দক্ষিণ এশিয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঝুঁকির সম্মুখে অরক্ষিত। এক দিকে যখন শুষ্ক আফগানিস্তান ভূমিকম্প ও ভূমিধসের সম্মুখীন হয়, তখন অন্য দিকে পাকিস্তান অরক্ষিত থাকে বন্যা এবং ভূমিকম্পের সম্মুখে। নেপাল ও ভুটানও ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত এবং হিমবাহী হ্রদ বিস্ফোরণের কারণে বন্যার ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলির অন্যতম এবং মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়, ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যার শিকার হয় প্রতিনিয়ত। সুবিশাল বিস্তৃতি-সহ প্রতিবেশী ভারত নিজের ভূখণ্ডের বিভিন্ন অংশে নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী থাকে। উত্তর ভারত চরম তাপমাত্রা ও ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয় এবং ভারতের পূর্ব উপকূলরেখা বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির নিরিখে ঝুঁকিপূর্ণ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ও মাঝে মাঝে আন্দামান-সুমাত্রা সাবডাকশন জোন দ্বারা উত্পন্ন সুনামির সম্মুখীন হয়। একই অঞ্চলে নৈকট্যের দিক থেকে শ্রীলঙ্কা অবস্থিত হওয়ায় দ্বীপদেশটি সুনামি ও উপকূলীয় বন্যার প্রেক্ষিতে ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার নিরিখে বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশ মলদ্বীপ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কবলে পড়েছে। বিশ্বের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি (২৫.২ শতাংশ) এই অঞ্চলে বসবাস করে এবং প্রাকৃতিক বিপত্তি জীবন ও সম্পদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সুতরাং, দক্ষিণ এশিয়ায় বেঁচে থাকার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থাকার দরুন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি নীতি নির্মাণ করেছে, আইন পাস করেছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য নানাবিধ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করেছে। যাই হোক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি আন্তর্জাতিক হুমকি। তাই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ায় বৈদেশিক নীতি প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ কথা লক্ষ করা জরুরি, এই ধরনের সহযোগিতা বহুপাক্ষিক স্তরে বিরাজ করলেও তা মূলত দ্বিপাক্ষিক স্তরেই বেশি কার্যকর। এর অর্থ হল, কোনও সঙ্কটের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার ক্ষেত্র থাকলেও যখন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির বাইরের দেশের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন এটি সাধারণত কোনও একটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানের তরফে সাহায্যের প্রত্যাশা না করে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের কাছ থেকে সাহায্যের অনুরোধ করে। এর ফলস্বরূপ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আঞ্চলিক ব্যবস্থাগুলি অনুন্নতই রয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের এই ঘাটতি সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (এসএএআরসি বা সার্ক) গঠনের দিকে চালিত করেছে। সার্ক-এর আওতায় রয়েছে এই অঞ্চলের আটটি দেশ।
উত্তর ভারত চরম তাপমাত্রা ও ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয় এবং ভারতের পূর্ব উপকূলরেখা বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির নিরিখে ঝুঁকিপূর্ণ।
১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্ক ‘পরিবেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জৈবপ্রযুক্তি’ বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে একটি মূল উদ্বেগ হিসেবে তুলে ধরেছে। ফলস্বরূপ নানাবিধ অধ্যয়নের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি আঞ্চলিক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ পেয়েছে এবং ২১ বছর পরে ২০০৬ সালে সার্ক-এর সদস্য দেশগুলি অ্যাকশন ২০০৬-২০১৫-এর জন্য হায়গো ফ্রেমওয়ার্ক ফর অ্যাকশন ২০০৫-২০১৫-এর আদলে একটি সর্বাত্মক আঞ্চলিক কাঠামো গ্রহণ করে। যাই হোক, ২০১৫ সাল থেকে কাঠামোটির পুনর্নবীকরণ করা হয়নি, যা প্রাসঙ্গিক ও সক্রিয় থাকার উদ্যোগের অভাবকেই দর্শায়। এই অপ্রত্যাশিত দৃষ্টিভঙ্গির ফলে সার্ক-এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রটি এই অঞ্চলে মূলধারার প্রচেষ্টা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। যাই হোক, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক বেশি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার নিরিখে আঞ্চলিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সার্ক-এর কার্যকারিতার তাই সর্বাত্মক সমস্যার ঊর্ধ্বে উঠে, এই ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলিকে চিহ্নিত করা এবং মোকাবিলা করার আবশ্যিকতাকে দর্শায়। একই সঙ্গে এটি সার্ক-কে একটি সঙ্কটে সাড়া দিতে বা এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্রপাক্ষিক সহযোগিতার পথ দেখাতে সাহায্য করবে।
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব:
দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আঞ্চলিক উদ্যোগ অপ্রতিরোধ্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিক্রিয়াশীল হয়েছে। এর কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারবার প্রাকৃতিক বিপত্তি এই দেশগুলির ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের জীবনের একটি নিত্যনৈমিত্তিক অংশ হয়ে উঠেছে। বিস্ময়কর মাত্রার বিপর্যয় না ঘটলে সম্মিলিত ভাবে উদ্বেগ মোকাবিলার জন্য একটি আঞ্চলিক ব্যবস্থার প্রয়োজন অনুভূত হয় না। সেই অনুসারে, ১৯৮৫ সালে চরম আবহাওয়ার ঘটনা বৃদ্ধির ফলে সার্ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি ক্ষেত্র গ্রহণ করে। ২০০৪-এর সুনামি এবং ২০০৫-এর পাকিস্তানের ভূমিকম্প এর পরবর্তীকালীন বড় উন্নয়নের সূচনাকে উস্কে দেয় এবং তা হল কর্মসূচির জন্য সর্বাত্মক আঞ্চলিক কাঠামো গ্রহণ। পাকিস্তানে ২০১০ সালের বিধ্বংসী বন্যার প্রেক্ষিতে গৃহীত তৃতীয় বৃহৎ পদক্ষেপটি ছিল ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত সার্ক এগ্রিমেন্ট অন র্যাপিড রেসপন্স টু ন্যাচারাল ডিজাস্টারস (এসএআরআরএনডি)। এবং পাঁচ বছর পরে ২০১৬ সালে নেপালের ভূমিকম্পের পরে আবারও এসএআরআরএনডি বলবৎ করা হয়।
২০০৪-এর সুনামি এবং ২০০৫-এর পাকিস্তানের ভূমিকম্প এর পরবর্তীকালীন বড় উন্নয়নের সূচনাকে উস্কে দেয় এবং তা হল কর্মসূচির জন্য সর্বাত্মক আঞ্চলিক কাঠামো গ্রহণ।
ঘটনাপ্রবাহ এই ইঙ্গিতই দিয়েছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা উদ্দীপনার অনুপস্থিতিতে সার্ক তার গতিশীলতা হারিয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে দুর্যোগের অনুপস্থিতিতে একমাত্র বিকল্প হল রাজনৈতিক উদ্দীপনা। প্রকৃতপক্ষে, আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্ক-এর অধীনে বিকশিত হতে পারে, শুধু মাত্র যদি এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির সরকারের মধ্যে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। কিন্তু চিরাচরিত উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে জটিল পরিস্থিতিতে তা অর্জন করা কঠিন, যা আখেরে সার্ক-এর অসংবেদনশীলতাকেই দর্শায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং এর প্রভাবগুলি সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলির প্রতিটিতে একটি অভিন্ন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়ে উঠলেই এই ক্ষেত্রটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং দ্রুত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে। এই দেশগুলি আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্রপাক্ষিক সহযোগিতায় সম্পৃক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা সার্ক-এর বোঝা বহন করার পরিবর্তে উদ্বেগের প্রতি যথাযথ মনোযোগ প্রদানে সাহায্য করে।
অপূর্ণ শর্তাবলি:
এসএআরআরএনডি ২০১৬ সালে কার্যকর হলেও এর বেশির ভাগ শর্ত এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, এই চুক্তি অনুযায়ী কোনও দুর্যোগের সময় যদি কোনও সদস্য দেশ সাহায্যের অনুরোধ করে, তা হলে অন্য সদস্য দেশ তাদের সহায়তা নিয়ন্ত্রণ করতে যৌথ ভাবে বা স্বতন্ত্র ভাবে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। সদস্য দেশগুলির এইচএডিআর কর্মসূচিগুলির জন্য জাতীয় পর্যায়ে নির্দেশিকা থাকলেও তবে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সার্ক-এর আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার জন্য এই জাতীয় কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করা হয়নি। একই ভাবে, অনেক সদস্য রাষ্ট্র এইচএডিআর কর্মসূচির জন্য সঞ্চয় রাখার ভিত্তিতে সংস্থানগুলিকে চিহ্নিত করলেও সেগুলি বেশির ভাগই দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে প্রেরণ করা হয় এবং আঞ্চলিক সহায়তার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনোনীত হয় না। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরনের নিয়ম ও সম্পদের অনুপস্থিতিতে আঞ্চলিক সংস্থার পক্ষে এক দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সঙ্কটে থাকা সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। অধিকন্তু, এসএআরআরএনডি এসওপি তৈরির জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেয় না, যা সার্ক-এর সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাকে আরও হ্রাস করে।
বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে একটি বিকল্প হিসাবে তুলে ধরা হয়:
এসএআরআরএনডি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য যৌথ উদ্যোগকে বাধ্যতামূলক করে না। বরং এটি দ্বিপাক্ষিক বিকল্পের একটি ক্ষেত্র হিসেবে বহুপাক্ষিকতাকে তুলে ধরে। উদাহরণ স্বরূপ, চুক্তিটি দর্শায় যে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি ‘সম্মিলিত ভাবে বা স্বতন্ত্র ভাবে’ দুর্যোগ থেকে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কৌশল ও আকস্মিক প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা নির্মাণ করবে। এটি কোনও আঞ্চলিক এসওপি তৈরির আদেশ দেয় না। একই ভাবে, চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, ‘সদস্য রাষ্ট্রগুলি পর্যায়ক্রমিক মহড়ার আয়োজন করবে... যাতে এটি প্রতিক্রিয়ার জন্য আঞ্চলিক প্রস্তুতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে অন্য সদস্য দেশগুলিকেও আমন্ত্রণ জানাতে পারে।’ তাই, নিয়মিত আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের আয়োজন করার কোনও আইনি আদেশ নেই এবং কেবল মাত্র একটিই সার্ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মহড়া ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
একটি রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে দ্বিপাক্ষিকতা ক্রমশ অঞ্চলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছে, সে ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক যে সার্ক-এর কোনও প্রভাবিত দেশ আগে থেকে দুর্যোগের প্রতিক্রিয়া প্রদানের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা একটি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে না গিয়ে বরং সরাসরি তার দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের কাছেই সাহায্যের প্রত্যাশা করবে।
দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এসএআরআরএনডি বলেছে যে, প্রভাবিত সদস্য রাষ্ট্রগুলি অন্য সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে সরাসরি বা সার্ক-এর মহাসচিবের মাধ্যমে সহায়তার অনুরোধ করতে পারে। একটি রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে দ্বিপাক্ষিকতা ক্রমশ অঞ্চলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠছে, সে ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক যে সার্ক-এর কোনও প্রভাবিত দেশ আগে থেকে দুর্যোগের প্রতিক্রিয়া প্রদানের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা একটি বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে না গিয়ে বরং সরাসরি তার দ্বিপাক্ষিক অংশীদারদের কাছেই সাহায্যের প্রত্যাশা করবে। বিশেষ করে এমন একটি জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে পরীক্ষিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কাছে সাহায্য প্রত্যাশা করতে পছন্দ করবে দুর্যোগের মুখে অরক্ষিত হয়ে পড়া দেশটি। অতএব, সার্ক আবারও এই অঞ্চলে বাস্তবকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা থেকে ক্রমশ দূরে সরে গিয়েছে। একটি আঞ্চলিক প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, নিয়মিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলন, সম্পদ ও দক্ষতার একটি আঞ্চলিক ভাণ্ডার এবং এসওপি নির্মাণ… ইত্যাদি কিছু নির্দিষ্ট আঞ্চলিক কর্মসূচিকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেগুলিকে আইনি বিধান ও অঞ্চলগুলির উন্নয়নের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
কাঠামোগত পদ্ধতি এবং উদ্যোগের চাহিদা:
সর্বোপরি, কেন্দ্রীভূত কাঠামোর অভাবে সার্ক-এর মধ্যে আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সার্ক-এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রচেষ্টাগুলি এর একাধিক সংস্থার মধ্যে সমন্বিত হয়েছিল। যেমন সার্ক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেন্টার (এসডিএমসি) (ভারত), মিটিওরলজিক্যাল সেন্টার (ঢাকা), ফরেস্ট্রি সেন্টার (থিম্পু), এবং কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট সেন্টার (মালে)। চারটি কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং আপৎকালীন সময়ে তা সুবিধাজনক নয়। উপরন্তু, এটি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দেয়। তাই ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে পূর্ববর্তী চারটি সার্ক কেন্দ্রকে সমন্বিত করার মাধ্যমে এসডিএমসি-র ভূমিকা সম্প্রসারিত হয়। এই সমন্বিতকরণ আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও কাঠামোগত পদ্ধতির ইঙ্গিত দিলেও এখনও পর্যন্ত তা গতিশীলতা অর্জন করতে পারেনি। তদুপরি, আরও দূরদৃষ্টি এবং নেতৃত্বের প্রয়োজন রয়েছে। তাদের দক্ষতার ভিত্তিতে সদস্য দেশগুলিকে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের উন্নয়নের দায়িত্ব দিতে হবে। এটি ক্ষেত্রটিকে আরও উদ্যোগী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যদি দায়িত্বে থাকা দেশ এটিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্ব জোরদার করার কাজে লাগায়। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি উদ্দেশ্যচালিত উন্নয়নের সূচনা করবে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হলে আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্ক-এর অধীনে ফের উত্সাহ পাবে। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে এগুলি আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় যে কোনও ক্ষুদ্রপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। সর্বোপরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব সম্পর্কে একটি আঞ্চলিক সচেতনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির মধ্যে সম্মিলিত ভাবে এবং সহযোগিতামূলক ভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা আসলে একটি আঞ্চলিক দায়িত্ব।
সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।
এই নিবন্ধের একটি অংশ সর্বপ্রথম উপস্থাপিত হয় ২০২৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কনরাড অ্যাডেনর স্টিফটাং-এর (রিজিওনাল প্রোগ্রাম এনার্জি সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ এশিয়া-প্যাসিফিক) সহযোগিতায় পাকিস্তানের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড কনটেম্পোরারি রিসার্চ দ্বারা আয়োজিত ‘রিথিঙ্কিং ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া’ নামক আলোচনাসভায়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.