আফগানিস্তান, সন্ত্রাসবাদ দমন, জি২০, ভূ-অর্থনৈতিক, ভারত সন্ত্রাসবাদ, ইউএনএসসি, চিন, আলাপ-আলোচনা, বহুপাক্ষিকতা, প্রতিবেশ, স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–চিন প্রতিযোগিতার যুগে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক ফাটলগুলি জঙ্গি সংগঠনগুলির জন্য নতুন, নিরাপদ স্থান প্রদান করে, যা প্রায়ই জবরদস্তিমূলক ভূ–রাজনীতিতে মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে উঠে এসেছে
বহুপাক্ষিকতা কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে বিশ্বব্যাপী ধারণার বদল হচ্ছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) সংস্কারগুলি আপাতদৃষ্টিতে জটিল বলে মনে হলেও ভারতের মতো একটি দেশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থায় প্রান্তিক অবস্থানে রয়ে গিয়েছে। জি২০-র মতো অন্য মঞ্চগুলির মাধ্যমে এর উত্তর উঠে আসছে। তাদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতা করার প্রাথমিক প্রবিধানের পরিসরের বাইরে এই মঞ্চগুলিকে বিস্তৃত হতে বাধ্য করেছে।
ভূ-অর্থনীতি থেকে নিরাপত্তা বিচ্ছিন্ন করার ধারণাটি আকাশকুসুম কল্পনা। আরও আন্তঃসংযুক্ত, প্রযুক্তিগত ভাবে পরিচালিত এক বিশ্ব একগুচ্ছ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। হুমকির বিষয়টি ধ্রুবক থাকা সত্ত্বেও এবং কিছু ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেলেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ৯/১১-পরবর্তী যুগে একটি বৈশ্বিক আন্দোলন কূটনীতিতে মনোযোগ হারাচ্ছে।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচমকা প্রস্থান তালিবানকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে এনে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে টালমাটাল পরিস্থিতির মুখে ফেলে দেয়। আফগানিস্তানের পাশাপাশি আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার কিছু অংশেও আল-কায়দা এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএসআইএস) সহযোগী সংগঠনগুলি সক্রিয়। সিরিয়া, ইয়েমেন এবং সোমালিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ এবং সাহেলে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ফ্রান্সের ভঙ্গুর বিচ্ছিন্ন চেষ্টা পাকিস্তানের মতো দেশগুলির সঙ্গে মিলিত (জঙ্গিবাদের একটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক এবং এখন তার আমদানিকারকও) হয়ে দর্শিয়েছে যে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা এখনও অনেক বাকি।
সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির অনলাইন প্রচার বাড়ছে। আইএসআইএস সমর্থকরা তাদের ক্যাডারদের কোডিং করা জন্য প্ররোচিত করছে এবং তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) মতো দলগুলি প্রচারমূলক লেখকদের নিয়োগের জন্য শ্রেণিবদ্ধ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করছে। তালিবানের সমর্থকরা হাস্যকর ভাবে ইসলামিক স্টেট খোরাসান (আইএসকেপি) দ্বারা তালিবান-বিরোধী প্রচার দূর করতে একটি অনলাইন পাল্টা বর্ণনামূলক ওয়েবসাইট চালু করেছে।
সন্ত্রাসবাদের হুমকি সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও এর বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির যে কোনও সুযোগই প্রতিবন্ধকতাময়। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-চিন প্রতিযোগিতার যুগে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক ফাটলগুলি জঙ্গি সংগঠনগুলির জন্য নতুন, নিরাপদ স্থান প্রদান করে, যা প্রায়ই জবরদস্তিমূলক ভূ-রাজনীতিতে মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে উঠে এসেছে। ২০২০ সালে উইঘুর নেতৃত্বাধীন জঙ্গি গোষ্ঠী ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা থেকে শুরু করে বেজিংকে হতাশ করে মস্কো্র আইএসকেপি এবং অন্য আইএস সহযোগীদের ‘অ্যাংলো-স্যাক্সন’ কৌশলের পণ্য হিসাবে আখ্যায়িত করা এ কথাই দর্শায় যে, ৯/১১-এর পরবর্তী যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন পেয়েছিল তা এখন শেষ।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ফরাসি সৈন্যদের চলে যাওয়ার জন্য বুরকিনা ফাসোর সিদ্ধান্ত, যারা ইসলামপন্থী বিদ্রোহের বিরুদ্ধে লড়াই করছিল, কৌশলগত ভাবে ভাড়াটে সৈন্যদের প্রবেশ করানোর মাধ্যমে রুশ উপস্থিতি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ফরাসি সেনার উপস্থিতির বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত তখন প্রকাশ্যে আসে, যখন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ গ্লোবাল সাউথ থেকে সমর্থন সংগ্রহের জন্য আফ্রিকার বিস্তৃত সফরে ছিলেন। আফগানিস্তান, চিন এবং ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ বিশ্ব-প্রতিরোধ-পশ্চিম ভূ-রাজনীতির একটি পৃথক পরিসর নির্মাণ করছে। ৯/১১-পরবর্তী যুগটি বেজিংয়ের জন্য এক সময়োপযোগী সুযোগ প্রদান করবে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জিনজিয়াং-এ জাতিগত বিষয়ে তার সন্ত্রাসবিরোধী আখ্যান তৈরি করার অনুমতি দেয়।
উপরের উদাহরণগুলি ভূ-রাজনীতিতে বিস্তৃত ব্যবধানের মাঝে সন্ত্রাসবিরোধী আখ্যানের বিভাজনকেই তুলে ধরে এবং বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতার প্রত্যাবর্তন, ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের মতো সমীকরণ, ক্ষুদ্রপাক্ষিক জোটের পাশাপাশি জি২০, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের মতো বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলি বিকল্প, আরও কার্যকর রাজনৈতিক সাধনী গড়ে তুলতে আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে, যা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য আরও ভালভাবে প্রস্তুত হতে সক্ষম। ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি সুযোগ প্রদান করলেও নয়াদিল্লিকে অব্যবহিতভাবে বহু মেরুকরণের মতো বিষয়ে তার চিন্তাভাবনার নীলনকশা প্রদান করতে হতে পারে এবং এর অর্থ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভাবে ভারতের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এর অর্থ কী, সেই পদ্ধতিগত পরিবর্তনগুলিকে সহায়তা জোগানো।
ভারত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক মঞ্চে একটি প্রাথমিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে এবং এই অনুশীলনকে জোরদার করে তোলা উচিত, যার মধ্যে জি২০-ও রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা একচেটিয়া ভাবে বাণিজ্য, শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক পুনর্নির্মাণের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং নিরাপদ ভৌগোলিক ও জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে, যেখানে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপকরণগুলি কার্যকর ভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ খানিক নেপথ্যে থাকলেও ইতিহাস দেখায়, যে কোনও একটি মাত্র ঘটনাই বিষয়টিকে পুনরায় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরিয়ে আনতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.