Published on Apr 09, 2024 Updated 1 Days ago

বয়স্কদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভারতে বার্ধক্য সহায়তা যত্নের প্রেক্ষিতে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। কারণ স্বাস্থ্য নীতিতে জেরিয়াট্রিক যত্ন বা বয়স্কদের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়নি

ভারতের বয়স্কদের ক্ষমতায়ন: দরিদ্র, গ্রামীণ ও মহিলাদের সমর্থন জোগানোর কৌশল

ভারতের সুবিশাল জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ সম্পর্কে অনেক কথা লেখা ও বলা হচ্ছে। অথচ দেশটি নিঃশব্দে আর কটি গুরুত্বপূর্ণ জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে, যার উল্লেখ জনসাধারণের আলোচনায় খুব কমই উঠে আসে। ক্রমবর্ধমান আয়ু উর্বরতার হার হ্রাসের দরুন ভারতে বয়স্ক ব্যক্তিদের পরিমাণ নিঃশব্দে বেড়ে চলেছে। ইন্ডিয়া এজিং রিপোর্ট ২০২৩ অনুসারে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি ১৪৯ মিলিয়ন ব্যক্তি ভারতে রয়েছেন, যা দেশের জনসংখ্যার প্রায় ১০.৫ শতাংশ ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক বৃদ্ধ অর্থাৎ ৮০ বছরের বেশি বয়সি ব্যক্তিদের জনসংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ১৯৫০ সালে সালে সবচেয়ে বয়স্ক মানুষদের পরিমাণ ছিল ০.৪ শতাংশ; যা ২০১১ সালে দ্বিগুণ হয়ে ০.৮ শতাংশে এসে পৌঁছ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৩.৩ শতাংশে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

 

গ্রামীণ প্রবীণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষ করে বয়স্ক মহিলারা প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন, ন্যূনতম বা কোন সঞ্চয় নেই এবং তাঁদের আর্থিক ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ রূপে পরিবারের উপর নির্ভর করতে হয়

 

রাজনৈতিক শ্রেণি প্রায়ই ভারতের তরুণ জনসংখ্যাকে একটি অর্থনৈতিক সম্পদ হিসাবে দাবি করলেও দেশটি কি ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার জন্য গুণমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করতে আদৌ প্রস্তুত? পশ্চিমের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভারতে দেশের বয়স্কদের ৪০ শতাংশ দরিদ্রতম অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাঁদের মধ্যে প্রায় ১৮.৭ শতাংশ কোনও আয় ছাড়াই জীবনযাপন করছে। এ ছাড়াও, প্রায় ৭০ শতাংশ বয়স্ক মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করছেন এবং ৬০ ও ৮০-র কোঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের দীর্ঘায়ু হওয়ার উচ্চ হারের দরুন ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার ক্ষেত্রে ভারত নারীকরণের প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করছে। গ্রামীণ প্রবীণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, বিশেষ করে বয়স্ক মহিলারা প্রায় অক্ষরজ্ঞানহীন, ন্যূনতম বা কোন সঞ্চয় নেই এবং তাঁদের আর্থিক ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ রূপে পরিবারের উপর নির্ভর করতে হয়। গ্রামীণ প্রবীণরাও তীব্র বর্ণ ও শ্রেণিভিত্তিক বৈষম্যের শিকার। বয়স্ক মহিলারা, বিশেষ করে বিধবারা, লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছেন, যা তাঁদের অবস্থানকে অত্যন্ত দুর্বল করে তুলেছে।

শহুরে অভিজাতরা - বিশেষত যাঁরা মহানগরীতে বাস করেন – উন্নততর স্বাস্থ্য পরিষেবা সুযোগ পেলেও ভারতবর্ষের প্রবীণ জনসংখ্যার সিংহভাগ দেশের অভ্যন্তরে বা প্রান্তিক অঞ্চলে ন্যূনতম মৌলিক সুবিধাগুলিও পান না। বয়স্ক মহিলা বিধবাদের একটি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভারতে বার্ধক্য সহায়তা পরিষেবার সামনে গুরুতর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য নীতিতে সাধারণত মা ও শিশু যত্নের উপর মনোযোগ দেওয়া হয় এবং বয়স্কদের পরিচর্যার বিষয়ে কোনও গুরুত্বও দেওয়া হয় না। ভারতে বয়স্করা বেশির ভাগ সমর্থন যত্ন চিরাচরিত ভাবে তাদের সন্তানদের কাছ থেকেই পান। যাই হোক, পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা শিক্ষা ও চাকরির জন্য বাইরে চলে যাওয়ায়, যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিবারের উত্থানের ফলে ‘পিছিয়ে পড়া’ বা ‘রয়ে যাওয়া’ বয়স্কদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমীক্ষা অনুসারে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি শতাংশ ব্যক্তি একা থাকেন, যেখানে ২০ শতাংশ মানুষ আবার নিজেদের সন্তানদের উপস্থিতি ছাড়াই কেবল স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করেন। এই সংখ্যাটি ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে যা বয়স্কদের জন্য পরিবারভিত্তিক অনানুষ্ঠানিক যত্ন প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। সর্বোপরি, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জীবনধারণ করতে রীতিমতো লড়াই করছেন এবং বয়স্ক মানুষদের স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি প্রায়ই একটি বিশাল অবহনীয় আর্থিক বোঝা হয়ে উঠছে। এ ছাড়াও শুধু মাত্র পারিবারিক যত্ন প্রদান ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল ব্যবস্থার অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতেও বয়স্কদের উপর নির্যাতনের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। হেল্প এজ ইন্ডিয়া অনুসারে, ২৫ শতাংশ প্রবীণ মানুষ তাঁদের পরিবার, প্রধানত ছেলে ও পুত্রবধূদের দ্বারা নির্যাতিত হন।

 

বয়স্ক মহিলা বিধবাদের একটি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভারতে বার্ধক্য সহায়তা পরিষেবার সামনে গুরুতর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যেখানে স্বাস্থ্য নীতিতে সাধারণত মা ও শিশু যত্নের উপর মনোযোগ দেওয়া হয় এবং বয়স্কদের পরিচর্যার বিষয়ে কোনও গুরুত্বও দেওয়া হয় না।

 

ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে প্রবীণদের জন্য আনুষ্ঠানিক প্রাতিষ্ঠানিক যত্নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রথম পদক্ষেপটি হল, বয়স্ক মানুষদের নিজেদের পরিবারের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার উদ্দেশ্যে একটি শক্তিশালী পেনশন, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বিশেষ করে ভারতের টিয়ার ৩ ও টিয়ার ৪ শহরগুলিতে এবং গ্রামে উন্নততর স্বাস্থ্যপরিষেবা প্রদানের ব্যবস্থা করাবয়স্কদের অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরতার কারণে এটি ভারতে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ৩৩ শতাংশ বয়স্ক মহিলারা কখনও কাজ করেনি এবং তাঁদের কোন আয় নেই। মাত্র ১১ শতাংশ বয়স্ক পুরুষ তাঁদের পূর্বের কাজ থেকে পেনশন পান এবং ১৬.৩ শতাংশ সামাজিক পেনশন পেয়ে থাকেন। অন্য দিকে মাত্র ১.৭ শতাংশ বয়স্ক মহিলা তাঁদের আগের কাজ থেকে পেনশন পান এবং ২৭.৪ শতাংশ সামাজিক পেনশন পেয়ে থাকেন। ভারতে বর্ষীয়ান পরিষেবা সংস্কার সংক্রান্ত একটি সাম্প্রতিক নীতি আয়োগ রিপোর্টে বয়স্কদের আর্থিক ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যেমন জন তহবিলের পরিমাণ বৃদ্ধি, বয়স্কদের দক্ষতা বৃদ্ধি, বাধ্যতামূলক সঞ্চয় পরিকল্পনা, বিপরীত বন্ধক ব্যবস্থা এবং বয়স্কদের পরিষেবামূলক পণ্যের উপর কর ও জিএসটি সংস্কার।

দ্বিতীয়ত, ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য একটি সামগ্রিক জেরিয়াট্রিক কেয়ার মডেল তৈরি করা দরকার, যা অরক্ষিত অংশগুলি অর্থাৎ বয়স্ক মহিলা ও বিধবা, দারিদ্র্যে ডুবে থাকা কোনও সম্পদ বা আয়হীন বয়স্ক মানুষ এবং সম্পূর্ণ ভাবে পরিবারের উপর নির্ভরশীল মানুষদের বিশেষ প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্য মডেলে রোগনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকলেও দেশে এমন একটি সর্বাত্মক প্রবীণ যত্ন সংক্রান্ত কর্মসূচির অভাব রয়েছে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা-সহ বৃদ্ধ বয়সে সাধারণ সমস্ত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার যত্ন নেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞ চৈতন্য মালিক, শিল্পা খন্না, যোগেশ জৈন এবং রচনা জৈন যুক্তি দিয়েছেন যে, মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি যেমন যত্ন নেওয়া হয়, বয়স্কদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক ক্ষেত্রে যত্ন নেওয়া উচিত এবং সামাজিক সুস্থতার উন্নতি দীর্ঘমেয়াদি যত্ন প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি। এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।

 

ভারতের বর্তমান স্বাস্থ্য মডেলে রোগনির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকলেও দেশে এমন একটি সর্বাত্মক প্রবীণ যত্ন সংক্রান্ত কর্মসূচির অভাব রয়েছে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা-সহ বৃদ্ধ বয়সে সাধারণ সমস্ত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার যত্ন নেওয়া হয়

 

তৃতীয়ত, ভারতকে স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত অগ্রাধিকার দিতে হবে অর্থাৎ জেরিয়াট্রিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, নার্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে। কারণ দেশে বর্তমানে সংস্থান, দক্ষ শ্রমশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং বয়স্কদের স্বাস্থ্যের চাহিদা মেটাতে দক্ষতার অভাব রয়েছে। শিশুদের জন্য ক্রে সুবিধার মতো স্বল্পমেয়াদি যত্নের বিষয়ে যৎসামান্য অগ্রগতি হলেও একই ধরনের সুবিধাগুলি বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও তৈরি করা দরকার, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা এবং ছোট শহর ও শহরতলিগুলিতেসর্বোপরি, ভারতে জেরিয়াট্রিক স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত দুর্বল, যা আরও সচেতনতামূলক প্রচারের দাবি জানায়। এই প্রচারাভিযানগুলিতে বয়স্ক ব্যক্তিরা যে সমস্যার মুখোমুখি হ এবং কী ভাবে তাঁদের আরও ভাল যত্ন প্রদান করা যায় সে সম্পর্কে জনসাধারণকে সংবেদনশীল করে তোলার জন্য উপলব্ধ পরিষেবা শিক্ষামূলক কর্মসূচি তথ্য সরবরাহ করা হবে

 


মালঞ্চ চক্রবর্তী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর (গবেষণা) এবং সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.