-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের নিরাপত্তার চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিরক্ষা বাজেট উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তা কি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট হবে?
প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২২-২৩: ভারতকে নিরাপদ করা ও আত্মনির্ভরতার পথ অনুসরণ
এই নিবন্ধটি ‘বাজেট ২০২২: পরিসংখ্যান ও তদুপরি’ সিরিজের অংশ।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর বাজেট বক্তৃতায় দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং গবেষণা ও উন্নয়নে জোর দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন, এবং সে সময় তিনি ভারতের প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরতার সন্ধানের উপরেও জোর দিয়েছিলেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোকাস হিসেবে থেকেছে, এবং বিগত কয়েকটি বাজেটে বরাদ্দের সবচেয়ে বড় অংশ (১৩-১৪ শতাংশ) পেয়েছে। এই বছরও তাই ঘটেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য এ বারে বরাদ্দ হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৫২৫,১৬৬ কোটি টাকা।
নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার মতো একাধিক বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই বাজেট বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে পূর্ব লাদাখে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র সঙ্গে সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার পর এখন সেখানকার পরিস্থিতি অচলাবস্থার পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং সাম্প্রতিক আলোচনায় তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি। বরং এই অচলাবস্থা যে আরও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন লক্ষণ স্পষ্ট। ভারতীয় সামরিক বাহিনীকে অতএব এই অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি আরও জোরদার করতে হবে, যাতে পিএলএ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় আরও দুঃসাহসিকতায় লিপ্ত না–হয়। কাশ্মীরে পাক-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি তাদের কার্যকলাপ বাড়াতে পারে এমন ইঙ্গিত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আফগানিস্তানে তালিবানের জয় অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। এই গতিশীলতা ভারতকে সুরক্ষিত করার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান উপলব্ধ করার বিষয়টিকে অপরিহার্য করে তুলেছে।
২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে পূর্ব লাদাখে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র সঙ্গে সীমান্তে মুখোমুখি হওয়ার পর এখন সেখানকার পরিস্থিতি অচলাবস্থার পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং সাম্প্রতিক আলোচনায় তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি।
তবে এখন যে সব সামরিক সংস্কার করা হচ্ছে, এবং প্রতিরক্ষা শিল্পায়নের জন্য মোদী সরকারের প্রয়াসের একটি পটভূমিও রয়েছে। গত অক্টোবরে সরকার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি)–কে সাতটি নতুন প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ইউনিটে পুনর্গঠিত করেছে। ওএফবি-র দীর্ঘদিনের বকেয়া বাণিজ্যিকীকরণের লক্ষ্যে পৌঁছনোর পর সরকার আশা করছে অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাঁজোয়া যান ও পোশাক উৎপাদনে দক্ষ হয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আশা করা যায় এই ভাবে প্রতিরক্ষা রপ্তানিও বাড়বে। ফিলিপিনসকে ব্রহ্মস ক্রুজ মিসাইল সিস্টেম বিক্রির জন্য সাম্প্রতিক ৩৭.৫ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। প্রতিরক্ষা বাজেট এই প্রেক্ষাপটে তাৎপর্য অর্জন করেছে।
২০২২-২৩ অর্থবর্ষে অর্থমন্ত্রী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ করেছেন ৫২৫,১৬৬.১৫ কোটি টাকা। এই পরিমাণ আগের বছরের বরাদ্দ ৪৭৮,১৯৬ কোটির থেকে ৪৬,৯৭০ কোটি টাকা বা আনুপাতিক হারে ১০ শতাংশ বেশি, এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতিরক্ষা বাজেটের সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি।
সারণি ১: প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য বাজেট বরাদ্দ
২০১৯-২০ | ২০২০–২১ | ২০২১–২২ | ২০২২–২৩ (বাজেট অনুমান) | |
প্রতিরক্ষা পরিষেবা (রাজস্ব) | ২,২৩,২৪০.৮৩ | ২,২৪,৩৫১.৭৬ | ২,৩৮,৭১৭.০৯ | ২,৩৯,৭৪৩.৭১ |
মূলধনী ব্যয় | ১,১১,০৯২ | ১,৩৪,৩০৪.৯২ | ১,৩৮,৮৫০.৯০ | ১,৫২,৩৬৯.৬১ |
প্রতিরক্ষা পেনশন | ১,১৭,৮১০ | ১,২৮,০৬৫.৮৮ | ১,১৬,৮৭৮ | ১,১৯,৬৯৬ |
সূত্র: অর্থ মন্ত্রক, সব সংখ্যা ভারতীয় মুদ্রায় কোটিতে
কিন্তু এই বাজেট বৃদ্ধি সম্পদের প্রাপ্যতার চ্যালেঞ্জকে গোপন করে। গত এক দশকে প্রতিরক্ষা বাজেট গড়ে বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। এই বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি ও তিনটি বাহিনীর চাহিদার সঙ্গে পুরোপুরি তাল রাখতে পারছে না।
মূলধনী ব্যয়ের জন্য এ বারের বাজেটে ভারতীয় মুদ্রায় ১৫২,০০০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে, যা তিনটি বাহিনীর চাহিদার তুলনায় অনেক কম৷ ২০২১-২২-এর জন্য প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি উল্লেখ করেছে যে সেনা, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর জন্য চাহিদা ও বাজেট বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান ছিল যথাক্রমে ভারতীয় মুদ্রায় ১৪,৯৬০.২ কোটি, ৩৭,৬৬৭.২৩ কোটি ও ২৩,৯২৫.৭৯ কোটি। এদের মধ্যে নৌবাহিনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
২০১৮ সালে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত লোকসভার স্থায়ী কমিটির সুপারিশ ছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জন্য জিডিপি-র ৩ শতাংশের সমতুল্য বাজেট বরাদ্দ করা উচিত। বাস্তবে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপি–র প্রায় ২ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করেছে। কোভিড-১৯ এখনও ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলছে, তাই অপ্রতুল বরাদ্দের এই সমস্যাটি আরও কয়েক বছর চলতেই থাকবে বলে মনে হয়।
এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার জন্য ২০২০-র প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া (ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রসিডিওর) ‘সম্পত্তির মালিকানা ছাড়াই সম্পদের অধিকার ও ব্যবহারের’ উপায় হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু সরঞ্জাম লিজ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। এতে এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়া হয়েছে যে লিজিং ‘সময়ভিত্তিক ভাড়া গোনার মাধ্যমে বিশাল প্রাথমিক মূলধন ব্যয় প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয়’। নৌবাহিনী এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে এবং সামুদ্রিক নজরদারির উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি এমকিউ–৯বি সি গার্ডিয়ান অস্ত্রবিহীন ড্রোন লিজ নিয়ে এই বিধানটি কাজে লাগিয়েছে।
২০২০-র প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া (ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন প্রসিডিওর) ‘সম্পত্তির মালিকানা ছাড়াই সম্পদের অধিকার ও ব্যবহারের’ উপায় হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু সরঞ্জাম লিজ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবর্ষে ঘটা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি হল তিনটি বাহিনী তাদের মূলধনী বরাদ্দের ৬৪ শতাংশ দেশীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলিতে ব্যয় করেছে বলে রিপোর্ট এসেছে। এটা অবশ্যই আমদানি করা যন্ত্রপাতির উপর নির্ভরতা কমাতে সরকারের ক্রমাগত চাপের ফল। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে সরকার দুটি নেতিবাচক আমদানি তালিকা এনেছে, যা ২০০টিরও বেশি অস্ত্র ও প্ল্যাটফর্মের আমদানি ধীরে ধীরে নিষিদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী এর ফলে আগামী ছয় থেকে সাত বছরে দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প ৪ লক্ষ কোটি টাকার বরাত পাবে। তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প সময়মতো এই সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে সংশয় রয়েছে। প্রাসঙ্গিক তথ্য হল, ২০২১–২২ অর্থবর্ষে বাজেটে মূলধন সংগ্রহ বাবদ ৫৮ শতাংশ সংরক্ষিত ছিল দেশীয় সরঞ্জামের জন্য। ভারতীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিল ৭০,২২১ কোটি। বর্তমান বাজেটে তা এখন বেড়ে হয়েছে ৬৮ শতাংশ।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নকে শক্তিশালী করাই মূল বিষয়। সরকার স্টার্ট-আপ সহ বেসরকারি ক্ষেত্রকে গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) সংযুক্ত হতে উৎসাহিত করেছে। দেশীয় উদ্ভাবন বাস্তুতন্ত্র কাজে লাগাতে ‘ইনোভেশনস ফর ডিফেন্স এক্সিলেন্স’–এর মতো উদ্যোগও চালু করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের বাজেট বিষয়টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য প্রতিরক্ষা আরঅ্যান্ডডি বাজেটের ২৫ শতাংশ সরিয়ে রেখে। বেসরকারি ক্ষেত্রের নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা ও তা সার্টিফাই করতে একটি নতুন সংস্থা তৈরির পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী।
মহাদেশে এবং সামুদ্রিক ক্ষেত্রে আগ্রাসী চিন, বিদ্বেষপূর্ণ পাকিস্তান এবং এক অ–স্থিতিশীল আফগানিস্তানের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের নিরাপত্তা পরিবেশ সুরক্ষিত করা একটি জটিল প্রচেষ্টা হয়ে উঠেছে। প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতার লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এই বাজেট সাম্প্রতিক বছরগুলির অর্জনের ভিত্তির উপর নির্মাণ আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে, এবং আগামীর একটি প্রতিশ্রুতিময় পথের নকশা তৈরি করেছে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr Sameer Patil is Director, Centre for Security, Strategy and Technology at the Observer Research Foundation. His work focuses on the intersection of technology and national ...
Read More +