Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 07, 2022 Updated 4 Days ago

শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলায়ে সাধারণ ভাবে দেখা যায় গ্লোবাল নর্থ বা পৃথিবীর সমৃদ্ধ দেশগুলির প্রবণতা হল নিজের দেশে কম সংখ্যক শরণার্থীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা;‌ পরিবর্তে তারা বরং গ্লোবাল সাউথ বা অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিকে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রবণতাটি এখন বিপরীত হয়ে গিয়েছে। গ্লোবাল নর্থ–এর সমৃদ্ধ দেশগুলি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে।

ইউক্রেনীয় শরণার্থী সঙ্কটে সামনে আসছে ‘‌ইউরোপীয় সত্তা’‌

Source Image: Dimitar Dilkoff — AFP via Getty

ইউক্রেনীয় শরণার্থী সঙ্কটে সামনে আসছে ‘‌ইউরোপীয় সত্তা’‌

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণামস্বরূপ তৈরি হওয়া শরণার্থীদের অবস্থা সম্পর্কিত ১৯৫১ সালের কনভেনশনটির ৭০তম বছর সম্প্রতি পূর্ণ হয়েছে, আর ঠিক সেই সময়েই ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ায় ইউরোপ আবার একটি গুরুতর শরণার্থী সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে দেশটির প্রধান শহরগুলি দখল করতে রাশিয়া মরিয়া। এর ফলে চলতি দশকের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সনিষ্ক্রমণ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চেয়েছিলেন নেটোর উপস্থিতিকে ইউক্রেনের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে — তা সে রুশ সীমান্তের কাছাকাছি সামরিক পরিকাঠামোর আকারেই হোক বা সামরিক বাহিনীর সমাবেশ। আর সেই কারণেই তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযানগুলির একটি শুরু করলেন।

ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে দেশটির প্রধান শহরগুলি দখল করতে রাশিয়া মরিয়া। এর ফলে চলতি দশকের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সনিষ্ক্রমণ শুরু হয়েছে।

গত সপ্তাহ থেকে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শরণার্থী ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিতে পৌঁছে গিয়েছেন, এবং আরও অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিক এখনও চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, মলডোভা, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার মতো মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে আশ্রয় নিতে চাইছেন।

নিরাপদ ভূমি হিসেবে পোল্যান্ড

বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে অন্য ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের তুলনায় পোল্যান্ডেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ইউক্রেনীয় শরণার্থী এসেছেন। ইউক্রেনের শরণার্থীরা মূলত আটটি সীমান্ত পয়েন্টের মাধ্যমে পোল্যান্ডে ঢুকছেন। এর মধ্যে করচোভা-ক্রাকিভেটস ও মেডিকার মতো প্রাইমারি বর্ডার পয়েন্টগুলি রয়েছে যেখানে আগনিত মহিলা ও শিশু শরণার্থীরা আসহায় ভাবে জীবন বাঁচানোর তাগিদে সাহায্য চাইছেন।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে পোলিশ কর্তৃপক্ষ সীমান্তের বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। যাঁদের কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই তাঁদেরও সেফ প্যাসেজ মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে পোলিশ সরকারের এই পদক্ষেপটি আন্যদিকে আবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ ইউক্রেনে সম্প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিড সংক্রমণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে সে দেশে যত মানুষের কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয়েছে তাঁদের ৬০% পজিটিভ ছিলেন।

তবে পোলিশ সরকারের এই পদক্ষেপটি আন্যদিকে আবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ ইউক্রেনে সম্প্রতি ফেব্রুয়ারি মাসে কোভিড সংক্রমণ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল।

শরণার্থীদের সাহায্য করতে পোলিশ নাগরিকেরা ও রেড ক্রসের মতো সংস্থাগুলি ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে অবস্থিত রেড ক্রস কেন্দ্রগুলিতে গরম কাপড়, কম্বল ও জল–সহ নানা ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ করছেন। পোলিশ রেড ক্রস ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য আবার তহবিল তৈরির কাজে ব্যাস্ত।

রোমানিয়ার নীরব অবস্থান

সাম্প্রতিক রুশ আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭,০০০ ইউক্রেনীয় রোমানিয়াতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে রোমানিয়ার সরকারের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে। সিরেট সীমান্তে বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশু শরণার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মত। প্রেসিডেন্টের ডিক্রি অনুসরণ করে ইউক্রেনীয় সরকার ১৮–৬০ বছর বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলক ভাবে সেনাদলে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ইউক্রেনীয় পুরুষ শরণার্থীদের একটি বড় অংশ তাঁদের পরিবারের সঙ্গে সীমান্ত পার হতে পারেননি। ফলে পরিবারের প্রিয়জন দের ছেড়ে দিতে হয়েছে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে।

রোমানিয়ার সরকার সাইবার সিকিউরিটি ব্যাকিং–এর মতো সাহায্য দিয়ে ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে সংহতি দেখালেও সে দেশের শরণার্থীদের নেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রথমে খুব একটা সক্রিয় ছিল না। বরং রোমানিয়ার নাগরিকেরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের আশ্রয় দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। নাগরিকেরা ‘‌ইউনিটি পেন্ট্রু ইউক্রেনা’‌ (বা ইউক্রেনের জন্য ঐক্যবদ্ধ) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ গঠন করেছেন, এবং ইতিমধ্যেই ২৪২,০০০–এরও বেশি মানুষ এর সদস্য হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে আছেন স্বেচ্ছাসেবক, দাতা এবং ইউক্রেন থেকে সাহায্যের সন্ধানে পালিয়ে আসা মানুষজন।

রোমানিয়ার নাগরিকেরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের আশ্রয় দিতে সচেষ্ট হয়েছেন।

শরণার্থীদের জন্য স্লোভাকদের সাহায্য

ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত (৫৩৫ কিমি) এবং ইউক্রেন-রোমানিয়া (৬০০ কিমি) সীমান্তের তুলনায় অনেক ছোট স্লোভাকিয়া-ইউক্রেন সীমান্ত (৯৭ কিমি)। তা সত্ত্বেও এই দেশটি ইউক্রেন থেকে বিপুল শরণার্থী প্রবাহের সাক্ষী হয়েছে, কারণ স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যাতায়াত করতে ভিসা লাগে না, এবং এই ব্যবস্থায় একজন ৯০ দিন পর্যন্ত অন্য দেশে বসবাস করার অনুমতি পেতে পারেন। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ২৬,০০০ ইউক্রেনীয় নাগরিক পালিয়ে এসে স্লোভাকিয়ায় ঢুকেছেন।

স্লোভাকিয়ায় ইউক্রেনীয়দের ঢুকতে হলে অবশ্য বৈধ বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট লাগে। তবে স্লোভাকিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট ছাড়াই ইউক্রেনীয় নাগরিকদের এন্ট্রি পয়েন্টে আসার অনুমতি দিয়েছে, এবং তারপর তাঁদের জাতীয় ইউক্রেনীয় পাসপোর্টের মতো ব্যক্তিগত নথিপত্রের মাধ্যমে ব্যক্তিগত মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সীমান্ত পয়েন্টগুলি প্রাথমিক ভাবে মহিলা, বাচ্ছা এবং একদম ছোট শিশুরা অতিক্রম করছেন, এবং আনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাছে এই অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্ম শংসাপত্র বা টিকা শংসাপত্রের মতো বৈধ নথি নেই৷ জীবন বাঁচানর তাগিদে এই আসহায় মানুষরা যখন মরিয়া হয়ে ঘর ছাড়ছেন তখন অনেক সময় এই সব নথি সাথে রাখার কথা মনে রাখার মত পরিস্থিতি ও থাকে না।

স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রতিটি সীমান্ত ক্রসিং খোলা থাকলেও সিয়ের্না নাড টিস্যো রেলওয়ে ক্রসিং অবশ্য বন্ধ রয়েছে।

এমতাবস্থায় স্লোভাক কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে, এবং ইউক্রেনীয় প্রাপ্তবয়স্কদের আশ্রয়দাতা সমস্ত স্লোভাক পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি মাসে ২০০ ইউরো অনুদান দেওয়ার কথা বলেছে। এ ছাড়াও স্লোভাকিয়ার অর্থ মন্ত্রক শিশু শরণার্থীদের থাকার জন্য প্রতি মাসে ১০০ ইউরো অনুদান দেওয়ার নিয়েছে। স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রতিটি সীমান্ত ক্রসিং খোলা থাকলেও সিয়ের্না নাড টিস্যো রেলওয়ে ক্রসিং অবশ্য বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে যান চলাচলের অন্য সীমান্ত ক্রসিংগুলির উপর বাড়তি চাপ পড়ছে। তা ছাড়া ইউক্রেন ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধের জন্য সমস্ত অসামরিক বিমান চলাচল স্থগিত রেখেছে, যার ফলে স্থল সীমান্ত ক্রসিংগুলিতে আরও চাপ বেড়েছে।

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে হাঙ্গেরির অভিবাসী–বিরোধী বক্তব্য

প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান অনেক সময়েই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে জেনোফোবিক (বিদেশিদের সম্বন্ধে আতঙ্ক) অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে হাঙ্গেরি ইউক্রেন থেকে আশ্রয়ের সন্ধানে আসা সকলের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হয়ত অনেকের ই মনে আছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অতীতে হাঙ্গেরির অভিবাসী–বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। আফগানিস্তান ও সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে হাঙ্গেরির বৈষম্যমূলক আচরণের কথা হয়ত অনেকেরই অজানা নয়। ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের যে ভাবে সে দেশে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তা দেখে অবশ্য সেই আচরণের গতিশীলতা পরিবর্তিত হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য যে যদিও হাঙ্গেরি ইউক্রেনকে কোনও ধরনের সামরিক সহায়তা পাঠানো থেকে বিরত রযছে, কিন্তু ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের সাহায্য করার প্রশ্নে হাঙ্গেরি উন্মুক্ত রয়েছে। হাঙ্গেরি-ইউক্রেন সীমান্ত ক্রসিংগুলি, যেমন লোনিয়া-হারানগ্লাব ও বারাবাস-কাসজোনি, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছি।হাঙ্গেরিয়ান কর্তৃপক্ষ কঠোর অভিবাসন নিয়ম শিথিল করেছে, এবং ইউক্রেনীয়দের টিকা শংসাপত্র বা ভিসার মতো নথিপত্র সহ বা ব্যতিরেকে সেফ প্যাসেজও মঞ্জুর করেছে।

মলডোভার লাভ

মলডোভা অন্ততপক্ষে ৮৮,০০০ ইউক্রেনীয়কে নিয়েছে। পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির পর তারা তৃতীয় বৃহত্তম আশ্রয়দাতা। মলডোভায় শ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, এবং দেশের কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধা দিচ্ছে, যাতে সে দেশের শ্রমশক্তি বাড়ানো যায়। মলডোভা তার স্কুল খুলে দিয়েছে ইউক্রেনীয় শিক্ষকদের জন্য;‌ তাদের রেস্তোরাঁর কর্মী হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে;‌ এবং আরও এই ধরনের কাজের ব্যবস্থা করছে।

যদিও মলডোভা ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের একটি বৃহৎ অংশকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, কিন্তু ইউক্রেনীয়রা মলডোভায় আশ্রয় নিতে খুব বেশি আগ্রহী নন। কারণ, তাঁরা আশঙ্কা করছেন এরপর রাশিয়া এই দেশটি আক্রমণ করতে পারে। তাই পুনরায় আনিশ্চয়তার শিকার হতে এই অসহায় মানুষগুলো আর চান না।

বেলারুশ উল্টে রুশ সেনাদের সাহায্য করছে

বেলারুশেও কিছু ইউক্রেনীয় শরণার্থী প্রবেশ করেছেন, এ কথা ঠিক। অন্যদিকে এটাও সত্য যে বেলারুশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে রুশদের সাহায্য করার জন্য তার সৈন্য পাঠাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং জাপানের মতো এশীয় শক্তিগুলি–সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় বেলারুশের সমর্থনের বিষয়টির ব্যাপক নিন্দা করেছে, এবং বেলারুশের শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী লুকাশেঙ্কো প্রয়োজন পড়লে ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়াকে সমর্থন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে প্রকৃতপক্ষে, পোল্যান্ড এখন সবচেয়ে বেশি ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া পিছনে একটি প্রাথমিক কারণ হল পোলিশ মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন ইউক্রেনীয় শরণার্থী সংখ্যাবৃদ্ধির পেছনে আছে রাশিয়ার মিত্র এই দেশটির চাপ।

বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী লুকাশেঙ্কো প্রয়োজন পড়লে ইউক্রেন অভিযানে রাশিয়াকে সমর্থন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

চেকিয়ার সমর্থন

কঠোর অভিবাসন নিয়মবিধি এবং সম্ভাব্য শরণার্থী প্রবেশ রোধে অন্যান্য প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চেক প্রজাতন্ত্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের জন্য তার সীমানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সে দেশে আসা ইউক্রেনীয় নাগরিকদের ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট বা কোভিড-১৯ পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট এবং চেক অঞ্চলে ঢোকার পর আরটি–পিসিআর পরীক্ষা করার মতো বাধ্যবাধকতাগুলি থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে চেক প্রজাতন্ত্রে এরপর কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পাড়ে, এবং বিশাল সংখ্যায় ইউক্রেনীয় শরণার্থী আসার ফলে তার স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামোর উপর আরও অতিরিক্ত চাপ পড়বে। বেশ কিছু ইউক্রেনীয় শরণার্থী তাঁদের নিজেদের মতো করে এলেও আরও অনেকে এসেছেন ইউক্রেনের প্রতিবেশী স্লোভাকিয়া ও পোল্যান্ড হয়ে ট্রেনে, বা চেক সরকার নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায়। ইউক্রেনের সঙ্গে চেকিয়ার সরাসরি কোন ও সীমান্ত না থাকা সত্ত্বেও সে দেশের সীমান্ত ক্রসিংগুলিতেও দীর্ঘ লাইন এবং প্রচুর ট্রাফিক; যেন এটি ইউক্রেনের নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলির একটি।

উপসংহারশরণার্থী নেওয়ার প্রশ্নে ‘‌ইউরোপীয় সত্তা’‌

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক তৈরি করেছে, এবং সঙ্কটের প্রভাব ইতিমধ্যেই মধ্য ইউরোপে প্রবল ভাবে অনুভূত হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের প্রতিবেশী স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বেলারুশ, হাঙ্গেরি, মলডোভা বা চেক প্রজাতন্ত্রের মতো কিছু ইইউ সদশ্য দেশের ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি অতি সদয় মনোভাব বিশ্বব্যাপী মানুষের সামনে শরণার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের দ্বিচারিতার প্রশ্নটিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। নানা সময়ে শরণার্থী সংকট ঘিরে জাতীয় পরিচয়, সুযোগের সমতা ও মানবাধিকারের বিশ্বজনীনকরণের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘‌আমরা ও ওরা’‌র ধারণাটির কারণে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর নিয়ম অনুসারে সেই গোষ্ঠী বা ব্যক্তিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না–পারা অন্যদের প্রতি বৈষম্য করা হয়, এবং এই বিষয়টি ইউরোপে আশ্রয় চাওয়া অ-ইউরোপীয় শরণার্থীদের ক্ষেত্রে হামেশাই ঘোটতে দেখা যায়। শরণার্থী সমস্যার মোকাবিলায়ে সাধারণ ভাবে দেখা যায় গ্লোবাল নর্থ বা পৃথিবীর সমৃদ্ধ দেশগুলির প্রবণতা হল নিজের দেশে কম সংখ্যক শরণার্থীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা;‌ পরিবর্তে তারা বরং গ্লোবাল সাউথ বা অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিকে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে প্রবণতাটি এখন বিপরীত হয়ে গিয়েছে। গ্লোবাল নর্থ–এর সমৃদ্ধ দেশগুলি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে, যদি কেউ ইউরোপীয় শরণার্থী ও গ্লোবাল সাউথ থেকে আসা অ-ইউরোপীয় শরণার্থীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলির মনোভাবের তুলনা করেন, বিশেষ করে আফগান, সিরিয়ান ও ফিলিস্তিনিদের মতো শরণার্থীদের ক্ষেত্রে, তা হলে ইউরোকেন্দ্রিক পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়।

ইউক্রেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি শরণার্থীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব নিয়েছে, এবং এই সব শ্রেণির মানুষকে স্থান দেওয়া এড়াতে পুশ-ব্যাকের মতো প্রতিকূল উপায় অবলম্বন করতেও পিছপা হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, যদি কেউ ইউরোপীয় শরণার্থী ও গ্লোবাল সাউথ থেকে আসা অ-ইউরোপীয় শরণার্থীদের গ্রহণের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলির মনোভাবের তুলনা করেন, বিশেষ করে আফগান, সিরিয়ান ও ফিলিস্তিনিদের মতো শরণার্থীদের ক্ষেত্রে, তা হলে ইউরোকেন্দ্রিক পক্ষপাতিত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। এর থেকে বোঝা যায় ‘‌ইউরোপীয় সত্তার’ ধারণাটি কতটা শক্তিশালী ও অনমনীয় একটি ধারণা, যা আবশ্য এ উদ্বেগের কারণ। এ ছাড়াও একটি প্রশ্ন এখানে উত্থাপন করা বোধহয় প্রাসঙ্গিক। তা হল, আন্তর্জাতিক আইন সমসাময়িক শরণার্থী ইস্যুতে গ্লোবাল সাউথের উদ্বেগের সমাধান কী ভাবে করবে? এখানেই বোধহয় প্রয়োজন বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি যা ইউরো-কেন্দ্রিক ১৯৫১ কনভেনশনের বাইরে গিয়ে বিশ্বের শরণার্থী সঙ্কটে নিয়ে আলোচনা করবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury

Anasua Basu Ray Chaudhury is Senior Fellow with ORF’s Neighbourhood Initiative. She is the Editor, ORF Bangla. She specialises in regional and sub-regional cooperation in ...

Read More +
Prarthana Sen

Prarthana Sen

Prarthana Sen was Research Assistant with ORF Kolkata. Her interests include gender development cooperation SDGs and forced migration.

Read More +