-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ক্রমবর্ধমান ঋণের মধ্যে সরকার বাজি ধরেছে যে বড় মাপের পরিকাঠামো ব্যয় কেবল বৃদ্ধি-বর্ধক নয়, সেই সঙ্গে জনপ্রিয়ও।
ঋণের বোঝা ও একটি বিজলি, সড়ক, পানি বাজেট
এই নিবন্ধটি ‘বাজেট ২০২২: পরিসংখ্যান ও তদুপরি’ সিরিজের অংশ।
২০২২-২৩-এর কেন্দ্রীয় বাজেটের নকশা তৈরির সময় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে একাধিক সমস্যার মধ্যে ভারসাম্যের জন্য শুধু একটি সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। তা হল গত বছরের কররাজস্ব অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রাণবন্ত ছিল। কেন্দ্র গত ফেব্রুয়ারিতে বাজেটে যা ধরেছিল, ২০২১-২২-এ তার থেকে ১৪.২ শতাংশ বেশি কর পেয়েছে। এর অর্থ হল যে আসন্ন বছরে কর রাজস্ব কতটা বৃদ্ধি পাবে সে সম্পর্কে সীতারামন তুলনামূলক ভাবে রক্ষণশীল অনুমানের আশ্রয় নিতে পেরেছেন, এবং তার পরেও তাঁর আর্থিক অঙ্ক মেলাতে পেরেছেন। এটাও ঘটনা যে গত বছরে ৬.৯ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি তাঁর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৬.৮ শতাংশের কাছাকাছিই ছিল।
আরও ঋণ ও উচ্চ আয়ের বন্ডের সংমিশ্রণ খুব বেশি রকমের অস্বস্তিকর, কারণ এই দুটিই সুদবাবদ সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু হিসাব খাতার অন্য পাশে লাল রঙের ছড়াছড়ি। অতিমারির প্রভাব এখন স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান। বেসরকারি বিনিয়োগ বা বৃদ্ধি এখনও আগের জায়গায় পৌঁছয়নি বলে সরকার মনে করেছে সেই জায়গাটাতেই উৎসাহ দিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, এবং এই আশায় বিনিয়োগে সম্পদ ঢেলেছে যে বেসরকারি ক্ষেত্র এতে ইতিবাচক সাড়া দেবে। এদিকে, অতিমারির বছরের শুরুতে সরকার যে ঋণ নিতে শুরু করেছিল এখন তার প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাধীনতার পর এখন প্রথম বারের জন্য ভারত একটি উচ্চ-ঋণ অর্থনীতি; এর জাতীয় ব্যালান্স শিটে এমন একটি আর্থিক চিত্র ফুটে উঠছে যা মনে করিয়ে দেয় লাতিন আমেরিকার আয়তনের চেয়ে বৃহৎ আকারের কল্যাণ রাষ্ট্রগুলিকে, চর্বিহীন ও মসৃণ এশিয়ান বাঘেদের নয়। বৃদ্ধি ত্বরান্বিত না–হওয়া অবস্থায় ঋণ বাড়লে সাধারণত সরকারের ঘাটতি পূরণের জন্য নেওয়া বন্ডের জন্য দেয় পরিমাণও বাড়ে। ভারতের প্রধান ১০ বছরের বন্ডের থেকে ক্রেতাদের আয় এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় লাফিয়ে বেড়ে গেছে যে অর্থমন্ত্রককে বাজার থেকে অভূতপূর্ব পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করতে হবে। আরও ঋণ ও উচ্চ আয়ের বন্ডের সংমিশ্রণ খুব বেশি রকমের অস্বস্তিকর, কারণ এই দুটিই সুদ বাবদ সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এবং সেগুলি সত্যিই খুব বেশি বাড়ছে; আসন্ন বছরে সরকার ২০২০-২১ সালের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি সুদ গুনবে। এই সুদ বাবদ খরচ বাজেটের প্রায় ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, অতিমারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় ৩.৫ শতাংশ পয়েন্ট বেশি। পরিমাণটি কেন্দ্রের রাজস্বের ৫০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।
একটি সরকার যে রাজস্ব বিচক্ষণতাকে অগ্রাধিকার দেয়, যেমন এই সরকার ঐতিহ্যগত ভাবে দিয়ে আসছে, তার খরচ কমানোর মাধ্যমেই এই সমস্যাটির মোকাবিলার চেষ্টা করার কথা। এবং, প্রকৃত পক্ষে, শ্রীমতী সীতারামন আংশিক ভাবে সেটাই করেছেন। প্রকৃত পক্ষে, আসন্ন বছরে যদি সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী যায়, তবে বর্তমান ব্যয়ের সেই ধরনের সঙ্কোচন দেখা যাবে যা সাধারণত শুধু কাঠামোগত সংশোধন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে যাওয়া দেশগুলিতে দেখা যায়। যদি সুদের অর্থপ্রদান এবং মূলধনী সম্পদের উপর তার ব্যয় বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে ২০২২-২৩ সালের কেন্দ্রীয় রাজস্ব অ্যাকাউন্টে ব্যয় প্রায় ৩০ শতাংশ সঙ্কুচিত হবে। এর মধ্যে কিছুটা আসবে অতিমারি ত্রাণের জন্য সরিয়ে রাখা অতিরিক্ত ভর্তুকি প্রত্যাহার থেকে, যেমন অতিরিক্ত খাদ্য রেশন। তবে এটা স্পষ্ট যে অর্থমন্ত্রী রাজস্ব ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কঠিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
একটি সরকার যে রাজস্ব বিচক্ষণতাকে অগ্রাধিকার দেয়, যেমন এই সরকার ঐতিহ্যগত ভাবে দিয়ে আসছে, তার খরচ কমানোর মাধ্যমেই এই সমস্যাটির মোকাবিলার চেষ্টা করার কথা।
সাধারণ ভাবে এর অর্থ হল বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এবং, প্রকৃত পক্ষে, ভারতের বৃদ্ধির চালিকাশক্তি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, বিশেষ করে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপস্থিতি এবং বিশ্বব্যাপী পুঁজির বৃহত্তর প্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বৃদ্ধির প্রশ্নে হাল ছাড়েননি। তিনি পরিকাঠামো এবং অন্যান্য মূলধনী ব্যয়ের অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটাতে তার হাতে থাকা ন্যূনতম সংস্থান ঢেলে দিয়েছেন।
এটা একটা ঝুঁকি। রাজকোষ ব্যবহার করে বেসরকারি ক্ষেত্রকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলি কিন্তু কার্যকর হয়নি।
অনেক রাজনৈতিক বিজ্ঞানীর বক্তব্য অনুযায়ী যে কল্যাণমুখী পপুলিজম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে, তা কি তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শেষ হয়েছে? সরকার কি সোজাসুজি সরবরাহ বাড়ানোর সূত্র ধরে এগোচ্ছে? না, দুটি কারণে তা নয়।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে প্রচলিত ধারণা হল সরকারগুলিকে ‘বিজলি, সড়ক, পানি’— অর্থাৎ বিদ্যুৎ, রাস্তা ও জলের ভিত্তিতে বিচার করা হয়।
প্রথমত, ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রতি সরকারের বিশ্বাস অটুট রয়েছে। হ্যাঁ, একটি বর্ধিত বোধ রয়েছে যে ব্যক্তিগত পুঁজি ছাড়া, এবং প্রকৃত পক্ষে বিশ্বের পুঁজি ছাড়া, বৃদ্ধি ঘটবে না। তবে এই সহযোগিতায় রাষ্ট্র অনেকটাই বরিষ্ঠ অংশীদার থাকবে। সে ঠিক করবে কোন ক্ষেত্রগুলিতে মূলধন প্রবাহিত হওয়া উচিত, সে নির্বাচন করবে কোন অংশীদারদের সমর্থন করা হবে, এবং সে তাদের বিনিয়োগের গতি নির্ধারণ করবে।
দ্বিতীয়ত, ভর্তুকি কল্যাণমূলক হলেও পরিকাঠামো নয়, এই ধারণা স্পষ্টতই ভুল। এ দেশে সরকারের করণীয় কি? ২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে প্রচলিত ধারণা হল সরকারগুলিকে ‘বিজলি, সড়ক, পানি’— অর্থাৎ বিদ্যুৎ, রাস্তা ও জলের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। এগুলো পরিকাঠামো ক্ষেত্র নয়তো কী? গত এক দশকে এই দেশে বিদ্যুদয়নের কাজ ব্যাপক ভাবে এগিয়েছে, যেমন রাতের আলোর একটি চমকপ্রদ ছবি তুলে ধরা হয়েছে অর্থনৈতিক সমীক্ষায়। বাজেটে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে সড়ক নির্মাণের গতি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দিনে ৬৮ কিলোমিটার হাইওয়ে হবে, আর সে জন্য ভারতের জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষকে ২০২০-২১ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি বাজেটের সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ করা হল শ্রীযুক্ত মোদীর দ্বিতীয় মেয়াদের যুগান্তকারী প্রতিশ্রুতি, যেমন তাঁর প্রথম মেয়াদে ছিল বিদ্যুদয়ন। জল জীবন মিশনকে বাজেটে ৬০,০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা ২০২০-২১ সালের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি।
এই বাজেট সরকার কী ভাবে চিন্তা করে এবং কোন কোন বিষয়ের উপর বড় ধরনের বাজি ধরতে চায়, সে বিষয়ে কিছুটা ধারণা দিয়েছে। সরকার বাজি ধরেছে যে বড় মাপের পরিকাঠামো ব্যয় কেবল বৃদ্ধি-বর্ধক নয়, জনপ্রিয়ও। আমরা অবশ্য নিশ্চিত নই যে এসব কী ভাবে কাজে পরিণত হবে। তবে যা নিশ্চিত তা হল বিশাল ঋণের বোঝা, একটি মূল্যস্ফীতির পরিবেশ, এবং কম সম্পন্নতামূলক করের (আন্ডারপারফর্মিং ট্যাক্স) মুখোমুখি হয়েও শ্রীমতী সীতারামন কোনওক্রমে বিজলি-সড়ক-পানি বাজেট উপহার দিয়েছেন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Mihir Swarup Sharma is the Director Centre for Economy and Growth Programme at the Observer Research Foundation. He was trained as an economist and political scientist ...
Read More +