Author : Rumi Aijaz

Expert Speak Urban Futures
Published on Mar 14, 2022 Updated 5 Days ago

ভারত জুড়ে শহরতলি অঞ্চলগুলির (‌পেরি–আরবান এরিয়াজ) দ্রুত নগরায়ণের জন্য প্রয়োজন শহরগুলি যাতে স্থিতিশীল পদ্ধতিতে বিকশিত হয় সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ।

শহরতলির রূপান্তরের পথ
শহরতলির রূপান্তরের পথ

নামটি যেমন ইঙ্গিত করে ঠিক তেমনই পেরি-আরবান বা শহরতলি এলাকা বলতে বোঝায় শহরগুলির পরিধিতে অবস্থিত এলাকা। ভারতের শহরতলিতে বসতি স্থাপনের বিভিন্ন ধরনের কাঠামো পাওয়া যায়, যেমন ছোট গ্রাম, গ্রাম, শহুরে গ্রাম, বস্তি, অননুমোদিত কলোনি এবং সেন্সাস টাউন। এ ছাড়াও, খালি জমির প্রাপ্যতার কারণে শহরতলিতে অনেক পরিকল্পিত হাউজিং কলোনি ও টাউনশিপ তৈরি হয়েছে।

জনসংখ্যা বাড়তে থাকার ফলে বৃহৎ শহরগুলির সংলগ্ন অনেক শহরতলির গ্রামীণ বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। জীবনযাত্রার বেশি খরচ বা বাড়ির অনুপলব্ধতার কারণে শহরে বসবাস করতে অক্ষম মানুষেরা এখানে থাকতে চলে আসেন। এই ভাবে, শহরতলিগুলিতে বসবাস করতে থাকেন কৃষি-ভিত্তিক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত পুরনো অধিবাসীরা এবং সেই সঙ্গে নতুন অভিবাসীরা, যাঁরা কৃষি বাদে অন্য কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত।

এই ভাবে শহরতলির রূপান্তর ঘটতে থাকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভূমি ব্যবহার ও পেশাগত প্রকরণের পরিবর্তন, কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস ও নির্মিত কাঠামোর (আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং শিল্প) বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে।

এই রূপান্তরে শহরতলির অনেক অধিবাসীই উপকৃত হন। এতে জ্ঞান ও ভাবনাচিন্তার আদানপ্রদান ঘটে। আয়ের নতুন নতুন উৎস খুলে যায়। তবে এর বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও দেখা যায়। শহরতলি এলাকায় যে সব মৌলিক সমস্যা দেখা যায়, এই নিবন্ধে তার আলোচনার পাশাপাশি সেগুলি মোকাবিলার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

এটা বলা যেতে পারে যে যখন একটি বাস্তুতন্ত্রের বহন ক্ষমতা খুব বেশি রকম চাপের মধ্যে পড়ে যায়, তখন তার ক্ষতি হবেই। ভারতের বেশ কয়েকটি শহরতলি অঞ্চলে ঠিক তা–ই ঘটছে। নগরায়ণের ফলে এই অঞ্চলগুলি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছে।

প্রথম সমস্যাটি হল ভূমি ব্যবহারের নির্বিচার পরিবর্তন। উন্মুক্ত স্থান, সবুজ এলাকা ও কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে কাঠামো নির্মাণ ও অ-কৃষি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। পরিবর্তনগুলি কৃষক সম্প্রদায়ের জীবন ও জীবিকাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করছে, যাঁদের শেষ পর্যন্ত অ-কৃষি ক্ষেত্রে কাজ খুঁজতে হচ্ছে। হুবলি-ধারওয়াড়, জম্মু ও পশ্চিমবঙ্গের সেন্সাস টাউনের কেস স্টাডি এই সমস্যার উপর আলোকপাত করেছে।

দ্বিতীয় সমস্যা হল অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়নের ঘটনা। চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে নির্মিত কাঠামোর এলোমেলো বৃদ্ধি হয়েছে। অনেক ভবনই নিরাপত্তার নিয়ম মানছে না। তার উপর বেসরকারি নির্মাতাদের শহরতলিগুলি দখলদারির উদাহরণ রয়েছে। তাঁরা গ্রামবাসীদের আকর্ষণীয় দাম দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাদের কৃষি জমি বিক্রি করতে রাজি করান, এবং তারপরে জমির দাম বেড়ে গেলে অবৈধ ভাবে তা ভাগ করে করে বিক্রি করে দেন। এই ঘটনা হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ের শহরতলিতে দেখা গিয়েছে, যেখানে গ্রামবাসীরা রিয়েল এস্টেট দালালদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের জমি হারিয়েছেন।

শহরতলিতে অনানুষ্ঠানিক/অপরিকল্পিত কাঠামোর, যেমন বস্তি ও অননুমোদিত কলোনির, সংখ্যাবৃদ্ধি হল তৃতীয় সমস্যা। এগুলো গড়ে ওঠে পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা বা কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি। এখানে বসবাসকারী মানুষ পরিকল্পিত এলাকায় বাড়ি কিনতে বা ভাড়া নিতে পারেন না। এদের অনেকেই পাশের পরিকল্পিত কলোনিগুলির বাসিন্দাদের গৃহস্থালির কাজ করেন, কিন্তু তাঁদের নিজেদের জীবনযাত্রার অবস্থা শোচনীয়। জয়পুর ও ফরিদাবাদে এই ধরনের ঘটনার উদাহরণ রয়েছে।

উপরোক্ত উদ্বেগজনক বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত হল জীবনযাত্রার নিম্নমান। অবৈধ হওয়ায় বস্তি ও অননুমোদিত উপনিবেশগুলি জল ও স্যানিটেশনের মতো আনুষ্ঠানিক পরিষেবা পায় না। এ কারণে মানুষ তাঁদের চাহিদা মেটাতে অবৈধ ভাবে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করেন। জলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুরনো মানুষের প্রয়োজন, তাদের ফসল ও গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্য সমস্যাটি ড্রেনেজ–এর। যেখানে কাঠামোর অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ চলছে, সেখানে জল নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা করা হয় না। এর ফলে জল জমতে থাকে, বিশেষ করে বর্ষাকালে। এলাকাগুলো তখন মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়, এবং সেই কারণে মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্জ্য নিষ্কাশনও অনুচিত ভাবে হয়। কোনও সংগ্রহ পরিষেবা না–থাকায় মানুষ কৃষিক্ষেত্রের সীমানায় আবর্জনা ফেলে দেন।

আরেকটি বিষয় হল নারীদের নিরাপত্তা। ঘনঘন হয়রানির ঘটনাগুলি তাঁদের শহুরে জীবনে অবদান রাখার ক্ষমতা হ্রাস করে, এবং তাঁদের জন্য উপলব্ধ সুযোগগুলিকে সীমিত করে দেয়।

তারপরে আছে মানুষের বাস্তুচ্যুতির উদাহরণ। মাঝে মাঝে আঞ্চলিক সড়ক/রেল করিডরের মতো সরকারি পরিকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ে বস্তি ও অননুমোদিত কলোনিতে বসবাসকারী তথাকথিত ‘‌অননুমোদিত দখলদারদের’‌ উচ্ছেদ করা হয়। দিল্লির কাছাকাছি গুরুগ্রামে, যেখানে বাসিন্দারা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, এমন ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই নতুন জায়গায় পুনর্বাসিত হয়ে অসন্তুষ্ট। অন্যান্য অনেক ঘটনায় স্থানীয় মানুষ, যার মধ্যে ক্ষুদ্র কৃষক/ভূমিহীন শ্রমিকেরা রয়েছেন, শহরের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের কারণে তাঁদের জীবিকার ক্ষতি হয়েছে।

ভাল ও নির্ভরযোগ্য গণ–পরিবহণ পরিষেবা বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সুযোগও সমান গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখানকার মানুষেরা শহরের বাইরে বাস করায় অনেক সময়েই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ঠিকমতো পান না। এর ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকানা বাড়ে। সমস্যাটি পরিকল্পিত আবাসনে ও কর্মক্ষেত্রে চোখে পড়ে, যেখানে প্রত্যেক কর্মজীবী ব্যক্তির কমপক্ষে একটি মোটরগাড়ি থাকে। তারপর, শহরতলি এলাকাটি যদি দুটি শহরের মাঝামাঝি অবস্থিত হয়, যেমন দিল্লি ও গুরুগ্রামের মাঝখানে, তা হলে উভয় দিকে যাতায়াতকারী মোটরচালকরা শহরতলির রাস্তাগুলিকে শর্ট কাট হিসেবে ব্যবহার করেন, এবং তার ফলে ভয়ঙ্কর যানজট ও বায়ুদূষণ ঘটে৷

সরকার বিভিন্ন স্তরে শহরতলির সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দিল্লিতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ল্যান্ড পুলিং নীতির লক্ষ্য শহরতলিতে পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আঞ্চলিক পর্যায়ে, কিছু মেট্রোপলিটন অঞ্চল শহরতলির জন্য স্থানভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

রাজ্যগুলির মধ্যে উত্তরাখণ্ড সরকার বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় শহরতলির বাসিন্দাদের জলের সংস্থান উন্নত করার জন্য একটি জল সরবরাহ কর্মসূচি চালু করেছে। দেরাদুন, রুরকি, হরিদ্বার, হলদোয়ানি ইত্যাদির শহরতলিতে প্রকল্পগুলি শুরু করা হয়েছে৷ হরিয়ানায় সরকার আশপাশের শহরের বাসিন্দাদের তাজা শাকসবজি, ফল, দুধ ও মাছের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের জন্য শহরতলিতে চাষের একটি ধারণা চালু করার চেষ্টা করছে৷ এ জন্য রাশিয়ার সরকার হরিয়ানার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে।

জাতীয় স্তরে, সংবিধানের (৭৪তম সংশোধনী আইন) অধীনে তৈরি মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং কমিটি (‌এমপিসি)–র পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থের বিষয়গুলি দেখার কথা, যার মধ্যে শহরতলি–সহ মেট্রোপলিটন এলাকার সমন্বিত স্থানিক পরিকল্পনাও আছে।

তা ছাড়া আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রক রাজ্য সরকারগুলিকে সেন্সাস শহরগুলিতে পৌরসভা গঠনের জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছে। ভাল প্রশাসন নিশ্চিত করার জন্য এগুলি বর্তমানে গ্রামীণ শাসনব্যবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়৷ ২০১১ সালে প্রায় ৪,০০০টি সেন্সাস টাউন ছিল, যেখানে ৫ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ বা ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ বাস করতেন।

এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রক শহরগুলিতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভাল করতে শহরতলিতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই বিষয়টি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।

জাতীয় গ্রামীণ মিশনের অধীনে, ছত্তিশগড়ের শহরতলিগুলিতে তাঁত, মৌমাছি পালন, হাঁস-মুরগি/শুয়োর পালনের মতো কার্যকলাপের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়িত করা হয়েছে। এই বিষয়টি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে।

যে সব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন

ভারতের দ্রুত নগরায়ণ এবং শহরগুলিতে জমির অভাবের কারণে শহরতলির উপর চাপ বাড়তেই থাকবে। অনেক শহরতলির দৃশ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলি আইন, পরিকল্পনা ও শাসনের ঘাটতির একটি ইঙ্গিত। কাজেই শহরতলির ঐতিহ্যবাহী চরিত্রকে রক্ষা করার জন্য এবং সুশৃঙ্খল ভাবে ভবিষ্যৎ প্রসারের গতিপথ নির্দেশনার জন্য প্রয়াস আবশ্যক। এখনকার অবস্থার উন্নতির জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

• স্থানীয়/আঞ্চলিক/রাজ্য/জাতীয় স্তরে এখনকার সংস্কার–উদ্যোগগুলিকে বড় করা উচিত।
• গ্রাম-শহর সহযোগিতার সম্ভাবনা বা অংশীদারির পথ খোঁজা উচিত।
• বিধিবদ্ধ অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত এবং তা শহরতলি এলাকায় দক্ষ ভাবে বাস্তবায়িত করা উচিত।
• শহরগুলির স্থিতিস্থাপকতায় শহরতলির অধরা অবদান, বিশেষ করে পরিবেশগত ভূমিকা, অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত।
• শহরতলির নারীদের জন্য কৃষি–বহির্ভূত কর্মসংস্থানের সুযোগ ভাল করা উচিত; লিঙ্গ-সংবেদনশীল হস্তক্ষেপ, যেমন ডার্ক স্পট চিহ্নিত করা, নিরাপত্তা অডিট, সচেতনতা কর্মসূচি চালু করা উচিত।
• শহরতলিতে সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী কারণগুলির, বা মূল কারণগুলির, সমাধান করা উচিত। এই কারণগুলি শহরতলির আঞ্চলিক পরিধি, ভূমি পর্যবেক্ষণ, বলবৎকরণ, তথ্য, ভূমি ব্যবহারের মানচিত্র, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং উপ-আইন, তহবিল ও প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.