বেজিংয়ের প্রতি ইউরোপের নতুন করে সাজানো দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে বলা যায়, ২০২৩ ইইউ–চিন সম্পর্কের বিবর্তনের পরিবর্তে পশ্চাদপসরণের একটি মুহূর্ত চিহ্নিত করে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ চিন–নির্দিষ্ট কৌশল প্রকাশ করেছে, যা চিনের প্রতি আরও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেয়। এগুলি মূলত ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েনের নেতৃত্বে বিস্তৃত ইইউ কাঠামোর মধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এই দেশ–পর্যায়ের কৌশলগুলির সঙ্গে ইইউ একগুচ্ছ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে আছে বিনিয়োগের দ্বিমুখী যাচাই এবং 'ঝুঁকিমুক্তকরণ' পদ্ধতির ছত্রছায়ায় জবরদস্তি–বিরোধী প্রক্রিয়া। একই সময়ে, ইউরোপ চেষ্টা করছে এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও অন্যত্র আরও ‘সমমনস্ক’ দেশকে নিয়ে তার বাণিজ্য অংশীদারি ও সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্যময় করার।
উচ্চ প্রত্যাশার সর্বোচ্চ বিন্দু
ইউরোপ ও চিন পর্যবেক্ষকদের মতে, বেজিং–এ ২৪ তম ইইউ–চিন শীর্ষ সম্মেলন — চার বছরের মধ্যে প্রথম ব্যক্তিপর্যায়ের সাক্ষাৎ — একটি অত্যন্ত প্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। নভেম্বরে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জো বাইডেনের বৈঠকে তাইওয়ান–সম্পর্কিত নিরাপত্তা কার্যক্রম কিছুটা সন্তোষজনকভাবে সম্বোধন করা হয়েছিল। কাজেই ২০২২ সালের এপ্রিলের শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রাধান্য পাওয়ার পরে এই বছর ইইউ অর্থনৈতিক বিষয়গুলিতে দৃ্ষ্টি নিবদ্ধ করতে পেরেছে।
প্রাধান্য পাওয়ার মতো বিষয়গুলির মধ্যে ছিল বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো প্রধান শিল্প রপ্তানি ক্ষেত্রের জন্য চিনা ভর্তুকি, যা ইউরোপীয় প্রতিযোগিতাকে দুর্বল করে বলে মনে করা হয়। ব্রাসেলস ইতিমধ্যেই এই বর্ধিত ক্ষমতার তদন্ত শুরু করেছে, এবং মেডিকেল ডিভাইসগুলির মতো অন্য ক্ষেত্রগুলি নিয়েও তদন্ত করার পরিকল্পনা করেছে। বিরোধের আরেকটি প্রাথমিক বিতর্কিত বিষয় ছিল বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চিনের সঙ্গে ইউরোপের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি, যা ২০২২ সালে বিপজ্জনক ৪০০ বিলিয়ন ইউরো–এ দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির জন্য আরও সম–প্রতিযোগিতা ক্ষেত্র এবং বৃহত্তর উন্মুক্ততার অপেক্ষা করছে। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা ছিল চিনা পণ্যের রপ্তানি সীমিত করা, যা রাশিয়ার সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সে অবদান রাখছে এবং মস্কোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী, চিন কর্তৃক রাশিয়ায় সরবরাহের ৭০% এর বেশি হাই–টেক উপাদান ও দ্বৈত–উদ্দেশ্য পণ্য। এতে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এবং কমপক্ষে ১৩টি চিনা কোম্পানির উপর ইইউ নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রিটেন সবেমাত্র পুতিনের যুদ্ধযন্ত্রকে চালিত করার অভিযোগে চিনা সংস্থাগুলির উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
ব্রাসেলস ইতিমধ্যেই এই বর্ধিত ক্ষমতার তদন্ত শুরু করেছে, এবং মেডিকেল ডিভাইসগুলির মতো অন্য ক্ষেত্রগুলি নিয়েও তদন্ত করার পরিকল্পনা করেছে।
শীর্ষ সম্মেলনটি হিমশীতল ইইউ–চিন সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে হয়েছে, এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি। ইউরোপের ক্ষোভের কা্রণ চিন রাশিয়ার উপর তার প্রভাবকে অর্থপূর্ণভাবে যুদ্ধ থামানোর জন্য ব্যবহার করেনি, এবং ইউরোপ চিনের সঙ্গে তার লেনদেন থেকে শুরু করে রাশিয়ার শক্তির উপর তার অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে কিছু কঠোর পাঠ শিখেছে।
ঝুঁকি ও স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য
কোভিড–১৯ অতিমারির পর থেকে চিনের সঙ্গে ইউরোপের সম্পৃক্ততা আরও শর্তসাপেক্ষ হয়ে উঠেছে, এবং ক্রমবর্ধমানভাবে যাচাই–বাছাই করা হয়েছে বেজিংয়ের সরবরাহ শৃঙ্খল, জিনজিয়াং ও হংকং–এ তার মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং উভয়ের প্রতিশোধমূলক নিষেধাজ্ঞাকে, যা ইইউ–চায়না কম্প্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট অন ইনভেস্টমেন্ট (সিএআই)–কে হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাইওয়ানে প্রতিনিধি অফিস খোলার জন্য ভিলনিয়াসের সিদ্ধান্তের পরে লিথুয়ানিয়ার আমদানিতে চিনের অবরোধ এবং পরবর্তীতে ইইউ একক বাজারের বিকৃতি পরবর্তী উত্তেজনা সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। তার উপর, সদস্য রাষ্ট্র পর্যায়ে বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেমন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে ইতালির আনুষ্ঠানিক প্রস্থান (যা চার বছরের পুনর্নবীকরণের কথা ছিল), এবং তার অব্যবহিত আগে বল্টিক রাষ্ট্রগুলির রাশিয়া–চিন ‘সীমাহীন অংশীদারি’ চুক্তির বিরোধিতায় বিআরআই থেকে বেরিয়ে আসা। এই ঘটনাগুলি মার্চ ২০১৯ থেকে ইইউ–এর ভারসাম্যের খেলাকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে, কারণ ইইউ চিনকে একইসঙ্গে একটি ‘অংশীদার, প্রতিযোগী এবং ব্যবস্থাগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফন ডের লেয়েনের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে যখন বেজিংয়ের লক্ষ্য ‘চিনকে কেন্দ্রস্থলে রেখে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার পদ্ধতিগত পরিবর্তন’, সেই সময় ‘সম্পর্কের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুস্পষ্ট উপাদান’ বিদ্যমান। এর থেকে স্পষ্ট ব্রাসেলস শীর্ষ সম্মেলনের সময় ব্যবসা করতে উৎসাহী ছিল। ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক চাপ থেকে দূরে আরও স্বাধীন ইউরোপীয় নীতির জন্য বেজিংয়ের আকাঙ্ক্ষা, এবং চিনের অর্থনৈতিক শ্লথতার সম্ভাবনা, ইউরোপকে ছাড় পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা সুযোগ করে দিয়ে থাকতে পারে।
তবুও কৌশলগত ও অতি–গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরতা সীমিত করার লক্ষ্যে ‘ঝুঁকি বিযুক্তিকরণ’ শুধু তখনই ফলপ্রসূ হবে যদি নীতিগুলি কার্যকরভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সমন্বিত হয়, যাদের অনেকেরই চিনের ক্ষেত্রে সম–মনোভাব নেই। আক্রমণাত্মক কথা বলা সত্ত্বেও, মূলধারার ইউরোপীয় নেতারা সম্প্রতি বাণিজ্যিক স্বার্থের জন্য চিনে ছুটে গিয়েছেন, আর হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো সাধারণ সন্দেহভাজনরা বেজিংয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও, সবুজ পরিবর্তনের জন্য চিনা কাঁচামালের উপর ইউরোপের অত্যধিক নির্ভরতাও ঝুঁকিমুক্তকরণের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে জটিল করে তোলে।
তাইওয়ানে প্রতিনিধি অফিস খোলার জন্য ভিলনিয়াসের সিদ্ধান্তের পরে লিথুয়ানিয়ার আমদানিতে চিনের অবরোধ এবং পরবর্তীতে ইইউ একক বাজারের বিকৃতি পরবর্তী উত্তেজনা সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে।
ইউরোপীয়দের জন্য চ্যালেঞ্জ হল চিনের সঙ্গে তাদের আন্তঃনির্ভরতার আরও কার্যকর ব্যবস্থাপনা। এর মধ্যে থাকবে ইউরোপের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সময় চিনের লাভজনক বাজারে প্রবেশাধিকার বজায় রাখা।
বেজিংয়ের পক্ষে ইউরোপের আস্থা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা নির্ভর করবে ইউরোপের উদ্বেগে তার সাড়া দেওয়ার ইচ্ছা এবং সংঘাতের প্রকৃত ক্ষেত্রগুলিকে মসৃণ করার উপর। সাধারণভাবে চিনের কথা ও কাজের মধ্যে অমিলের কারণে ব্রাসেলসের দম বন্ধ করে অপেক্ষা করার কারণ নেই।
এই ভাষ্যটি প্রথম ইকনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.