Author : Ramanath Jha

Expert Speak India Matters
Published on Sep 29, 2022 Updated 5 Days ago

নয়ডার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সাম্প্রতিক ঘটনা বুঝিয়ে দিল যে রিয়েল এস্টেট শিল্পের শহুরে আইন লঙ্ঘন আর সহ্য করা হবে না।

নয়ডা টাওয়ার ধ্বংস করা: আইন লঙ্ঘন সহ্য না-করার নীতি
নয়ডা টাওয়ার ধ্বংস করা: আইন লঙ্ঘন সহ্য না-করার নীতি

নয়ডার অ্যাপেক্স এবং সিয়ান নামের ১০০ মিটার উঁচু টুইন টাওয়ার ২৮ আগস্ট ২০২২ –এ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধ্বংসের ঘটনাটি নিয়ে সব মহলেই ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। যাই হোক, এতে ব্যবহার করা হয়েছিল এক দর্শনীয় পদ্ধতি, যাকে বলা হয় ‘‌কনট্রোলড ইমপ্লোশন’‌। এর উপরেই সবার বেশি নজর ছিল। এর জন্য ভবনগুলির চারপাশের ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধ এক্সক্লুশন জোন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, এবং সেখান থেকে সকলকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রকৌশলী ও ‘বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ’রা ৩,৭০০ কেজি বিস্ফোরক ওই দুটি আবাসিক ভবনের স্তম্ভ ও দেয়ালে ঢুকিয়ে দেন। যখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, সে দুটি নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে দ্রুত পর পর ভেঙে পড়ে। টুইন টাওয়ারের বিভিন্ন তলের মেঝে একে অপরের উপর ভেঙে পড়ে যাকে ‘‌ জলপ্রপাত প্রভাব’‌ বলা হয়। আনুমানিক ৮০,০০০ টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে, যা সরাতে তিন মাস সময় লাগবে। এই ধ্বংসযজ্ঞটি নিখুঁতভাবে সম্পাদিত হয়েছিল, এবং সেটাই ছিল এমারেল্ড কোর্টের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতারণা এবং নগর সংক্রান্ত আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘনের এই জঘন্য কাহিনিতে একমাত্র ইতিবাচক ঘটনা। পুরো অভিযানটিতে পুলিশ এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা সহায়তা করেছিলেন।

এই মামলার গল্পটি হল:‌ ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিউ ওখলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভলপমেন্ট অথরিটি (নয়ডা) এমারেল্ড কোর্ট নামে একটি গ্রুপ হাউজিং সোসাইটি তৈরির জন্য সুপারটেক লিমিটেডকে একটি প্লট (৫৪,৮১৯.৫১ বর্গ মিটার) বরাদ্দ করেছিল। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ১৬টি টাওয়ার সমন্বিত বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন করে, যার প্রতিটিতে গ্রাউন্ড প্লাস ১১ ফ্লোর (জি+১১) ছিল এবং সেগুলির নির্ধারিত উচ্চতা ছিল ৩৭ মিটার। এতে একটি জি+১ শপিং কমপ্লেক্সেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরিকল্পনায় টাওয়ার ১–এর সামনে একটি সবুজ এলাকা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। সুপারটেকের যে ব্রোশিওর ক্রেতাদের দেওয়া হয়েছিল তাতেও এই সবুজ এলাকাটি প্রদর্শন করা হয়। ২০০৮ সালে সমাপ্তির শংসাপত্রও তাই করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে উত্তরপ্রদেশ সরকার এফ এ আর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) সংশোধন করে ২ থেকে বাড়িয়ে ২.৭৫ করে। এমনকি এই পরিবর্তনটির নোটিফিকেশনের আগেই সুপারটেক দুটি অতিরিক্ত টাওয়ার নির্মাণ শুরু করে দেয় — অ্যাপেক্স ও সিয়েন। যাঁরা ইতিমধ্যেই অন্য বিল্ডিংগুলিতে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁদের জানানো হয়েছিল যে টি–১৬ এবং টি–১৭ টাওয়ারগুলির আলাদা প্রবেশ, প্রস্থান, সুযোগ–সুবিধা এবং পরিকাঠামো থাকবে। উপরন্তু বলা হয়েছিল এই দুটি টাওয়ার, যেগুলির প্রতিটিতে জি+২৪ ফ্লোর আছে এবং যেগুলির উচ্চতা ৭৩ মিটার, সেগুলি একটি সীমানা প্রাচীর দ্বারা পৃথক করা হবে।

এমারেল্ড কোর্টের রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (আর ডব্লিউ এ) বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং অনুমোদিত পরিকল্পনার অনুলিপির জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

৩০ নভেম্বর ২০১০–এ নিউ ওখলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট এরিয়া বিল্ডিং রেগুলেশনস ২০১০ কার্যকর হয়। এর একটি প্রবিধানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে দুটি বিল্ডিংয়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, এবং ভবনগুলির উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পাবে। আরও একটি সংশোধনীতে টি–১৬ এবং টি–১৭–কে ফ্লোর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৪ থেকে ৪০ তলা (অর্থাৎ জি+৪০) করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে বিল্ডিংয়ের উচ্চতা ১২১ মিটারে উন্নীত হয়।

এরপর এমারেল্ড কোর্টের রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (আর ডব্লিউ এ) বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং অনুমোদিত পরিকল্পনার অনুলিপির জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। প্রাপ্ত উত্তরে অসন্তুষ্ট হয়ে তারা তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চায়। প্রবিধানের একাধিক লঙ্ঘন ঘটেছে বুঝতে পেরে এরপর আর ডব্লিউ এ আইনি পরামর্শ চেয়েছিল, এবং বিষয়টি আদালতে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর প্রায় এক দশক ধরে লড়াই চলে। অবশেষে টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির সমাপ্তি করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ এবং ডেভেলপারের বিরুদ্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণ করেছে। বিচারপতিরা মন্তব্য করেছেন, এমারেল্ড কোর্ট আর ডব্লিউ এ–র থেকে তথ্য আড়াল করার একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালিয়েছে সুপারটেক লিমিটেড ও নয়ডা ৷ এটা স্পষ্ট যে টি–১ এবং টি–১৭–র মধ্যে নির্ধারিত দূরত্ব রাখা হয়নি। অনুমোদন দেওয়ার সময় খোলা জায়গার স্পষ্ট ঘাটতির বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছিল, এবং ২৪ থেকে টাওয়ারগুলির উচ্চতা আরও বাড়িয়ে ৪০ তলা করার জন্য ডেভেলপারের প্রস্তাবটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা উচিত ছিল। তবুও আইনের বিধান স্পষ্টত অমান্য করে নয়ডা ডেভেলপারকে সমর্থন করার পথ বেছে নেয়। সুপারটেক লিমিটেড মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তথ্য জমা করেছে যে প্রকল্পে টাওয়ারের একটি ক্লাস্টার একটি পুরো ব্লক তৈরি করে, এবং এইভাবে ন্যূনতম দূরত্বের প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে এই মামলার রেকর্ড এমন উদাহরণ দিয়ে পরিপূর্ণ যা নয়ডা এবং সুপারটেকের মধ্যে জঘন্যভাবে কুকর্মে সহায়তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে।

টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার জন্য হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্ট ডেভেলপারকে মোটা অঙ্কের খরচ দিতে বাধ্য করেছে। এটি ধ্বংস করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল, এবং ব্যয়ভার ডেভেলপারকে বহন করতে হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের প্রদেয় ফি সহ সমস্ত আনুষঙ্গিক খরচ সুপারটেককেই বহন করতে বলা হয়। সংস্থাটিকে এপেক্স এবং সিয়ানে যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁদের টাকা ফেরত দিতে এবং আর ডব্লিউ এ–র  মোকদ্দমা খরচ ২০ মিলিয়ন ভারতীয় টাকা ফেরত দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ধ্বংস করার ঘটনাটি এমন একটি বার্তাও দিতে চায় যে এই ধরনের লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না, এবং প্রধান অপরাধী ডেভেলপারকে এমন ভয়ঙ্কর আচরণের জন্য বিশাল মূল্য দিতে হবে।

নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক হল আদালতের এই পর্যবেক্ষণ যে অননুমোদিত নির্মাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষত মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে। ডেভেলপার এবং পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগসাজশের কারণেই এমনটা ঘটছে। আরও হাউজিং স্টক তৈরির প্রয়োজনীয়তা বোঝা গেলেও পরিবেশ ও নিরাপত্তার উদ্বেগের সঙ্গে তার ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন ছিল। পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিধির লঙ্ঘন নগর পরিকল্পনার একেবারে মূল অংশে আঘাত হানে।

বিগত কয়েক সপ্তাহে টুইন টাওয়ারের উপর যে আলোকপাত করা হয়েছে তা থেকে আমাদের এমন মনে করার কোনও কারণ নেই যে এই ধরনের নির্মাণ এই প্রথম। ১৯৯০–এর দশকে দক্ষিণ মুম্বইতে ৩৬ তলা টাওয়ার প্রতিভা, যাকে ‘‌দুর্নীতির মূল টাওয়ার’‌ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা বম্বে হাইকোর্টের আদেশের পরে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল আরও আটটি তলা নির্মাণের অনুমতি পাওয়ার জন্য প্লট এলাকা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল। সম্প্রতি, ২০২২ সালের জুলাইয়ে, বম্বে হাইকোর্ট শহরের বিমানবন্দরের চারপাশের ৪৮টি বহুতল  কাঠামোর অননুমোদিত অংশগুলি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়। সেগুলি উচ্চতা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছিল এবং বিমান ওঠানামায় বাধা সৃষ্টি করছিল। দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের ঘটনার মাত্র কয়েকটিই নজরে আসে, কারণ অন্যগুলো নিয়ে হয় প্রশ্ন তোলা হয় না বা আদালতে যাওয়া হয় না। এটা স্পষ্ট যে এই ধরনের নির্মাণগুলি হয় মিথ্যা নথির উপর ভিত্তি করে হয়, অথবা নির্মাণ পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে। এই ক্ষেত্রে, ফ্লোর এরিয়া রেশিও পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা রাজ্যের নগর উন্নয়ন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কার্যকর হতে পারে না।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যে নির্মাণে ০.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ভেঙে ফেলতে ০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে, তা আদৌ ভেঙে ফেলা উচিত কিনা। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে কাঠামো ধ্বংস করা আবাসন প্রদানের, যা একটি মৌলিক প্রয়োজন, তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য পূরণ করে না। কিন্তু এর মধ্যে পরিবেশ, নির্মিত ঘনত্ব ও নিরাপত্তার মতো নগর পরিকল্পনার বিষয়গুলিও রয়েছে যা সমান তাৎপর্যপূর্ণ এবং যা নিয়ন্ত্রিত করা প্রয়োজন। ধ্বংস করার ঘটনাটি এমন একটি বার্তাও দিতে চায় যে এই ধরনের লঙ্ঘন সহ্য করা হবে না, এবং প্রধান অপরাধী ডেভেলপারকে এমন ভয়ঙ্কর আচরণের জন্য বিশাল মূল্য দিতে হবে। সমস্ত অননুমোদিত কাঠামো রাষ্ট্র কর্তৃক বিকল্প ব্যবহারের জন্য বাজেয়াপ্ত করার যে যুক্তি দেওয়া হয়, তা একটি বিপজ্জনক যুক্তি, কারণ তা নগর শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক ঘটনা। দুর্ভাগ্যবশত, যাঁরা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁরা সাধারণত শাস্তির বাইরে থেকে যান, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

আরও হাউজিং স্টক তৈরির প্রয়োজনীয়তা বোঝা গেলেও পরিবেশ ও নিরাপত্তার উদ্বেগের সঙ্গে ‌তার ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন ছিল। পরিবেশ ও নিরাপত্তা বিধির লঙ্ঘন নগর পরিকল্পনার একেবারে মূল অংশে আঘাত হানে।

এই ধরনের সমস্যাগুলি মোকাবিলার সর্বোত্তম পদ্ধতি হল স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মতো সুশাসনের সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করা। প্রতিটি মিউনিসিপ্যাল এবং ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে বাধ্যতামূলকভাবে তাদের প্রদত্ত সমস্ত বিল্ডিং পারমিশন শেয়ার করতে হবে এবং তাদের ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করতে হবে। লঙ্ঘন লক্ষ্য করা গেলে ডেভেলপার এবং তাদের মদ‌তদাতাদের শাস্তি কঠোর হতে হবে, যাতে ভয়ে মানুষ এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকেন। উন্নত বিশ্ব ব্যাপক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ফলস্বরূপ, বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন বিরল। দুঃখের বিষয়, ভারতে ইউ এল বি এবং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সুশাসনের কথা প্রতিনিয়ত বলা হয় ঠিকই, কিন্তু খুব কম কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.