Published on Apr 20, 2024 Updated 0 Hours ago

তিস্তা প্রসঙ্গ ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই অনন্য প্রতিবন্ধকতাচিনের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা এই সমস্যা একটি ভূ-রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করেছে।

আন্তঃসীমান্ত স্রোত পেরিয়ে: ভারত-চিন বিরোধ এবং বাংলাদেশে তিস্তা সমস্যা

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বাংলাদেশের নবনিযুক্ত বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদের সঙ্গে ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পারস্পরিক বোঝাপড়া প্রচার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য চিন সফরের আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ তার গ্রহণযোগ্যতা উভয়ই দুই দেশের মধ্যকার মজবুত সম্পর্কের প্রেক্ষিতে অনুমানযোগ্য হলেও বেজিংয়ের তরফে বারবার বাংলাদেশে বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা’র সমর্থনে কথা বলা লক্ষ্যণীয়। চিনের প্রিমিয়ার শি জিনপিং প্রাক্‌-নির্বাচন সময়কালে প্রথম বার এ কথা বলেছিলেন, যখন তিনি সুনিশ্চিত করেছিলেন যে, চিন বাইরের চাপ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পাশে দাঁড়াবে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন’ সুনিশ্চিত করতে ক্রমাগত বাংলাদেশের নিন্দা করে চলেছে। গত বছর থেকে এই প্রসঙ্গে মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অবনমন প্রকট হয়ে উঠেছে, হাসিনা নিজের ভূখণ্ডের মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছেন এবং ঢাকা নির্বাচনেঅনিয়ম নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হেন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য শূন্যতা পূরণে বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের পর অবশ্যই এর প্রভাব পড়বে।

 

চিনের প্রিমিয়ার শি জিনপিং প্রাক্‌-নির্বাচন সময়কালে প্রথম বার এ কথা বলেছিলেন, যখন তিনি সুনিশ্চিত করেছিলেন যে, চিন বাইরের চাপ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার পাশে দাঁড়াবেকারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক নির্বাচন’ সুনিশ্চিত করতে ক্রমাগত বাংলাদেশের নিন্দা করে চলেছে

 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে চিনের দৃঢ় উত্থান তার প্রতিবেশী অঞ্চলে বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে ভারতকে উদ্বিগ্ন করেছে। বঙ্গোপসাগরে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট বা বাণিজ্যিক পথ এবং যথেষ্ট পরিমাণে হাইড্রোকার্বনের ভান্ডার থাকায় ভৌগোলিক অবস্থান-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ চিনের জন্য একটি লোভনীয়  অংশীদার হয়ে উঠেছে। ভারতের জন্য বাংলাদেশ তার নিকটতম পূর্ব প্রতিবেশী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ, যার সঙ্গে ভারত বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম সীমান্ত ভাগ করে নেয়এর ফলস্বরূপ, ভারত ও চিন সক্রিয় ভাবে নানাবিধ পরিসর জুড়ে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে এবং এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের বৈদেশিক রাজস্বে অবদান রাখছে, যার উপর দেশটি তার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক ভাবে নির্ভর করে। চিবাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) তৃতীয় বৃহত্তম উৎস এবং বিদেশি ত্রাণের বিষয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রদানকারী। অন্য দিকে, ভারত ঢাকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, এফডিআই-এর শীর্ষ ১০টি ৎসের মধ্যে অন্যতম এবং অ-সহায় গোষ্ঠীর দেশগুলি থেকে দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক সহায়তার নিরিখে তৃতীয় বৃহত্তম অবদানকারী। বাংলাদেশে বৈদেশিক সহায়তা মূলত তিন ধরনের: খাদ্য সহায়তা, পণ্য সহায়তা এবং প্রকল্প সহায়তা। এর মধ্যে তৃতীয় বিভাগটি তার উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়কারণ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ এই দেশগুলিকে শুধু মাত্র ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতেই নয়, বরং তার উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক, ভূ-রাজনৈতিক সম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করে। এ ভাবে, দুই এশীয় মহাশক্তির তরফে বাংলাদেশকে প্রদত্ত সহায়তার একটি বড় অংশ উন্নয়নমূলক অবকাঠামো নির্মাণের দিকে চালিত হয়েছে

 

ভারত ও চিন সক্রিয় ভাবে নানাবিধ পরিসর জুড়ে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে এবং এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের বৈদেশিক রাজস্বে অবদান রাখছে, যার উপর দেশটি তার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক ভাবে নির্ভর করে।

 

বাংলাদেশে চিন-ভারত প্রতিযোগিতা

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিন-ভারত প্রতিযোগিতা ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছে এবং কিছু কিছু প্রকল্পেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে চিন বাংলাদেশে ২৭টি প্রকল্প নির্মাণে সম্মত হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ছিল মংলায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। যাই হোক, ভারত বন্দরটিতে তার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য এজিস ইন্ডিয়া কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করার কয়েক দিনের মধ্যেই চিন তার অর্থায়ন ঘোষণা করা সত্ত্বেও ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেজিং থেকে কোনও প্রকার অর্থায়নই আসেনি। মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, দুটি প্রকল্প পৃথক কারণ বেজিংয়ের তহবিল দুটি কন্টেনার টার্মিনাল ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে এবং অন্য দিকে নয়াদিল্লির বিনিয়োগ জেটি, রাস্তা, পার্কিং লট, অফিস একটি আবাসিক কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য বরাদ্দএ হেন দ্রুত ধারাবাহিক ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকেই দর্শায়।

এ ক্ষেত্রে আর কটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বঙ্গোপসাগরে বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি সম্পর্কে ভারতের অস্বস্তির কারণে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে চিনের অর্থায়নের পরিকল্পনা বাংলাদেশ বাতিল করে দিয়েছিল। ঢাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে তার সিদ্ধান্ত নেয়, যে সমীক্ষাটি বন্দর নির্মাণ পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছিল। বাংলাদেশ এর পরিবর্তে জাপানের সঙ্গে মাতারবাড়ি বন্দর এবং ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়নে মনোযোগ দেয়। এই সুনির্দিষ্ট উদাহরণগুলি ছাড়াও এই যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, বেজিং ব-দ্বীপীয় বাংলাদেশে অনেক সেতু নির্মাণ করছে এবং যে প্রকল্পগুলি আদতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ বৃদ্ধি করতে পারে, তেমন প্রকল্পগুলি খারিজ করে দিয়েছে। অবশ্য চিনের তরফে এই ধরনের প্রকল্প খারিজ করার জন্য কারণ হিসেবে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তিস্তা নদীর উপর ব্যারেজ নির্মাণে চিনা বিনিয়োগকে এই প্রতিযোগিতার সর্বশেষ পুনরাবৃত্তি হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

 

তিস্তা নিয়ে সমস্যা

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হল তিস্তা। ভারতের পার্বত্য রাজ্য সিকিম পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে এই নদী রংপুর বিভাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী এবং এর উত্তরাঞ্চলীয় অংশগুলির জন্য প্রধান নদীও বটে। ফলে তিস্তা কৃষির নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেশের মোট ফসল উৎপাদনের ১৪ শতাংশ উপকৃত হয় এই তিস্তা নদী থেকেই। যাই হোক, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নদীর ধারে ভারত যে বাঁধ নির্মাণ করেছে তা উজানের সময় জলের প্রবাহকে বাধা দেয় এবং প্রতিবেশী দেশে জলের নিষ্কাশনকে প্রভাবিত করে। তার ফলে ১০০০০০ হেক্টরের বেশি জমির সেচ ব্যাহত হয়। বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছিল যে, বাংলাদেশের জন্য ৫০০০ কিউসেক (কিউবিক ফুট প্রতি সেকেন্ড) জলের প্রবাহ প্রয়োজন, যা বাঁধ নির্মাণের আগে দেশে প্রবাহিত ৬৭১০ কিউসেক দ্বারা পর্যাপ্ত পরিমাণে পূরণ করা যেত যাই হোক, শুষ্ক মরসুমে বাংলাদেশ তিস্তা থেকে মাত্র ১২০০-১৫০০ কিউসেক জল পায়, মাঝে মাঝে এমনকি সেই পরিমাণ ২০০-৩০০ কিউসেকে নেমে যায়।

স্বাভাবিক ভাবেই, এটি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমৃদ্ধ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৩ সালে ২৫তম যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সভায় একটি এককালীন ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের তিস্তার ৩৬ শতাংশ জল পাওয়ার কথা। কিন্তু তা অপূর্ণই রয়ে যায়। পরবর্তী কালে, ২০১১ সালে আর কটি চুক্তির কথা হয়েছিল, যার অধীনে বাংলাদেশ তিস্তার ৩৭.৫ শতাংশ জল এবং ভারত ৪২.৫ শতাংশ জল পাবে স্থির করা হয়কিন্তু সামগ্রিক ভাবে নদীর প্রবাহে হ্রাস ঘটবে… এই কারণ দর্শিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমবঙ্গের গাজলডোবায় তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ির ক্রমবর্ধমান শহুরে জলের চাহিদা মেটাতে তিস্তা-মহানন্দা সেচ খালের মাধ্যমে জল সরানো, ধানের ক্ষেত দেওয়া এবং সিকিমে প্রবাহিত তিস্তা উপর প্রায় ৩০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এর ফলে তিস্তার জলপ্রবাহ কমে গিয়েছে। তিস্তা প্রসঙ্গটি ভারতের অভ্যন্তরে কেন্দ্র-রাজ্যের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যেহেতু নদীগুলি ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যের আওতাভুক্ত। এটি ভারত সরকারের জন্য সমস্যাটির সমাধান করা এবং এ হেন কোনও সমাধানে পৌঁছনোর কাজটিকে কঠিন করে তুলেছে, যা সমস্ত সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এই বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বারংবার আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।

 

তিস্তা প্রসঙ্গটি ভারতের অভ্যন্তরে কেন্দ্র-রাজ্যের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যেহেতু নদীগুলি ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যের আওতাভুক্ত।

 

২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিস্তার জলের প্রবাহ বদলের জন্য ভারতের আরও দুটি খাল নির্মাণের সিদ্ধান্তের ফলে বিষয়টি আবারও প্রকাশ্যে উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজলডোবা ব্যারেজের উজানে ছোট সেচ প্রকল্প, পানীয় জল সরবরাহ শিল্প সংক্রান্ত ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনও বড় কাঠামো নির্মাণ না করা সংক্রান্ত ২০১০ সালে জেআরসি-৩৭তম সভায় নেওয়ার ভারতের প্রতিশ্রুতিকে লঙ্ঘন করবে এই খাল নির্মাণের কাজ। ফলে ঢাকা নয়াদিল্লিকে একটি প্রতিবাদ চিঠি পাঠানোর জন্য প্রস্তুত ছিলকিন্তু গত বছরের শেষের দিকে নির্বাচনী সমীকরণের ফলে এই প্রসঙ্গটি ধামাচাপা পড়ে যায়। যাই হোক, এ কথা উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ চিনেসঙ্গে একটি বহুমুখী ব্যারেজ নির্মাণ এবং তিস্তার কিছু অংশ ড্রেজ বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি একক ব্যবস্থাপনাযোগ্য চ্যানেল তৈরি করতে কাজ শুরু করে, যেখানে জলের স্তর অনেক বেশি হবে। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে তিস্তা চিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণকারণ বাংলাদেশ চিনের এই মহাপ্রকল্পের সদস্য। যাই হোক, ভারতের এই আশঙ্কার কারণে প্রকল্পটির কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছিল যে, এই প্রকল্পটি কেবল চিনকে তার সীমান্তের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেই এনে দেবে না, বরং তার সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের কাছেও পৌঁছে দেবে – যা রাজনৈতিক ভাবে সংবেদনশীল উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের একমাত্র স্থল সংযোগ। তবুও, চিন আশা করছে যে, দ্রুত কাজ আবার শুরু হবে।

 

প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার

চিন-ভারত প্রতিযোগিতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি ভূ-রাজনৈতিক আবহাওয়ায় উভয় দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্যের কূটনীতিঅবলম্বন করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। স্থগিত তিস্তা প্রকল্পটি কূটনীতির এমন একটি উদাহরণকেই দর্শায়, যা এই প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকার তরফে আর কটি সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা দ্বারা আরও প্রসারিত হয়েছে। চিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পরপরবাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেন। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিস্তার জল বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং মাহমুদ তাঁর আশা ব্যক্ত করেন এই বলে যে, ভারতের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনের পরেই এই তিস্তা সমস্যাটির সমাধান করা হবে।

 

স্থগিত তিস্তা প্রকল্পটি কূটনীতির এমন একটি উদাহরণকেই দর্শায়, যা এই প্রসঙ্গে ভারতের সঙ্গে আলোচনার জন্য ঢাকার তরফে আর কটি সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা দ্বারা আরও প্রসারিত হয়েছে।

 

তিস্তা প্রসঙ্গ একটি বিরামহীন বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে, যা ভারত ও বাংলাদেশ উভয়ের জন্যই অনন্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থকে প্রভাবিত করে। এর মুলতুবি থাকা সিদ্ধান্ত তাই শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অভাবের কারণে ঘটেনি। কারণ এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছনোর আগে আরও বেশ কিছু জাতীয় জটিলতা রয়েছে, যা সমাধান করা দরকার। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘ বিরোধের ইতিহাস রয়েছে, যা শান্তিপূর্ণ ভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, সমুদ্রসীমা চুক্তি ৪৩ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছিল, ৪৪ বছর লেগেছিল স্থল সীমান্ত চুক্তি মিটতে এবং ২৫ বছর সময় লেগেছিল গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তিতে সম্মত হতে। যাই হোক, তিস্তা প্রসঙ্গে চিনের সম্পৃক্ততা এবং নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশে বেজিংয়ের উপস্থিতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা ভারতের জন্য প্রসঙ্গটিতে একটি ভূ-রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করে। তিস্তা প্রসঙ্গকে অগ্রাধিকার দিলে শুধু ভারতের উদ্বেগই প্রশমিত হবে না, বাংলাদেশেও ভারতের সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকবে।

 


সোহিনী বোস অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

অনসূয়া বসু রায় চৌধুরী অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.