Author : Aparna Roy

Expert Speak India Matters
Published on Apr 21, 2022 Updated 16 Days ago

এক নেট জিরো (শূন্য নিঃসরণ) ভবিষ্যৎ অর্জনের লক্ষ্যে দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ভারতকে বিদ্যমান কাজের সুযোগের প্রেক্ষিতে লিঙ্গ বৈষম্যকে কাঠামোগত ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

ন্যায্য শক্তি রূপান্তরের জন্য নারীদের সশক্তিকরণ
ন্যায্য শক্তি রূপান্তরের জন্য নারীদের সশক্তিকরণ

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আই পি সি সি) রিপোর্টে আগামী দিনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। তাই নেট জিরো বা শূন্য নিঃসরণের লক্ষ্যে অর্থনীতিগুলির গতিকে ত্বরান্বিত করা কোনও বিকল্প নয়, সেটি এক প্রকার বাধ্যবাধকতা। এই রিপোর্টে উল্লিখিত জরুরি সুপারিশগুলির মধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটিতে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে এবং যে ক্ষেত্রে সরকারের অবশ্যই তৎপর হওয়া উচিত, সেটি হল জিরো কার্বন বা কার্বনমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করা। যদিও এই রূপান্তরের ফলে সৃষ্ট সুযোগগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্যের সমস্যাটির সমাধান করার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া অর্থনীতিগুলি শূন্য নিঃসরণের ভবিষ্যতে পৌঁছনোর জন্য একটি ‘ন্যায্য’ এবং ন্যায়সঙ্গত পথ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হবে।

ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে শূন্য নিঃসরণের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর ফলে পাঁচ কোটি নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের নেপথ্যে প্রধান পদক্ষেপটি হল প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শক্তির ব্যবহার থেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি (আর ই) ব্যবহারে ব্রতী হওয়া। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট আর ই ধারণ ক্ষমতা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, যার মধ্যে ১০০ গিগাওয়াটেরও বেশি স্থাপিত আর ই ধারণ ক্ষমতা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। তবুও ভারতে আর ই ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষের মাত্র ১১% মহিলা কর্মী, যা আন্তর্জাতিক মহিলা কর্মীদের গড় অর্থাৎ ৩২ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ মানুষের বিশেষ করে নতুন পরিকাঠামোতে উদ্ভূত সুযোগ, কম-কার্বন উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মহিলারা এই কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাতে পারেন যদি না এখন থেকেই তাঁদের অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, পুঁজি এবং সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়।

ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ লক্ষ মানুষের বিশেষ করে নতুন পরিকাঠামোতে উদ্ভূত সুযোগ, কম-কার্বন উৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে কর্ম সংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মহিলারা এই কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাতে পারেন যদি না এখন থেকেই তাঁদের অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, পুঁজি এবং সংযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না করা হয়।

বর্তমানে যে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, সেটি হল কী ভাবে শক্তি রূপান্তর প্রক্রিয়াটি নারীদের জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে একটি ন্যায্য, স্থিতিশীল এবং সর্বাত্মক রূপান্তর সুনিশ্চিত করতে পারে? একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে আরও বেশি সংখ্যক মহিলার অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রগুলির কোন কোন এন্ট্রি পয়েন্ট বা প্রবেশ পথগুলিতে জোর দেওয়া প্রয়োজন?

প্রথমত, ক্ষেত্রটিতে লিঙ্গ বৈষম্য এবং অসাম্যের কারণগুলি শনাক্তকরণ, স্বীকৃতি প্রদান ও বিশ্লেষণ দূষণমুক্ত শক্তি রূপান্তরের লক্ষ্যে লিঙ্গ সাম্যকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রধান সোপান। এই বাস্তব তথ্য, পরিসংখ্যান এবং গবেষণা দূষণমুক্ত শক্তিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে জড়িত অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় পরিকল্পনা প্রণয়নের অন্যতম পূর্ব শর্ত। শক্তি রূপান্তরের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক প্রতিবন্ধকতার উৎপত্তি হয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য থেকে যা মহিলাদের মতপ্রকাশকে সীমিত করে, নতুন সুযোগে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে খর্ব করে। একটি প্রাথমিক গবেষণার অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে যে, ভারতে পশ্চিম রাজস্থানে, যা বায়ু ও সৌর শক্তি ইনস্টলেশন বা যন্ত্রস্থাপনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র, অধিকাংশ স্থানীয় কাজের সুযোগই পুরুষদের আওতাধীন। কারণ সেখানকার সাংস্কৃতিক আদর্শ অনুযায়ী মহিলাদের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকা ও গৃহস্থালির কাজকর্ম করাই দস্তুর। অন্য দিকে, মহিলা শ্রমশক্তির বিরুদ্ধে কাঠামোগত বৈষম্যের একাধিক দৃষ্টান্ত বর্তমান, যেগুলির মধ্যে নিম্ন পারিশ্রমিক প্রদান ও কাজের জায়গায় ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাব উল্লেখযোগ্য।

মহিলাদের কর্মসংস্থানের উপরে দ্রুত শক্তি রূপান্তরের প্রভাব নিরূপণে এবং দূষণমুক্ত শক্তি কর্মসূচিতে মহিলাদের রূপান্তরমূলক ভূমিকা নির্ধারণে শ্রম  মন্ত্রক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রক, নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক ও অন্য সরকারি নোডাল সংস্থাগুলিকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে এবং ব্যাপক তথ্য ও গবেষণালব্ধ প্রমাণ নথিবদ্ধ করতে হবে। এমনটা করা গেলে কার্যকর এবং সুনির্দিষ্ট উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও কর্মসূচির রূপায়ণ করা সম্ভব হবে যা সমস্যার সমাধান করতে পারবে।

দ্বিতীয়ত, বিশেষত বিজ্ঞান প্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং অঙ্ক (স্টেম) ক্ষেত্রগুলিতে মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগগুলি উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন যা স্টেম ক্ষেত্রগুলিতে এক জন কর্মীর বিশেষ পারদর্শিতার দাবি রাখে। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অনুমান অনুযায়ী আগামী দশকে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্টেম দক্ষতা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। বর্তমানে ভারতে স্টেম কর্মসংস্থানের মাত্র ১৪% মহিলাদের আওতায়। যত দিন না পর্যন্ত স্টেম ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রশিক্ষণ, পদে বহাল রাখা এবং প্রণোদনা জোগানোর উপরে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, স্বীকৃতি প্রদান এবং দক্ষতা বৃদ্ধিকারী কর্মসূচির রূপায়ণ করা হচ্ছে, তত দিন মহিলা কর্মীদের প্রধানত সাহায্যকারী এবং সহায়তা কর্মীদের মতো অস্থায়ী কাজেই নিয়োগ করা হবে। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য স্টেম ক্ষেত্রগুলিতে পেশা নির্বাচনে আগ্রহী মহিলাদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি এই সকল মহিলার প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। স্টেম ক্ষেত্রে মহিলাদের আগ্রহী করে তুলতে এক শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করা হলে তা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সমাধানের সঙ্গে গ্রিন জবস বা দূষণমুক্ত শক্তি সংক্রান্ত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় সংখ্যক মহিলা নেত্রী, ব্যবস্থাপক, ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিগত কর্মীর সৃষ্টি করবে।

যত দিন না পর্যন্ত স্টেম ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রশিক্ষণ, পদে বহাল রাখা এবং প্রণোদনা জোগানোর উপরে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, স্বীকৃতি প্রদান এবং দক্ষতা বৃদ্ধিকারী কর্মসূচির রূপায়ণ করা হচ্ছে, তত দিন মহিলা কর্মীদের প্রধানত সাহায্যকারী এবং সহায়তা কর্মীদের মতো অস্থায়ী কাজেই নিয়োগ করা হবে।

তৃতীয়ত আর ই সংস্থাগুলির দ্বারা এমন এক কর্মসংস্কৃতির সূচনা করতে হবে যা লিঙ্গ সংবেদনশীল কর্মপন্থার প্রতিপালক হবে। সমগ্র ভ্যালু চেনে (মান শৃঙ্খল) অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং নেতৃত্বপ্রদানকারী ভূমিকা সুনিশ্চিতকারী নিয়োগ নীতিতে লিঙ্গ সমতা বহাল করার মতো কার্যকর কৌশল অবলম্বন করা কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সংস্থাগুলির দ্বারা লিঙ্গ-সম্পর্কিত সুযোগ এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন করা যা একটি আর ই প্রকল্পকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন প্রকল্পের কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার জন্য উভয় লিঙ্গের সহজলভ্যতা, মহিলাদের গতিশীলতা, তাঁদের কাজের চাপে প্রত্যাশিত পরিবর্তন ইত্যাদির মতো বিষয়গুলিকে , এমন আর্থ-সামাজিক এবং পরিবেশগত কারণগুলিকে তুলে ধরবে। এর ফলে সংস্থাগুলি দ্বারা লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টির সমাধান করার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে৷ বিনিয়োগকারী চালিত কৌশল হিসেবে লিঙ্গ সমতা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সংস্থাগুলিকে পরিবেশগত, সামাজিক এবং প্রশাসনিক (ই এস জি) মাপকাঠিতে ভাল ফল করতে সাহায্য করবে।

পরিশেষে বলা যায়, এই কৌশলগুলি তখনই ভাল ফল করবে যদি সংশ্লিষ্ট আচরণগত পরিবর্তন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলি তাদের সঙ্গ দেয়। এগুলির ফলে দূষণমুক্ত শক্তি রূপান্তরের রূপদানকারী সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপে নারীদের অংশগ্রহণে বাধা দেয়, এমন সাংস্কৃতিক প্রাচীরগুলি ভেঙে যাবে। যদিও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং ধীর প্রক্রিয়া, তবুও এ ধরনের বাঁকবদল একটি ‘ন্যায্য’ দূষণমুক্ত শক্তি রূপান্তর এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অপরিহার্য।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.