Author : Abhijit Singh

Published on Jan 05, 2024 Updated 0 Hours ago

ভারত মহাসাগরে পাকিস্তানের সামুদ্রিক কৌশল চিনের সঙ্গে সম্পৃক্ততাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। তবে কৌশলটির একটি কূটনৈতিক মাত্রাও রয়েছে যা উপেক্ষা করা উচিত নয়।

ভারত মহাসাগরে চিন–পাকিস্তান নৌ–মহড়ার নিহিতার্থ


উত্তর আরব সাগরে চিন–পাকিস্তান সামুদ্রিক মহড়ার বিশেষত্ব কী? বিশেষ কিছু না, কেউ হয়তো তর্ক করতে পারেন। ভারত মহাসাগরে দুই দেশ নিয়মিত নৌ–মহড়া করে, আর সি গার্ডিয়ান অনুশীলন তো এখন বার্ষিক বৈশিষ্ট্য। সাধারণত, অনুশীলনগুলি পাকিস্তানের কাছাকাছি জলসীমায় অনুষ্ঠিত হয়, এবং খুব কমই এমনভাবে করা হয় যা সরাসরি ভারতীয় স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করে। চিন–পাকিস্তান সামরিক সহযোগিতাকে ঘিরে যত বাগাড়ম্বরই থাকুক না কেন,
বেজিং এখনও পর্যন্ত পাকিস্তানে স্থায়ী নৌ–উপস্থিতি রাখা থেকে বিরত থেকেছে।

তাহলে উত্তর আরব সাগরে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত
সি গার্ডিয়ান–৩ নিয়ে এত আগ্রহ কেন? পাকিস্তানি প্রচার দেখে মনে হচ্ছে, পাকিস্তানের নৌ–কমান্ডাররা চিন ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রথম যৌথ সামুদ্রিক টহল হিসাবে এই মহড়া চালিয়েছে।


মহড়ার আয়তন ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্যই বড়;‌ পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি একটি সং শ্রেণির সাবমেরিন, একটি ডেস্ট্রয়ার, দুটি গাইডেড–মিসাইল ফ্রিগেট ও একটি সরবরাহ জাহাজ মোতায়েন করে, সব মিলিয়ে প্রায় একই আকারের বাহিনী যা আগের অনুশীলনেও ছিল। পাকিস্তান নৌবাহিনী এই মহড়ার জন্য নয়টি যুদ্ধজাহাজ, চারটি যুদ্ধবিমান এবং একটি সামুদ্রিক টহল বিমান পাঠিয়েছিল।



রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই পক্ষের পর্যবেক্ষকেরা একে অপরের অংশগ্রহণকারী ইউনিটে ছিলেন, এবং একটি পাকিস্তানি সাবমেরিন–বিরোধী টহল বিমানে একজন চিনা পর্যবেক্ষকও ছিলেন।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এই নিয়ে তৃতীয়বার পিএলএএন ও পাকিস্তান নৌবাহিনী (পিএন) ‘‌সি গার্ডিয়ান’‌ অনুশীলনের জন্য একত্রিত হয়েছিল৷ এর আগে দু’‌বার,
২০২০ সালের জানুয়ারিতে (উত্তর আরব সাগরে) এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে (পূর্ব চিন সাগরে), এই অনুশীলন হয়েছে। তারও আগে ২০১৪ সাল থেকে দুটি নৌবাহিনীর মধ্যে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক মহড়া হত। এইবার কিছু জল্পনা এই কারণে তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে যে মহড়াটি হয়েছিল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২+২ মন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপের একদিন পরেই, যে সংলাপে আলোচনার একটি প্রধান বিষয় ছিল ইন্দো–প্যাসিফিকের সামুদ্রিক নিরাপত্তা। নয়াদিল্লি বাহরাইন–ভিত্তিক মার্কিন–নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক গোষ্ঠী কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সেস–এর পূর্ণ সদস্য হওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার সাথে সাথে, ভারতীয় বিশ্লেষকদের ধারণা, চিন ভারত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তার কৌশলগত অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল।


তবে সি গার্ডিয়ান ৩–এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি চিন ছিল না। তা ছিল পাকিস্তান, যে নিজের ক্ষমতার একটি বিবৃতি দিতে চেয়েছিল।



পিএন আধুনিকীকরণের একটি কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর (আইএন) ক্রমবর্ধমান শক্তি এবং ভারত মহাসাগরে উপস্থিতির একটি আপাত প্রতিক্রিয়া। পাকিস্তানের নৌ নেতৃত্ব আইএন–কে সন্দেহের চোখে দেখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরবর্তীটির স্থিতিশীল বৃদ্ধি পিএন–এর উন্নয়ন এবং সম্পদের সম্প্রসারণের মূল চালিকা।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়ে আইএন–এর পাকিস্তানের মাকরান উপকূল ঘেরাও করার প্রবণতা নিয়েও পিএন উদ্বিগ্ন। ১৯৯৯ সালে অপারেশন বিজয় এবং ২০০১ সালে অপারেশন পরাক্রমের সময়, আইএন উত্তর আরব সাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছিল, যা ভারতীয় বিশ্লেষকরা একটি শিথিল অবরোধ বলে অভিহিত করেছিলেন। অতি সম্প্রতি, ২০১৯ সালে, পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী হামলার পরপরই, ভারত পাকিস্তানের আঞ্চলিক জলসীমার কাছাকাছি যুদ্ধজাহাজের
একটি বহর স্থাপন করেছিল। মোতায়েনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সংকল্পের সংকেত, কিন্তু পিএন একে অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ হিসাবে দেখেছে।

ভারতের জন্য সমস্যার একটি অংশ হল পাকিস্তানের কৌশলগত অভিজাতদের মধ্যে এই উপলব্ধি যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত প্রচলিত যুদ্ধের সম্ভাবনা কমেনি, বরং বেশিই থেকে গিয়েছে। পাকিস্তানের কৌশলগত পরিকল্পনা বিভাগের মহাপরিচালক খালিদ কিদওয়াই দাবি করেন যে, দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সংবেদনশীলতা ভারতের চেয়ে বেশি। ইসলামাবাদ,
তিনি দাবি করেছেন, ভারতকে প্রতিহত করার জন্য তার কৌশলগত টুলকিটের প্রতিটি সরঞ্জাম (উপ–প্রথাগত থেকে প্রচলিত ও পারমাণবিক) ব্যবহার করতে বাধ্য, কারণ তাঁর মতে ভারতের আক্রমণাত্মক নকশা রয়েছে এবং পাকিস্তানকে প্ররোচিত করার জন্য ভারত ‘‌কোল্ড স্টার্ট’‌–এর মতো কৌশল ব্যবহার করে। এই ধরনের কথাবার্তা ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের কাছে বিভ্রান্তিকর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু পাকিস্তানি কমান্ডারদের কাছে এটা বিশ্বাসের বিষয়।

এটি ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের আগ্রহের বিষয় হওয়া উচিত যে এই বছরের মে মাসে চিন পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে চারটি টাইপ ০৫৪এ/পি গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট সরবরাহ করার কাজ শেষ করেছে। পাকিস্তান চিনের কাছ থেকে আটটি ইউয়ান শ্রেণির সাবমেরিন কেনার জন্য প্রস্তুত, যার মধ্যে চারটি ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ সরবরাহের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এদিকে তুর্কিয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে
বাবর শ্রেণির করভেটগুলির প্রথমটি সরবরাহ করেছে, যা পিএন মিলগেম ক্লাস নামেও পরিচিত। পাকিস্তান ও তুর্কিয়ে জিন্না শ্রেণির ফ্রিগেটের সহ–উন্নয়ন করছে , যার নির্মাণ কাজ শুরু হবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন করাচি শিপইয়ার্ডের বাবর শ্রেণির করভেটের অর্ডার শেষ হওয়ার পর। সমগ্র প্রচেষ্টা পিএন–কে ভারত মহাসাগরে একটি শক্তিশালী পক্ষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতি বলে মনে হচ্ছে।

তবুও, ভারতীয় পর্যবেক্ষকদের জন্য পিএন–কে সম্পূর্ণরূপে প্রতিপক্ষের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা ভুল হবে। আগের তুলনায় পিএন আজ অনেক বেশি করে ধারণাগতভাবে বিকশিত হয়েছে, এবং শুধুমাত্র ভারতকে মোকাবিলা করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে না। পাকিস্তানের
২০১৮ সামুদ্রিক মতবাদ ভারত মহাসাগর অঞ্চল (আইওআর)–কে বর্ণনা করেছে এই বলে যে, এটি ‘‌একটি কৌশলগত স্থান যেখানে অনেক আঞ্চলিক এবং অঞ্চল–অতিরিক্ত শক্তির স্বার্থ জড়িত’,‌ এবং যেখানে সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গিই এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম উপায়। পাকিস্তানের নৌ–পরিকল্পকেরা অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যের জন্য আইওআর–কে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন, যার জন্য পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে এই অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক খেলোয়াড় এবং নিরাপত্তা প্রদানকারী হিসেবে তৈরি হতে হবে।

পাকিস্তানের জন্য একটি ‘‌
হুমকিমুক্ত পরিবেশ’‌ সংরক্ষণের বাইরে — যা হল ভারতের দিক থেকে উত্থাপিত চ্যালেঞ্জের একটি আপাত উল্লেখ — পিএন–এর আমান অনুশীলন  (দ্বিবার্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত) এবং ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা টহল আদতে ভারত মহাসাগরে পাকিস্তানের কূটনৈতিক স্থান প্রসারিত করতে চায়। এটি আংশিকভাবে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক নৌ–সমাবেশের অন্তর্নিহিত যুক্তি। পিএন ভাল করেই জানে যে আইএন তাকে ভারত মহাসাগরে সহযোগিতামূলক কাঠামো থেকে বাদ দিতে চায়। ২৫ সদস্যের ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ২০২২ সালে গোষ্ঠীটির ১০ বছর উদযাপনের জন্য ভারত পিএন–কে আমন্ত্রণ জানায়নি । ভারত মহাসাগরের অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ করার জন্য পিএন–এর প্রয়াস আদতে আইএন–এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিরোধের একটি উপায়।

পাকিস্তানের নৌ–পরিকল্পনাকারীরা যে ঘটনাটি একেবারেই দেখতে চান না তা হল ভারত মহাসাগরে কৌশলগত উদ্যোগ ভারত দখল করে নিয়েছে। সমুদ্র উপকূলে
ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে
লড়াই করার জন্য পাকিস্তানের সেরা বাজি চিন। নয়াদিল্লিতে অনেকেই যা কল্পনা করেন তার বিপরীতে, চিন–পাকিস্তান নৌ–সমাবেশ ভারতের সামুদ্রিক প্রতিবেশে চিনা (বা পাকিস্তানি) শক্তি প্রক্ষেপণের চেয়ে বরং ভারত মহাসাগরে প্রতিযোগিতামূলক কূটনীতি সংক্রান্ত বিষয়।



অভিজিৎ সিং অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মেরিটাইম পলিসি ইনিশিয়েটিভের প্রধান।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.