Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 03, 2022 Updated 1 Days ago

ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নে সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ায় ভারত এবং ফ্রান্স উভয়ের জন্যই একাধিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হতে পারে।

ভারত কী ভাবে ফ্রান্সের ই ইউ সভাপতিত্বের সর্বাধিক সদ্ব্যবহার করতে পারে?

Source Image: CC-BY-4.0: © European Union 2022 — Source: EP

ভারত কী ভাবে ফ্রান্সের ই ইউ সভাপতিত্বের সর্বাধিক সদ্ব্যবহার করতে পারে?

এমনটা প্রতি বছর ঘটে না যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ই ইউ) ভারতের প্রধান সহযোগী দেশ ফ্রান্স ই ইউ কাউন্সিলে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পায়। প্রকৃত পক্ষে ২০০৮ সালে ফ্রান্স শেষ বার এই দায়িত্ব নিয়েছিল। কাউন্সিলে ই ইউ-র সদস্য দেশগুলির প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রভিত্তিক মন্ত্রীরা একত্র হন। এ বছর ১ জানুয়ারি ফ্রান্স ই ইউ কাউন্সিলের ছয় মাসের পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। ফ্রান্সের এ বারের উচ্চাকাঙক্ষী কর্মসূচির মধ্যে আছে ডিজিটাল জায়ান্টদের নিয়ন্ত্রণ, ইউরোপে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, শেঙ্গেন সংস্কার এবং ন্যাটোর পরিপূরক হিসেবে ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি।

ভারতের জন্য ফ্রান্সের সভাপতিত্ব এর চেয়ে উপযুক্ত সময়ে হতে পারত না। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল ভাবে ঊর্ধ্বমুখী এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি কাব্যিক ভাবে এই সম্পর্কের উপমা দিয়ে বলেছেন, এটি ‘গঙ্গা ও স্যেন নদীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর পথ’।

সারা পৃথিবী কোভিড-১৯-এর তৃতীয় প্রবাহের মধ্য দিয়ে চলেছে এবং একই সঙ্গে মার্কিন-চিন কৌশলগত ক্ষমতার লড়াই, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং একটি শক্তি সঙ্কটের প্রকাশ, মার্কেল যুগের অবসান এবং ই ইউ-এর নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘ভূ-রাজনৈতিক কমিশন’… এই সমস্ত পরিস্থিতির মাঝে ইউরোপীয়দের জন্য ফরাসি সভাপতিত্ব আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে ঘটেছে। এই সভাপতিত্ব ফ্রান্সের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মসূচি নির্ধারণ, এর সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করা, অবশিষ্ট ২৬টি সদস্য দেশের সঙ্গে সহাবস্থানের পথ খুঁজে বার করা এবং কাউন্সিল ও অন্যান্য ই ইউ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ

ভারতের জন্য ফ্রান্সের সভাপতিত্ব এর চেয়ে উপযুক্ত সময়ে হতে পারত না। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল ভাবে ঊর্ধ্বমুখী এবং ফরাসি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি কাব্যিক ভাবে এই সম্পর্কের উপমা দিয়ে বলেছেন, এটি ‘গঙ্গা ও স্যেন নদীর মধ্যে দূরত্ব কমানোর পথ’। এ ছাড়াও ফ্রান্স ইতিমধ্যেই দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন, নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন-সহ একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের অন্যতম পছন্দের অংশীদার; ভারত এবং ফ্রান্সের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সৌর জোট অন্যান্য দেশকে আকৃষ্ট করছে; এবং অতিমারি সত্ত্বেও ২০২১ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ফরাসি প্রেসিডেন্টরা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাঁচ বার প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন যা অন্য যে কোনও দেশের নেতার তুলনায় অনেক বেশি। এই ঘটনা বছরের পর বছর ধরে ভারতের ফ্রান্সকে গুরুত্ব দেওয়াকেই দর্শায়।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এখনও তার ভূখণ্ড থাকার ফলে ফ্রান্স নিজেকে একটি ‘রেসিডেন্ট পাওয়ার’ বলে মনে করে এবং অঞ্চলটিতে তার অন্তর্ভুক্তি, সার্বভৌমত্ব, স্বচ্ছতা এবং নৌচলাচলের স্বাধীনতার সম্মিলিত নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে ভারতের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে উক্ত অঞ্চলে তার সক্রিয়তার ‘একটি প্রধান স্তম্ভ’ বলে মনে করে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-ফ্রান্স অংশীদারিত্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পূর্বের টালমাটালপূর্ণ ই ইউ-ভারত অংশীদারিত্বও সর্বকালীন উচ্চতায় রয়েছে। ২০২১ সালের মে মাসে ই ইউ-ভারত শীর্ষ সম্মেলনটি ২৭ জন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে নিয়ে একটি অনন্য ভাবে অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়, যা আগে শুধু মাত্র আমেরিকার ক্ষেত্রেই করা হয়েছিল।

ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানির মতো ফ্রান্সও ইউনিয়নের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী দেশ হয়ে ওঠে। যদিও কৌশলগত চিন্তাধারার দিক থেকে ফ্রান্স দীর্ঘ দিন ধরে ইউরোপে একটি আদর্শগত ভাবে অগ্রগামী দেশ হিসেবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। বাস্তবে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের ধারণা, যা বর্তমানে নতুন ‘ভূ-রাজনৈতিক’ ই ইউ-এর চালিকাশক্তি, সর্বপ্রথম প্যারিসেই সূচিত হয়েছিল। ফ্রান্সও প্রথম ইউরোপীয় দেশ, যারা ধারণাটি প্রচলিত হওয়ার অনেক আগেই, ২০১৮ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে এবং এটিই একমাত্র ইউরোপীয় মন্ত্রক যেখানে ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা রয়েছে। জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একজোটে ফরাসি দৃষ্টিভঙ্গি ই ইউ স্তরে এই বিষয়ে বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে — ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার জন্য ই ইউ কৌশলে তার চূড়ান্ত পরিণতি, যা ফরাসি সভাপতিত্বে আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহীত হবে।

এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, নতুন কৌশলগত কর্মসূচির ভরকেন্দ্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ফরাসি সভাপতিত্বের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি ইউরোপীয় বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, যে ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ রফতানি এবং শক্তি সম্পদ এই অঞ্চলে সমুদ্রপথের মাধ্যমে পরিবাহিত হয় এবং পরবর্তী কালে বিলম্বিত উপলব্ধি হয় যে সেখানকার ঘটনাবলি সরাসরি ইউরোপ এবং তার স্বার্থকে প্রভাবিত করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে এখনও তার ভূখণ্ড থাকার ফলে ফ্রান্স নিজেকে একটি ‘রেসিডেন্ট পাওয়ার’ বলে মনে করে এবং অঞ্চলটিতে তার অন্তর্ভুক্তি, সার্বভৌমত্ব, স্বচ্ছতা এবং নৌচলাচলের স্বাধীনতার সম্মিলিত নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে ভারতের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে উক্ত অঞ্চলে তার সক্রিয়তার ‘একটি প্রধান স্তম্ভ’ বলে মনে করে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্যারিসে অনুষ্ঠেয় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল সংক্রান্ত মন্ত্রিস্তরের সম্মেলনে — যা যে কোনও ই ইউ কাউন্সিল সভাপতির কার্যকালে প্রথম — ফ্রান্স ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আইনের শাসন বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে অন্যান্য অংশীদার দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

যেমনটা আগেই বলা হয়েছে যে অতিমারির প্রথম দিক থেকেই ভারত ও ইউরোপ উভয়ের বিরুদ্ধে চিনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ই ইউ তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রকাশ করেছিল। চিনের অভিপ্রায়ের পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি চিন সম্পর্কে ইউরোপীয় ধারণার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই কৌশলে চিনের প্রতি একটি ‘বহুমাত্রিক’ এবং ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ মনোভাব প্রদর্শনের কথা বলা হয় এবং অঞ্চলটিতে চিনকে একটি শান্তিপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। একই সঙ্গে ‘যে সব ক্ষেত্রে মৌলিক মতবিরোধ রয়েছে, সেখানে (চিনকে) পিছিয়ে যেতেও’ বলা হয়।

ই ইউ কৌশল, যা জার্মান দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আরও বেশি প্রভাবিত, অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতেই বেশি অগ্রাধিকার দেয়। ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে জার্মানির ভূমিকা, কঠোর নিরাপত্তা বিষয়ে এর সামগ্রিক সংবেদনশীলতা এবং চিনের প্রতি তার মার্কেল-যুগের নরম মনোভাবের উপর ভিত্তি করেই এই অগ্রাধিকার।

অন্য দিকে ভারতকে ‘সমমনস্ক’ অংশীদারদের তালিকাভুক্ত করে ফ্রান্স এই অঞ্চলে ভারতের তাৎপর্যকে স্পষ্টতই স্বীকৃতি দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা টিকাকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং উদীয়মান প্রযুক্তির মতো সাধারণ ক্ষেত্রে কোয়াডের সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়েও জোর দেয়। প্রকৃত পক্ষে ই ইউ-এর ‘গ্লোবাল গেটওয়ে’ পরিকাঠামো উদ্যোগের অংশ হিসেবে — যাকে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে — ভারত এবং জাপান ই ইউ-এর সঙ্গে একটি সংযোগ চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথম দুই অংশীদার দেশ হয়ে উঠেছে। অউকাস কেলেঙ্কারিও —ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডুবোজাহাজ চুক্তি বাতিল করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া-ব্রিটেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ সরবরাহ করার জন্য ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব — সম্ভবত ভারতের সঙ্গে ফরাসি সহযোগিতাকে আরও মজবুত করেছে। যদিও এর ফলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্স-ভারত-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপাক্ষিক চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে (এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সমস্যার সূত্রপাতের পরে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রথম কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে)। সম্প্রতি ২০২১ সালে ই ইউ-ভারত শীর্ষ সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ৫জি সংক্রান্ত গৃহীত চুক্তির পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ই ইউ কৌশল এবং নতুন ডিজিটাল অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে একাধিক সাধারণ ক্ষেত্রে ই ইউ-র আন্তঃসহযোগিতার নমুনা দেখা গেছে।

কিন্তু সাধারণ ই ইউ কৌশল সত্ত্বেও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলিতে ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলির মধ্যে মতানৈক্য অব্যাহত রয়েছে। ই ইউ কৌশল, যা জার্মান দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা আরও বেশি প্রভাবিত, অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতেই বেশি অগ্রাধিকার দেয়। ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হিসেবে জার্মানির ভূমিকা, কঠোর নিরাপত্তা বিষয়ে এর সামগ্রিক সংবেদনশীলতা এবং চিনের প্রতি তার মার্কেল-যুগের নরম মনোভাবের উপর ভিত্তি করেই এই অগ্রাধিকার। অন্য দিকে ফ্রান্স ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে বৃহত্তর ভূমিকা পালনে ইচ্ছুক। ফলে অঞ্চলটিতে তার অগ্রাধিকারগুলিকে সে ভারতের স্বার্থের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে স্থির করতে চায়। যদিও জার্মান কৌশলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনও উল্লেখ পাওয়া না গেলেও ভারত এবং ফ্রান্স উভয় দেশই এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি শক্তিশালী ভূমিকার কথা বিবেচনা করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অর্থাৎ চিনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিরুদ্ধ মনোভাবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভারত প্রকাশ্যে চিনের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে। এর পরিবর্তে ভারত মোটের উপর ইউরোপের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অসংঘাতমূলক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পছন্দ করছে।

এই ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতার কারণে ই ইউ কখনই ভারতের পছন্দের সামরিক অংশীদার হতে পারে না। যদিও প্রযুক্তি এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে, যেখানে এর দক্ষতা রয়েছে, ব্রাসেলস তার প্রভাব ও জোর খাটানোর মতো অনুকূল অবস্থায় রয়েছে। ভারত এবং ইউরোপ চিনের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ এবং অংশীদারিত্বের মজবুতিকরণের মতো সাধারণ লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জনে একজোটে কাজ করতে পারে।

ফ্রান্সের দ্বারা প্রচলিত অনুরূপ একটি ধারণা বর্তমানে ইউরোপে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ‘ইন্দো-প্যাসিফিক সহ সারা বিশ্বে আমাদের স্বার্থ এবং মূল্যবোধ রক্ষার পথ’ হিসেবে অনুরণিত হচ্ছে।

যদিও অতিমারি-সহ অভ্যন্তরীণ এবং ইউরোপীয় বিষয়গুলি, সামনের ফরাসি সাধারণ নির্বাচন এবং ইউক্রেনের জরুরি পরিস্থিতি সম্ভবত ম্যাক্রোঁর মনোযোগের সিংহভাগ জুড়ে থাকবে, ফ্রান্সের সভাপতিত্ব ব্রাসেলস-ভারত শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিময়তা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা যে ব্রাসেলস স্তরে এবং ই ইউ পরিকাঠামোর মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে, তা আসলে সম্প্রতি ভারত এবং ফ্রান্সের বিদেশমন্ত্রী যথাক্রমে জয়শঙ্কর এবং লে দ্রিয়াঁ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন দ্বারা আয়োজিত একটি ভার্চুয়াল ইভেন্টে পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। এ ছাড়াও জার্মান মার্শাল ফান্ডের গবেষক গরিমা মোহন এক বার উল্লেখ করেছেন, ব্রাসেলসে কর্মরত এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল বিপুল সংখ্যক ফরাসি নাগরিক ই ইউ-ভারত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে এটি স্পষ্ট হয় যে, ফরাসি দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়শই ই ইউ স্তরের উর্ধ্বমুখী অবস্থান গ্রহণ করে।

এখানে আর একটি সুবিধা হল, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের উপর ইউরোপের সাম্প্রতিক গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি ভারত খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছে, যা ভারত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই নিজস্ব বিদেশ নীতির সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুশীলন করে আসছে। ভারতের জন্য কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন মার্কিন-সোভিয়েত কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া এবং ঠান্ডা লড়াই চলাকালীন তার বিকল্পগুলিকে বিস্তৃত করার একটি উপায় ছিল। ফ্রান্সের দ্বারা প্রচলিত অনুরূপ একটি ধারণা বর্তমানে ইউরোপে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য ‘ইন্দো-প্যাসিফিক সহ সারা বিশ্বে আমাদের স্বার্থ এবং মূল্যবোধ রক্ষার পথ’ হিসেবে অনুরণিত হচ্ছে। এটি ম্যাক্রোঁ দ্বারা ইউরোপীয় সেনা সৃষ্টির নেপথ্যের কৌশলগত ভিত্তি যা ২০১৭ সালে তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই আলোচিত হয়েছে এবং অউকাস বিতর্কের ফলে এটি আরও জোরালো হয়। এর ফলে ন্যাটো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমবে বলে আশা করা যায়। আমেরিকা-চিন শত্রুতা ভারত এবং ইউরোপের মতো মধ্য শক্তিগুলিকে যে কৌশলগত শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পরিপূরণে এগিয়ে আসতে এবং একে অন্যের সঙ্গে ব্যাপক ভাবে আন্তঃসহযোগিতা গড়ে তুলতে উদ্বুব্ধ করেছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব এবং সংযোগের মতো পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রগুলিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে, ই ইউ স্তরে তার লক্ষ্যমাত্রাগুলি অর্জন করতে ভারতকে ফ্রান্সের সভাপতিত্বের সময়কাল এবং ফ্রান্সের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের ভিত্তিকে কাজে লাগাতে হবে। এবং এর পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিস্থাপকতা, অনেক দিন ধরে স্থগিত থাকা ই ইউ-ভারত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ, আফগানিস্তান পরিস্থিতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনাও জরুরি। একটি প্রারম্ভিক পদক্ষেপ হিসেবে ভারত ইতিমধ্যেই ফ্রান্সকে তার সভাপতিত্বের আওতায় পাকিস্তানকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার উপর জোর দিয়েছে। মার্কেল পরবর্তী যুগে ম্যাক্রোঁ যদি ই ইউ-তে তাঁর বর্ধিত ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গির অনুকূল — যা বৃহত্তর ভাবে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ — বৃহত্তর ফ্রাঙ্কো-জার্মান নিরাপত্তা চুক্তি বহাল করতে পারেন, তা ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে হিতকরই হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.