের দরুন আই এম এফ-এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা স্থগিত হয়ে গেছে। ই ইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমী দেশগুলির প্রতি ইমরানের বিষোদগার তাঁর উত্তরসূরির পথও কণ্টকিত করে তুলবে। যদিও এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে এন সি এম-এ জয়ী হওয়ার জন্য তিনি যে পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করছেন, তা এমন এক সংঘাতের আবহ তৈরি করছে যা সহজেই গণতন্ত্রের মুখোশও খুলে দিতে পারে।

সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তান প্রশাসন ইচ্ছাকৃত ভাবে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা করার পরিকল্পনা করছে যাতে তারা এন সি এম-এ বিপক্ষে মতদান করতে পারে এমন সকল পি টি আই সদস্যকে মতদানের পূর্বেই অযোগ্য বলে ঘোষণা করতে পারে। অন্তত পক্ষে, তাঁদের ভোট স্পিকার দ্বারা গ্রাহ্য করা হবে না। এই জল সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়াবে। তবে আদালত রায় না দেওয়া পর্যন্ত স্পিকারের রায় বহাল থাকবে। পার্লামেন্টের বাইরে একটি সুবিশাল জনসভা আয়োজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল শুধু মাত্র পি টি আই সদস্যদেরই নয়, বিরোধী দল ও মিত্রদেরও ভয় দেখানো। তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সতর্ক করেছেন যে, এম এন এ-দের পার্লামেন্টে পৌঁছনোর জন্য জনতার মধ্য দিয়েই যেতে হবে এবং মতদানের পরে সেই একই ভিড়ের মধ্য দিয়ে ফিরেও আসতে হবে। এটিকে এম এন এ-দের বিরুদ্ধে হিংসার স্পষ্ট হুমকি ছাড়া আর কী-ই বা মনে করা যেতে পারে?

২৭ মার্চ ইমরান প্রশাসনের জনসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, এন সি এম সম্ভবত ২৮ বা ২৯ মার্চ হতে চলেছে। ইতিমধ্যেই বিরোধীরাও এককাট্টা হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ইতিমধ্যেই বিরোধীরাও এককাট্টা হয়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মওলানা ফজলুর রহমান পি টি আই-কে এন সি এম প্রক্রিয়াটির দখল নেওয়া থেকে রুখতে তাঁর দলকে ইসলামাবাদে একত্র হওয়ার নির্দেশ জারি করেছেন। যে রকমের সংঘাত হতে পারে, তার একটি ছোট নমুনা ১০ মার্চ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিলে যখন ইসলামাবাদ পুলিশ পার্লামেন্টারি অতিথিশালায় অভিযান চালিয়ে কয়েক জন জে ইউ আই এফ এম এন এ-কে গ্রেফতার করে। ক্ষুব্ধ মওলানা তাঁর কর্মীদের পাকিস্তানের সমস্ত সড়ক অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেন। অবশেষে পাকিস্তানি সেনা ব্যাপারটিতে হস্তক্ষেপ করে, গ্রেফতার হওয়া এম এন এ-দের মুক্তি দেয় এবং ফজলুর রহমান তাঁর কর্মীদের অবরোধ তুলে নিতে বলেন। বিরোধীদের মধ্যে এ বিষয়ে সত্যিকারের উদ্বেগ রয়েছে যে, ইমরান খান গোপন কৌশল ব্যবহার করে অবৈধ ভাবে একাধিক এম এন এ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাঁদের গ্রেফতার করতে পারেন এবং তাঁদের এন সি এম-এ মতদানে বাধা দিতে পারেন। যদি এমনটা ঘটে, তা হলে বিপদের সকল সীমা অতিক্রম করে যাবে এবং প্রত্যক্ষ ভাবে হস্তক্ষেপ করা ছাড়া পাকিস্তানি সেনার কাছে আর কোনও উপায় থাকবে না।

উপসংহার

এন সি এম মতদানে এখনও কয়েক দিন বাকি। এই সময়েই ইসলামাবাদে ও আই সি সমাবেশ হতে চলেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, ইমরান খান ৫০ জনেরও বেশি ও আই সি বিদেশমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাজওয়াকে বরখাস্ত করবেন। এত জন বিশিষ্ট বিদেশী ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনার পক্ষে প্রতিক্রিয়া দেওয়া কঠিন হবে। এমনটা না হলেও, এর মধ্যে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে এবং এই সময়ে পাকিস্তান এক উদ্বেগপূর্ণ অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে। চারপাশে বিভিন্ন ধরনের গুজব এবং প্ররোচনামূলক খবর ভেসে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামরিক সংগঠনগুলির মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকদের করা টুইট শুধু মাত্র বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে। কারণ কেউই জানে না, এই সব ব্যক্তিই ক্ষমতায় থাকা সরকারকে বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত করতে চাইছে না কি বাস্তবিক ভাবেই তাঁরা সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন। অন্য দিকে, ইমরানের বিরোধী বলে পরিচিত অন্যান্য ব্যক্তি তাঁর প্রশাসনের অপসারণ শুধু সময়ের অপেক্ষা, এ হেন কাল্পনিক প্রচার চালাচ্ছেন। প্রতি দিন প্রতি ঘণ্টায় পট পরিবর্তন হচ্ছে। এন সি এম-এর ফলাফল যা-ই হোক না কেন, পাকিস্তান আগামীতে এক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে চলেছে, এ কথা স্পষ্ট।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sushant Sareen

Sushant Sareen

Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador   ...

Read More +