Expert Speak India Matters
Published on Feb 21, 2022 Updated 3 Days ago

এ বছরের সমীক্ষার আওতায় সেই সব ব্যাপক পরিবর্তনকে আনা হয়েছে যেগুলির মধ্য দিয়ে বিগত দশকগুলিতে, এমনকি অতিমারির সময়ে একটি দেশ হিসেবে ভারতকে এগিয়ে যেতে হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১-২২: নতুন নীতি নির্ধারণের জন্য নব প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন তথ্য

Source Image: Glenna Barlow — Flickr/CC BY-NC-ND 2.0

অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২১-২২: নতুন নীতি নির্ধারণের জন্য নব প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন তথ্য

২০২১-২২ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য হল নীতি নির্ধারণের একটি চিন্তা-উদ্দীপক বুদ্ধিদীপ্ত কাঠামো নির্মাণ। অবশ্যই সমীক্ষাটি প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি বেঙ্কট সুব্রহ্মণ্যম থেকে ভি অনন্ত নাগেশ্বরনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাঝে ঘটেছে এবং তাই অর্থনীতির বিশ্লেষণ এবং সাধারণ নির্দেশ গৃহীত হয়েছে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যালের মাধ্যমে। কিন্তু এই সমীক্ষার মূল ভরকেন্দ্রটি নিহিত রয়েছে চিরাচরিত ধারণার বাইরে চিন্তার বীক্ষণের মধ্যে এবং তা বিদ্যমান ডেটা পয়েন্ট থেকে বোঝা সম্ভব নয়।

সমীক্ষায় ৮০টি রিয়েল টাইম হাই-ফ্রিকোয়েন্সি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন পণ্য ও পরিষেবা কর সংগ্রহ, বিদ্যুৎ ব্যবহার, ডিজিটাল পেমেন্ট, উপগ্রহ চিত্র, কার্গো চলাচল এবং হাইওয়ে টোল সংগ্রহ। এই সমীক্ষায় নীতি নির্ধারণের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হয়েছে। সর্বজনবিদিত ‘ওয়াটারফল’ কাঠামো, যেখানে মনে করা হত যে পরিকল্পনাবিদরা সবই জানেন, সেখান থেকে সরে এসে বর্তমান সমীক্ষায় নীতিনির্ধারণের একটি নতুন পথের সন্ধান দেওয়া হচ্ছে যেখানে ফিডব্যাক লুপস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তথ্যের দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে এক স্থিতিস্থাপক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে। অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়ে — যদিও এটিকে একবিংশ শতাব্দীর নিউ নর্মাল হিসেবে দেখা উচিত — সরকার “একটি ‘বারবেল কৌশল’ অবলম্বন করে’ যেটিতে সমাজ / বাণিজ্যের অরক্ষিত সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব কমানোর জন্য তথ্যের বায়েসিয়ান আপডেটের উপর ভিত্তি করে একটি নমনীয় নীতি প্রতিক্রিয়া-সহ একগুচ্ছ সুরক্ষাপ্রদানকারী পদক্ষেপের সংযুক্তিকরণ ঘটানো হয়েছে।”

সর্বজনবিদিত ‘ওয়াটারফল’ কাঠামো, যেখানে মনে করা হত যে পরিকল্পনাবিদরা সবই জানেন, সেখান থেকে সরে এসে বর্তমান সমীক্ষায় নীতিনির্ধারণের একটি নতুন পথের সন্ধান দেওয়া হচ্ছে যেখানে ফিডব্যাক লুপস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তথ্যের দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থার মাধ্যমে এক স্থিতিস্থাপক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হচ্ছে।

কোভিড-১৯-এর মতো চিনে নির্মিত অতিমারির ফলে হওয়া অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মোকাবিলায় সরকারের তরফে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা প্রদানের কর্মসূচির আওতায় সরকারের তরফে মহিলা জন ধন অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের তিন মাস ধরে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা, বিধবা এবং বয়স্কদের মতো অরক্ষিত মানুষদের জন্য ১,০০০ টাকা এবং প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির অধীনে বার্ষিক ৬,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। একই ভাবে টাকা পাঠানো হয় খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, আবাসন, দক্ষতা উন্নয়ন, এম এস এম ই (ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ) এবং ঋণের আওতায়। অন্য দিকে, বারবেল কৌশল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার জন্য আর্থিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একসঙ্গে গতি বৃদ্ধি এবং গতি রুদ্ধ না করার মতো সময়োচিত কাজও করা হয়েছে। প্রথমে লকডাউনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ আনা হয় এবং তার পরে ধীরে ধীরে সব কিছু খুলে দেওয়ার মাধ্যমে গতি বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়। যেমন টিকাকরণের প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত এবং বর্তমানে তা সারা বিশ্বে একটি নজির সৃষ্টি করেছে।

এতে ভারতের ভালই হয়েছে। যেখানে ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড এক দিকে ২০২১ এবং ২০২২ সালে ভারতীয় অর্থনীতির ৯ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৮.০ থেকে ৮.৫ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে৷ এই বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে ১০.২ শতাংশের উচ্চ রাজস্ব ঘাটতি (একটি ধারণা যা আপাতত বিশ্বব্যাপী বাতিল করা হয়েছে), ৬৩,৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো সর্বকালীন উচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডার, ৪,৮৪০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ এবং ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের ৪৪টি ইউনিকর্ন। এই বৃদ্ধি এবং সুরক্ষা জালের ভারসাম্য অর্থনীতিকে সচল রেখেছে যার ফলে আগামী দুই বছরে ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই পুরো সময় ধরেই সংস্কার অব্যাহত রয়েছে। সংস্কারের তালিকাটি দীর্ঘ — ১৩টি ক্ষেত্রের জন্য উৎপাদন-সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা, জনসাধারণের খাতে সংগ্রহ, ড্রোন নিয়মাবলি, এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ, আমানত বিমা বৃদ্ধি, জাতীয় অর্থায়নের বিস্তার ও বণ্টন এবং চারটি লেবার কোডের ঘোষণা যার বিজ্ঞপ্তি প্রতীক্ষিত। এটি আশ্চর্যজনক যে, অর্থনৈতিক লেখকরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ১৯৯১ সালে পি ভি নরসিংহ রাওয়ের পরবর্তী সময়ে সর্বাধিক সংস্কারবাদী নেতা হওয়ার জন্য যথেষ্ট কৃতিত্ব দেননি।

ইন্টারন্যাশনাল মানিটরি ফান্ড এক দিকে ২০২১ এবং ২০২২ সালে ভারতীয় অর্থনীতির ৯ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ৮.০ থেকে ৮.৫ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে৷

নরসিংহ রাও সংস্কারের দ্বার খুলে দিয়েছিলেন এবং ভারতীয় অর্থনীতির গতিপ্রবাহে পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার অধীনে থেকেও এটি করেছিলেন। শুধু মাত্র কঠোর সংস্কার সাধনই নয়, বাস্তবে সেগুলির তৃণমূল স্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোদী সংস্কারের কাজকে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করেছেন। অন্য যে কোনও নেতার চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে তিনি এমনটা করছেন। এমনকি তিনটি কৃষি আইন — যেখান থেকে তিনি নিজেই সরে এসেছেন — যেগুলি ভারতের জন্য প্রয়োজনীয় দৃঢ় পদক্ষেপ হওয়া সত্ত্বেও তুচ্ছ এবং নোংরা রাজনীতির ফলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। রাজনীতির প্রকৃতিই এমন।

সমীক্ষাটি উপগ্রহ-চিত্র এবং মানচিত্রাঙ্কন কৌশলগুলির নমুনাও তুলে ধরে যা নীতি নির্ধারণের জন্য তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং তা করা হচ্ছেও। ভৌত এবং আর্থিক পরিকাঠামোর পরিধি থেকে শুরু করে মোট বীজ বপন করা এলাকা পর্যন্ত এই ছবিগুলি শুধুমাত্র আকর্ষক গল্পই বলে না, বরং নীতি নির্ধারণেরও জানালা খুলে দেয়৷ ২০০৫ এবং ২০২১ সালে পঞ্জাবের মোগা জেলায় খরিফ শস্য চক্রের তুলনামূলক ছ’টি চিত্রযুক্ত দুটি সেটের প্রত্যেকটিতে দেখা গেছে কী ভাবে খরিফ বপন চক্রটি প্রায় তিন সপ্তাহ এগিয়ে এসেছে। এবং এর ফলে খরিফ শস্য কর্তনের সময়টি নভেম্বর মাসে রবি শস্য বপনের সঙ্গে মিলে যায়। নিম্নলিখিত বিশ্লেষণটি আমাদের বলে, কেন নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে দিল্লির শ্বাস রোধ হয়ে আসে: “দুই শস্য চক্রের মাঝের সময়ের ব্যবধান কমে আসায় কৃষকরা নাড়া পোড়ানোর কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন এবং এটি তাড়াতাড়ি খরিফ ধানের রোপনের বিধিনিষেধের সঙ্গেও সম্পর্কিত হতে পারে। এই বিধিনিষেধগুলি ২০০৯ সালে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলনের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতির ফলে বায়ুর গুণমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অনিচ্ছাকৃত পরিণতিও দেখা যেতে পারে।”

এক জন ভাল পরিসংখ্যানবিদ হয়তো হাইওয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হবেন।

২০১১ এবং ২০২১ সালের আগস্ট মাসের ভারতের জাতীয় হাইওয়ে নেটওয়ার্কের দুটি ছবি থেকে এই সমীক্ষায় জাতীয় হাইওয়ে কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক বিতর্ক উঠে এসেছে। এক জন ভাল পরিসংখ্যানবিদ হয়তো হাইওয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির মানচিত্র তৈরি করতে সক্ষম হবেন। একটি উদীয়মান পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও যেখানেই বাধার সম্মুখীন হয়েছে, রাজ্য সরকারগুলি ধীর বৃদ্ধির হারের জন্য দায়ী নীতিগত দিকগুলি নিয়ে তদন্ত করেছে এবং কোন কোন কারণে কাজটি হয়নি তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। গুরুগ্রামের গল্ফ কোর্স (২০০৫ এবং ২০২১), মুম্বইয়ের বান্দ্রা-কুরলা (২০০১ এবং ২০২১) এবং বেঙ্গালুরুতে বাংমানে টেক পার্ক (২০০২ এবং ২০২১)… এই সব কটি ক্ষেত্রে উঠে আসা দুটি করে ছবি দৃশ্যত বেশ কয়েকটি গল্প বলে এবং এগুলি আগামিদিনে নগরায়নের নীতিগত ধারণা গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।

তথ্য বদলালে মতবাদ বদলায়। তথ্যের উৎসের পরিবর্তন এবং তথ্য প্রবাহ দ্রুততর ও বাস্তবভিত্তিক হলে মতামতের পরিসরের পরিবর্তন হওয়া উচিত। এই সমীক্ষায় সুন্দর ভাবে এই যুক্তির পক্ষেই সওয়াল তোলা হয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.