Author : Akanksha Singh

Expert Speak Young Voices
Published on Sep 29, 2022 Updated 5 Days ago

হাইতি বর্তমানে তার ইতিহাসের তীব্রতম সঙ্কটগুলির একটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই সময়ে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর হস্তক্ষেপ।

হাইতি: সঙ্কটের আবর্তে
হাইতি: সঙ্কটের আবর্তে

এক বছর আগে, ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট ৭.২ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর থেকে হাইতি এক তীব্র ক্ষুধা এবং নিরাপত্তা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছে। সে দেশে প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হাইতিতে মুদ্রাস্ফীতির হার ২৬ শতাংশ ছুঁয়েছে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দরুন খাদ্যের মূল্য দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অর্থনৈতিক দুর্দশার পাশাপাশি ২০২১ সালের জুন মাস থেকে দেশটি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের সাক্ষী থেকেছে যার প্রভাব পড়েছে দেশের রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও। হাইতির জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ত্রাস ও আতঙ্ক  ছড়িয়ে পড়েছে।

২০১৮ সালে হাইতির সরকার ঘোষণা করে যে, তারা আস্তে আস্তে সে দেশে জ্বালানি ভর্তুকি প্রদান বন্ধ করবে। সেই সময়ে এই ঘোষণার ফলে ব্যাপক নাগরিক বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ২০১৯ সালে এই বিক্ষোভের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ২০২১ সালে জঁ-শার্ল মসে-র সরকার এবং তাঁর প্রস্তাবিত সাংবিধানিক গণভোটের বিরুদ্ধে তা তীব্রতর হয়ে ওঠে। পুলিশ অত্যধিক বলপ্রয়োগ করে এই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এই রাজনৈতিক চাপানউতোরের ফলস্বরূপ কয়েক জন সশস্ত্র মানুষ পোর্ট-অ-প্রিন্সে প্রেসিডেন্ট মসে-র ব্যক্তিগত বাসভবনে হামলা চালায়, প্রেসিডেন্টকে খুন করে এবং তাঁর স্ত্রী আহত হন। এই ঘটনার মাত্র পাঁচ সপ্তাহ পরে ভয়ঙ্কর এক ভূমিকম্পে হাইতির ২০০০ জনেরও বেশি নাগরিকের মৃত্যু হয় এবং দেশটির কিছু অঞ্চল সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সে দেশে খারাপ প্রশাসন, নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানির ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ প্রকাশ্য বিক্ষোভের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউনাইটেড নেশনস অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্স-এর (ও সি এইচ এ) অনুমান অনুযায়ী, দেশের রাজধানীর এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জায়গা বর্তমানে বিভিন্ন সশস্ত্র দলের আওতায় রয়েছে। সশস্ত্র দলগুলির হিংসার ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রেসিডেন্টের হত্যার মাধ্যমে এবং সাম্প্রতিক অতীতে এই হিংসা বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, খাদ্য, জ্বালানি, নিরাপত্তা-সহ পরিবহণ পথগুলিতেও।

সশস্ত্র দলগুলির হিংসার ঘটনার সূত্রপাত হয় প্রেসিডেন্টের হত্যার মাধ্যমে এবং সাম্প্রতিক অতীতে এই হিংসা বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, খাদ্য, জ্বালানি, নিরাপত্তা-সহ পরিবহণ পথগুলিতেও।

হাইতি এক বিপর্যয়প্রবণ দেশ এবং দেশটি ২০১০ সালে এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প, ২০১৬ সালে একটি হারিকেন বা সামুদ্রিক ঝড় এবং ২০২১ সালে আরও একটি ভূমিকম্পের কবলে পড়ে। দেশটির কৃষি ক্ষেত্রটিও ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে মোট খাদ্যের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ খাদ্যের জন্য হাইতি আমদানির উপরে নির্ভরশীল। ১৯৮০-র দশকে হাইতিতে উৎপাদিত চালের শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা হয়, যা দেশের কৃষকদের সর্বস্বান্ত করে দেয়। এর পাশাপাশি হাইতি তার ইতিহাসব্যাপী সশস্ত্র দলগুলির অবিরাম হিংসার সাক্ষী থেকেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানির মূল্য প্রায় আকাশছোঁয়া, সেখানে হাইতিতে অর্থনৈতিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং সরকারের তরফে জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশে জ্বালানির মূল্যকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

হাইতির সমস্যাগুলিকে প্রধানত তিনটি বৃহত্তর ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, বর্তমান সরকার সংবিধান-বহির্ভূত ভাবে এক নিষ্ক্রিয় পার্লামেন্ট এবং গুটিকয়েক কার্যকর সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চলছে। দ্বিতীয়ত, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ রাজনৈতিক সংযোগসম্পন্ন দুষ্কৃতি দলগুলির নিয়ন্ত্রণপরবশ হয়ে বেঁচে আছেন। ফলে দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কার্যত প্রায় নেই বললেই চলে। সর্বোপরি, দেশটি মারাত্মক অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পোর্ট-অ-প্রিন্সের চিতে সোলেইতে পাঁচ বছরের কমবয়সি প্রতি পাঁচ জন শিশুর মধ্যে এক জন তীব্র অপুষ্টির শিকার। উল্লিখিত সমস্যাগুলির যে কোনও একটিই কোনও দেশের জন্য ভয়ঙ্কর। সব ক’টি সমস্যার একই সঙ্গে প্রকট হয়ে ওঠা দেশটিকে তার ইতিহাসের এক অন্যতম তীব্র সঙ্কটময় দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস (ও এ এস) সম্প্রতি একটি বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে যে, হাইতির বর্তমান সঙ্কটের জন্য দায়ী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তারা বলেছে, ‘বিগত ২০ বছর যাবৎ হাইতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপস্থিতি যে কোনও আন্তর্জাতিক আন্তঃসহযোগিতার কাঠামোর অধীনে ঘটা সবচেয়ে খারাপ বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতার স্পষ্টতম উদাহরণ।’ হাইতির বর্তমান সঙ্কটের নেপথ্যে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির ভূমিকা তুলে ধরা সাধুবাদযোগ্য হলেও এই সমস্যার সমাধান কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ই করতে পারবে, সংগঠনটির এ হেন দাবি সমস্যাজনক। তাদের তরফে এ-ও বলা হয়েছে যে, ‘কোর গ্রুপ’ বা হাইতির স্বনিযুক্ত অভিভাবক গোষ্ঠীটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, স্পেন, ব্রাজিল, জার্মানি, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং ও এ এস-এর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত। তাই তাঁদের উচিত হাইতিকে তার ঋণ পরিশোধে এবং বর্তমান সঙ্কট থেকে উদ্ধার করার জন্য সম্পদের জোগান দেওয়া।

দেশটির কৃষি ক্ষেত্রটিও ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে মোট খাদ্যের চাহিদার ৫০ শতাংশেরও বেশি পরিমাণ খাদ্যের জন্য হাইতি আমদানির উপরে নির্ভরশীল।

কোর গ্রুপটি দেশটিকে তার বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারবে, এমনটা আশা করা সমীচীন হবে না। কারণ এই গোষ্ঠীটি বারবার সারা বিশ্ব জুড়ে অপরাধী মনোভাব সম্পন্ন দলগুলির মুখাপেক্ষী হয়েছে – যাদের মধ্যেই অনেকেই হাইতির নাগরিক – এই আশায় যে, তারা সঙ্কট-বিধ্বস্ত দেশটিকে স্থিতিশীলতা প্রদান করবে। কোর গ্রুপের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হাইতির অপরাধী দলগুলি শুধুই দুর্নীতি, অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক হিংসার ঘটনা বৃদ্ধি করেছে এবং সশস্ত্র দলগুলির দ্বারা ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন এবং রাহাজানির ঘটনা হাইতির সাধারণ মানুষের জীবনকে জর্জরিত করেছে। এখানেই শেষ নয়, দেশটিতে বর্তমানে এমন কোনও কার্যকর বিচারব্যবস্থা নেই যা এই গুণ্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলাগুলির বিচার চালাতে পারে। একই সঙ্গে হাইতির কারাগারগুলিও ইতিমধ্যেই জনাকীর্ণ। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই হাইতির শিক্ষিত নাগরিকদের সামনে একমাত্র সম্ভাব্য পথ এবং অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজছেন। যদিও বাইডেন প্রশাসন হাইতির নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে।

হাইতির বিশেষ প্রতিনিধি স্বরূপ ইউ এন ইন্টিগ্রেটেড অফিস সশস্ত্র দলগুলির হিংসা, দুর্নীতি এবং শাস্তি থেকে রেহাই, বিচারব্যবস্থার সশক্তিকরণ এবং অর্থনীতির স্থিতিশীল সংস্কারের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হাইতির রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিসরের এমন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে যে, অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক যে কোনও রকমের অংশীদারদের কাছেই – ব্যর্থতার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও – বাহ্যিক সহায়তা এবং অভিভাবকত্ব ছাড়া আগামীর পথ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য বলে মনে হয়। হাইতির বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতার কথা মাথায় রাখলে এ কথা বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। হাইতির ২৬০০০ নাগরিককে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত এবং হাইতিতে বেআইনি অস্ত্রের চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কোনও সমাধানসূত্র ছাড়াই অস্পষ্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে ও এ এস-এর নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকার প্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশটির আশা করার মতো বিশেষ কিছু নেই। ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিল সম্প্রতি হাইতিতে ইউ এন ইন্টিগ্রেটেড অফিসের কার্যকাল এক বছর বৃদ্ধি করেছে। কাগজে-কলমে এই পদক্ষেপ সদর্থক মনে হলেও বাস্তবে এর প্রভাব নগণ্য বললেই চলে। কূটনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবিলম্বে ‘হাইতি পরিচালিত সমাধান’-এর পন্থা পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত। হাইতির বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সঙ্কটজনক এবং সঙ্কট-জর্জরিত দেশটির অবস্থা খারাপতর হয়ে ওঠা থেকে রোধ করতে বাস্তবিক আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

অভ্যন্তরীণ বা বৈদেশিক যে কোনও রকমের অংশীদারদের কাছেই – ব্যর্থতার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও – বাহ্যিক সহায়তা এবং অভিভাবকত্ব ছাড়া আগামীর পথ খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য বলে মনে হয়।

হাইতির সঙ্কট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে এবং সঙ্কটের সমাধানসূত্র খুঁজে বের করার নিরিখে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল দেশটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা খতিয়ে দেখা। একই সঙ্গে গত এক দশকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি আর্থিক সহায়তা সত্ত্বেও দেশটি কেন রাজনৈতিক ভাবে অস্থিতিশীল, সে কথা বোঝার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশক যাবৎ ফ্রান্সের আওতা থেকে দেশটির স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে এবং কখনও কখনও হুমকির মাধ্যমে কূটনীতি পরিচালনার জন্য সে দেশের ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়ে হাইতিতে একটি নতুন প্রাদেশিক সরকার গঠনের জন্য নেতাদের একটি তৃণমূল স্তরীয় কমিশনকে সমর্থন জোগানো, যা দেশটির মজ্জাগত অস্থিতিশীলতা  দূরীকরণে প্রথম পদক্ষেপ হয়ে উঠবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.