Expert Speak Terra Nova
Published on Oct 16, 2022 Updated 8 Days ago

জ্বালানির অভাব সংক্রান্ত সঙ্কট প্রণিধানযোগ্য হলেও পশ্চিমী দেশগুলির উচিত নিজেদের অসংযমী আচরণের প্রেক্ষিতে দরিদ্র দেশগুলিতে পর্যায়ক্রমিক ভাবে জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাসের ক্রমাগত আহ্বান পুনরায় খতিয়ে দেখা।

জ্বালানির চড়া দাম: ভর্তুকি এবং সাহায্যের নিরিখে বাকি বিশ্বের পথে হাঁটছে ইউরোপও
জ্বালানির চড়া দাম: ভর্তুকি এবং সাহায্যের নিরিখে বাকি বিশ্বের পথে হাঁটছে ইউরোপও

২০২১ সালের শুরু থেকে অপরিশোধিত তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে, কয়লার দাম বেড়েছে চার গুণ এবং ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সাত গুণেরও বেশি। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাঙ্কের জ্বালানি মূল্য সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৬ শতাংশ এবং অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫০ শতাংশ, যা ১৯৭০-এর দশক থেকে এখনও পর্যন্ত যে কোনও দ্বিবার্ষিক সময়কালে ঘটা সমতুল্য বৃদ্ধির মধ্যে সর্বোচ্চ। বাস্তবিক ভাবেই, কয়লা ও ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে এক সর্বকালীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। এবং উল্লেখযোগ্য ভাবে ২০০৮ সালে তাদের পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ সীমার উপরেই থেকেছে।

২০২২ সালে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অপরিশোধিত তেলের দাম যথাক্রমে ৮১ শতাংশ, ৭৪ শতাংশ (ইউরোপীয়, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাপকাঠির গড় অনুসারে) এবং ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

২০২২ সালে সামগ্রিক ভাবে জ্বালানির মূল্য গড়ে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং অপরিশোধিত তেলের দাম যথাক্রমে ৮১ শতাংশ, ৭৪ শতাংশ (ইউরোপীয়, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাপকাঠির গড় অনুসারে) এবং ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২০২৩ সালে জ্বালানি পণ্যের দাম গড়ে ৪৬ শতাংশ বেশি হওয়ার সম্ভাবনার দরুন জ্বালানির দাম দীর্ঘতর সময়ব্যাপী উচ্চ থাকবে।

স্বল্পমেয়াদি ক্ষেত্রে জ্বালানির চাহিদা অস্থিতিস্থাপক হওয়ার দরুন উচ্চ জ্বালানি মূল্য বিশ্বব্যাপী গৃহস্থালির ক্রয়ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটিয়েছে। গৃহস্থালির ভিত্তিতে এই প্রভাবের তারতম্য ঘটলেও সমাজের দরিদ্রতম অংশের মানুষেরা এর দ্বারা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশ্চাত্যের একাধিক প্রশাসন সমাজে অরক্ষিত সম্প্রদায়ের মানুষদের গ্যাস ও বিদ্যুতের তীব্র মূল্যবৃদ্ধি থেকে সুরক্ষা জোগাতে কর ছাড় এবং মূল্য ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাকি বিশ্বের কাছে উচ্চ জ্বালানি মূল্য কোনও নতুন ব্যাপার নয়, বিশেষত ভারতে যেখানে নাগরিক প্রদত্ত জ্বালানির মূল্য একটি সাধারণ পরিবারের আয়ের অনুপাতে অপেক্ষাকৃত বেশি।

পশ্চিমী ভর্তুকি

পশ্চিমী দেশগুলিতে ‘জ্বালানি দারিদ্র’ বলতে গৃহস্থালির স্বচ্ছলতা বজায় রাখার  অক্ষমতা বোঝায়। ১৯৯১ সালে ব্রিটেন জ্বালানি দরিদ্র গৃহস্থালি রূপে সেই সব গৃহস্থালিকে চিহ্নিত করে, যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ উষ্ণতা বজায় রাখার জন্য জ্বালানি খাতে তাদের মোট উপার্জনের ১০ শতাংশেরও বেশি খরচ করতে হয়। ব্রিটেনের সংজ্ঞার ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উল্লেখ করে যে, তখনই দারিদ্রের সৃষ্টি হয় যখন উপভোক্তার আয়ের একটি বৃহৎ অংশ জ্বালানির খরচ বাবদ ব্যবহৃত হয়, যার ফলে সেই সব মানুষের অন্যান্য খরচ জোগানোর ক্ষমতা ব্যাহত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, জ্বালানি দারিদ্র একটি ব্যাপক সমস্যা। কারণ ৫০-১২৫ মিলিয়ন মানুষ পর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ তাপীয় সুবিধা পাওয়া  থেকে বঞ্চিত।

জ্বালানির দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং একাধিক গৃহস্থালির উপর আসন্ন জ্বালানি সঙ্কট, যা শীতে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, সেই সঙ্কট সমাধানে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ দেশই পরিবারগুলিকে আপৎকালীন উপার্জন সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দেশীয় সংস্থাগুলিকে রাষ্ট্রীয় ত্রাণ প্রদান ও নির্দিষ্ট করদাতাদের কর ছাড়ের সুবিধা প্রদান করেছে। ইউরোপীয় কমিশন (ই সি) সাহায্য ও ভর্তুকি সুপারিশ করে জ্বালানি দারিদ্র্য মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য একটি টুলবক্স প্রকাশ করেছে। এই অর্থ বাকি বিশ্বের দরিদ্র পরিবারগুলির প্রত্যাশিত বার্ষিক গড় আয়ের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার স্বল্প উপার্জনসম্পন্ন গৃহস্থালির জন্য জ্বালানির সহায়তা কর্মসূচি বা লো ইনকাম হোম এনার্জি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (এল আই এইচ ই এ পি) মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পরিবেশে শীতলতা প্রদান-সহ পরিবার ও ব্যক্তিদের গৃহস্থালির জ্বালানির খরচে সাহায্যের উদ্দেশ্যে ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রদান করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার স্বল্প উপার্জনসম্পন্ন গৃহস্থালির জন্য  জ্বালানি সহায়তা কর্মসূচি বা লো ইনকাম হোম এনার্জি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের (এল আই এইচ ই এ পি) মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন পরিবেশে শীতলতা প্রদান-সহ পরিবার ও ব্যক্তিদের গৃহস্থালির জ্বালানির খরচে সাহায্যের উদ্দেশ্যে ৮.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি প্রদান করছে। ব্রিটিশ সরকার ১৫ বিলিয়ন জি বি পি-র একটি সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা প্রায় ২৮ মিলিয়ন পরিবারের প্রত্যেকটিকে ৫৫০ জি বি পি ছাড় প্রদান করে। ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ জ্বালানি গ্রাহকরা জ্বালানি বিল সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের জ্বালানি সংক্রান্ত বিলের খরচে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে ৪০০ জি বি পি অনুদান পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ফ্রান্স উপার্জন এবং পরিবারের আকার অনুসারে যোগ্য পরিবারের জন্য ৪৮ ইউরো থেকে ২৭৭ ইউরোর মধ্যে একটি জ্বালানি চেক প্রদান করেছে। ফ্রান্সও ই ডি এফ-কে বিদ্যুতের পাইকারি দামের বৃদ্ধি এক বছরের জন্য ৪ শতাংশে সীমাবদ্ধ করতে বাধ্য করেছে। চূড়ান্ত বিদ্যুৎ খরচের উপর দেশের গার্হস্থ্য করের পরিমাণও ২২.৫০ ইউরো / এম ডব্লিউ এইচ (মেগাওয়াট ঘণ্টা) থেকে গৃহস্থালির জন্য ১ ইউরো/ এম ডব্লিউ এইচ এবং শিল্প সংস্থাগুলির জন্য ০.৫০ ইউরো/ এম ডব্লিউ এইচ-এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

ইতালি প্রায় ১৭ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের একটি নতুন সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে, যা সংস্থা এবং পরিবারগুলিকে শক্তির ব্যয় বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান দাম থেকে রক্ষা করতে সাহায্য জোগাবে। স্পেন জ্বালানি বিলের উপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে, যেখানে বিদ্যুতের উপর বিদ্যমান কর ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫ শতাংশে আনা হয়েছে। পর্তুগাল এবং স্পেন গ্যাসের দামের উপর এক বছরের জন্য সীমা নির্ধারণ করেছে, যা গড়ে ৫০ ইউরো/ এম ডব্লিউ এইচ-এর চেয়ে কম মূল্যকে সুনিশ্চিত করে।

নেদারল্যান্ডসে যেখানে পরিবারের জন্য গড় বার্ষিক জ্বালানি বিলের পরিমাণ ১২৬৪ ইউরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, সেখানে কম জ্বালানি কর সহ সমস্ত পরিবারের জন্য সহায়তা ব্যবস্থা এবং জ্বালানি বিল সংক্রান্ত করের উপর এককালীন ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এর পাশাপাশি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে পৌরসভার মাধ্যমে অতিরিক্ত ৮০০ ইউরো সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সরকার বছরের শেষ পর্যন্ত জ্বালানির উপর ভ্যাট ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ শতাংশ এবং পেট্রোল ও ডিজেলের উপর শুল্ক ২১ শতাংশ কমিয়েছে।

জার্মানি এ বছর ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দামের সঙ্গে তার নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য মোট ৩০ বিলিয়ন ইউরোর দুটি ত্রাণ প্যাকেজও অনুমোদন করেছে৷

ডেনমার্ক বয়স্কদের জন্য নগদ সাহায্য এবং বিদ্যুতের দামের উপর শুল্ক ছাড়-সহ মোট ৪১৭ মিলিয়ন ইউরোর নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি বিল দ্বারা আক্রান্ত ৪ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে ২৬৯ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের একটি ‘হিট চেক’ প্রদান করা হবে। জার্মানি ২০২৪ সালের মার্চের শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর ভ্যাট ১৯ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ জার্মানি এ বছর ক্রমবর্ধমান জ্বালানির দামের সঙ্গে তার নাগরিকদের সহায়তা করার জন্য মোট ৩০ বিলিয়ন ইউরোর দুটি ত্রাণ প্যাকেজও অনুমোদন করেছে৷ জার্মান সরকার সব করদাতার জন্য এককালীন ৩০০ ইউরোর জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ করেছে এবং দরিদ্র পরিবারগুলি সমপরিমাণ অর্থে বেশি জ্বালানি পাবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশও অনুরূপ সাহায্য, কর ছাড় এবং ভর্তুকি প্রদান করেছে।

বাকি বিশ্বের ভর্তুকি

পশ্চিমের জ্বালানি বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপের ন্যায্যতা হল জ্বালানি সরবরাহে আকস্মিক ব্যাঘাত প্রতিরোধে বাজারের ব্যর্থতা, যা জ্বালানির দামকেই বৃদ্ধি করতে পারে। জ্বালানির দাম অর্থনীতি এবং সমাজের উপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। কারণ সমস্ত পণ্য এবং পরিষেবায় জ্বালানি অপরিহার্য এবং তা প্রতিটি পরিবারের বরাদ্দ খরচের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ভোক্তাদের চাহিদার হ্রাস ঘটাবে, ব্যবসায়ীদের নিয়োগ ও বিনিয়োগে অনাগ্রহী করে তুলবে, যা অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

বাকি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য জ্বালানি দারিদ্র্য বলতে যেখানে আধুনিক জ্বালানির উত্সগুলির লভ্যতার অভাব বোঝায়, সেই প্রেক্ষিতে জ্বালানি ভর্তুকির ন্যায্যতা হল, তা দরিদ্রদের জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করে। যদিও এটি আংশিক সত্য হলেও এর জন্য একটি বৃহত্তর সামাজিক খরচের মূল্য চোকাতে হয়। ভারত এ ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় কেস স্টাডি হয়ে উঠতে পারে, যেখানে বিগত পাঁচ দশক যাবৎ জ্বালানি ভর্তুকি এবং সাহায্য সামাজিক ব্যয়ের একটি অংশ। ভারত অতীতে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি সীমিত করতে, বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য এবং বিদ্যুৎ ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এল পি জি) লভ্যতা সহজ করতে বাজারের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্টকারী হস্তক্ষেপ করেছে। কিন্তু পণ্যভিত্তিক মূল্য ছাড় মূলত পর্যায়ক্রমে হ্রাস করা হয়েছে। বর্তমানে পেট্রোলিয়াম ক্ষেত্রে কোনও নেট ভর্তুকি পরিশোধের সুযোগ নেই। কারণ পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর কর নেওয়ার মাত্রা ব্যাপক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ভারত অতীতে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি সীমিত করতে, বিশেষ করে পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য এবং বিদ্যুৎ ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এল পি জি) লভ্যতা সহজ করতে বাজারের আর্থিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্টকারী হস্তক্ষেপ করেছে।

যদিও রাজনৈতিক দলগুলি আঞ্চলিক বা কেন্দ্রীয় নির্বাচনের ঠিক আগে উজ্জ্বলা যোজনার মতো কর্মসূচির মাধ্যমে বিনামূল্যে বা কম শুল্কে বিদ্যুৎ এবং বিনামূল্যে এল পি জি সংযোগ প্রদান করেছে। ১০৯টি নিম্ন ও মধ্যম উপার্জনকারী দেশে জ্বালানি ভর্তুকি সম্পর্কিত একটি অভিজ্ঞতামূলক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, উচ্চ জ্বালানি ভর্তুকি এবং কম সামাজিক ব্যয় অভিজাত ও মধ্যবিত্ত, দরিদ্র ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সমীকরণের এক ভারসাম্যপূর্ণ ফলাফল। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ এবং এল পি জি সংযোগের মতো দরিদ্রদের জন্য সহায়তা প্রদান ব্যবহারিক দিক থেকে ছোট হলেও তা নির্দিষ্ট তাৎক্ষণিক সুবিধা প্রদানে সক্ষম। এর পাশাপাশি শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করলে সাধারণের জন্য সুফল লাভ অত্যন্ত অনিশ্চিত। ভারতে ধনীদের চেয়ে দরিদ্রের সংখ্যা অনেক বেশি, এবং দরিদ্ররাই রাজনীতিবিদদের অনুকূল নির্বাচনী ফলাফল দিয়ে পুরস্কৃত করেন। উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা জ্বালানির ক্ষেত্রে সহায়তা এবং ভর্তুকিকে স্বাগত জানান। কারণ তাঁরা দরিদ্রদের তুলনায় অনেক বেশি জ্বালানি ব্যবহার করেন এবং ফলস্বরূপ বেশির ভাগ মূল্য ভর্তুকির সুবিধা ভোগ করেন। আরও উল্লেখযোগ্য হল, তাঁরা গরিবদের জন্য কম সামাজিক ব্যয়ের পক্ষপাতী যা অর্থনীতির আর্থিক অবস্থাকে বিনষ্ট করে উচ্চবিত্তদের বিনিয়োগকে বিপন্ন করতে পারে। উপরোল্লিখিত সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় গড়ে জি ডি পি-র (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) ০.৬ পারসেন্টেজ পয়েন্ট কম ছিল যেখানে জ্বালানি ভর্তুকি জি ডি পি-র ১ পারসেন্টেজ পয়েন্টেরও বেশি। সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, দুর্বল দেশীয় প্রতিষ্ঠান, সংকীর্ণ আর্থিক স্থান এবং মোট তেল আমদানিকারকদের উপস্থিতিতে সামাজিক ব্যয়ের পরিমাণ কম হয়। দুর্ভাগ্যবশত ভারতের ক্ষেত্রে এই সব ক’টি কথাই প্রযোজ্য। কিন্তু ভারতের সহায়তা এবং প্রদত্ত ভর্তুকি তাকে উচ্চ বিদ্যুদয়ন হার অর্জন করতে সক্ষম করেছে এবং সমতুল্য মাথা পিছু উপার্জনক্ষম দেশগুলির তুলনায় বায়োমাস থেকে এল পি জি-তে দ্রুত স্থানান্তর করতে সহায়তা করেছে।

দরিদ্র দেশগুলিতে জ্বালানি ভর্তুকির পর্যায়ক্রমিক ভাবে হ্রাস ঘটানোর জন্য পশ্চিমী দেশগুলির অবিরাম আহ্বানের বিষয়টিকে তাদের নিজেদের অসংযমী আচরণের প্রেক্ষিতে পুনরায় খতিয়ে দেখা উচিত। বাকি দেশগুলির জন্য এই ভর্তুকি এবং সাহায্য উন্নয়ন, আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানের সামগ্রিক উন্নতির বিকল্প হতে পারে না।

সূত্র: ব্রুগেল

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Lydia Powell

Lydia Powell

Ms Powell has been with the ORF Centre for Resources Management for over eight years working on policy issues in Energy and Climate Change. Her ...

Read More +
Akhilesh Sati

Akhilesh Sati

Akhilesh Sati is a Programme Manager working under ORFs Energy Initiative for more than fifteen years. With Statistics as academic background his core area of ...

Read More +
Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar Tomar

Vinod Kumar, Assistant Manager, Energy and Climate Change Content Development of the Energy News Monitor Energy and Climate Change. Member of the Energy News Monitor production ...

Read More +