Author : Akanksha Khullar

Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 15, 2022 Updated 10 Days ago

তালিবানের ছ’মাস দীর্ঘ বিপর্যয়কর শাসনকালের পরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমস্যার প্রতি নজর দিতে অনিচ্ছুক।

এক বিস্ময়কর নীরবতা: আফগানিস্তান সঙ্কটে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা
এক বিস্ময়কর নীরবতা: আফগানিস্তান সঙ্কটে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা

মার্কিন সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পরবর্তী সময়ে কাবুলে তালিবানের পুনরুত্থানের ঘটনা আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতিকে এক বিপর্যয়ে পর্যবসিত করেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ আফগান বর্তমানে জীবিকা হারানো, নগদ টাকার ঘাটতি ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের মতো ব্যাপক সমস্যায় ভুগছেন এবং একই সঙ্গে তালিবানের অগ্রগতির ফলে হাজার হাজার আফগান গৃহহীন, আহত ও নিহত হয়েছেন। কিন্তু এ সব কিছুর মধ্যেই নারীদের, যাঁদের অধিকার লঙ্ঘন করা তালিবানের আদর্শের কেন্দ্রে থেকেছে, তাঁদের উচ্চ মূল্য চোকাতে হচ্ছে।

বাস্তব উদাহরণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, আফগানিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীই বর্তমানে জোর করে বোরখা পরা, পুরুষ তত্ত্বাবধায়কের অনুপস্থিতিতে জনসমক্ষে আসার উপরে নিষেধাজ্ঞা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগের অভাব ইত্যাদি বিষয়ে তীব্র বিধিনিষেধের সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সকল বিধিনিষেধ ১৯৯০-২০০১ সাল পর্যন্ত তালিবানের পূর্ববর্তী শাসনকালে মহিলাদের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীটির ক্ষমাহীন নৃশংসতাকেই স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরলেও বিগত ছ’মাস যাবৎ তালিবান দ্বারা নারী অধিকারগুলি ক্রমশ খর্ব করার মতো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘দায়িত্বশীল’ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছে।

এর ফলে লক্ষ লক্ষ আফগান বর্তমানে জীবিকা হারানো, নগদ টাকার ঘাটতি ও খাদ্যের উচ্চ মূল্যের মতো ব্যাপক সমস্যায় ভুগছেন এবং একই সঙ্গে তালিবানের অগ্রগতির ফলে হাজার হাজার আফগান গৃহহীন, আহত ও নিহত হয়েছেন।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কাবুলে সক্রিয় নারী কর্মীরা তালিবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আফগান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। এই বিক্ষোভ চলাকালীন তাঁরা পোস্টার তুলে ধরেন, যাতে লেখা ছিল ‘সারা পৃথিবী কেন নীরবে আমাদের মৃত্যুর দিকে চেয়ে আছে?’ যদিও এই আবেগের প্রদর্শনও তালিবানি জুলুমের মধ্যে বেঁচে থাকা আফগান নারীদের রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ হেন নিষ্ক্রিয়তা নিঃসন্দেহে আশ্চর্যজনক। কারণ ২০০১ সালে বিশ্বশক্তিগুলি নারীর স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার উন্নয়নকেই অন্যতম প্রধান কারণ রূপে দর্শিয়ে আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করেছিল।

অন্তর্নিহিত কারণগুলি

অর্থাৎ যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির অবতারণা করা উচিত, তা হল— যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক সময়ে আফগানিস্তানে নারীদের পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন ছিল, তারা আজকে কেন পাশ কাটিয়ে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছে? বিশ্ব মঞ্চে কয়েক শতক ধরে যেমনটা চলে আসছে, সেই দোষারোপের খেলা শুরু করার আগে হয়তো এর কারণ অনুসন্ধান করাই সমীচীন হবে। এবং পৃথিবীর সকল দেশেরই এই প্রেক্ষিতে নিষ্ক্রিয় থাকার নিজস্ব কারণ থাকলেও নিচে প্রধান প্রধান কারণগুলি উল্লেখ করা হল:

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে নারী স্বাধিকারের অগ্রগতি এবং অধিকার রক্ষা-সহ দেশ গঠনের কাজে শত শত কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে নিঃস্ব প্রায়। বাস্তবিক ভাবেই বিগত দুই দশক যাবৎ আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যবস্থার প্রথাগত বিভাগগুলির সংস্থানের উপরে ভিত্তি করেই বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত পশ্চিমি দেশগুলি দ্বারা সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার টিকে ছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আফগানিস্তানের জি ডি পি-র ৪৩% এসেছে বৈদেশিক সাহায্য থেকে এবং সে দেশে সরকারি ব্যয় খাতে, বিশেষত নারীশিক্ষা এবং উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগের ৭৫% এসেছে অনুদানের অর্থ থেকে।

এই সকল সংস্থা থেকে নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আফগান নাগরিকদের সুরক্ষা জোগাতে মোতায়েন করা সেনার সঙ্গে তালিবান যোদ্ধাদের সংঘাতের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনও লাভ হয়নি, তা সহজেই অনুমেয়। ফলে বিনিয়োগ-লাভ বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে আজকের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেই অর্থ নিজেদের দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করতে আগ্রহী, যা তারা এত দিন যাবৎ আফগানিস্তানে বিনিয়োগ করেছিল। এমনটা করার মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে আফগানিস্তানে নারী সুরক্ষার দায়িত্বটি সুবিধে মতো কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চায়।

অতীতে অন্যান্য দেশ আফগানদের স্বার্থে তালিবানদের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া চালানোর কাজে অংশগ্রহণ করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে। এই প্রয়াসগুলির সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপে তালিবানকে সামরিক সংঘাতের পথ ছেড়ে আন্তঃআফগান আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ হেন অগ্রাধিকার দানের এক স্পষ্ট উদাহরণ লক্ষ করা যায় ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগান তহবিলে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান রদ করা এবং সেই অর্থ তাঁর নিজের দেশে যথাযথ কাজে লাগানোর জন্য একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন। বাস্তবে এই অর্থের পরিমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তা আফগান নারীদের কাছে জীবনদায়ী হতে পারত। তাই বর্তমানে তীব্র অর্থনৈতিক চাপ এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে যুঝতে থাকা হাজার হাজার আফগান নারীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক দেশই তালিবানকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া তো দূর স্থান, নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষে এক দল ইসলামি মৌলবাদীকে উৎসাহী করে তুলতে তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাতেও রাজি নয়। এর কারণটিও অনুমান করা সহজ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই এমনটা বিশ্বাস করেন যে, তালিবান তাদের স্বভাব পরিবর্তন করতে অক্ষম। প্রকৃত পক্ষে ১৯৯০-এর দশকে দলটির দ্বারা লাগাতার নারী মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ফলে ইসলামি মৌলবাদীদের আন্তর্জাতিক স্তরে ব্রাত্য বলে ঘোষণা করা হয়ে। এবং একই সঙ্গে ইউনাইটেড নেশনস সিকিউরিটি কাউন্সিল (ইউ এন এস সি) ১৯৯৯ সালে তালিবানকে একটি সন্ত্রাসবাদী সংস্থার তকমা দেয়।

যদিও এই ঘোষণা সত্ত্বেও অতীতে অন্যান্য দেশ আফগানদের স্বার্থে তালিবানদের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া চালানোর কাজে অংশগ্রহণ করেছে এবং নেতৃত্ব দিয়েছে। এই প্রয়াসগুলির সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপে তালিবানকে সামরিক সংঘাতের পথ ছেড়ে আন্তঃআফগান আলোচনায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। যদিও এই প্রতিশ্রুতির দায়বদ্ধতা থেকেও তালিবানরা সরে আসে এবং তাদের সাম্প্রতিক সামরিক আক্রমণের কেন্দ্রে রয়েছে নারী স্বাধিকার খর্ব করা এবং নারীদের জীবন ধারণ ও স্বাধীনতার উপরে বেআইনি বিধিনিষেধ আরোপ করার লক্ষে চালানো অবিরাম অভিযান।

ফলে এ বার তালিবানরা নারী সংক্রান্ত বিষয়ে নিজেদের সহনশীল ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করলেও তাদের কাজের সঙ্গে মুখের কথার কোনও মিল না থাকায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক দেশই তালিবানের সঙ্গে যে কোনও রকমের আলোচনা বা আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার সম্ভাবনাকে খারিজ করে দিয়েছে। তাদের মতে, এ রকম এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে কোনও লাভ নেই এবং সংস্থাটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি অনুযায়ীই ব্যবহার করা উচিত। এ কথা বলা হলেও নারী ও কন্যাসন্তানদের উপরে বিরূপ প্রভাব ফেলা আফগানিস্তানের অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক এবং মানবিক সমস্যাগুলিকে তালিবানের পূর্ব কীর্তির জন্য তত সহজে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।

নারীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনার জন্য তালিবানকে দায়ী করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আওয়াজ তুললে তা তালিবানকে নাশকতামূলক কাজকর্মে প্ররোচিত করবে এবং তালিবান হিংসাকে কাজে লাগিয়ে দেশগুলিকে তালিবান বিরোধী মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেবে।

এ ছাড়াও বর্তমান আন্তর্জাতিক নীরবতার নেপথ্যে আর একটি যুক্তিযুক্ত কারণ হল দ্রুততার সঙ্গে উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাগুলি, যেখানে ইসলামিক মৌলবাদীদের বিপক্ষে বা স্বপক্ষে যে কোনও রকমের পদক্ষেপ তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে এবং একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশটির নিজস্ব অবস্থান ও মর্যাদার প্রেক্ষিতে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে মাঝপথে থমকে আছে, সে কথা সহজেই অনুমেয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, বিশ্বশক্তিগুলি যদি তালিবানকে কোনও রকমের রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বৈধতা প্রদান করে, তা হলে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি সেই সুযোগের ব্যবহার করে ক্ষুব্ধ ও দরিদ্র আফগান জনসাধারণকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাবে। এবং একই সঙ্গে তারা এমন সব নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করবে, যার ফলে আফগান নারীরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অর্থাৎ তালিবানকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলির পদক্ষেপ এবং সহিষ্ণুতা দেশগুলির প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম দিতে পারে।

অন্য দিকে নারীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনার জন্য তালিবানকে দায়ী করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আওয়াজ তুললে তা তালিবানকে নাশকতামূলক কাজকর্মে প্ররোচিত করবে এবং তালিবান হিংসাকে কাজে লাগিয়ে দেশগুলিকে তালিবান বিরোধী মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেবে। যেমনটা আমরা সকলেই জানি যে, রাশিয়া, পাকিস্তান ও চিনের মতো উল্লেখযোগ্য তিনটি দেশ নতুন তালিবান প্রশাসনের প্রতি বিভিন্ন মাত্রায় উৎসাহ ও সহায়ক মনোভাব দর্শিয়েছে। তালিবানের বিরুদ্ধে কথা বলা তাই এই উদীয়মান ক্ষমতাপুঞ্জের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে।

এই বিভ্রান্তিকর প্রহেলিকার মধ্যে সারা বিশ্ব হয়তো তালিবানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে চেয়ে রয়েছে। যদিও এ হেন নিষ্ক্রিয়তা অসমর্থনযোগ্য। গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা প্রদান থেকে বিরত থাকা, আফগান নারীদের বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করা বা এড়িয়ে যাওয়া অথবা রাজনৈতিক ভাবে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করার মতো পদক্ষেপ তালিবানকে রুখতে পারবে না। বরং এর ফলে আফগান জনসাধারণ, বিশেষত আফগান মহিলারা আরও বেশ করে বঞ্চনার শিকার হবেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.