ভারত ও আফ্রিকার অংশীদারি একটি সমতাভিত্তিক,পরামর্শমূলক ও সহযোগিতার সম্পর্কের মূর্ত প্রতীক।
ভারত–আফ্রিকা অংশীদারিকে নতুন দিগন্তে উন্নীত করা
সভ্যতা ও ঐতিহাসিক সংযোগ, রাজনৈতিক ও মানসিক ঔপনিবেশিকতা–বিরোধী সংহতি, ডায়াস্পোরিক সদিচ্ছা, এবং সত্যিকারের ‘দক্ষিণ-দক্ষিণ’ সহযোগিতার সম্পৃক্ত অনুভূতি—এগুলি সাধারণত ভারত ও আফ্রিকা মহাদেশের অংশীদারির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে লালন ও সংজ্ঞায়িত করার জন্য ব্যবহৃত কিছু আপ্তবাক্য। ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে সাধারণ সংগ্রামের দিনগুলি থেকে শুরু করে দক্ষিণ–দক্ষিণ সহযোগিতার কাঠামোর অধীনে ২১ শতকের একটি বিকশিত এবং বহুমুখী অংশীদারির যাত্রাপথ প্রমাণ করে আফ্রিকা–ভারত অংশীদারি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।
নীতিগত অগ্রাধিকার এবং আফ্রিকানদের চাহিদাগুলি সবচেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতিতে বিবেচনা করেছে ভারত সরকার। আফ্রিকার আগ্রহী ও ইচ্ছুক দেশগুলির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পরিকাঠামোতে যে বিবিধ সম্পৃক্ততা ভারত তৈরি করেছে, তা প্রাপকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে৷ কোভিড–১৯ অতিমারি, যা এখনকার উন্নয়নমূলক অংশীদারি আরও শক্তিশালী করেছে, তা পরিচালিত হয়েছে ‘কাম্পালা নীতিমালা’র ভিত্তিতে। এই নীতিমালা হল ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উগান্ডার পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার সময় উল্লেখিত ১০টি নীতির একটি গুচ্ছ।
ভারত আফ্রিকার আগ্রহী এবং ইচ্ছুক দেশগুলির জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোতে যে বিবিধ সম্পৃক্ততা তৈরি করেছে, তা প্রাপকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে৷
এই নীতিগুলি মূলত আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির রূপরেখা দেয়৷ আফ্রিকার দেশগুলিকেভারতীয় মডেলযা দিতে চায় তা হল উন্নয়নমূলক প্যাকেজ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও দক্ষতা, এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের একটি শর্তহীন অনন্য মিশ্রণ, যা আফ্রিকার চাহিদা এবং অগ্রাধিকার অনুযায়ী পরিকল্পিত। এগুলি সবই চিন বা কিছু পশ্চিমী দাতা দেশ যা দিতে চায় তার থেকে আলাদা।
এমনকি কোভিড–১৯ অতিমা্রি চলাকালীন ভারত আফ্রিকার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশেষ উড়ানের মাধ্যমে একে অপরের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন সুচারুভাবে সম্পন্ন করা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষই ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। অধিকন্তু, দেশে তীব্র ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও আফ্রিকার দেশগুলিতে ভারত যতটা সম্ভব টিকার ডোজ দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে ২৫টি আফ্রিকান দেশে ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চিকিৎসা সহায়তা এবং ৪২টি আফ্রিকান দেশে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ কোভিড ভ্যাকসিনের৩৯.৬৫ মিলিয়ন ডোজঅন্তর্ভুক্ত।
এই প্রেক্ষাপটে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সি আই আই) এবং এক্সপোর্ট ইমপোর্ট (একজিম) ব্যাঙ্ক কনক্লেভ অন ইন্ডিয়া–আফ্রিকা গ্রোথ পার্টনারশিপ–এর ১৭তম সংস্করণ ১৯–২০ জুলাই ২০২২–এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সম্মেলনে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এক হাজারেরও বেশি সরকারি ও শিল্প-প্রতিনিধি অংশ নেন।
ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তাঁর বিশেষ ভাষণেএই বিষয়টির উপর জোরদেন যে, আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ‘আগের বছরের ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তুলনায় এখন ২০২১–২০২২ সালে ৮৯.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’ আজ আফ্রিকায় ভারতের রপ্তানি আফ্রিকার বৈশ্বিক আমদানির ৫.২ শতাংশ, যেখানে ভারতের আমদানি ২০২০ সালে মহাদেশের বৈশ্বিক রপ্তানির ৭ শতাংশ। এ থেকে দেখা যাচ্ছে যে ভারত আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, মিশর, কেনিয়া, মোজাম্বিক ও তানজানিয়া আফ্রিকায় ভারতের রপ্তানির প্রধান গন্তব্য। পেট্রোলিয়াম পণ্যসমূহ ভারতের রপ্তানি ঝুড়িতে বৃহত্তম আইটেম, এর পরে আছে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, যানবাহন এবং খাদ্যপণ্য।
অন্যদিকে মহাদেশ থেকে ভারতের প্রধান আমদানি উৎসগুলি হল দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, মিশর ও মরোক্কো। আফ্রিকা থেকে ভারতের আমদানিকৃত প্রধান পণ্যগুলি হল খনিজ জ্বালানি, তেল (প্রধানত অপরিশোধিত), প্রাকৃতিক বা কালচারড মুক্তা, মূল্যবান বা আধা–মূল্যবান পাথর এবং অজৈব রাসায়নিক।
আফ্রিকার সাথে ভারতের বাণিজ্য
নতুন এবং চলতি ক্ষেত্র জুড়ে বিস্তৃত সম্পর্কে বিনিয়োগের দিকটিও ভালভাবে এগিয়ে চলেছে। এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে মার্চ ২০২২ সময়কালে আফ্রিকায় ক্রমিক মোট ভারতীয় বিনিয়োগেরপরিমাণ ছিল ৭৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর মরিশাস, মোজাম্বিক, সুদান, মিশর ও দক্ষিণ আফ্রিকা ছিল ভারতের বিনিয়োগের শীর্ষ গন্তব্য। এটি ভারতকে মহাদেশের শীর্ষ পাঁচ বিনিয়োগকারীর অন্যতম করে তুলেছে৷
বৈশ্বিক মূল্যশৃঙ্খলে উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও একীকরণ
ভারতীয় বেসরকারি সংস্থাগুলি ক্রমাগত বেশি করে অর্থায়নের উদ্ভাবনী উপায় অন্বেষণ করছে, যেমন মিশ্রিত অর্থায়ন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, পেনশন তহবিল ইত্যাদি। বেসরকারি ক্ষেত্রের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, এবং জ্ঞান ও দক্ষতা হস্তান্তরের মতো ভারতীয় উদ্ভাবনগুলি রপ্তানি করার দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।
ভারত সরকার সমর্থিত লাইন অফ ক্রেডিট (এল ও সি)–এর সম্প্রসারণ রেয়াতি শর্তে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের জন্য একটি জনপ্রিয় হাতিয়ার হিসেবে থেকে গেছে। ভারত ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত১২.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরমোট ২০৪টি এল ও সি ৪২টি আফ্রিকান দেশে প্রসারিত করেছে। যাই হোক, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য সকল পক্ষের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কিং সম্পর্ক প্রসারিত করতে সক্ষম হবে একজিম ব্যাঙ্কের সদ্য চালু–হওয়াট্রেড অ্যাসিসট্যান্স প্রোগ্রামেরমতো নতুন ধরনের অর্থায়ন—যার অধীনে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিয়োজিত ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির লেনদেন–নির্দিষ্ট আংশিক বা সম্পূর্ণ গ্যারান্টি একজিম ব্যাঙ্কের দ্বারা সমর্থিত হবে, যাতে ন্যূনতম উন্নত/ উন্নয়নশীল দেশগুলির ব্যাঙ্কগুলিতে অর্থপ্রদানের ঝুঁকিগুলি কভার করা যায়। মোট ২৬টি আফ্রিকান দেশ প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এই উদ্যোগের অধীনে ঝুঁকি প্রশমন সমর্থন চাইতে পারে।
ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ হল পণ্য তৈরি এবং মূল্য যোগ করার উপায় খুঁজে বের করা। মূল্য সংযোজন আফ্রিকাকে বৈশ্বিক মূল্যশৃঙ্খল বা গ্লোবাল ভ্যালু চেন (জি ভি সি)–এর সঙ্গে একীভূত করবে, এবং মহাদেশটিকে বাড়তি সুবিধা দেবে। এ ক্ষেত্রে ধারণাটি হল উৎপাদন কেন্দ্রকে আফ্রিকান বাজারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া এবং স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পণ্য তৈরির উপ–আঞ্চলিক এবং লক্ষ্যভিত্তিক কৌশল তৈরি করা।
ভারত যদি আফ্রিকার সঙ্গে তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে চায়, তাহলে তাকে একটি সমন্বিত পন্থা অনুসরণ করতে হবে, যার মধ্যে থাকবে আফ্রিকাকে জি ভি সি–র সঙ্গে একীভূত করা, আফ্রিকার পরিকাঠামো ও সংযোগ শক্তিশালী করা, এবং আফ্রিকায় বাণিজ্য অর্থায়ন সহজতর করা।
স্বাস্থ্য, ডিজিটাল এবং সবুজ বৃদ্ধির ত্রয়ী
এস জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেছেন যে স্বাস্থ্য, ডিজিটাল এবং সবুজ বৃদ্ধি হল সেই সব ক্ষেত্র যেখানে ভারত ও আফ্রিকা বর্তমানে তাদের অংশীদারির উপর জোর দিচ্ছে।
ভারত ও আফ্রিকার দেশগুলির জন্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা হল একটি অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার, এবং অতিমারিটি অবশ্যই দুটি অঞ্চলেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর তা তুলে ধরেছে। কিছু রক্ষণশীল অনুমান ইঙ্গিত করে যে আফ্রিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন ও প্রকৃত বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান প্রতি বছর প্রায়৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যাই হোক, ভাল মানের স্বাস্থ্যসেবার সর্বজনীন সুযোগের জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি ভারত–আফ্রিকা উন্নয়ন অংশীদারির ক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়েছে, বিশেষ করে সেই সব ক্ষেত্রে যেখানে ভারতীয় অভিজ্ঞতা এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলি আফ্রিকার স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনের সঙ্গে উপযুক্তভাবে অভিযোজিত হতে পারে। মাঝারি ও বিশেষ স্তরের হাসপাতাল ও ল্যাবগুলির উন্নয়নে ভারতীয় বেসরকারি ক্ষেত্রের বিনিয়োগের নানা সুযোগ রয়েছে। আফ্রিকার ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প এখনও নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে, এবং তা বিশাল সুযোগ তৈরি করে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য, যা কম মূল্যে জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম। এই লক্ষ্যে১ কোটি মার্কিন ডলারের ভারত–আফ্রিকা স্বাস্থ্য তহবিল, যা ২০১৫ সালে তৃতীয় ভারত–আফ্রিকা ফোরাম সামিট (আই এ এফ এস)–এ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা আরও ভালভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। হাসপাতালের সংখ্যা এবং তা কোথায় তৈরি হবে তা সনাক্ত করতে আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে পরামর্শ করার পরে ভারত মহাদেশ জুড়ে টার্শিয়ারি হাসপাতাল স্থাপনে সহায়তা করতে পারে। এটি স্থানীয় মালিকানাকে যেমন উৎসাহিত করবে, তেমনই সুবিধাভোগী দেশটি থেকে বড় পরিমাণে মালিকানার শেয়ার পাওয়া নিশ্চিত করতেও সহায়তা করবে।
আফ্রিকার ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্প এখনও নবজাতক পর্যায়ে রয়েছে, এবং তা বিশাল সুযোগ তৈরি করে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য, যা কম মূল্যে জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম।
গত দশকে ডিজিটাল উদ্ভাবন ও মোবাইল ফোনের মালিকানা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, বিশেষ করে ভারত এবং সাব–সাহারান আফ্রিকার দেশগুলিতে, বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কিন্তু সমগ্র মহাদেশ হিসেবে আফ্রিকা ডিজিটাল অনুপ্রবেশ, ব্যবহার ও ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে পিছিয়ে আছে। আফ্রিকার ডিজিটাল পরিকাঠামো এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে ডিজিটাল এবং উদীয়মান প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাদেশকে একীভূত করার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। ডিজিটাল রূপান্তরের লক্ষ্যে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ভারতনেট, প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা, ইন্ডিয়াস্ট্যাক ইত্যাদির মতো অনন্য ডিজিটাল উদ্যোগ চালু করেছে। দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে যদি লক্ষ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই ভারতীয় উদ্যোগগুলি আফ্রিকার দেশগুলিতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তাদের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে এবং তরুণ আফ্রিকানদের আরও কর্মসংস্থানে সাহায্য করতে পারে।
চিন, কোরিয়া বা সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলির বিপরীতে ভারত একটি বৃহৎ যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র। এটি অন্যান্য এশীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় আফ্রিকার চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত মডেল সরবরাহ করে। আফ্রিকা কীভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করতে পারে তা বোঝার জন্য ভারতের ডিজিটাল রূপান্তর একটি ভাল মডেল।
পরিচ্ছন্ন শক্তির অর্থায়নও সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। চিনের ২৩ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ১৩ শতাংশের বিপরীতে আফ্রিকাবিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৩.৮ শতাংশের জন্য দায়ী। অতএব, আফ্রিকার ক্ষেত্রে যা জরুরি তা কার্বন পদচিহ্ন হ্রাস করা নয়, বরং মহাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান সংস্থানগুলিকে টেকসইভাবে ব্যবহার করার উদ্ভাবনী উপায় খুঁজে বার করা। এখানেই আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মাধ্যমে ভারত আফ্রিকার দেশগুলিতে সৌরশক্তির সমাধান দিতে পারে। ভারত ইতিমধ্যেই আফ্রিকায় মূলত অফ–গ্রিডসৌর প্রকল্পগুলির জন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রেয়াতি এল ও সি নির্ধারণ করেছে, এবং আফ্রিকানদের জন্য বিদ্যুতের সংযোগ উন্নত করার লক্ষ্যে সাহেল অঞ্চল জুড়ে ১০,০০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিকাশের জন্য আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক গ্রুপের অংশীদার হয়েছে।
আফ্রিকার ডিজিটাল পরিকাঠামো এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে ডিজিটাল এবং উদীয়মান প্রযুক্তির মাধ্যমে মহাদেশকে একীভূত করার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারত ও আফ্রিকার অংশীদারি একটি সমতাভিত্তিক, পরামর্শমূলক ও সহযোগিতার সম্পর্কের মূর্ত প্রতীক। কাঠামোগত সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা তিন স্তরে কাজ করে: আফ্রিকান ইউনিয়নের সঙ্গে মহাদেশীয় স্তরে সমগ্র আফ্রিকায়; বিভিন্ন আফ্রিকান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে আঞ্চলিক এবং উপ–আঞ্চলিক পর্যায়ে; এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে আফ্রিকার পৃথক পৃথক দেশগুলির সঙ্গে। সি আই আই–এক্সিম ব্যাঙ্ক কনক্লেভ, আই এ এফ এস, ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন প্রোগ্র্যাম, এবং ইন্ডিয়া–আফ্রিকা ডিফেন্স মিনিস্টারস কনক্লেভ–এর মতো কথোপকথনগুলি অংশীদারি জোরালো করে ও তাতে প্রাণশক্তি জোগায়, এবং নিয়মিত ও টানা মিথস্ক্রিয়া নিশ্চিত করে৷
এই অংশীদারিগুলি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এবং বাস্তবতায় সঞ্চালিত হয়েছে, এবং বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও আফ্রিকার দেশগুলির বিভিন্ন অগ্রাধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মহাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নিজস্ব উপায়গুলিকে যথাযথ করে তুলে ভারত–আফ্রিকা অংশীদারিকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারত তার ইচ্ছা, ক্ষমতা এবং সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Abhishek Mishra is an Associate Fellow with the Manohar Parrikar Institute for Defence Studies and Analysis (MP-IDSA). His research focuses on India and China’s engagement ...