-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
বিশ্ব যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনা রফতানির উপর ট্রাম্প প্রশাসনের ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং চিনের সরবরাহ শৃঙ্খল ও প্রযুক্তিগত উত্থান রোধে আরও পদক্ষেপ করার হুমকি লক্ষ করছে, তখন এ কথা সকলেই বোধহয় ভুলে গিয়েছেন যে গত দশকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-চিন সম্পর্কও এক বিরাট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। চিনের অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন, আরও দৃঢ় চিনা বিদেশনীতি এবং চিন ও তার প্রতিবেশীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির পর ব্রাসেলস ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাজধানীতে চিন সম্পর্কে ধারণা দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের যুদ্ধ সত্ত্বেও এবং তার মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে চিনের ‘সীমাহীন’ অংশীদারিত্ব তাদের প্রধান এশীয় অর্থনৈতিক অংশীদার সম্পর্কে ইউরোপীয়দের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনেছে এবং সম্পর্ককে অর্থনীতি-প্রধান ভাবনা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি, চিনের অতিরিক্ত ক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী চিনের বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে উদ্বেগও বৃদ্ধি পেয়েছে। চিনের বিকৃত অর্থনৈতিক অনুশীলন সম্পর্কে ইউরোপের দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ আরও অস্তিত্বগত উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।(১)
গত আট বছরে চিনের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী ও সামগ্রিক সরকারি পদক্ষেপ বেজিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধের শিরোনামে উঠে এলেও চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইইউ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রাসেলস এবং গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রের রাজধানীগুলি অতীতের সারল্য ত্যাগ করেছে এবং কেবল তাদের প্রতিরক্ষামূলক সাধনীকেই শক্তিশালী করেনি, বরং এটিকে পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করতে শুরু করেছে। গত দুই বছরে ইউরোপীয় কমিশন চিনের বিরুদ্ধে রেকর্ড সংখ্যক বাণিজ্য প্রতিরক্ষা মামলা শুরু করেছে (২০২৪ সালে মোট ৩২টির মধ্যে ২০টি মামলা চিনা সংস্থা ও অনুশীলনকে লক্ষ করে করা হয়েছে)।(২) এর মধ্যে কমিশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া তদন্তও রয়েছে (‘পদাধিকার বলে’), যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল গত অক্টোবরে শুল্ক আরোপের ফলে চিনে তৈরি বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) ভর্তুকি-বিরোধী তদন্ত।
গত দুই বছরে ব্রাসেলস তার নতুন প্রতিরক্ষামূলক সাধনীগুলিকে – ইন্টারন্যাশনাল প্রোকিওরমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট এবং ফরেন সাবসিডিজ রেগুলেশন - বায়ু শক্তি, সুরক্ষা সাধনী এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতে চিনা অর্থনৈতিক অনুশীলনের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। ব্রাসেলসের বাইরে সদস্য রাষ্ট্রগুলি ইউরোপীয় প্রযুক্তি সংস্থা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর (বিশেষ করে চিনা) অধিগ্রহণের ঝুঁকিগুলি আরও ভাল ভাবে মোকাবিলা করার জন্য তাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে কঠোর করেছে। সাইবার নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে কেউ কেউ বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে কিছু চিনা সরবরাহকারীকে নিষিদ্ধ করতে শুরু করেছে।(৩) সর্বোপরি, ইইউর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ঝুঁকিমুক্ত উদ্দেশ্য এবং ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
ইইউ-র নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত সক্রিয়তার প্রভাব বিবেচনা করা
তবুও ইউরোপের নতুন চিন সক্রিয়তার প্রভাব এখনও পর্যন্ত মার্কিন পদক্ষেপের তুলনায় ইইউ-চিন অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর সীমিত প্রভাব ফেলেছে। ২০১৮ সালে প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চিনা আমদানির উপর আমেরিকার নির্ভরতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেলেও ইইউ চিনা পণ্য এবং ইনপুটগুলির উপর তার নির্ভরতা বৃদ্ধি করেছে (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)। মোট মার্কিন এফডিআই-এর অংশ হিসেবে চিনে মার্কিন প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) হ্রাস পাচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনা এফডিআই সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্যুরো অফ ইকোনমিক অ্যানালাইসিস এবং রোডিয়ামের ক্রস-বর্ডার মনিটরের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চিনা সংস্থাগুলি ইউরোপে ৪৮ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ করেছে এবং চিনে ইউরোপীয় গ্রিনফিল্ড এফডিআই চিরাচরিত ভাবে সর্বোচ্চ(খ)। চিনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত পছন্দগুলি থেকেও ইউরোপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। চিনা গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং সবুজ-প্রযুক্তি ইনপুটগুলির উপর ইইউ-এর নির্ভরতা ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং চিনা অতিরিক্ত ক্ষমতার প্রতি এর ঝুঁকি তীব্র।
চিত্র ১. তেল ও গ্যাস বাদে অংশীদার আমদানিতে চিনের অংশ (২০১৪-২০২৩, শতাংশে)
সূত্র: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (৪)
এই ব্যবধানের কারণ হল নীতিগত ভাবে ভিন্ন একটি মিশ্রণ অর্থাৎ ইউরোপ অনেক বেশি ধীর গতিতে সক্রিয় করা, প্রায়শই অনেক সংকীর্ণ ও একগুঁয়ে ভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামের উপর বেশি মনোযোগী থেকেছে। ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফলাফলের উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের ক্ষেত্রেও চিনা সবুজ-প্রযুক্তি আমদানি এবং ইনপুটগুলির প্রতি ইউরোপের অনেক বেশি উন্মুক্ততা ও প্রধান ইউরোপীয় শিল্পগুলিকে অনেক বেশি সীমিত আর্থিক সহায়তা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। ঝুঁকিমুক্তকরণের বিষয়ে স্পষ্ট উচ্চ-স্তরের ইইউ বার্তার অভাব (নেট জিরো ইন্ডাস্ট্রি আইনে নির্ধারিত বিস্তৃত এবং প্রায়শই অবাস্তব লক্ষ্যগুলির ঊর্ধ্বে উঠে) এবং সংস্থাগুলির জন্য বিকল্প উৎপাদন বা সোর্সিং ভিত্তি প্রচারের প্রচেষ্টা ইউরোপীয় সংস্থাগুলির চিন থেকে দূরে বৈচিত্র্য আনার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ভূমিকা পালন করেছে। বরং আজ আখ্যানটি ব্যবসায়িক মহলে ‘বৈচিত্র্যকরণে ক্লান্তি’র কথাই বলে। অবশেষে, ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে, আরও রক্ষণাত্মক চিন সংক্রান্ত নীতিগত পদক্ষেপগুলি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলি দ্বারা সর্বজনীন ভাবে সমর্থিত হয়নি। ইভি শুল্কের উপর জার্মানির বিরোধিতা এবং চিনা এফডিআই-তে হাঙ্গেরির প্রয়াস এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।(৫) বিপরীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিনের বিষয়ে গভীর দ্বিদলীয় ঐকমত্য রয়েছে।
কোন পথে এগোনো?
এই পটভূমিতে, ভবিষ্যতে কী আশা করা যেতে পারে? ২০২৪ সালের উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে, যেখানে বাণিজ্য ও রফতানি নিয়ন্ত্রণ ইইউ ও চিনের মধ্যে প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল, সেখানে সম্পর্ক খানিক কম উত্তেজনাপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। কারণ ব্রাসেলস এবং বেজিং নতুন ট্রাম্প প্রশাসন এবং ভূ-রাজনীতির উপর এই প্রশাসনের প্রভাব সম্পর্কে এখনও সন্দিহান।
ট্রাম্প-প্ররোচিত নিরাপত্তাহীনতা ইইউ নেতাদের তাদের বাজি ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট চাপ দিচ্ছে। সাম্প্রতিক মার্কিন বাণিজ্য পদক্ষেপের (বাইডেনের অধীনে বহু বছরের যুদ্ধবিরতির পরে ট্রাম্পের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক পুনর্বহাল-সহ) ক্ষোভ এবং আরও কিছু ভবিষ্যতের উদ্বেগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ট্রান্সআটলান্টিক উত্তেজনা আরও বিস্তৃত হয়েছে। মার্কিন দাবি বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সীমার ঊর্ধ্বে উঠেছে, যা ইউরোপের উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বৃহৎ প্রযুক্তির উত্থান রোধ করার প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে আক্রমণ বলে মনে করা হয়। ট্রাম্প এমনকি গ্রিনল্যান্ডকে জোর করে দখল করার হুমকি দিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন শান্তি আলোচনা থেকে ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাদ দেওয়া এবং ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ইউরোপীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ ইউরোপকে এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে যে, এমন একটি নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে ইউরোপকে দুর্বল ও খর্ব করার চেষ্টা করবে।
এই পদক্ষেপগুলি সমগ্র ব্লককে একটি দুর্বল অবস্থানে ফেলেছে এবং ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন দের লেইন এবং অন্য ঊর্ধ্বতন ইইউ কর্মকর্তাদের চিনের উপর সাম্প্রতিক বক্তব্যই এ হেন পরিবর্তনকে দর্শায়। জানুয়ারিতে ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে ফন দের লেইন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, চিন সম্পর্কে ইইউ-র উদ্বেগ থাকলেও, ব্লকটি ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে।(৬) ফন দের লেইন ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইইউ রাষ্ট্রদূতদের বার্ষিক সভায় এই বার্তাটি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন।(৭)
এখনও পর্যন্ত এই নমনীয় অবস্থানটি নেহাতই এই সারবস্তুর উপর ভিত্তি করে নয় যে ইউরোপীয়রা চিনের প্রতি তাদের নীতি পরিবর্তন করেনি বা বেজিংয়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ স্তরে যোগাযোগের জন্য নতুন পরিকল্পনা উন্মোচন করেনি। তবে যদি ব্রাসেলস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে একাধিক ক্ষেত্রে আক্রমণের সম্মুখীন হয়, তবে তারা বেজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে চাইবে। এর ফলে উভয় পক্ষই তাদের মূল বাণিজ্য বিরোধগুলি স্থগিত করার লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ চিনে তৈরি ইভিতে ন্যূনতম আমদানি মূল্য চুক্তির বিনিময়ে ব্র্যান্ডি, দুধ এবং শূকরের মাংসের বিরুদ্ধে চিনা বাণিজ্য প্রতিরক্ষা মামলা প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছে। এই বছর ইউরোপ ও চিন জলবায়ু এবং সবুজ প্রযুক্তির উপর দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য একটি নতুন প্রেরণা খুঁজে পেতে পারে, বিশেষ করে যদি বেজিং ইউরোপে বিনিয়োগ বাড়ানোর সদিচ্ছা প্রদর্শন করে।
তবুও, ইইউ-চিন সম্পর্কের অর্থবহ উন্নতির পথে বাধার পরিমাণ এখনও বেশি। চিন সম্পর্কে ইইউ-র উদ্বেগের কোনও পরিবর্তন হয়নি এবং যদি কিছু উদ্বেগ থেকেও থাকে, তা হলে তা ২০২৫ সালে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিনের অর্থনীতিতে কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা অব্যাহত থাকায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা পণ্যগুলিকে তার বাজার থেকে প্রবেশ না করতে দেওয়ার কারণে ইইউ-র শিল্প ভিত্তি এবং চাকরির বাজারে চিনা আমদানির দরুন চাপ ক্রমশ বাড়তে পারে। ইউক্রেনের জন্য একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন হলেও রাশিয়ার সঙ্গে চিনের গভীরতর অর্থনৈতিক সম্পর্ক উদ্বেগের কারণ হবে। চিনের বিরুদ্ধে ইউরোপের বাণিজ্য ও সমান ক্ষেত্রের মামলাগুলি আরও বৃদ্ধি পাবে, যার অনেকগুলি ২০২৫ সালে কার্যকর হবে। চিন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং অন্য ইনপুটগুলির উপর জোরদার পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি উদ্বেগও বাড়তে পারে।
আপাতত, অতিরিক্ত ক্ষমতা ও রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইইউ-এর মূল উদ্বেগগুলি মোকাবিলা করতে চিন প্রস্তুত… এ কথা মনে হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠ ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে বেজিং সম্ভবত ইইউ-কে বেশ দুর্বল বলেই মনে করে এবং ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন উৎসাহ প্রদর্শন করে না। পূর্ণাঙ্গ সমঝোতার চাইতে উভয় পক্ষের তরফেই টানাপড়েন হ্রাসের প্রচেষ্টা পারস্পরিক উত্তেজনা অনেকটা কমিয়ে আনবে।
ভারতের জন্য এর সম্ভাব্য প্রভাব
গত কয়েক বছর ধরে ভারত বিভিন্ন দেশের জন্য ‘অল্ট-চিন’ বা ‘চিনের বিকল্প’ গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের জন্যও (দ্রষ্টব্য চিত্র ২) মোবাইল ফোন এবং সৌর পিভির মতো ক্ষেত্রে। নিশ্চিত ভাবেই, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধা এবং নিয়ন্ত্রক ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ভারত এখনও মেক্সিকো বা ভিয়েতনামের মতো আগ্রহ আকর্ষণ করতে পারেনি।(৮) যাই হোক, ভিয়েতনাম এবং মেক্সিকোতে সরবরাহ শৃঙ্খলের অত্যধিক ঘনত্ব একটি সমস্যার বিষয় হয়ে উঠছে এবং শেষ পর্যন্ত ভারতই একমাত্র দেশ যার আয়তন ও মাত্রা চিনের উৎপাদন দক্ষতাকে টক্কর দিতে পারে।
চিত্র ২. তেল ও গ্যাস বাদ দিয়ে ইইউ আমদানিতে তাদের অংশে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন-সহ বাণিজ্যিক অংশীদার (২০১৭ এবং ২০২৩)
শতাংশ বিন্দু পরিবর্তন, ইইউ-বহির্ভূত আমদানি
সূত্র: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র(৯)
দ্রষ্টব্য: এই চিত্ররেখটিতে কেবল ইইউ-বহির্ভূত বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এইচএস পণ্য কোড ২৭০৯, ২৭১০ এবং ২৭১১ (তেল ও গ্যাস) বাদ দেওয়া হয়েছে।
স্বল্পমেয়াদে, মার্কিন শুল্কের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের জন্য আরও বৈচিত্র্য আনার কাজটি কঠিন হবে। তবে, ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে নীতি ও ব্যবসায়িক লক্ষ্য হিসেবে চিন থেকে ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কম। ভারতের মানবসম্পদ ও বাজার শক্তির পাশাপাশি দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি দেশটির উৎপাদন, উৎস এবং বাজার বৈচিত্র্যের জন্য এমন একটি গন্তব্যস্থল করে তুলেছে, যাকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। এটি দ্বিমুখী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করবে।
‘কূটনৈতিক বৈচিত্র্য’ অর্জনের জন্য ভারতও একটি প্রধান বিকল্প, যা নতুন কমিশনের প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্যস্থল হিসেবে ভারতকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। ইইউ-ভারত ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার সুযোগও ব্যাপক। মধ্যে রয়েছে সংযোগের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব (ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর-সহ) এবং হাইড্রোজেনের মতো সবুজ প্রযুক্তিতে শিল্প ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, জলবায়ু অর্থ সহযোগিতা, মানুষে মানুষে সংযোগ বৃদ্ধি এবং গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পর্কের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তগুলি এ ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হবে। বর্তমান বৈচিত্র্যের প্রবাহে ভারতের দক্ষতা দেশীয় সংস্কার অব্যাহত রাখার উপরই নির্ভর করে। তবে মার্কিন শুল্ক এবং প্রযুক্তি নীতির উপরও তা নির্ভর করবে, যা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের পুনর্গঠনকে প্রভাবিত করবে। এটি ভারতকে একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে উপস্থাপন করার জন্য ওয়াশিংটনের ইচ্ছার উপরও নির্ভর করবে। সাম্প্রতিক মার্কিন-ভারত শীর্ষ সম্মেলন সেই প্রভাবের দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছে। ইইউ এবং এর প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্রাসেলস বিকল্পের সন্ধানে রয়েছে, যা ভারতের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক।
পাদটিকা
ক) ইন্টারন্যাশনাল প্রোকিওরমেন্ট ইনস্ট্রুমেন্ট (আইপিআই) নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক সরকারি ক্রয় বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, যখন বিদেশি ভর্তুকি ইউরোপীয় কমিশনকে ইইউ-বহির্ভূত সরকারগুলি দ্বারা ইইউ-তে সক্রিয় সংস্থাগুলিকে প্রদত্ত আর্থিক অবদান সংক্রান্ত তদন্ত করার ক্ষমতা প্রদান করে।
খ) ব্যুরো অফ ইকোনমিক অ্যানালিসিস এবং রোডিয়ামের ক্রস-বর্ডার মনিটরের তথ্য অনুসারে।
১) ক্যামিল বুলেনোই, আগাথা ক্রাৎজ এবং দানিয়েল এইচ রোজেন, ‘ওভারক্যাপাসিটি অ্যাট দ্য গেট’, রোডিয়াম গ্রুপ, মার্চ ২৬, ২০২৫, https://rhg.com/research/overcapacity-at-the-gate/; ক্যামিল বুলেনোই এবং চার্লস অস্টিন জর্ডান, ‘হাউ চায়না’জ ওভারক্যাপাসিটি হোল্ডস ব্যাক ইমার্জিং ইকোনমিস’, রোডিয়াম গ্রুপ, জুন ১৮, ২০২৪, https://rhg.com/research/how-chinas-overcapacity-holds-back-emerging-economies/; জুলিয়া পালিক, সিরি আস রুস্তাদ এবং ফ্রেডরিক মেথি, ‘কনফ্লিক্ট ট্রেন্ডস ইন আফ্রিকা, ১৯৮৯-২০১৯’, পিআরআইও পেপার (২০২০)
২) ‘ট্রেড ডিফেন্স ইনভেস্টিগেশনস’, ইউরোপিয়ান কমিশন, https://tron.trade.ec.europa.eu/investigations/ ongoing
৩) https://www.pv-tech.org/lithuania-to-block-chinese-inverters-with-cybersecurity-legislation
৪) ‘ট্রেড ম্যাপ’, https://www.trademap.org/Index.aspx
৫) জেনস কাস্টনার, ‘জার্মান ভোট এগেন্সট ইভি ট্যারিফস আন্ডারকাটস ইইউস টাফার চায়না স্টান্স’, নিক্কেই এশিয়া, অক্টোবর ৪, ২০২৪, https://asia.nikkei.com/Economy/Trade-war/German-vote-against-EV-tariffs-undercuts-EU-stougher- China-stance; আগাথা ক্রাৎজ প্রমুখ, ‘ডুইন্ডলিং ইনভেস্টমেন্টস বিকাম মোর কনসেনট্রেটেড – চাইনিজ এফডিআই ইন ইউরোপ – ২০২৩ আপডেট’, রোডিয়াম গ্রুপ অ্যান্ড মেরিকস, জুন ৬, ২০২৪, https://merics.org/en/report/ dwindling-investments-become-more-concentrated-chinese-fdi-europe-2023-update
৬) ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ‘ডাভোস ২০২৫ - স্পেশ্যাল অ্যাড্রেস বাই উরসুলা ফন দের লেইন, প্রেসিডেন্ট অফ দি ইউরোপিয়ান কমিশন’, জানুয়ারি ২১, ২০২৫, https://www.weforum.org/stories/2025/01/davos-2025- special-address-by-ursela-von-der-leyen-president-of-the-european-commission/
৭) ইউরোপিয়ান কমিশন, ‘স্পিচ বাই প্রেসিডেন্ট ফন দের লেইন অ্যাট দি ইইউ অ্যাম্বাস্যাডর কনফারেন্স ২০২৫’, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৫, https://ec.europa.eu/commission/presscorner/detail/en/speech_25_404
৮) আগাথা ক্রাৎজ প্রমুখ, চায়না ডাইভার্সিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক রিপোর্ট, রোডিয়াম গ্রুপ, ২০২৪, https://rhg. com/wp-content/uploads/2024/08/Rhodium-China-Diversification-Framework-Report-BRT-Final- Draft_21Jun2024.pdf
৯) ‘ট্রেড ম্যাপ’
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Agatha Kratz is a Partner at Rhodium Group, leading the firm’s corporate advisory work and research on EU-China relations. ...
Read More +