Expert Speak Raisina Debates
Published on Feb 21, 2022 Updated 3 Days ago

পশ্চিমী গণতন্ত্রগুলিকে সাবধান হতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর সি সি পি-র ‘মিছরির ছুরি’র হাত থেকে বাঁচতে হবে।

পশ্চিমী গণতন্ত্রগুলিকে প্রভাবিত করতে প্রবাসী চিনাদের কাজে লাগাচ্ছে সিসিপি

Image Source: Zach Stern — Flickr/CC BY-NC-ND 2.0

পশ্চিমী গণতন্ত্রগুলিকে প্রভাবিত করতে প্রবাসী চিনাদের কাজে লাগাচ্ছে সিসিপি

রাজতন্ত্রের জমানা থেকেই প্রবাসী চিনারা চিনের শাসকদের সঙ্গে এক অনন্য সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে পার্টি-রাষ্ট্র ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট-এর (ইউ এফ ডব্লিউ ডি) মাধ্যমে বিদেশে বসবাসকারী চিনাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ চালিয়েছে। বর্তমানে শি জিনপিং এই প্রবাসী চিনাদেরই বাণিজ্যিক স্তরে অস্ত্র রূপে ব্যবহার করছেন এবং তার প্রতিধ্বনি সমগ্র পশ্চিমী গণতন্ত্রে অনুভূত হচ্ছে।

একজন বর্ষীয়ান ব্রিটিশ রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সি সি পি) সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। ২০২০ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত লেবার পার্টির এম পি ব্যারি গার্ডিনারের অফিসে ক্রিস্টিন চিং কুই লি-র ল ফার্ম ক্রিস্টিন লি অ্যান্ড কোম্পানি দ্বারা অর্থ চালানের অভিযোগ উঠেছে। লি-র ছেলেকে ব্যারির অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেখাশোনা করার জন্য ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল ওয়েস্টমিনস্টারে ব্যারির অফিসে নিয়োগ করা হয়েছিল। লি-র সংস্থাটি লন্ডনে চিনা দূতাবাসের মুখ্য আইনি উপদেষ্টা ছিল এবং একই সময়ে ব্রিটিশ সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগ লি-র আইনি পরামর্শ পরিষেবার জন্য ব্রিটেনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিদেশি ব্যবসায়ীদের পাঠিয়ে দিত।

লি-র সংস্থাটি লন্ডনে চিনা দূতাবাসের মুখ্য আইনি উপদেষ্টা ছিল এবং একই সময়ে ব্রিটিশ সরকারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগ লি-র আইনি পরামর্শ পরিষেবার জন্য ব্রিটেনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বিদেশি ব্যবসায়ীদের পাঠিয়ে দিত।

লি ব্রিটেনের জনসমাজে বেশ কিছু কাল যাবৎ সক্রিয় রয়েছেন, বিশেষত ওয়েস্টমিনস্টারের অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে। চিন-ব্রিটেন পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দ্বারা লি পুরস্কৃত হয়েছেন। লি-র বেশ কিছু কার্যকলাপ সেই সব বিষয় নিয়ে যা পার্টি-রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিনা বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সংগঠিত করতে এবং তাঁদের সক্রিয় ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাতে লি-র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থেকে এমনটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ব্রিটেনের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এম আই ৫ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সতর্ক করেছিল যে, লি ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য সি সি পি-র ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের নির্দেশে কাজ করছেন। সংস্থার তরফে এ বিষয়েও সাবধান করা হয়েছিল যে, সমাজের সব স্তরে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে লি-র যোগাযোগ স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটেনের রাজনৈতিক ক্ষেত্রকে ‘সি সি পি-র কর্মসূচির অনুকূল’ করে তোলা।

এই ঘটনার ফলে সি সি পি-র প্রভাব বিস্তারের কাজকর্ম আরও এক বার প্রকাশ্যে এসেছে। এই বিষয়ে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে থাকা ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ থেকে পল শাঁরো এবং জঁ-বাপতিস্ত জঁজেন ভিলমে দ্বারা প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে কী ভাবে সি সি পি প্রবাসী চিনাদের নিজের কাজে ব্যবহার করছে। ইতিহাস সাক্ষী থেকেছে যে, চিনা শাসকরা বরাবরই প্রবাসী চিনাদের সঙ্গে এক অনন্য সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে,যাঁরা বিশ শতকের প্রথম দিকে পরিবর্তনের জন্য একটি সূচক হিসেবে কাজ করেছেন। সান ইয়াত-সেন বিপ্লবীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন যা ১৯১২ সালে কিং রাজবংশকে উৎখাত করে আধুনিক চিন স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর প্রবাসীদের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন মাও জে দং তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই বিভাগকে সি সি পি-র ‘জাদু অস্ত্র’[১] হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে ছাত্র বিক্ষোভের ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্নতার সম্মুখীন হয়ে দেং জিয়াওপিং প্রবাসী চিনাদের কাছে সঙ্কট মোকাবিলার জন্য দ্বারস্থ হন।

সান ইয়াত-সেন বিপ্লবীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন যা ১৯১২ সালে কিং রাজবংশকে উৎখাত করে আধুনিক চিন স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

কিছু দিন আগে পর্যন্ত প্রবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে চিনা ধারণা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল — হুয়াকিয়াও (বিদেশে বসবাসকারী মূল ভূখণ্ডের বাইরে থাকা ব্যক্তিরা-সহ চিনা নাগরিক), হুয়ারেন (যাঁরা বিদেশি পাসপোর্ট পেয়েছেন) এবং হুয়াই (বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চিনা বংশোদ্ভূত)। যদিও সি সি পি-র সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিং-এর চিনের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করার জাতীয় পুনরুজ্জীবন কর্মসূচির ফলে এই পার্থক্যগুলি অস্পষ্ট হয়ে গেছে। জাতির পুনর্জাগরণের কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তিনি তাঁদের জাতীয়তা নির্বিশেষে ‘চিন একটি পরিবার’-এর ধারণার প্রচার চালাচ্ছেন। এই পদ্ধতির ফলে ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে ওভারসিজ চাইনিজ অ্যাফেয়ার্স অফিসকে জুড়ে দেওয়ার মতো প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের প্রভাব বিস্তারকারী কার্যকলাপের সঙ্গে সমন্বিত।

বিভিন্ন গণতন্ত্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলির মধ্যে প্রবেশ ও সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সি সি পি আর একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রবাসী চিনাদের জনজীবনে আরও সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় লিবারাল পার্টির সদস্য বো ঝাও দাবি করেছিলেন যে, তাঁকে ফেডারেল পার্লামেন্টের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য চিনা এজেন্টরা নগদ অর্থের প্রস্তাব দিয়েছিল। ঝাওকে মেলবোর্নের একটি হোটেলের ঘরে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ গবেষক অ্যান-মেরি ব্র্যাডি নিউজিল্যান্ডের চিনা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সি সি পি-র সঙ্গে গোপন আঁতাতের অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন যে, পার্টি-রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলি তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে এবং জাতিগত ভাবে অন্য চিনাদের একটি সামগ্রিক গোষ্ঠী রূপে মত দানে প্রভাবিত করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, জাতিগত ভাবে চিনা পার্লামেন্ট সদস্যরা নিউজিল্যান্ডে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বি আর আই) মতো প্রকল্পগুলিকে অনুমোদন করানোর চেষ্টা করছেন। এ কথা সামনে আসার পরে দুই প্রাক্তন এম পি জনজীবন থেকে সরে গেছেন।

২০১৫ সাল থেকে বিদেশে পাঠরত চিনা যুব সম্প্রদায় ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের (ইউ এফ ডব্লিউ ডি) মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। শি ২০১৫ সালে একটি ইউ এফ ডব্লিউ ডি-র সম্মেলনে বলেছিলেন যে, বিদেশে বসবাসকারী চিনা ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন উপায়ে পার্টির কাজে সাহায্য করতে পারেন।

ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা তাঁর ‘দি এন্ড অফ হিস্ট্রি’ বইয়ে বলেছেন যে, চিনে ফিরে আসা ছাত্ররা রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য একটি অনুঘটক রূপে কাজ করবে এবং শেষ পর্যন্ত কর্তৃত্ববাদ থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তরের সূচনা করবে। এই ধরনের প্রত্যাশার বিপরীতে হেঁটে বিদেশি ক্যাম্পাসে পাঠরত চিনা শিক্ষার্থীরা সি সি পি-র কর্মসূচিকে বিভিন্ন দেশে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপকরণ হয়ে উঠেছেন। এর একটি কারণ হল যে, ১৯৯০-এর দশক থেকে চিন দেশভক্তিমূলক শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে যুবকদের সামাজিকীকরণের চেষ্টা চালিয়েছে, যা পরবর্তী প্রজন্মের আদর্শগত ধারণাকে এমন ভাবে প্রভাবিত করেছে যে তাঁরা সরকারি কর্মসূচির সমর্থক হয়ে উঠেছেন। চাইনিজ স্টুডেন্টস অ্যান্ড স্কলারস অ্যাসোসিয়েশনের মতো ক্যাম্পাস সংস্থাগুলির অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ফালুন গং (চিনের একটি নিষিদ্ধ সংগঠন) সম্পর্কে তথ্য প্রচারের জন্য হুমকি দেওয়ার ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা দর্শিয়ে স্থানীয় দূতাবাসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।[২] ক্যালিফর্নিয়ার সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ে চিনা ছাত্ররা প্রতিষ্ঠানে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে নিমন্ত্রণ করার বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে।

চিনা ছাত্রদের একটি দীর্ঘস্থায়ী বিক্ষোভের ফলে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক একটি মানচিত্রে ভারত-চিন সীমান্তকে ‘ভুল ভাবে’ চিত্রিত করার জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সি সি পি চিন এবং তার সীমান্ত নির্ধারণকারী ধারণাগুলি প্রচার করা সম্পর্কে আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ ভাবে পার্টি-রাষ্ট্রটি তিব্বত, জিনজিয়াং এবং হংকং-এর মতো অশান্ত অঞ্চলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করেছে। চিনা শিক্ষার্থীরা তাঁদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সব বিপর্যয়মূলক আঘাতের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। ফলে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স অ্যান্ড পলিটিকাল সায়েন্সে প্রখ্যাত শিল্পী মার্ক ওয়ালিঙ্গারের একটি ভাস্কর্যে তাইওয়ানকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে দেখানো চিনা ছাত্রদের রোষের কারণ হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটি যে তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের শিক্ষালয় ছিল, তা শিক্ষার্থীরা ভাল ভাবে মেনে নেয়নি। ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী লেখককে বলেছিলেন যে, জাতির স্বার্থ রক্ষা করা তাঁদের একটি পবিত্র দায়িত্ব। একই ভাবে চিনা ছাত্রদের একটি দীর্ঘস্থায়ী বিক্ষোভের ফলে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক একটি মানচিত্রে ভারত-চিন সীমান্তকে ‘ভুল ভাবে’ চিত্রিত করার জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছিলেন।

শি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও সি সি পি কর্মীদের নির্মূল করার জন্য অভিযানও শুরু করেছেন। যাঁরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন, তাঁদের ধরতে বিদেশি চিনারা ‘ফক্স হান্ট’ নামক একটি প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এর উদাহরণ স্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনার কথা বলা যায়। সেখানে বসবাসকারী চিনা নাগরিকরা চিনের এক প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তাকে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গণপ্রজাতন্ত্রের অবৈধ কর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য বিচার বিভাগ কর্তৃক অভিযুক্ত আট ব্যক্তির মধ্যে কয়েকজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীও ছিলেন। তবে সরকারি ভাবে ‘ফক্স হান্ট’কে চিন সরকারের তরফে এমন একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে স্থানীয় আইনি ব্যবস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের যুগ্ম সাহায্যে সেই সব পলাতককে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে যাঁরা দেশের ক্ষতি করেছেন। চিনের পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রক দ্বারা নির্মিত কাকতালীয় ভাবে ‘ফক্স হান্টিং’ শীর্ষক একটি টিভি সিরিজ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

এক দিকে শি যখন দেশ হিসেবে চিনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন, তখন চিন দ্বারা প্রবাসী নাগরিকদের ব্যবহার ভালর চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্রিস্টিন লি-র ঘটনায় সম্বিত ফিরে পেয়ে ব্রিটিশ সরকার এই বছর বিদেশি হস্তক্ষেপ বিরোধী আইন প্রণয়ন করার পরিকল্পনা করেছে, যে বিষয়টি নিয়ে ২০২১ সালে পার্লামেন্টে প্রকাশ্য আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আলোচনায় বিদেশি রাষ্ট্রের জন্য বা তার দ্বারা পরিচালিত ‘ঘোষিত কার্যকলাপ’কে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ২০১৮ সালে বিদেশি হস্তক্ষেপ আইন অনুমোদন করেছে, যাতে চিন যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। ২০২১ সালে এই আগুনের আঁচ গিয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উপরেও। বিদেশি হস্তক্ষেপের উপর নতুন নিয়মগুলি বিদেশি শক্তি দ্বারা হস্তক্ষেপকে চিনতে এবং রিপোর্ট করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে তোলে। অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা কমিটির চেয়ারম্যান চিনের সঙ্গে সংঘাতের সুর চড়িয়ে নির্দিষ্ট ভাবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বক্তৃতায় দেশটির হস্তক্ষেপ বিরোধী আইনের জন্য চিনের হুমকিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরেন। বর্তমানে ইউরোপীয় কমিশনও জানিয়েছে যে, তারাও ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ বিরোধী নিয়মবিধি গড়ে তোলার কথা ভাবছে।

এই ভাবে সি সি পি-র কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রবাসী নাগরিক এবং ছাত্রদের অতিরিক্ত ব্যবহার দেশটির কূটনৈতিক ক্ষমতাকে খর্ব করছে এবং তা দূর ভবিষ্যতে বিদেশে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী জাতিগত চিনাদের স্বার্থবিরোধী হয়ে উঠতে পারে।


[১] সমীর সরন এবং অখিল দেও, ‘প্যাক্স সিনিকা: ইমপ্লিকেশনস ফর দি ইন্ডিয়ান ডন’ (রূপা পাবলিকেশন, ২০১৯), অধ্যায় ৭।

[২] ক্লাইভ হ্যামিলটন, ‘সাইলেন্ট ইনভেশন: চায়না’জ ইনফ্লুয়েন্স ইন অস্ট্রেলিয়া’ (হার্ডি গ্রান্ট, ২০১৮), অধ্যায় ১০।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.