Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 14, 2022 Updated 5 Days ago

 ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত চিনকে একটি অনন্য পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে যেখানে সে প্রকাশ্যে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে পশ্চিমি দেশগুলির বিরুদ্ধাচরণ করা এড়িয়ে যেতে চাইছে।

ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে চিনের ভাবনা
ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে চিনের ভাবনা

এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটি ইউক্রেন সঙ্কট: সংঘর্ষের কারণ এবংগতিপথ সিরিজের অন্তর্গত


সম্প্রতি যখন ইউক্রেন সঙ্কট তীব্রতর হয়ে উঠেছে, তখন ইউরোপে সামরিক সংঘাত ‘চিনের জন্য ভাল না খারাপ’, সে নিয়ে চিনা ইন্টারনেটে জোরদার আলোচনা শুরু হয়েছে। একটি মত অনুযায়ী, বর্তমান ইউক্রেন সঙ্কটে চিন স্পষ্টতই জয়ীর দলে রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রবেশ চিনের জন্য বহুবিধ সুবিধার দ্বার খুলে দিয়েছে। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউ এস) কাছে বর্তমানে পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। সব দেশ ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা ছাড়া আর কিছুই না করে, তা হলে বন্ধু দেশগুলির কাছে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা গুরুতর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তার জোটব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়বে, যা আখেরে চিনের জন্যই লাভজনক। অন্য দিকে, আমেরিকা বা ন্যাটো যদি ইউক্রেনে সামরিক ভাবে জড়িয়ে পড়ে, তা হলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণে বাধ্য করবে এবং তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে সমস্যার মুখে ফেলবে, যা চিনের জন্য আরও ভাল। প্রকৃত পক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া যদি ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িয়ে থাকে, তা হলে তা চিনকে আরও ৫-১০ বছরের উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে এবং এর পরে চিন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। অন্য দিকে, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া স্বল্প সময়ের জন্য একে অপরের শক্তি পরীক্ষা করার পরে শান্তি চুক্তিতে সম্মত হয়, তা হলে চিন অল্প সময়ের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাইওয়ানের সঙ্গে জাতীয় পুনর্মিলনের লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে। এ কথা বলাই বাহুল্য, ইউক্রেনীয় সঙ্কট চিন-রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে, কারণ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার চাপে যুঝতে থাকা রাশিয়ার কাছে চিনের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর বিশেষ কোনও বিকল্প থাকবে না। তৃতীয়ত, ইউক্রেন সঙ্কটের অর্থ হল পশ্চিমি শক্তিগুলির (জার্মান-ফরাসি কন্টিনেন্টাল ইউরোপ, রাশিয়া এবং ইংরেজিভাষী দেশগুলির অ্যাংলো-আমেরিকান গ্রুপ) চিনের বিরুদ্ধে একত্র হওয়ার সব সম্ভাবনার নিরসন, যা দীর্ঘ সময় ধরে চিনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ ছিল এবং বিগত কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে টানাপড়েনের ফলে যা তীব্রতর হয়ে ওঠে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রবেশের পরে এ কথা স্পষ্ট যে, ইউরোপে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তির দরজা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে এবং আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর অর্থ হল এখন চিনের বিরুদ্ধে মার্কিন-ই ইউ-রাশিয়া যৌথ ফ্রন্ট গড়ে ওঠা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এটি চিনকে কৌশলগত ভাবে চিন-মার্কিন-রুশ কৌশলগত ত্রিভুজে আরও সুবিধাজনক অবস্থা করে দিয়েছে। ইউরোপীয় তহবিল থেকে পুঁজি এবং রাশিয়া থেকে সস্তায় প্রাকৃতিক গ্যাস চিনে সরবরাহ হতে থাকার ফলে তা চিনকে আরও বেশি পরিস্থিতিকে চালনা করা এবং অব্যাহত উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে।

প্রকৃত পক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া যদি ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে জড়িয়ে থাকে, তা হলে তা চিনকে আরও ৫-১০ বছরের উন্নয়নের সুযোগ করে দেবে এবং এর পরে চিন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।

অন্য দৃষ্টিভঙ্গিটি তুলনায় অনেক বেশি সাবধানী। কারণ ইউক্রেনের পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থির এবং অনিশ্চিত। ভবিষ্যতে এই সংঘাত কোন পথে এগোবে এবং পরিস্থিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও চিন আদৌ এই সংঘাতে লিপ্ত হবে কি না ও করলেও তা কতটা, সে কথার ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। বেজিংয়ে এ বিষয়ে সকলেই অবগত যে, পশ্চিমি দেশগুলির কৌশলগত বৃত্তে চিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ঐকমত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ইউরোপে বর্তমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে তা রাতারাতি চাপা পড়ে যাবে না। এর পাশাপাশি পশ্চিমি দেশগুলিতে এমন একটি ধারণা গড়ে উঠছে যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী আক্রমণ অংশত ভাবে চিনের কৌশলগত সমর্থন বা প্রশ্রয় দ্বারা চালিত। সাম্প্রতিক চিন-রাশিয়া যৌথ বিবৃতিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগের নজরে দেখেছে যখন এই দুই দেশ একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে এবং একাধিক মার্কিন কংগ্রেস সদস্য, আধিকারিক, প্রভাবশালী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হেড (চিন্তাশীল, মনস্ক সংস্থার প্রধান) এবং এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও প্রকাশ্যে ইউক্রেন সঙ্কটে চিনের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তাঁরা ‘রাশিয়া-চিন যৌথ দায়বদ্ধতার’ ধারণা এবং উভয়ের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার পক্ষেও সায় দিয়েছেন। যে দিন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছিল অথবা তাদের ভাষায় ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালিয়েছিল, অর্থাৎ, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চিনা বিদেশ মন্ত্রকের একটি নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে চিনের মুখপাত্র হুয়া চুনইংকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তরফে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করা হয়। যেমন ‘চিন কি ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পুতিনের আক্রমণকে সমর্থন করে?… কয়েক সপ্তাহ আগে যখন তিনি চিন সফরে এসেছিলেন তখন কি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার জন্য চিনের সম্মতি চেয়েছিল… চিন কি রাশিয়াকে তার সেনা প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করবে?… চিন কি ইউক্রেনে সক্রিয় ভাবে শান্তি প্রচারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে?’ ইত্যাদি।

চিনা বিশেষজ্ঞদের মতে ঘটমান ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষিতে চিনের কৌশল আদতে ‘বেশি বলা ও কম করা’ এবং তা এক দিকে রাশিয়াকে সমর্থন করা ও অন্য দিকে এই সমর্থন জোগানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ই ইউ-এর খুব বেশি রোষের মুখে না পড়ার মাঝে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়াকে উৎসাহ দেওয়ার চিনের সরকারি প্রতিক্রিয়া অথচ একই সঙ্গে সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থানের সঙ্গেও কমবেশি সহমত পোষণ করা চিনের এই কৌশলকেই দর্শায়। চিনের জন্য সর্বাধিক ক্ষতিকর হতে পারে, যদি রাশিয়া, ই ইউ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র… সকলেই নানা কারণে বিভিন্ন মাত্রায় চিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে। আবার এই তিন দেশই যদি চিনের অবস্থান বুঝে তা মেনে নেয়, তা হলে আখেরে তা চিনের জন্য সবচেয়ে লাভজনক পরিস্থিতি তৈরি করবে। তাই চিনা বিশ্লেষকরা চিন-ই ইউ, চিন-রাশিয়া বা চিন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর লক্ষ্যে চিনের প্রতি বিভিন্ন পক্ষের ‘তাদের ক্ষোভকে অন্য পথে চালিত করা’র প্রবণতার বিরুদ্ধে সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।

পশ্চিমি দেশগুলির কৌশলগত বৃত্তে চিনের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে ঐকমত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ইউরোপে বর্তমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে তা রাতারাতি চাপা পড়ে যাবে না।

ইউক্রেন সংকটে চিনের আরও উদ্বেগের কারণ বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। এই অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে সংঘাত জারি থাকলে সম্ভাব্য সমস্যাগুলির মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়া, আন্তর্জাতিক সম্পদ যুদ্ধে ব্যবহৃত হওয়া, উৎপাদনশীলতা নির্মূল হওয়া ইত্যাদি। এমনটা ঘটলে চিনের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং তার অবাধ কার্যকারিতাও বিরূপ ভাবে প্রভাবিত হবে। তবে সামগ্রিক ভাবে বেজিংয়ে একটি বৃহত্তর ঐকমত্য গড়ে উঠছে যেখানে মনে করা হচ্ছে যে, চিনের জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের বর্তমান সঙ্কটের ফলে উদ্ভূত সুবিধার পরিমাণ অসুবিধার চেয়ে ঢের বেশি।

চিনের অবস্থান

উপরোক্ত আলোচনার পটভূমি হিসেবে এ কথা গুরুত্বপূর্ণ যে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ইউক্রেন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন-রাশিয়ার সম্পর্ক দৃশ্যতই গতি পেয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে পশ্চিম প্যাসিফিকে চিন-রাশিয়ার সর্বপ্রথম যৌথ নৌমহড়ার পর চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি ভিডিয়ো বৈঠক করেন — যা সে বছরের দ্বিতীয় এমন সাক্ষাৎ ছিল — যেখানে তাঁরা ‘দুই দেশের মূল স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখার জন্য আরও সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন।’ এর আগে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন শক্তি, কৃষি এবং প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গভীরতর আন্তঃসহযোগিতার ভিত্তি নির্মাণের লক্ষ্যে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করেছিলেন। চিন-রাশিয়া সম্পর্কে অন্য বিষয়গুলির মধ্যে বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি সহযোগিতাকে মজবুত করার উদ্দেশ্যে সারা বছর জুড়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলতে থাকে। ২০২১ সালে সফল ভাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, ২০২২ সালে স্পোর্টস এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু এবং বেজিং শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপস্থিতি পুনঃনিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে উভয় পক্ষই অভিনন্দনমূলক বার্তা বিনিময় করেছে।

এর আগে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এবং রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন শক্তি, কৃষি এবং প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে গভীরতর আন্তঃসহযোগিতার ভিত্তি নির্মাণের লক্ষ্যে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ করেছিলেন।

এই বছরের শুরুতে যখন ইউক্রেন ইতিমধ্যেই একটি প্রধান বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ২৭ জানুয়ারি মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা বলেন এবং প্রথম বারের মতো প্রকাশ্যে ‘রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগের পক্ষে’ চিনা সমর্থনের কথা জানান। আন্তর্জাতিক স্তরে ৩১ জানুয়ারি রাশিয়ার সঙ্গে চিনও ইউক্রেনের বিষয়ে ইউ এন এস সি-তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত জনসভা আয়োজনের বিরুদ্ধে মত দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের স্থায়ী প্রতিনিধি ঝাং জুন এ বিষয়ে চিনের অবস্থান সর্বসমক্ষে তুলে ধরেন যেটিতে তিনি নিউ মিনস্ক এগ্রিমেন্ট কার্যকর করার পক্ষে সওয়াল তোলেন। এর পাশাপাশি এটিতে ‘আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকর এবং স্থিতিশীল ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ গড়ে তোলা এবং ‘রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’-এর ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার করার উপর জোর দেওয়া হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০২২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শি-পুতিন শীর্ষ সম্মেলনে শারীরিক ভাবে যোগদান করেন, যেখানে উভয় পক্ষই অন্যান্য বিষয় ছাড়াও তাইওয়ান এবং ন্যাটোর ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান প্রকাশ করেছিল। ১৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী ওয়াং ই ৫৮তম মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে ইউক্রেন সঙ্কট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময়ে ‘শুধু উত্তেজনা বাড়ানো, আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং এমনকি যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার পরিবর্তে ইউক্রেন প্রসঙ্গে সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষকে যথাযথ দায়িত্ব নেওয়ার এবং শান্তি বহাল করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। অবশেষে যখন রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলকে ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিল, চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তাঁর টেলিফোন কথোপকথনে — যা এ বছর দ্বিতীয় বার — উল্লেখ করেছেন যে, ‘চিন এই প্রসঙ্গে ন্যায্য ও অন্যায্যতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।’ একই দিনে ঝাং জুন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং পরামর্শ অব্যাহত রাখার পক্ষে এবং ‘একে অপরের উদ্বেগ নিরসনে যুক্তিসঙ্গত সমাধান’ খোঁজার উপর জোর দেন। ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার সামরিক সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি টেলিফোন কথোপকথনে জানান যে, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়ার সমস্যা সমাধানের পক্ষকেই চিন সমর্থন করে।’ ২৬ ফেব্রুয়ারি চিন ইউ এন সিকিউরিটি কাউন্সিলে ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার আনা প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকে। একই দিনে মন্ত্রী ওয়াং ই কয়েক জন ইউরোপীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর সময়ে ইউক্রেন সঙ্কটে চিনের বর্তমান অবস্থান আরও স্পষ্ট করে বলেন যে, তাঁরা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকেও সম্মান করেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.