Expert Speak Digital Frontiers
Published on Feb 17, 2022 Updated 28 Days ago

নতুন এবং উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনার কাজে ভারতকে সেতুবন্ধনকারী শক্তি রূপে বিবেচনা করা হচ্ছে।

উদীয়মান এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি: উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতের নতুন দিশা

Image Source: Quantum Reboot/Ars Electronica — Flickr

উদীয়মান এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি: উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারতের নতুন দিশা

ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি, জীবিকা নির্ধারণ এবং শাসন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ ক্রোমের মাধ্যমে লিখিত হতে চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই), রোবোটিক্স এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর মতো উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি এ সব কিছুর ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করবে এবং এগুলির প্রভাব অনুভূত হবে সাইবার স্পেস থেকে মহাকাশের মতো একাধিক ক্ষেত্রে।

ভারত যখন তার ৭৬তম বর্ষে প্রবেশ করছে, বহুপাক্ষিক প্রযুক্তি জোট এবং বহু অংশীদারবিশিষ্ট মঞ্চগুলিতে সে ক্রমশ একটা প্রভাবশালী দেশ হয়ে উঠছে। তাই সকলের দৃষ্টি থাকছে বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্রের উপরে এবং কেমন ভাবে শুধু মাত্র আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধ হয়ে ভবিষ্যতের নিয়ম নির্ধারণই নয়, বরং নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভারত উদীয়মান এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেয়, সে দিকেও থাকবে নজর। এই প্রতিবেদনটিতে আগামী দশকে ভারতের অংশগ্রহণের জন্য দু’টি প্রধান প্রযুক্তি ক্ষেত্রের কথা বলা হয়েছে: মহাকাশ এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তি। 

ভারত যখন তার ৭৬তম বর্ষে প্রবেশ করছে, বহুপাক্ষিক প্রযুক্তি জোট এবং বহু অংশীদারবিশিষ্ট মঞ্চগুলিতে সে ক্রমশ একটা প্রভাবশালী দেশ হয়ে উঠছে।

জনাকীর্ণ মহাকাশ

মহাকাশ নীতি নির্ধারণ গোষ্ঠীতে এটি একটি স্বীকৃত সত্য যে, মহাকাশ ক্রমশ জনাকীর্ণ, ভিড়ে ঠাসা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়ে উঠছে। উদীয়মান মহাকাশ নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে নির্দেশ করে। একটি ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ অথবা দুর্ঘটনা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে মহাকাশে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মহাকাশের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার পথ সুনিশ্চিত করতে মহাকাশভিত্তিক কার্যকলাপের জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করা আবশ্যক। মহাকাশে নতুন এবং উদীয়মান নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের সংখ্যার কথা মাথায় রাখলে ভারতের পক্ষে সম্ভব এবং উচিতও একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ শাসন ব্যবস্থা নিরূপণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।

মহাকাশে ভারত একটি প্রতিষ্ঠিত শক্তি এবং একটি মুক্ত ও নিরাপদ মহাকাশ ব্যবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নিয়ম নির্ধারণের খসড়া নির্মাণে ভারতের আগ্রহের নেপথ্যে রয়েছে তার শুরুর দিন থেকেই মহাকাশের প্রাথমিক শক্তি হয়ে ওঠা এবং মহাকাশের কার্যকলাপের জন্য নিয়মগুলির রূপরেখা নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। চিন এবং জাপানের পাশাপাশি ভারত মহাকাশে প্রভাবশালী শক্তিগুলির মধ্যে এশিয়ার তিনটি বৃহত্তম ক্ষমতার একটি এবং এই মুখ্য শক্তিগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না। পাশাপাশি নিয়ম নিয়ন্ত্রণের ফলে সেই সব মহাকাশভিত্তিক কার্যকলাপের উপর চাপ বাড়তে পারে যেগুলি অন্তর্নিহিত ভাবে অস্থিতিশীল।

চিন এবং জাপানের পাশাপাশি ভারত মহাকাশে প্রভাবশালী শক্তিগুলির মধ্যে এশিয়ার তিনটি বৃহত্তম ক্ষমতার একটি এবং এই মুখ্য শক্তিগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থাই কার্যকর হবে না।

অত্যাধুনিক সামরিক মহাকাশ কর্মসূচির বিকাশ এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলিরও মহাকাশ যুদ্ধের ক্ষমতা ভারতের কাছে এক চরম উদ্বেগের কারণ এবং এ ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতাযুক্ত প্রক্রিয়া বিশেষ কয়েকটি অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী ক্ষমতা খর্ব করতে পারে। অ্যান্টি-স্যাটেলাইট অস্ত্র (এ এস এ টি) এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে চিনের এ এস এ টি-র প্রদর্শন ভারতকে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তার আবশ্যিক প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়াও মহাকাশের জন্য নিয়ম নির্ধারণে ভারতের আগ্রহ নিজের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত, যা ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পর্কিত। যদি কেউ স্থল পরিকাঠামো এবং মহাকাশ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত মূল্য সংযোজন পরিষেবাগুলি গণনা করেন, তা হলে দেখবেন যে ভারত প্রায় ৩৭০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সমতুল্য পুঁজি বিনিয়োগ করেছে। মহাকাশ কর্মসূচির ক্ষেত্রে ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ অপেক্ষাকৃত বেশি, যা তার জন্য মহাকাশ সম্পদ রক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। সর্বোপরি ভারতীয় নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনে মহাকাশ সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ উপযোগিতা রয়েছে, যা আগামী বছরগুলিতে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেতে চলেছে।

সর্বোপরি, মহাকাশ শাসন ব্যবস্থার রূপরেখা নির্মাণে ভারতের আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণটি হল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বিবদমান ভূ-রাজনীতি। কারণ নয়াদিল্লি চায় না যে, মহাকাশ আরও একটি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠুক। আজকের মহাকাশ শাসন ব্যবস্থায় ভূ-রাজনীতির প্রভাব সুস্পষ্ট। এক দিকে যখন দেশগুলি প্রতিরোধ নীতি গ্রহণ করছে, তখন ভারত চায় না, এ হেন নিরাপত্তা সংক্রান্ত রাজনীতির জল খুব বেশি দূর গড়াক। কারণ তা সকলের পক্ষেই ক্ষতিকর হতে পারে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভারতের নিজস্ব একটি এ এস এ টি পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বোক্ত বক্তব্য খানিক ফাঁপা শোনালেও ভারতের এই পদক্ষেপ তার প্রতিবেশে বিদ্যমান মহাকাশ ক্ষমতা প্রদর্শনের যথাযথ প্রত্যুত্তর। এটি একটি কৌশলগত ভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত। তা কোনও ভাবেই চিনের এ এস এ টি পরীক্ষার প্রেক্ষিতে প্রতিবর্ত ক্রিয়া নয়। অর্থাৎ আশা করা যেতে পারে আগামিদিনে সব দেশই একে অন্যের উপগ্রহের পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে উঠবে না। প্রকৃত পক্ষেই সামরিক-মহাকাশ কর্মসূচির নিরিখে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করা বিপজ্জনক হবে।

যদি কেউ স্থল পরিকাঠামো এবং মহাকাশ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত মূল্য সংযোজন পরিষেবাগুলি গণনা করেন, তা হলে দেখবেন যে ভারত প্রায় ৩৭০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সমতুল্য পুঁজি বিনিয়োগ করেছে।

আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ম তৈরির ক্ষেত্রে ভারত একাধিক উপায়ে তার অবদান রাখতে পারে।

ভারত সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলির সব কটিতেই সক্রিয় অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রবর্তিত আউটার স্পেস অ্যাক্টিভিটিসের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট এবং ২০১৮-১৯ বর্ষে পি এ আর ও এস-এর (প্রিভেনশন অফ আর্মস রেস ইন আউটার স্পেস) উপর ইউ এন গ্রুপ অব গভর্নমেন্টাল এক্সপার্টস (জি জি ই)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারবিধি দ্রুতই সমস্যার মুখে পড়েছিল, যার নেপথ্যে ছিল প্রধানত প্রক্রিয়াগত সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভারতীয় বেসামরিক ও সামরিক আমলাতন্ত্রের অনেকেই এই ব্যবহারবিধি তৈরির বিরোধিতা করে বলেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একা ঠিক করে দিতে পারে না বাকি বিশ্বের জন্য কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ। ভারত-সহ অনেক এশীয় মহাকাশ শক্তিরই এই নিয়মবিধির বিষয়বস্তু নিয়েও আপত্তি ছিল। অন্য দিকে একাধিক এশিয়া-বহির্ভূত দেশের চোখে এ ধরনের আপত্তি গুরুত্বহীন মনে হলেও এই বিষয়গুলিকে খারিজ করার পরিবর্তে তার সঙ্গে জড়িত বিশেষ রাজনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক মূল্যকেও বিবেচনা করা উচিত। এই জাতীয় অনুশীলনে অংশগ্রহণ করলে এই দেশগুলি এই নিয়মবিধি অথবা যে কোনও চূড়ান্ত ফলাফলে তাদের অধিকারবোধ অনুভব করতে পারবে যা তার স্থায়িত্ব এবং অনুবর্তিতাকে সুনিশ্চিত করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধিতে কোনও নির্দিষ্ট আইনি পরিকাঠামো অথবা যাচাইকরণের প্রক্রিয়া না থাকার জন্য এশীয় মহাকাশ শক্তিগুলির উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। জি জি ই বিশেষ ভাবে চাইছে, ‘মহাকাশে অস্ত্র মোতায়েন প্রতিরোধ সহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা রোধের জন্য একটি আন্তর্জাতিক আইনগত ভাবে বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলিকে বিবেচনা এবং সেই সংক্রান্ত অন্য বিষয়গুলির সুপারিশ অনুমোদন করতে।’ কিন্তু ২০১৮-১৯ সালে অনুসৃত পি এ আর ও এস সংক্রান্ত জি জি ই-ও একই রকম অনিশ্চয়তাপূর্ণ ভাগ্যের সম্মুখীন হয়েছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভাজনমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রকৃতির কারণে ২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে কোনও ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। ফলস্বরূপ, জি জি ই-র তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

ব্রিটেনের সাম্প্রতিক মহাকাশ নিরাপত্তা প্রস্তাবনা — ‘দায়িত্বশীল আচরণের নিয়ম, প্রক্রিয়া এবং মূল নীতিগুলি অবলম্বনের মাধ্যমে মহাকাশ সঙ্কট প্রশমন করা’ — ভারতের জন্য মহাকাশ নিরাপত্তা শাসন সংক্রান্ত বিতর্ককে রূপ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রস্তাবনার বটম আপ এবং আচরণভিত্তিক পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে, ভারত এবং সমমনস্ক অংশীদার দেশগুলির জন্য এটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং মহাকাশের বিদ্যমান ও সম্ভাব্য শঙ্কাগুলির চিহ্নিতকরণ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এ বিষয়ে একটি মুখ্য শক্তি রূপে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সম্ভাব্য পথের সন্ধান করাও জরুরি।

ভারতীয় বেসামরিক ও সামরিক আমলাতন্ত্রের অনেকেই এই ব্যবহারবিধি তৈরির বিরোধিতা করে বলেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একা ঠিক করে দিতে পারে না বাকি বিশ্বের জন্য কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ।

বৃহৎ শক্তি সমীকরণগুলির বিতর্কিত প্রকৃতি এবং এর ফলে বহুপাক্ষিক আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কথা মাথায় রাখলে ভারত বুঝতে পারে যে, একটি আদর্শগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুরু করে ধীরে ধীরে আইনত বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করাই প্রকৃত পথ। বিশ্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিতর্ক অদূর ভবিষ্যতেও যে আশার আলো দেখবে না, তেমনটা সহজেই অনুমেয়। 

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি

মাত্র দু’বছর আগে, একটি কার্যকর বাণিজ্যিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার নির্মাণের সম্ভাবনা আনুমানিক ভাবে আরও ১০ থেকে ৩০ বছর সময়সাপেক্ষ ছিল। আই বি এম এবং টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা উপস্থাপিত বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক কোয়ান্টাম কম্পিউটার জাপানে কাজ করতে শুরু করে ২০২১ সালে।

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি একগুচ্ছ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে আসে, যা আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাগুলির সমাধানে আমাদের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে পারে: যেমন কোয়ান্টাম এনক্রিপশন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত করতে পারে; কোয়ান্টাম সিমুলেশন আমাদের দূষণহীন প্রযুক্তি-সহ নতুন উপকরণ আবিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে; এবং কোয়ান্টাম সেন্সিং আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের মানচিত্রায়ণে সাহায্য করতে পারে। কোয়ান্টাম বিপ্লবকে কাজে লাগাতে ভারতের ২০২০-২১ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ন্যাশনাল মিশন অন কোয়ান্টাম টেকনোলজিস অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনের (এন এম কিউ টি এ) প্রবর্তনে ভারতীয় মূল্যে আট হাজার কোটি টাকা (১২০ কোটি মার্কিন ডলার) ব্যয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারত সেই দেশগুলির একটি ক্রমবর্ধমান নতুন গোষ্ঠীর অংশ হয়ে উঠেছে যারা কোয়ান্টামের জন্য নির্দিষ্ট কৌশল এবং পুঁজি বিনিয়োগের ঘোষণা করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কানাডার ন্যাশনাল কোয়ান্টাম স্ট্র্যাটেজি ক্ষেত্রে ৩৬ কোটি কানাডিয়ান ডলার (২৮.৭০ কোটি মার্কিন ডলার), পাঁচ বছরে ফ্রান্সের ১৮০ কোটি ইউরো (১৮০ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, এবং পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৪৫০ কোটি কে আর ডব্লিউ (৩.৮ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা

একই সঙ্গে কোয়ান্টাম অ্যাপ্লিকেশনগুলি মুখ্য গণ পরিকাঠামো-সহ নতুন ডিজিটাল পরিকাঠামোর ক্ষতি করতে পারে যেগুলির উপর ভিত্তি করে ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নির্মিত। এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট নিয়মের অনুপস্থিতিতে এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির অনৈতিক ব্যবহারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা না থাকার দরুন কোয়ান্টাম বিপ্লব একটি দু’দিকে ধারবিশিষ্ট তরবারি হয়ে উঠতে পারে।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কানাডার ন্যাশনাল কোয়ান্টাম স্ট্র্যাটেজি ক্ষেত্রে ৩৬ কোটি কানাডিয়ান ডলার (২৮.৭০ কোটি মার্কিন ডলার), পাঁচ বছরে ফ্রান্সের ১৮০ কোটি ইউরো (১৮০ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি, এবং পাঁচ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ার ৪৪৫০ কোটি কে আর ডব্লিউ (৩.৮ কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা।

কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বৃহত্তর কাঠামোগত তাৎপর্য এখনও সবটা জানা যায়নি। রৈখিক অবস্থান থেকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে সরে আসার জন্য কি আমাদের ক্ষমতা, নৈতিকতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভাবনার মৌলিক পুনর্গঠনের প্রয়োজন? আমরা কী ভাবে দায়বদ্ধতাকে এমন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করে তুলতে পারি, যেখানে কারণ এবং ফলাফল সুনির্দিষ্ট নয়, যেখানে পর্যবেক্ষণের পদক্ষেপ ফলাফলকে বদলে দিতে পারে এবং যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাখ্যাযোগ্যতা এবং পুনর্গঠন হয়তো অসম্ভব?

সর্বোপরি সব ক্ষেত্রেই উদীয়মান প্রযুক্তিগুলি ভূ-রাজনীতির সঙ্গে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ছে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের কৌশলগত প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে যেমনটা দেখা গেছে। ফলস্বরূপ, কোয়ান্টামকে ঘিরে আন্তর্জাতিক নিয়মগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অথবা মহাকাশ ক্ষেত্রের পথ অনুসরণ করতে পারে এবং একাধিক নীতির মাঝে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় আটকে থাকতে পারে অথবা ত্রিশঙ্কু ভাবে থাকতে পারে। নয়াদিল্লির অবশ্যই উচিত এই পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাতাবরণের দ্বারা চালিত না হয়ে তাকে আকার দেওয়া।

 উপসংহার: বিশ্বে ভারতের স্থান

ভারতের অবশ্যই উচিত এটিকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে সেই সমমনস্ক দেশগুলির জোটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, যারা প্রযুক্তিভিত্তিক সমাধানে বিনিয়োগ করতে সক্ষম। এমনটা হলে তার এই উদ্যোগ বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলিরও সুনজরে আসতে পারে। এ হেন অনুশীলনে নেতৃত্ব দিলে তা ভারতের জন্য বিশেষ সুবিধের হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এশিয়া, আফ্রিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের একাধিক উন্নয়নশীল দেশই ভারতের মতো সহ-উন্নয়নশীল দেশের জন্য নয়াদিল্লির প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বলে মনে করে। প্রকৃতপক্ষে, নতুন এবং উদীয়মান প্রযুক্তির ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে ফারাক কমিয়ে আনার কাজে ভারতকে সেতুবন্ধনকারী শক্তি রূপে বিবেচনা করা হচ্ছে। এবং ভারতের পক্ষে ভালই হবে যদি সে উপযুক্ত মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে এই সব প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ লাভ তুলতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.