Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 20, 2022 Updated 5 Days ago

বাইডেন প্রশাসনের তরফে একটি সুনির্দিষ্ট ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে যা অঞ্চলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতাকেই তুলে ধরে।

বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিশ্লেষণ

Source Image: Cameron Smith — The White House/Flickr

বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিশ্লেষণ

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কোয়াড বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকের মাত্র একদিন পরেই অর্থাৎ ২০২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাইডেন প্রশাসন তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কথা ঘোষণা করে। এই ঘটনা স্পষ্টতই বুঝিয়ে দেয় যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য এবং কৌশলের বাস্তবায়নে কোয়াডকেই সর্বাধিক সম্ভাবনাময় মঞ্চ রূপে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলটি বরাবরই একাধিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নীতি নির্ধারণের কেন্দ্রে থেকেছে। যেমন- প্রেসিডেন্ট ওবামার ‘পিভোট টু এশিয়া’ বা ‘রিব্যালান্স’ (ভারসাম্য পুনর্বহাল করা) এবং ট্রাম্প প্রশাসনের নিজস্ব ‘স্ট্র্যাটেজিক ফ্রেমওয়ার্ক ফর দি ইন্দো-প্যাসিফিক’ (ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য কৌশলগত পরিকাঠামো)। ফলে বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতেও অঞ্চলটির প্রতি আমেরিকার স্থায়ী আগ্রহ এবং অঞ্চলটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আভাস পাওয়া যায়। এই নথিটি সম্ভবত এমন এক জটিল সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে যখন ইউরোপীয় নিরাপত্তা পরিকাঠামোর পুনর্বিন্যাস আসন্ন এবং বিশ্বের অন্য প্রান্তে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ রুখতে আমেরিকাকে যথেষ্ট মনোযোগ এবং পুঁজি দুই-ই বিনিয়োগ করতে হবে। এ সব কিছুই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি স্থায়ী আঞ্চলিক কৌশলের অপরিহার্যতাকে তুলে ধরে। এই নথিতে বিশেষ জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, প্যাসিফিক দ্বীপগুলি-সহ উত্তর-পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া থেকে ওশিয়ানিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের প্রতিটি কোনায় আমেরিকা বিশেষ ভাবে নজর দেবে। এ হেন পদক্ষেপের দু’টি কারণ বর্তমান। এক, ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে বন্ধু দেশগুলিকে আমেরিকার তরফে সহায়তা করার ফিকে হয়ে আসা প্রতিশ্রুতিকে ফিরিয়ে আনা এবং দুই, এ কথার আভাস দেওয়া যে এই বিস্তৃত অঞ্চলের কোনও এক দিকে মনোযোগ দিলেও আমেরিকা অন্য অংশকে বঞ্চিত করবে না।

এই নথিটি সম্ভবত এমন এক জটিল সময়ে প্রকাশিত হচ্ছে যখন ইউরোপীয় নিরাপত্তা পরিকাঠামোর পুনর্বিন্যাস আসন্ন এবং বিশ্বের অন্য প্রান্তে ইউক্রেনের সীমান্তে রুশ আক্রমণ রুখতে আমেরিকাকে যথেষ্ট মনোযোগ এবং পুঁজি দুই-ই বিনিয়োগ করতে হবে। এ সব কিছুই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি স্থায়ী আঞ্চলিক কৌশলের অপরিহার্যতাকে তুলে ধরে।

স্বাভাবিক ভাবেই এই নথিতে অঞ্চলটিতে ওয়াশিংটনের গভীর মনোযোগের নেপথ্যে চিনা আগ্রাসনকেই অন্যতম প্রধান কারণ রূপে তুলে ধরা হয়েছে। বিশদে বলতে গেলে এই নথিতে চিনের আগ্রাসন এবং অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমেরিকা বেজিংয়ের সঙ্গে যে তীব্র ক্ষমতার লড়াইয়ের মুখোমুখি, সে কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। বিশেষত, চিনের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক চাপানউতোর, এল এ সি বরাবর ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্ত সংঘাত, পূর্ব এবং দক্ষিণ-চিন সাগরে সার্বভৌমত্বকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ এবং তাইওয়ানের উপরে আগ্রাসনের ক্রমবর্ধমান ছায়া — সব কিছুকেই চিনের আগ্রাসী, গা-জোয়ারি এবং জবরদস্তিমূলক কৌশলের নমুনা রূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও নথিটিতে নৌ-চলাচলের স্বাধীনতা-সহ মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপরে সমান ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন এবং পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি না করার মতো বিষয়গুলিতে চিনের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করার উপরেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নথিটিতে অঞ্চলের অংশীদার এবং বন্ধু দেশগুলির সঙ্গে একজোট হয়ে চিনের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতার নীতি গ্রহণের পাশাপাশি চিনের সঙ্গেও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট সুযোগ রাখার ব্যাপারটি স্পষ্ট করা হয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অঞ্চলটিতে ফিলিপিনস, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতের মতো আমেরিকার বন্ধু এবং অংশীদার দেশগুলি চিনের ‘আগ্রাসী উত্থান’ সম্পর্কে অবগত এবং তারা আমেরিকার সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুদৃঢ় করতে চায়। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে, তাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড-সহ ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো বেশ কিছু আসিয়ান সদস্য দেশ, এমনকি ই ইউ-ও হেজিং অ্যাপ্রোচ বা সাবধানতার নীতি অবলম্বন করেছে। এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে সন্তর্পণে পদক্ষেপ করতে আগ্রহী। ফলে সব অংশীদার দেশই যে আমেরিকার সঙ্গে একজোট হয়ে চিনের উত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো এই দেশগুলিও চিন সংক্রান্ত নীতি গ্রহণে প্রতিযোগিতা এবং সহযোগিতার মিশ্র পথ অবলম্বন করতে চাইবে।

কৌশলগত দিক থেকে বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি দু’টি মূল স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটি হল, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে, যেখানে চিন সক্রিয়, সেখানকার আঞ্চলিক কৌশলগত পরিবেশ পরিবর্তন করার প্রচেষ্টার কেন্দ্রে সমস্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারের প্রচেষ্টার সমষ্টিকরণ করা। এমনটা করার মাধ্যমে অঞ্চলটির সমমনস্ক অংশীদার এবং বন্ধু দেশগুলির উপরে প্রভাবের একটি আঞ্চলিক ভারসাম্য গড়ে তোলা এবং অঞ্চলের অন্যান্য সদস্য দেশকেও ধীরে ধীরে তার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিকের আঞ্চলিক ভারসাম্যের প্রভাবকে তার বন্ধু ও অংশীদার দেশ সহ নিজের কাজে লাগিয়ে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চায়। একটি সুসমন্বিত ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে আমেরিকা যে সব দেশ এবং আঞ্চলিক সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাতে চায়, এই নথিতে তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, ফ্রান্স, আর ও কে, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ই ইউ, আসিয়ান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশগুলি।

অঞ্চলটির সমমনস্ক অংশীদার এবং বন্ধু দেশগুলির উপরে প্রভাবের একটি আঞ্চলিক ভারসাম্য গড়ে তোলা এবং অঞ্চলের অন্যান্য সদস্য দেশকেও ধীরে ধীরে তার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হবে।

‘এই আঞ্চলিক পরিকল্পনায় অংশীদার হিসেবে এক শক্তিশালী ভারতকে সাহায্য করার জন্য’ ভারতের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করা এবং স্বাস্থ্য, মহাকাশ ও সাইবার স্পেসের মতো নতুন ক্ষেত্র সহ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার কথা একাধিক বার উল্লেখ করা হয়েছে। এবং কৌশল বাস্তবায়নের কর্মসূচিতে সেটির উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ার নেতা রূপে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভারত মহাসাগরে প্রধান নিরাপত্তা প্রদানকারী এবং আসিয়ানে যথেষ্ট প্রভাবশালী হওয়ার পাশাপাশি সে কোয়াডেরও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। যে হেতু আমেরিকার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চল, তাই ভারতের নিকটস্থ পশ্চিম ভারত মহাসাগরে — যেখানে চিনের হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে — ভারত ঠিক কোন ভূমিকায় আমেরিকাকে দেখতে চায়, সে কথারও উল্লেখ থাকতে পারে।

অঞ্চলটিতে লক্ষ্য অর্জনে কোন পদ্ধতি এবং পন্থা অবলম্বন করা হবে, সেগুলিও এই নথির কর্মপরিকল্পনায় উল্লিখিত হয়েছে। একটি মুক্ত এবং স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিকের অগ্রগতির প্রথম কৌশলগত উদ্দেশ্য একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেয়: প্রশাসনিক নিয়ম, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং সমালোচনামূলক ও উদীয়মান প্রযুক্তি, স্থান এবং সাইবার ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে অংশীদারিত্ব। অভ্যন্তরীণ ভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলির মধ্যে অবাধ এবং মুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলি তথ্য, অভিব্যক্তি এবং প্রশাসনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিস্তৃত হবে। এগুলি সম্ভব করে তোলার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা অর্জনের ক্ষমতা, দুর্নীতির পর্দা ফাঁস এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের অর্থনীতি জুড়ে সংস্কার চালানোর মতো কাজগুলি সব থেকে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয় দিকটি দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরের কথা মাথায় রেখে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে রুলস বেসড অর্ডারের ধারাবাহিকতার কথা বলে। সেই কারণে প্যাসিফিক ডেটারেন্স ইনিশিয়েটিভ এবং মেরিটাইম পলিসি ইনিশিয়েটিভের অর্থায়নের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে একত্রে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মনোযোগের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হল গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিতে সাধারণ উদ্যোগগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই বাইডেন প্রশাসনের মূল সুরের সঙ্গে অনুরণিত। যদিও আন্তর্জাতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি সাম্প্রতিক অতীতের প্রেক্ষিতে পুনরায় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে — যার মধ্যে রয়েছে কোয়াডের সংস্কারমূলক উদ্দেশ্যগুলি, অভ্যন্তরীণ ভাবে ন্যাশনাল সায়েন্স এবং টেকনোলজি কাউন্সিলের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলির উপর ফাস্ট ট্র্যাক অ্যাকশন সাবকমিটি গঠনের মাধ্যমে অঞ্চলটিতে তার জনমতের প্রসার

মনোযোগের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হল গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিতে সাধারণ উদ্যোগগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই বাইডেন প্রশাসনের মূল সুরের সঙ্গে অনুরণিত।

বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির একটি অংশ হল বিবদমান দেশগুলির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের উপরে আলোকপাত করা,, যে দেশগুলিকে আমেরিকা একত্র করতে চায়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিরোধ প্রতিহতও করতে চায়। জাপান এবং আর ও কে-র মধ্যে সম্পর্কের অবস্থা উল্লেখ করে, নীতিটি এ কথা স্পষ্ট করেছে যে দ্বিপাক্ষিক মতবিরোধের উপর আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়াই অঞ্চলটিতে বহুবিধ স্বার্থ একত্র করার মূল চাবিকাঠি।

নথিটির যে অংশে অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনার ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট ভাবে এক ‘শক্তিশালী এবং একত্রিত আসিয়ান’-এ মার্কিন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব থেকে ট্রাম্পের নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর আবারও অঞ্চলটিতে আমেরিকার দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কয়েকটি আসিয়ান দেশ সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তাই এই ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্কটির পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। ওয়াশিংটন ডিসি-তে সর্বপ্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন থেকে শুরু করে নতুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান উদ্যোগে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ — সবই কর্মপরিকল্পনায় উল্লিখিত হয়েছে।

এক স্বাধীন ও মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলতে বিশ্বস্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, গুরুত্বপূর্ণ এবং উদীয়মান প্রযুক্তি, পরিকাঠামো, সাইবার, শিক্ষা ও দূষণমুক্ত জ্বালানির মতো বিষয়গুলিতে কোয়াড সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতাকে একটি অন্যতম প্রধান উপাদান রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন অভিন্ন কর্মসূচিগুলি চিহ্নিত করে আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে কোয়াডের সুনির্দিষ্ট অন্তর্ভুক্তিকরণ বাইডেনের নীতিকে ট্রাম্প প্রশাসনের তুলনায় স্বচ্ছতর করে তুলেছে।

বাইডেনের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে ইউরো-আটলান্টিক এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মাঝে ‘সেতু নির্মাণ’-এর চেষ্টাও করা হচ্ছে, বিশেষ করে যেখানে অভিন্ন উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ই ইউ এবং ন্যাটোর বৃহত্তর ভূমিকা থাকবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ই ইউ এবং স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেনের কৌশলগত ভূমিকা বৃদ্ধির ঘটনা সত্যি হলেও এই সময় ন্যাটোর কথা উল্লেখ করায় অনেকেরই চোখ কপালে উঠতে পারে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শ্রীবৃদ্ধি করার অভীষ্টটি দু’টি প্রধান বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল: ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নির্মাণ ও সশক্তিকরণ এবং বিল্ডব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি থ্রি ডব্লিউ) উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জি৭ অংশীদারদের সাহায্যে অঞ্চলটিতে পরিকাঠামোগত ফারাক দূর করা।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শ্রীবৃদ্ধি করার অভীষ্টটি দু’টি প্রধান বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল: ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামো নির্মাণ ও সশক্তিকরণ এবং বিল্ডব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বি থ্রি ডব্লিউ) উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জি ৭ অংশীদারদের সাহায্যে অঞ্চলটিতে পরিকাঠামোগত ফারাক দূর করা। উন্নয়নশীল এশিয়ার পরিকাঠামোগত প্রয়োজন প্রভূত: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অনুমান মতো ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই অঙ্কের পরিমাণ ২৬ লক্ষ কোটি ডলার। অতীতে ব্লু ডট-এর মতো মার্কিন উদ্যোগগুলি যথেষ্ট কার্যকর অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং প্যাসিফিক দ্বীপগুলিতে বি থ্রি ডব্লিউ-এর মতো কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সূচনা করা উপকারী হতে পারত। সুরক্ষিত বিশ্বজনীন টেলিকমিউনিকেশন, ফাইভ জি ভেন্ডর ডাইভার্সিফিকেশন এবং ওপেন রেডিয়ো অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক (ও-র‍্যান) প্রযুক্তির উপরে মনোনিবেশ করার প্রধান লক্ষ্য হল হুয়াওয়েই-এর মতো সন্দেহভাজন প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাইরে রেখে এই সব অঞ্চলে অনুকূল ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল তার নিরাপত্তা জোট এবং অংশীদারিত্বের নেটওয়ার্কের মতোই শক্তিশালী, যাকে আমেরিকা তার ‘একক বৃহত্তম অপ্রতিসম শক্তি’ বলে অভিহিত করেছে। এমনকি অঞ্চলটিতে মিত্র এবং অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে আন্তঃকার্য ক্ষমতা (ইন্টার অপারেবিলিটি) মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে ইন্দো-প্যাসিফিক সুরক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীর সুরক্ষা, কোরিয়ান উপদ্বীপের সম্পূর্ণ রূপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, অউকাসের মাধ্যমে নতুন মুনাফা অর্জন করা, ভারতের সঙ্গে প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্বের অগ্রগতি, আসিয়ানে বিনিয়োগ, সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা, জৈব যুদ্ধের হুমকি (অর্গ্যানিক থ্রেট) এবং সাইবার নিরাপত্তার বিষয়গুলি অনুমানযোগ্য ভাবে আমেরিকার প্রধান নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলির অন্যতম। বৃহত্তর কৌশলের স্তরে বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মধ্য দিয়ে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যমাত্রাগুলিকে অনায়াসে তার আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে সচেষ্ট হয়েছে। জলবায়ু সঙ্কট, দূষণহীন শক্তি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ, শক্তি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করা — সকল লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্যই প্রয়োজন সুষম বিন্যাস।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. His research interests include America in the Indian Ocean and Indo-Pacific and Asia-Pacific regions, particularly ...

Read More +
Premesha Saha

Premesha Saha

Premesha Saha is a Fellow with ORF’s Strategic Studies Programme. Her research focuses on Southeast Asia, East Asia, Oceania and the emerging dynamics of the ...

Read More +